- বইয়ের নামঃ দি মিস্ট্রি অফ ব্ল্যাক ডেথ
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ চন্দ্রছাপ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর
দি মিস্ট্রি অফ ব্ল্যাক ডেথ
১. সাবওয়ে ট্রেন
দি মিস্ট্রি অফ ব্ল্যাক ডেথ (অন্যান্য)
০১.
সাবওয়ে ট্রেন থেকে বেশ কিছুটা দূরে কাঁপুনি ধরেছিল, সেই শব্দটা আমার মনকে নিউইয়র্কে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল। আমার নাড়ীভুড়ি যেন কালো বৃষ্টির মতো হয়ে গেল। ভুদু চার্চের মতো, ম্যানহাস্ট্রানের আপার ওয়েস্ট সাইডের মতো সব ঘটনা তার পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে।
কাল অন্ধকার ঘরে মৃদুলয়ে বাজনা বাজতে লাগল। চারদিকের হাওয়া একটু গরম। লিডা বোনাভেনচার, রাজহাঁসের মতো সুন্দর মেয়েটা আমার হতে তার ঠাণ্ডা আঙুল রাখল, আমি তখন খুব ঘামছিলাম।
পাপাডক একটা হাত তুলে দাঁড়িয়েছিলেন, আমি একদৃষ্টিতে তাকে এবং মেঝের ওপর বসা মেয়েটাকে আর দিয়ে লোকটাকে দেখতে লাগলাম। পাপাডক দাঁড়িয়ে প্রথমে হাতটা তুললেন, তারপর চুপ করে রইলেন, আমি তার সম্পর্কে জেনে গেলাম। কিন্তু যখন ওয়াশিংটন থেকে আমন্ত্রণ এল, আমাকে তখন শিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হল।
লিডা আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে আমার কানে তার ঠোঁটের মৃদু পরশ দিল। বলল–তুমি কোনদিনও এইরকম জিনিস দেখনি, ওরা সারা রাত ঘরে কী যে করেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে সমস্ত আলো নিভে গেল, মেয়েটা আমার হাতটা তার ঠাণ্ডা আঙুল দিয়ে চেপে ধরল। বেনেট চুপিচুপি বলল–ওরা আমাদের কী এক নোংরা পৃথিবীতে ফেলে দিয়ে গেল। নিক, এখাননা শান্ত হও। আমরা বিপদের গর্তে পা রাখতে চলেছি।
আমি আস্তে করে ব্রেককে চুপ করতে বললাম। বললাম-একেবারে মুখের দিকে তাকিয়ে থেকো না। আনন্দ কর। জীবনটাকে উপভোগ কর।
আলো এসে পড়াতে দেখা গেল ম্যামার্লোই যিনি সবার কাছে ম্যামাল ডেনিস নামে খ্যাত তিনি একটি বেদির ওপরে পা দুটি জড়ো করে বসে আছেন। তার মুখটা কাল হয়ে গেছে এবং মুখ দিয়ে হিস হিস শব্দ হচ্ছে। পকেট থেকে দুটো শিশি বার করলেন ম্যামার্লোই। শিশি দুটোর একটা থেকে তেল আর একটা থেকে মদ মিশিয়ে চকচকে জিনিস তৈরী করলেন। তারপর আস্তে আস্তে হাতে দুটো তুলে ধরলেন, নিঃশব্দে একটা কাঁসার আওয়াজ বেজে উঠলো। ম্যামার্লোই তার ঈশ্বর দয়ালু জ্যামাবোলাকে বার বার ভাবতে লাগলেন। আর হঠাৎ আলোর উৎস নিভে গেল। মেয়েটি আমার হাতে টোকা মারল আর শিরা মানুষটি গাঁজা গাজ করতে লাগল।
