- বইয়ের নামঃ তিন গোয়েন্দা ভলিউম ৬০: শুঁটকি শত্রু
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
শুঁটকি শত্রু
০১.
ফ্যাশন শোতে যাচ্ছি ভাবতেই দারুণ লাগছে, কিশোর পাশা বন্ধুদের উদ্দেশে বলল। এইমাত্র ওরা ওদের প্রিয় দোকান ফ্যাশন হাউজ -এ প্রবেশ করল।
যে ড্রেস পরে মডেলিং করব সেটা কি ওরা দিয়ে দেবে নাকি? প্রশ্ন করল রবিন মিলফোর্ড।
মাথা নাড়ল মুসা আমান।
রবিন! তোমার ক্লজিটের যেরকম ঠাসাঠাসি অবস্থা, কবে যে দরজাটা ভেঙে যাবে!
রবিন হাসল বন্ধুর দিকে চেয়ে।
গেছে অলরেডি!
ছেলেরা মহা উত্তেজিত। ফ্যাশন হাউজ মস্ত দোকান। ওটার ভিতরেই শো হবে। রকি বীচের বেশ কয়েকজন ছেলে-মেয়ে মডেল। কিশোর আর রবিনও রয়েছে তাদের সঙ্গে।
আরি! সবিস্ময়ে বলে উঠল কিশোর। ফ্যাশন হাউজকে তো কখনোই এমন সাজে দেখিনি।
দোকানটার দিকে দৃষ্টি বুলাল তিন গোয়েন্দা। আগাগোড়া বিশাল এক লাল কার্পেট ফেলা হয়েছে। কার্পেটের দুধারে সারি সারি চেয়ার। প্রত্যেকটা চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে একটা করে রঙিন বেলুন।
কাপড়ের ব্ল্যাকগুলোর উপরে কার্ডবোর্ডে লিখে রাখা হয়েছে: ব্যাক টু স্কুল।
ধ্যাত, বিরক্তি প্রকাশ পেল মুসার কণ্ঠে। গরমের ছুটি শেষ হতে আরও তিন সপ্তা বাকি, অথচ এখনই স্কুলে ফিরে যেতে বলছে!
মুচকি হাসল কিশোর।
ভালই তো, ব্যাক টু স্কুল বলছে, কিন্তু আসলে তো ফ্যাশন শো!
কিশোর, দেখো, বলে উঠল রবিন। দেয়াল ঘড়ির দিকে আঙুল তাক করেছে। একটা বেজে গেছে। শোয়ের আর এক ঘণ্টা বাকি।
স্টোরের মালিক মিরা ব্যস্ততার সঙ্গে ওদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। তাকে ও তার সেলসগার্ল রীটাকে চেয়ার গুনতে দেখল ছেলেরা।
মিরার মাথায় খাটো, কালো চুল। চোখজোড়া নীল। কালো প্যান্ট ও চকচকে লাল ব্লাউজ ওর পরনে।
রীটা পরেছে স্ট্রাইপৃড় টি শার্ট ও ট্যান প্যান্ট। বাদামী চুলের মেয়েটির মুখ ভর্তি ফুটকি চিহ্ন।
মিরা আর রীটা আমাদের চেয়ে কম এক্সাইটেড না, বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
নার্ভাসও বলতে পারো, যোগ করল রবিন। মুসার দিকে ফিরল। শোতে নাম না দেয়ায় এখন খারাপ লাগছে না তোমার?
মাথা নাড়ল মুসা।
জিন্স আর সকার শার্টের মডেলিং করতে দেবে না, খারাপ লাগবে কেন?
রবিন চোখ নাচাল, কিন্তু হেসে ফেলল কিশোর। রবিন আর মুসার পছন্দ এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে।
আমাদের বরং সুবিধেই হয়েছে, বলল কিশোর। মুসা আমাদের আউটফিট বদলাতে সাহায্য করতে পারবে।
অন্যান্য যেসব ছেলে-মেয়েরা মডেল হবে, তারা আসতে শুরু করেছে। জুলি মরগ্যান আর রুডি মার্শকে দেখতে পেল ওরা। পরমুহূর্তে এমন একজনকে দেখল, ওরা যাকে আশা করেনি।
শুঁটকি টেরিও নাম লিখিয়েছে নাকি? গুঙিয়ে উঠল কিশোর।
ও মনে হয় দুটি প্যান্টের মডেলিং করবে, বলে হেসে ফেলল রবিন।
আমি কিন্তু কথাটা শুনতে পেয়েছি, রবিন মিলফোর্ড! খ্যাক করে উঠল শুঁটকি। তিন গোয়েন্দার কাছে হেঁটে এল। মেয়েদের মত পনিটেইল রেখেছে শখ করে।
গোয়েন্দাদের আবার মডেলিং করার শখ হলো কবে থেকে?
