-আপনিও দেখছি তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন। মিসেস ম্যাকাট্টাকে উস্কে দিতে চাইলেন পোয়ারো। ওষুধে কাজ হল। তিনি বললেন, এমন অপদার্থ মহিলা কি বলব, নিজের ক্ষমতা বলতে কিছু নেই। বরাবরই অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
পুরুষরা বুঝি তাকে খুব পছন্দ করে?
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন মিসেস ম্যাকাট্টা, পুরুষদের কথা আর বলবেন না, সুন্দর মুখ। দেখলেই তারা গলে যায়। যুবক রেগির কথাই ধরুন না কেন, এখন তো সে তার একজন অন্ধভক্ত।
মিসেস ভান্দারলিনও সবসময় ওই ছোকরার সঙ্গেই কথা বলতে ব্যস্ত। ছোকরা ব্রিজ খেলার বিশেষ কিছুই জানে না, অথচ মিসেস ভান্দারলিনের মুখে তার খেলার প্রশংসা ধরে না–কিরকম লজ্জাকর ব্যাপার বলুন।
-কেন, সে কি ভালো খেলতে পারে না?
–মোটেই না। গতকাল রাতেই তো খেলতে বসে অনেক ভুল করছিল।
–শুনেছি লেডি জুলিয়া খুব ভালো খেলোয়াড়।
-হ্যাঁ, উঁচু জাতের জুয়াড়িই বলতে পারেন। খেলাটাকে উনি পেশা হিসেবেই নিয়েছেন। সব সময়েই খেলায় ডুবে থাকেন। এত লোভ যে কেন বুঝি না?
–ব্রিজ খেলে তিনি তাহলে ভালো টাকাই আয় করেন বলছেন?
–হ্যাঁ, হেসে বললেন মিসেস ম্যাকাট্টা, খেলার টাকায় উনি তার দেনা শোধ করে থাকেন। তবে মনে হচ্ছে, ইদানীং বড় হাতটান চলছে।
গতকাল রাতেই হাবভাব দেখে আমার তা মনে হল। বুঝলেন মঁসিয়ে পোয়ারো, জুয়াড়ীদের এরকম অবস্থাই হয়।
পোয়ারো কথা শেষ করে বিদায় জানালেন মিসেস ম্যাকট্টাকে। তারপর ডেকে পাঠালেন রেগি ক্যারিংটনকে।
চেয়ারে বসা পর্যন্ত সতর্কভাবে রেগিকে নিরীক্ষণ করলেন পোয়ারো। মুখে দুর্বলতার ছাপ, জোর করেই যেন হাসবার চেষ্টা করছে। পোয়ারোর মনে হল, যুবকটির ভেতর পর্যন্ত যেন তিনি দেখতে পাচ্ছেন।
-বলুন, আমি কি করতে পারি।
পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে বলল রেগি।
–গতকাল রাতে ঘুমোবার আগে পর্যন্ত কি করছিলেন, আমাকে তা বলতে আপত্তি আছে?
–মোটেই না। ডিনারের পর আমরা ড্রইংরুমে ব্রিজ খেলি। তারপর আমি শুতে চলে যাই।
–তখন সময় কত?
–এগারোটার কিছু বাকি ছিল। নিশ্চয়ই তার পরেই হয়েছিল চুরিটা?
–হ্যাঁ, তার পরেই। আপনি কোনো শব্দ শুনতে পাননি? কিংবা কিছু চোখে পড়েছিল?
–আমি বিছানায় শোয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ি। কোনো শব্দ কানে আসেনি, চোখেও পড়েনি কিছু।
–আপনি কি রাতে বিছানায় শোবার পরে সকাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন?
–হ্যাঁ, ঠিক তাই।
–অদ্ভুত ব্যাপার।
চোখ তুলে তাকাল রেগি। তার চোখে বিরক্তি।
–অদ্ভুত বলছেন কেন?
–কোনো আর্ত চিৎকার আপনার কানে যায়নি?