আবার ড্রাম বাজতে শুরু করল। মোহিনী মায়ার জালে আলো পাক খাচ্ছে। একবার অন্ধকার, আবার আলো, আবার অন্ধকার আবার আলো জ্বলে উঠল, একটা আলো ক্রমশঃ সবুজ হতে থাকলো। আলোতে দেখা গেল লোকটার চকচকে মুখ, আর ভেতরের কোণে কাল জন্তুটাকে। বাজনার আওয়াজ ক্রমশঃ বাড়তে লাগল। মেয়েটা ছাগলটাকে ঘিরে নাচার ভঙ্গিতে ঘুরতে লাগল। মেয়েটা একটা সাদা পোষাক পরেছে। পা দুটো অনাবৃত, চোখ দুটো অনাবৃত, চোখ দুটো বড় বড় গোল গোল কোমল। মৃদু তপ্ত আলোয়, জন্তুটার চোখ দুটোকে অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছিল। একদৃষ্টে জন্তুটা মেয়েটাকে দেখছে।
মেয়েটা অন্ধকারে নাচতে নাচতে আলোয় ফিরে হাঁটুগেড়ে বসে ছাগলটার দিকে এগিয়ে গেল। ছাগলটা মানুষের মতো শব্দ করে কাঁদতে শুরু করল। আমি লুগারকে এক জায়গায় আর স্টিলেটোকে অন্য জায়গায় রাখলাম। ঠিক সময় মনে হল কি যেন স্পর্শ করেছে আমাকে। আমার মেরুদণ্ডের মধ্যে দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে চলেছে। আর স্টিভ বেনেট গজগজ করেছ। মেয়েটা ছাগলটার মতো খুব খণ্ডে আস্তে ঢ্যাঁ ঢ্যাঁ লাগল। মেয়েটার ছাগলটার সামনে না যাওয়া পর্যন্ত চারজনের সামনে হামাগুড়ি দিতে লাগল। মেয়েটার চোখগুলো বেশ কাল হয়ে গেল আর ছাগলটার চোখ জ্বলজ্বল করতে লাগল। ছাগলটা মেয়েটার মুখ থেকে একসময় গাছের পাতাগুলো নিয়ে নিল।
আমি অন্ধকারের মধ্যে ম্যামার্লোই এবং স্যাপালোই-এর শরীরে গঠন দেখতে চেষ্টা করলাম। কে যেন অন্ধকারে এক বিচিত্র শব্দ করে উঠল।
মেয়েটার সমস্ত শরীর কালো তেলতেলে হয়ে গেছে। তার দেহের উদ্ধাঙ্গ অনাবৃত, সর্বাঙ্গে স্বেদ, বাজনার সাথে সাথে মেয়েটা ঘুরতে লাগল কিন্তু সে তখন সম্পূর্ণ উলঙ্গ। তারপরে সে আস্তে করে ছাগলটার দিকে দুলতে দুলতে এল। তার সর্বাঙ্গে তখন বাসনার আমন্ত্রণ। মেয়েটা নগ্ন ঝড় তুলেছে, ছাগলটাকে এখন সে তার পুরুষ সঙ্গী ভাবতে পারে।
লিডা নিজের হাতটা আমার হাত থেকে তুলে নিল। আলোটা সাদা হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। তারপর আবার শব্দ এবং সেই আর্তনাদ!
সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে তখন যেন দামামা বাজছে।
.
০২.
মেশিনগানগুলো ওদের হাত থেকে এমনভাবে লাফিয়ে উঠছে যেন সমস্ত লোকের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটেছে। মাথা গরম করে কাজ করতে চায় ওরা। সামনে যারা আছে সবাইকে করে হত্যা এগিয়ে চল–এই যেন ওদের অঙ্গীকার।
ম্যামালোই এবং স্যাপালোই দুজনেই প্রথম গুলিতে প্রাণ হারালেন। স্যাপালোই নীচে পড়ে গিয়ে আর্তনাদ করতে লাগলেন, আর সেই আর্তনাদের আওয়াজটাকে মনে হলো বন্দুক থেকে কি এক মরাকান্নার শব্দ হচ্ছে। কারা যেন উল্লাসে চীৎকার করে ওঠে–আমরা নিউইয়র্ক দখল করেছি!
