-হ্যাঁ, তারপর?
–পরক্ষণেই স্টাডির দরজার খুলে বেরিয়ে সেক্রেটারি মিঃ চার্লিল সিঁড়ির কাছে ছুটে আসে। আমি সিঁড়ির ওপরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম।
কেন চিৎকার করে উঠেছি, আমাকে বলতে হল। ভূতের মিথ্যা কাহিনী বলে কোনো রকমে সামাল দিতে হল আমাকে।
এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না আমার।
পোয়ারো মাথা ঝাঁকালেন। নিজের মনে বিড়বিড় করলেন। সব ব্যাখ্যাই পাওয়া গেল এতক্ষণে।
পোয়ারো সহানুভূতির দৃষ্টি নিয়ে লিওনির দিকে তাকালেন। বললেন, দেখ মাদমোয়াজেল, তোমাকে কোনো ঝামেলার সঙ্গে আমি জড়াতে চাই না। তবে তোমাকে আমার একটা উপকার করতে হবে।
–আপনি অত্যন্ত দয়ালু মঁসিয়ে পোয়ারো। আপনার উপকার হতে পারে এমন যে কোনো কাজই আমি করব, বলুন।
–তোমার মনিবের ব্যাপারে কি জান?
–বিশেষ কিছুই নয় মঁসিয়ে। তবে উনি যাদের সঙ্গে মেশেন তাদের একটা বৈশিষ্ট্য আমার চোখে পড়েছে।
–কি রকম?
-তার বন্ধুদের বেশির ভাগই, সৈন্যবিভাগের লোক। কেউ নাবিক, কেউ পদাতিক নয়তো এয়ারফোর্সের। এ ছাড়াও অনেকে আসেন তার কাছে যারা বিদেশী লোক। তারা আসেন চুপিচুপি। আমার মনে হয় ম্যাডাম এখনো যথেষ্ট সুন্দরী। কিন্তু তার বন্ধুরা তার সৌন্দর্যের ব্যাপারে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত বলেই মনে হয় আমার। এসবই অবশ্য ধারণা। আমি নতুন এসেছি, কোনো গোপন কথা তিনি আমাকে বলেন না।
-তার মানে, তিনি নিজেই সব কিছু করতে চান?
–হ্যাঁ, তাই মঁসিয়ে।
–আমাকে তো তুমি তাহলে সাহায্য করতে পার।
–বলুন মঁসিয়ে, আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব।
–একটা কথা আমাকে বল, আজ সকালে তোমার ম্যাডামকে কি রকম মেজাজে দেখেছ?
–তাকে খুবই খুশি মনে হচ্ছিল।
–এই খুশি খুশি মেজাজের কারণ কিছু বুঝতে পেরেছ?
–না, মঁসিয়ে, তেমন বিশেষ কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না। তবে খুবই উৎফুল্ল তিনি।
–কোনো জয়ের আনন্দ যেমন হয়? –হ্যাঁ, মঁসিয়ে, ঠিক এই কথাটাই আমি বলতে চেয়েছিলাম।
পোয়ারো মাথা নাড়লেন। বললেন, ধন্যবাদ মাদমোয়াজেল, আপাততঃ এই পর্যন্ত।
লিওনি ঘর ছেড়ে চলে গেল। পোয়ারোর মুখে আশা-নিরাশার চিন্তার ছায়া পড়ল। তিনি ঘরে পায়চারি করতে থাকেন।
লেডি জুলিয়ার সঙ্গে কথা বলা বাকি। সেই কথা ভেবেই উত্তেজনা আর উদ্বেগ বাড়ছিল তার। কি বলবেন তিনি? কি শোনা যাবে তার মুখ থেকে?
.
ঘরে প্রবেশ করলেন লেডি জুলিয়া। গভীর দৃষ্টিতে তাকে নিরীক্ষণ করার চেষ্টা করলেন পোয়ারো। বহু প্রত্যাশিত ওই মুখে আশার প্রতিশ্রুতি দেখতে চাইলেন তিনি।
কোনো ভূমিকা না করেই লেডি জুলিয়া বললেন, গতকাল রাতে নাকি এ বাড়িতে চুরি হয়েছে?
