-তুমি যে বললে? অ্যাণ্ড্রুজ যেন জানতে চায়।
–কারণটা তবে শোন। তোমাকে সব খুলেই বলি।
এরকুল বলতে শুরু করে। ধীরে ধীরে নিজেকে নিমজ্জিত করে সে চেতনার অন্তরালে।
নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি এর মধ্যে লীনার ডান হাতে আর তালুতে সোনালী রঙ দেখে জিজ্ঞেস করতে ও বলেছিল, হয়তো মডেলটা ধরবার সময় রঙ লেগে গেছে। হয়তো পরে। আমি জানি নিশ্চয়ই তাই। হেলেনার সঙ্গে কথা বলার সময় লক্ষ্য করলাম ওর আঙুল আর তালুতে সোনালী রঙ। একটু থামলো। এরকুল তারপরে বলল, দুই আর দুইয়ে চারই হয়, অ্যাণ্ড্রুজ।
–কিন্তু কি আছে ঐ মডেলটার মধ্যে?
–তা এখনও আমি জানি না। বোধ হয় হেলেনাও জানেন না। তবে তিনি নিয়েছেন নিছক লোভের বশেই। আসলে তিনি লীনার সঙ্গে গল্প করতেই আসছিলেন। দরজা খোলা দেখে উঁকি মারেন ভেতরে। টেবিলের ওপর অমন সুন্দর মূর্তিটি দেখে আর লোভ সামলাতে পারেননি ভদ্রমহিলা। লীনা ঘরে ছিল না। সুবিধাই হলো তাঁর।
একটু চুপ করে থেকে বলতে লাগলো–চুরি একটা ক্রাইম, সন্দেহ নেই। দেখতে হবে এর পেছনে কোন মোটিভ আছে কিনা। এ কেসটার কিন্তু তা নেই। মিসেস হেলেনা ওটা নিয়েছেন নিছক জিনিসটার সৌন্দর্যের লোভে। ক্ষণিকের চপলতাও বলতে পারো। এমন হলেও আশ্চর্য হবো না যদি শুনি তিনি নিজেই ওটা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
অ্যাণ্ড্রুজ জিজ্ঞসা করে-বলো কি?
এরকুল আত্মমগ্ন হয়ে বলে চলে, আসল নাটক শুরু হবে কাল হোটেল প্যারডাইসে। দেখা যাক, আমাদের জন্যে কি উপহার সাজানো আছে। নরকের বিভীষিকা না কি স্বর্গের পুষ্পউদ্যান।
কথা বলতে বলতে হ্যান স্ট্রীটের মোড়ে এসে পড়েছিল দুজনে। এবার ছাড়াছাড়ি হবার পালা। বিদায় নেবার আগে এরকুল একবার অ্যাণ্ডজকে মনে করিয়ে দিলো কালকের প্রোগ্রামের কথা।
হোটেল প্যারাডাইস।
.
০৬.
হোটেল প্যারাডাইস। নিয়ম আলোটা জ্বলছে নিভছে। দরজা ঠেলে ঢুকলো, লীনা, তার ভ্যানিটি ব্যাগটার মধ্যে মার্কেট থেকে কিনে আনা মডেল।
ভেতরে তখন জমজমাট আসর। আসনগুলো প্রায় ভর্তি।
একেবারে পশ্চিমকোণের টেবিলটা খালি রয়েছে এখনও। অবশ্য বেশিক্ষণ খালি থাকবে না নিশ্চয়ই।
আজ আবার স্পেশ্যাল অ্যাট্রাকসন আছে–সুন্দরী লোলার ড্যান্স।
লোকমুখে শোনা, লোলার দিকে একবার তাকালেই নাকি পাঁচ ইঞ্চি হুইস্কির বোতলের থেকেও বেশি নেশা হয়। তার অঙ্গের একটু পরশ যদি শরীরে লাগে তবে আর দেখতে নেই। নির্ঘাত মূৰ্ছা। এ হেন রূপসীর নাচ দেখতে যে শহর ভেঙে পড়বে তাতে আশ্চর্য কি।
দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো এক দীর্ঘকায় পুরুষ। অ্যাশ কালারের স্যুট। চোখে কালো চশমা। জামার বাটন হোলে লাল গোলাপ। দীর্ঘকায় পুরুষ এগিয়ে গেল কোণের টেবিলটার দিকে।
দুটো টেবিল পরে এক মুসলমান ভদ্রলোক ওর সঙ্গীকে বললেন–আমাদের মহামান্য
অতিথি তো এলেন, লীনাও এসেছে। এবার দেখা যাক।
বলা বাহুল্য এরকুল আর আজ অবশ্যই ছদ্মবেশে।
লীনা ততক্ষণে স্টুয়ার্টের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে। কি কথা হলো দুজনের মধ্যে শুনতে পেলো না এরকুল। তবে আড়চোখে একটা মডেল আর মুখবদ্ধ লেফাফা হাত বদল হতে দেখলো।
লেফাফাটি ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে রেখে দিয়ে দাঁড়ালো লীনা। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল দরজার দিকে।
অ্যাণ্ড্রুজ বললো–লীনা যে চলে গেল।
এরকুল নির্বিকার ভাবে বলে–যাবেই তো। ও তো থাকতে আসেনি এখানে।
–আমরা কি করবো এখন?