আমি লুগার বন্দুকটা তুলে নিলাম। কিন্তু লভভ্রষ্ট হতে হলো, কারণ লিডা আমার হাতটা আঁকড়ে ধরেছে। আর বেনেট রিভলবার উঁচিয়ে ধরতেই বগিম্যান মেশিনগান দিয়ে তাকে সজোরে আঘাত করল। অতর্কিত আক্রমণে বেনেট পিছিয়ে গেল।
ঘাতকরা পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল। এলোমেলো বুলেট ছুটছে। স্টিলেটোর অস্তিত্ব অনুভব করলাম সেই মুহূর্তে।
কালো মেয়েটি ছাগলটাকে নিয়ে পালাতে চাইছে। কালো মেয়েটির ঘন চোখে জন্তুর সোনালী চোখের ছায়া কাঁপছে। মেয়েটির মুখে এঁটো পাতা, সে পাতা চিবিয়ে জন্তুটার বুকে তার ঠোঁট রাখল।
সামনে বেদী দেখতে পেলাম। বেদীটার পেছনে খোলা দরজা। লিডা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, খুব তাড়াতাড়ি না হলেও যে কোন সময়ে পুলিশ এসে যেতে পারে। অন্ধের মতো সিঁড়ি দিয়ে নেমে লিডাকে অনুসরণ করে চলেছি। যদি হক এখানে থাকতেন তাহলে তিনি তার প্রশ্নের জবাব পেয়ে যেতেন। ব্রডওয়ে স্টেশনে এসে আমি সাবওয়ে ট্রেনের কিছুটা দুরে সেই কাঁপুনির শব্দ পেলাম। লিডা হেসে বলল–নিক, তাড়াতাড়ি এস। আমরা যখন ছুটতে আরম্ভ করলাম তখন সাবওয়েটা ভীড়ে ভর্তি। লিজার যৌবনাবতী উরু ঝলসাচ্ছে, মিনি স্কার্টে তার শরীর বিকশিত। লিডা প্রশ্ন করল, আমার দিকে তাকাতে কেমন লাগছে বলতো? কোন জবাব দিতে পারলাম না। প্রায় আধঘণ্টা ছুটতে ছুটতে টপসাইডে পৌঁছলাম। পৌঁছে বুঝলাম আমরা তখন বেশ কিছুটা নিরাপদ। আমার শেষ লক্ষ্য ছিল ওয়েস্ট এণ্ড এভিনিউ। তার আগেই আমরা ৮৪নং হ্যামস্টারডাম-এ থাকা করেছিলাম। তখন মোটর মালিক ছিলেন বুলান, এখন আমরা নিউইয়র্কে ছুটছি।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি। এলিভেটারে উঠে একটু আলো দেখতে পেলাম। রাতের অস্বাভাবিকতার মধ্যে এমনভাবে শুরু বা শেষ হলো আমাদের নেশ অভিসার। রাত মাত্র এগারোটা। লিডা আর আমি হাঁটতে হাঁটতে এক কোণে এলাম। বললাম–একটা জায়গায় বসে আমরা বেশ কিছু সময় ধরে নানা জিনিস নিয়ে কথা বলব। রাস্তার নিয়নের আলো এসে আমাদের উপরে পড়ল। লিডার নাকের ডগাটা কাঁপতে লাগল, গভীর চিন্তিত দেখাল তাকে।
৭৯তম স্ট্রীট স্টেশন অভিমুখী পাতাল রেলের শব্দে ফুটপাত কেঁপে উঠল।
লিডা ও আমি দুজনের অপরিচিত ছিলাম। সেইদিন সন্ধ্যেবেলা মারা যাবার কয়েক ঘণ্টা আগে স্টেভ বেনেট আমাদের আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। লিডার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। লিডা তখন আমার মনটাকে বেশ বুঝে নিয়েছে। আমার হাত ধরল লিডা, উদ্বেগ কণ্ঠে আহ্বান জানাল নদীর কাছে গিয়ে নিজের হৃদয়ে উন্মোচন করবে বলে। আমরা ওয়েষ্ট এণ্ড পার হয়ে ড্রাইভের দিকে হাঁটতে লাগলাম। লিডা বলল, স্টেভ বেনেট যে তাদের লম্বাভাবে সাহায্য করেছে সে আর নেই। হঠাৎ থেমে গিয়ে পেছনে ঘুরে লিডা ফেলে আসা রাস্তাটা দেখতে লাগল। হাতের আঙ্গুলে ঠোঁট স্পর্শ করে লিডা আমার খুব কাছে চলে এল। তার চোখ দুটো তখন জলে ভরা। আমি ওর হাতটা নিজের হাতে নিলাম। বললাম–তুমি কি আমার ফ্ল্যাটে যাবে, না অন্য কোথাও? নিজেকে বড় অসহায় বলে মনে হল। জিজ্ঞেস করলাম সে কি কোন রাস্তা খুঁজে পেয়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিডা বলল–সে আমায় বিশ্বাস করে। তার যৌবন ও সম্পত্তি বিপদের মুখে। আমি তাকে এ অবস্থায় সাহায্য করব কিনা। আমি বললাম, তুমি