আজকে থেকে, জবাবে বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
দাঁতে দাঁত পিষে মাথা নাড়ল টেরি।
তুমি এখানে কেন, টেরি? কিশোর প্রশ্ন করল।
চোখ জ্বলে উঠল টেরির।
ডয়েল নিউজে আর্টিকল লিখছি আমি।
এ আর নতুন কথা কী? মুসা বিড়বিড় করে বলল।
ডয়েল নিউজ শুঁটকির নিজের খবরের কাগজ। বাসায় বসে কম্পিউটারে নিজেই লেখে।
ফ্যাশন শো-র নতুন ড্রেসগুলো সম্পর্কে লিখবে, তাই না? রবিন বলল।
ধূর্ত হাসল টেরি।
না, বলল। গসিপ কলাম লিখব ঠিক করেছি।
কিশোর একদৃষ্টে চেয়ে টেরির দিকে। কী ধরনের গুজব রটাতে চাইছে শুঁটকি?
গসিপ রটানো কি ঠিক, টেরি? বলল অবশেষে। বিশেষ করে মিথ্যে গুজব।
চুলে আঙুল চালাল টেরি।
মিথ্যে গুজব রটা কে বলল তোমাকে?
তুমি তো আগেও অনেক বানোয়াট গপ্পো কেঁদেছ, টেরি, বলল মুসা। আমরা তো চিনি তোমাকে।
রেগে গেল শুঁটকি।
দেখো, বাজে কথা বলবে না। বানাবার কোন দরকারই পড়বে না, বলল। রসাল খবরের অভাব হবে না এখানে।
এই বলে চলে গেল টেরি। এক গাদা সোয়েটার দেখতে লাগল মন দিয়ে।
শুঁটকি যখন এসে হাজির হয়েছে, বলল রবিন। তখন এর চাইতে খারাপ আর কী হতে পারে?
মুসা দরজার দিকে আঙুল দেখাল।
কেন শিপটনের ব্যাপারে কী বলবে?
কিশোর ঘুরে তাকাল। দেখতে পেল কেন শিপটন ঢুকছে। সঙ্গে ওর যমজ দুই ভাই মানি আর পেনি। যমজ বাচ্চা দুটো মডেল হবে।
আমরা শো করব! চেঁচিয়ে উঠল মানি।
আমরা সবার চেয়ে সুন্দর! যোগ করল পেনি।
মুখে আইসক্রীম লেগে আছে, তাও? মুসা বলল।
কোন বিকার হলো না যমজদের। হাসি মুখে পাণ্ডা বার চকোলেট আইসক্রীম খেয়ে চলেছে।
কিশোরের এবার নজর গেল কেনের মাথায় পরা কালো বেরে টুপির দিকে।
তোমার জাদুকরের পোশাকের সঙ্গে মানাবে টুপিটা, বলল ও। ও জানে, কেন বড় হয়ে ম্যাজিশিয়ান হতে চায়।
আমি ঠিক করেছি ম্যাজিশিয়ান হব না, বলল কেন। পকেটে হাত ভরে ভাঁজ করা এক কাগজ বের করল। শিল্পী হব।
কাগজটা তুলে ধরল। সাদা একটা ছোপ ছাড়া আর কিছু ধরা পড়ল না কিশোরের চোখে।
কী পড়েছিল? প্রশ্ন করল মুসা। দুধ?
তুমি গ্রেট আর্টের কিছুই জানো না, কাটখোট্টা গলায় বলল কেন। পেইন্টিংটায় আঙুল রাখল। এটা মেরু ভালুকের ছবি। তুষারঝড়ের মধ্যে পড়েছে।