–নাঃ, কিছুই না।
–সত্যিই অদ্ভুত।
–অদ্ভুত বলে কি বোঝাতে চাইছেন বুঝতে পারছি না।
–আমার জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি কি কানে খাটো?
–মোটেই না।
–অদ্ভুতই বটে। ঠিক আছে মিঃ ক্যারিংটন, আপাততঃ এই পর্যন্ত।
উঠে দাঁড়িয়ে বিরক্তির সঙ্গে ঘর ছেড়ে মুখে একটা অদ্ভুত ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়াল রেগি। একটু ইতস্ততঃ করে বলল, আপনি বলতে এখন আমার মনে পড়ল, কেমন একটা অস্পষ্ট শব্দ যেন শুনতে পেয়েছিলাম।
–তাহলে শুনতে পেয়েছিলেন? ঠোঁটের কোণায় হাসলেন পোয়ারো।
–সেই সময় একটা গোয়েন্দা কাহিনী পড়ছিলাম আমি। এমনভাবে জমে গিয়েছিলাম যে শব্দটা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইনি।
-হ্যাঁ, ব্যাখ্যাটা মন্দ নয়।
এক মুহূর্ত পোয়ায়োর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল রেগি। তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করল। তারপর পেছন ফিরে দরজার দিকে পা বাড়িয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াল। . .
–কি চুরি গেছে, জানতে পারি?
–খুব মূল্যবান জিনিস অবশ্যই। তবে এর বেশি কিছু জানাবার স্বাধীনতা আমার নেই।
–তাই বুঝি।
বেশ অস্থিরভাবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল রেগি।
এবারে তাহলে মিসেস ভান্দারলিনকে স্মরণ করা যাক।
আপন মনে বিড়বিড় করলেন পোয়ারো। হাত বাড়িয়ে একটা ঘণ্টা স্পর্শ করলেন।
.
বেশ ব্যস্ততার ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকলেন মিসেস ভান্দারলিন। স্পোর্টস সুটে খুবই সুন্দর দেখাচ্ছিল তাকে। চেয়ারে আসন নিয়ে সুন্দর করে হাসলেন পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে।
–কী সাংঘাতিক ব্যাপার। এ বাড়িতে রাতে চোর ঢুকেছিল, আমি তো ভাবতেই পারছি না। তা পুলিস কি কিছুই করতে পারল না?
প্রায় এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন মিসেস ভান্দারলিন।
পোয়ারের মনে হল, মুখে মোলায়েম হাসি থাকলেও মহিলার চোখে যেন বিদ্রূপ খেলা করছে।
–আপনি যে পুলিসকে ভয় পান না, তা পরিষ্কারই বোঝা যাচ্ছে। ওরা যে পুলিসকে এ ব্যাপারে ডাকবেন না, তাও ভালো করেই জানেন আপনি। এটা সতর্কতার ব্যাপার।
–কিন্তু, মঁসিয়ে পোয়ারো, পুলিসকে ডাকা হবে এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার। যাইহোক, প্রিয় লর্ড মেফিল্ডকে চিন্তামুক্ত করার জন্য আমি কি করতে পারি বলুন।
–ধন্যবাদ মাদাম। একটা কথা, গতকাল রাতে ড্রইংরুমে আপনি ব্রিজ খেলেছিলেন?
–হ্যাঁ।
–খেলা শেষ হলে আপনারা মহিলারা সবাই চলে যান?
–হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন।
–আমি জেনেছি, একজন মহিলা আবার একটা বই সংগ্রহ করার জন্য ড্রইংরুমে ফিরে এসেছিলেন। আপনিই এসেছিলেন, তাই নয়?
-হ্যাঁ, আমিই প্রথম ফিরে যাই।
সঙ্গে সঙ্গে পোয়ারো জানতে চাইলেন,–প্রথম বলছেন, এর কারণ কি?
বইটা নিয়ে আমি ওপরে চলে যাই। আমার ঘরে বেল টিপে কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। পরিচারিকা দরজা খুলতে দেরি করছিল। ও বেরিয়ে এলে তাকে আমার চুল আঁচড়ে দিতে বলি।