কখনোই মেয়ে হয়ে তোমার বুঝে উঠতে পারবে না। কিন্তু ওরা তো তোমাকে কালো রাজহংসী বলে ডাকে। তাই না? নীরবে চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে রইল লিডা। বললাম, আমি তাকে এখানে একলা রেখে চলে যাব। যদি সে আমাকে সাহায্য করতে না চায় তবে আমি তাকে জোর করে কিছু করাতে চাই না। ভাবলাম, তাকে আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলে অপহরণের দায়ে পড়তে পারি। কারণ ওকে ঘরে রাখার তো আমার কোন আইন ছিল না।
ছুটে এসে লিডা বলল, আমি যেন তাকে ফেলে না যাই। প্রশ্ন করলাম–লিডা কোথায় যাবে? লিডা জানল-৭৯নং বেসিনে তার একটা বোট আছে। যদি টলটন মাকাউট বোটটার সন্ধান পায় তাহলে বিপদের শেষ থাকবে না।
হককে ফোন করে একটা বোট জোগাড় করে নিরাপদেই যাত্রা আরম্ভ করলাম। আমার ভয় হচ্ছিল বেনেট, হক, সি আই এ কেউই বোট সম্পর্কে কিছু বলেনি। মনে হলো লিডা খুব চালাক। আবার মনে হলো এ এক অন্তবিহীন নৌকা ভ্রমণে রহস্যময়ী লিডা আমার সঙ্গিনী।
.
০৩.
সী-উইচ একটা পেমব্রোক, যার উচ্চতা প্রায় ৫৭ ফুট। একশো ফুট-দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বোটটার দিকে তাকিয়ে তার শান্ত সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করলাম, বুঝলাম এটি অভিজাত জাহাজ।
ঠাকুরে ডিঙিতে যেখানে সী-উইচ নীল রঙের দাগ কাটা অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল সেখানে পৌঁছলাম। তীরের খুব কাছেই দুটো হাউসবোট, একটা কালো রঙের দুই মাস্তুলওলা জাহাজ দাঁড়িয়ে।
লিডা খুব আস্তে আস্তে জাহাজের পিছনে গিয়ে বসল। বলল, এর আসল নাম টৌসিয়ান্ট, নামটা পুরোনো বলে বদলে দিয়েছে। তারপর লিডা আমাকে খুব বিশ্বাস করতে লাগল, আমি তার সঙ্গে এমন ভাবে আচরণ করতে লাগলাম যাতে তাকে মানিয়ে দিলাম সে ইংরেজী তার মাতৃভাষা নয়? লিডার অপটু উচ্চারণ, ভুল শব্দের প্রয়োগ আর অকারণ কুণ্ঠা আমার আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করল।
এইভাবে কথায় কথায় ওর সম্পর্কে বেশ কিছুটা জানতে পারলাম, শুনলাম যে সে একজন হাইতি মেয়ে ও তার বাবা কোন ইউরোপীয়। মানলাম সে পাপাডকের মেয়ে। বয়েস তার পঁচিশের নীচে, তাকে নিরীক্ষণ করতে হবে এবং তার সঙ্গে কাজ করতে হবে–সেটাই আমার প্রতি শিয়ার আদেশ। বড় একটা জাহাজের পাশে আমরা এলাম। সে সিঁড়ি দিয়ে উঠল। সে বলল মাথাটাকে এখনি একটি নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে যেতে হবে। লিডার প্রতি আকর্ষণ বোধ করলাম। যতক্ষণ না সে একটু সহজ হয় ততক্ষণ আমি কোন জায়গায় যাব না বা তার সঙ্গে কোন কথাও বলতে পারব না।
আমরা তখন ডেক হাউসের দিকে এগোলাম, সে আলোটার ওপর পর্দা টেনে দিল। লিডাকে বললাম, আমাকে নিজস্ব কায়দায় চলতে হবে। আমি হব ক্যাপ্টেন আর লিডা হবে খালাসী। আমার আদেশ মতো লিডাকে কাজ করতে হবে। লিডা জানাল, কোন সম্পর্কে সে কিছু জানে না বলেই আমার উপর সে নির্ভর করেছে। লিডা বোট চালাতে জানে না জেনে অবাক হলাম। পর্দা টানতে টানতে জানাল সে বোট চালাতে জানে কিন্তু এই মুহূর্তে তার ভালো লাগছে না। আমি জ্যাকেট আর টুপিটা নিয়ে চেয়ারে রেখে প্লে বয় জলখাবার টুপিটা পরে নিলাম। লিডা হঠাৎ লুগার আর স্টিলেটোর দিকে তাকিয়ে তার গোলাপী ঠোঁটে চাপ দিয়ে বলল, তুমি একরাতে দুজনকে মেরেছ? বল কে তুমি? কি তোমার আসল পরিচয়?