–কি আর করবো, নাচ দেখবো, ভুলে যেওনা একটু পরেই শুরু হবে লোলার ড্যান্স। সেই লোলা–যার কটাক্ষপাতে…
অ্যাণ্ড্রুজ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ওর কথাগুলো।
-তুমি দেখবে ঐ নাচ? ঐ আধা ন্যাংটো?
এরকুল কথা না বলে শুধু হাসলো। আর অ্যাণ্ড্রুজ বুঝে নিলো, এরকুলের কিছু একটা অভিসন্ধি আছে। যেটা ও মুখে বলতে চায় না।
মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, লেডিস অ্যাণ্ড জেন্টলমেন, নাউ উই ইনট্রোডিউসড লাভলি লোলা।
হলের আলোগুলো নিভে গেল একে একে। পর্দা সরে গেল। নীলাভ আলো জ্বলে ওঠে। স্বল্পবাস নর্তকী অভিবাদন জানালো সবাইকে।
আধো অন্ধকারে মধ্যে এরকুল দেখলো, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন মিঃ স্টুয়ার্ট। এগোচ্ছেন দরজার দিকে। মুগ্ধ চোখে এরকুল তাকিয়ে রইলো সেদিকে। হঠাৎ তীক্ষ্ণ শীসের মতো শব্দ একটা। আর্ত চিৎকার। ভারী কিছু পতনের আওয়াজ। দরজা ঠেলে কে যেন বেরিয়ে গেল বাইরে।
উঠে পড়লো এরকুল। অ্যান্ড্রুজের হাত টেনে বলল–তাড়াতাড়ি এসো।
তারপর যা হয়ে থাকে। হইহই চিৎকার। হট্টগোল। হলের আনোগুলো আবার জ্বলে উঠলো একে একে।
আলোয় ওরা দেখলো মেঝের ওপর চিৎ হয়ে পড়ে আছেন মিঃ স্টুয়ার্ট, বুকের কাছটা রক্তে ভেজা। রক্তের একটা ক্ষীণ ধারা জামা ভিজিয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছে। আর মিঃ স্টুয়ার্টের ব্যাগটা নেই।
হাঁটু গেড়ে বসে স্টুয়ার্টের ডান হাতটা তুলে নিলে এরকুল। নাড়ী দেখলো। নাঃ প্রাণ নেই।
চকিতে উঠে দাঁড়ালো এরকুল। অ্যাণ্ড্রুজকে বলল–বেরিয়ে পড়ি। এক্ষুনি পুলিশ আসবে। দুজনে বেরিয়ে এলো বাইরে।
.
০৭.
ফুটপাত থেকে আমননে হাঁটছিল লীনা। একটা ট্যাক্সি এসে সজোরে ব্রেক কষলো প্রায় ওর গায়ের ওপরে। চমকে উঠেছিল সে। কিন্তু তারপরে ট্যাক্সির দরজা খুলে যখন পিটার নেমে এলো তখন মুখে হাসি ফুটলো ওর।
পিটার ওকে হাত ধরে তুলে নিলো ট্যাক্সিতে। প্রায় দশ মিনিট পর, একটা প্রায় অন্ধকারে গলির মধ্যে জীর্ণ একতলা বাড়ির সামনে দাঁড়ালো ট্যাক্সি। অন্ধকারে প্রেতের মতো দেখাচ্ছে বাড়িটাকে। একটু দূরে স্ট্রীটল্যাম্প জ্বলছে। কিন্তু তাতে অন্ধকার দূর হচ্ছে না।