–হ্যাঁ ম্যাডাম। সেই ব্যাপারেই আপনাদের সঙ্গে দু-একটা কথা বলতে চাইছি। বললেন পোয়ারো।
–হ্যাঁ, লর্ড মেফিল্ড তাই বলছিলেন।
গতকাল রাতে আপনাদের ব্রিজ খেলার পরে কি ঘটেছিল খুলে বলুন।
–আমাদের আর এক হাত খেলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমার স্বামী বললেন তাহলে অনেক রাত হয়ে যাবে। তাই খেলা ওখানেই শেষ করে দিয়ে আমরা শুতে চলে যাই।
তারপরে?
–আমি যথারীতি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ি।
–তারপর–বলে যান।
–ঘুমের আগে এই পর্যন্তই আমার মনে আছে। তা চুরির ঘটনাটা ঘটল কখন?
–আপনারা ওপরে চলে যাওয়ার একটু পরেই।
–ওহো। কি জিনিস চুরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে?
–খুবই মূল্যবান জিনিস ম্যাডাম। কিছু গোপন কাগজপত্র।
–খুবই দরকারি?
–অত্যন্ত দকারি। এবং আর্থিকমূল্যও অনেক।
–তাই বুঝি?
পোয়ারো সরল চোখে তাকালেন লেডি জুলিয়ার দিকে। পরে বললেন, আচ্ছা ম্যাডাম, আপনার সেই বইটার ব্যাপারে কিছু বলবেন?
–আমার বই। চোখে ভ্রূকুটি হানলেন লেডি জুলিয়া।
মিসেস ভান্দারলিনের কাছে শুনলাম, আপনারা তিনজন মহিলাই তাসের আসর থেকে উঠে যে যার ঘরে চলে যান। আপনি খানিক পরেই একটা বই নেবার জন্য আবার নিচে নেমে আসেন।
-হ্যাঁ, এসেছিলাম।
–তাহলে দেখা যাচ্ছে, ঘরে গিয়ে আপনি সরাসরি বিছানায় শুয়ে পড়েননি। খানিক পরেই আবার ড্রইংরুমে ফিরে এসেছিলেন।
–ঠিক বলেছেন। আমি বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।
এবার তাহলে বলুন। ড্রইংরুমে আসার পরে আপনি কোনো শব্দ শুনেছিলেন? কারো ভয় পাওয়া আর্তচিৎকার?:
-হ্যাঁ–মানে-ওরকম কিছু শুনেছি বলে মনে হয় না।
–আপনার শুনবার কথা ম্যাডাম। ড্রইংরুম থেকে আপনি না শুনে পারেন না।
–না, না, মাথা দোলালেন লেডি জুলিয়া, আমি কিছুই শুনতে পাইনি।
পোয়ারো শীতল চোখে তাকালেন। কোনো উত্তর করলেন না।
লেডি জুলিয়া আশা করেছিলেন পোয়ারো কিছু বলবেন। কিন্তু তাকে নীরব থাকতে দেখে একটু অস্বস্তি বোধ করলেন। ইতস্ততঃ করে বললেন, তাহলে এখন কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
-কিসের ব্যবস্থার কথা বলছেন ম্যাডাম?
–চুরি যাওয়া জিনিসটা উদ্ধারের। পুলিস নিশ্চয়ই কিছু করছে?
–না ম্যাডাম, মাথা নাড়লেন পোয়ারো, এ কেসে পুলিস ডাকা হয়নি। আমার ওপরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পোয়ারোর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন লেডি জুলিয়া। বিস্ময়ের ভাবটা কেটে গিয়ে ধীরে ধীরে কেমন কঠিন হয়ে উঠল মুখভাব।
-তাহলে আপনিই তো বলতে পারেন কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
–আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করছি ম্যাডাম এবং আমি আশান্বিত।
–চোরকে ধরার ব্যাপারে?
–না ম্যাডাম, কাগজপত্রগুলো উদ্ধার করাই আমার আসল উদ্দেশ্য।