আমি তাকে আমার নথিপত্রটা দেখলাম, বেনেট আমাকে পরিচয় দিয়েছিল নিক কার্টার বলে। লিডা এগিয়ে এসে বলল–ক্যাকটন একটু মদ খাবার অনুমতি দেবে? বার-এর কাছে গিয়ে আমি ঠাণ্ডা গ্লাসটা তুলে নিলাম আর লিডাকে একচুমুক নিতে বললাম। সে ভাবে গ্লাসটা আমার দিকে তুলল, তার চলনে বলনে কিরকম একটা যেন হাসি-ঠাট্টার ভাব। হাসতে হাসতে তার বাদামী চোখ দুটো চারদিকে ঘুরছিল। সে হঠাৎ আমার দিকে থেকে পড়ে আমার ঠোঁটে আলতো চুমু খেল আর সেই সুযোগে আমি তার লুকনো পিস্তলটা চামড়ার থলিটা থেকে কেড়ে নিলাম। এটা প্রায় ২৫ বোরের। তার ধারটা হাতীর দাঁতের তৈরী। লিডাকে বললাম, লিডা যখন আমাকে বিশ্বাস করতে পেরেছে তখন আর এটা রাখার নিশ্চয়ই কোন দরকার নেই। এই বলে আমি ইঞ্জিনটা দেখতে চলে গেলাম। আলোতে ইঞ্জিনের কাছে একটা ছোট বাক্স দেখতে পেলাম। এটাতে ১৬ ফুটের একটা নট। ইঞ্জিনটাতে ৬২০ গ্যালনের জ্বালানী আর ১৫০ গ্যালন জল ধরে।
ডেক হাউসের বড় বড় লম্বা বোলের মধ্যে অদ্ভুত ধরনের কিছু বন্দুক রয়েছে। হককে খুশী করার জন্য যেমনি অনবদ্য অথবা হাইতি অভিযানে। ডিঙিটাকে টেনে বোটের মধ্যে রেখে ইঞ্জিনগুলো চালিয়ে দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দিলাম। এবার ফ্রাইব্রিজের দিকে এগোতে হবে। প্যানেলের চার্টটা পড়ছি এমন সময়ে লিডা কাছে এসে আমার কানে চুমু খেল এবং ভুদু গীর্জার কথা আমার মনে পড়ে গেল। আমি যখন ইঞ্জিনের যন্ত্রপাতিগুলো কিভাবে কাজ করছে, তাদের গঠন, কাজ এসব পরীক্ষা করছিলাম তখন লিডা আমার চেয়ারের সামনে এলে তার ঠাণ্ডা হাত দিয়ে আমার গলা টিপলো। এইভাবে আমাদের সম্পর্কটি নিবিড় হয়ে গেল। আমি চোখটা একটা ট্যাঙ্কারের ওপরে রাখলাম, লিডাকে নদী থেকে প্রায় চল্লিশ মাইল দূরে মনট্রোসে গিয়ে টম মিটছেন-এর সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে আমরা ওখানেই থাকব। এরপর আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠল ওয়াশিংটনের মনোরম সেই সেতু। লিডা আমার কাঁধে হাতে রেখে বলল, ছাগলটা থেকে আমরা বেশ টাকা তুলি। তুমি আর বেনেট বিনা পয়সায়। টিকিটের দাম কিন্তু একশো ডলার। আমি বললাম–যাই হোক, খেলাটা অত্যন্ত নোংরা। পশুকামিতার চূড়ান্ত উদাহরণ। ভুজু গীর্জার কথা বলতেই লিডা আমার শরীরের ওপর আছড়ে পড়ল। আর বেশ উত্তেজিত মনে হলো তাকে।
লিডা ফ্ৰেন্সিং-এর উপর অংশে, অন্ধকারে আমার দিকে আড়চোখে তাকাতে আমি সম্মতি জানালাম ওর এই খেলায়। সিগারেটের প্যাকেটেটা তার হাতে দিলাম। লিডা গোল্ড এন-সি-টাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করল। বলল সে, এখন আমাকে তার সত্যিই নিক কার্টার বলে মনে হচ্ছে, সেই নিক যে ভালোবাসার তুণে বিদ্ধ করে শরীর।
বললেন, নদী মাঝ বরাবর পার হলাম। জারসি নদীর তীরে কটি বার্জেল দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাদের চোখে ধরা দিতে চাই না। হঠাৎ বললাম আজ রাতে তুমি কি মাতাল হবে সুন্দরী? অস্ফুটে বলল, এল. এস. ডি.।
স্মিড জিওনের বলল, একটা কার্বকে ক্ষতি করে না। মানুষকে খুব উত্তেজিত করে তোলে।
এরপর লিডা ধোঁয়া ছেড়ে অদ্ভুত ভাবে হেসে উঠল। বলল, রাতে তুমি দুজনকে হত্যা করেছ। তুমি একটা নিষ্ঠুর খুনী। সবাই তোমাকে দেখেছে। আমি বললাম, আমি এক্স-এর একজন বিশ্বাসী লোক! আমি আমেরিকার হয়ে কাজ করি। ভাবলাম এর আগে হয়তো এক্স-এর নামই লিডা শোনেনি। বহুরূপীর মস্ত মেয়েটা তার ভাব বদলালো। থুতনিতে গোবলেট রেখে জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়েই হেসে বলল, আমি শুধুই ব্ল্যাকমেলার, আমার তো তোমার মতো উঁচু পা নেই। লিডাকে বললাম। হাইতিতে আক্রমণ হলে তা পরিচালনা করা আমার দায়িত্ব। আঙ্কেল স্যামুয়েল হাইতিতে এইসব অরাজকতা পছন্দ করে না। ডোমিনিয়ম রিপাবলিকের সমস্যা তাকে ব্যথিত করে। তিনি সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চান। এ ব্যাপারে লিডার মতামত জানতে চাইলে লিডা বলল, যা কোমল, সুন্দর আর সৎ তাই আমি ভালোবাসি। আমার মনে হয় স্টেভ বেনেট যে সমস্ত কথা বলেছিলেন তা সমস্তই ঠিক। স্টেভ আমাকে সিয়াতে নিয়ে গেছিল। কিন্তু এক্স সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। লিডা আমার পিঠে আঙুল দিয়ে আঁচড় কেটে বলল, তাকে হাইতি অভিযান সম্পর্কে বলা হয়েছে। ডাক্তার রোমেলা ভ্যালডেজকে রক্ষা করতে হবে। নানা ডক তাকে কিডন্যাপ করেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। বেনেট যে কাজ করত মেয়েটা আমাকে সে কথাই বলছিল। হককে কোনো কথা বলা বা না বলা পর্যন্ত আমি কোনরকম সঠিক পরামর্শ দিতে পারলাম না। কিন্তু যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ মেয়েটাকে বেশ সুখে শান্তিতে রেখে দেব। আমি বললাম, ড. ভ্যালডেজকে পাওয়া খুব সহজ নয়। কিন্তু তার জন্য তোমাকে জীবন বিপন্ন করতে হবে না। এরজন্য অনেক সময়ের দরকার না হলে ক্ষতি হতে পারে। তারপর লিডাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হাইতিতে অক্রমণ করা হয়েছে? লিডা জানাল, শুধু সে জানে বহুবার আক্রমণ হয়েছিল এবং নানা ওক এজন্যে অনেক সময় নষ্ট করেছিল। লিডাকে বললাম, তাকে যে কাজগুলো করতে হবে আমি করে দেব। লিডা জানাল হাইতির আক্রমণ কিংবা ডা. ভ্যালডেজের কোন ব্যাপারেই বেশী আগ্রহ নেই। সে আমার সাথে আনন্দের মধ্যে ডুবে যেতে চায়।
টম মিটলেনের মেরিনার খুব কাছেই ক্ৰটন ক্লাবের আলোটা নিভে গেল। লিডা বলল, আমরা দুজনই দুজনের জন্য সব কিছু করব। ভাবলাম লিডার তো কাজের এত আগ্রহ ছিল, তাহলে সে শরীরী খেলার পুতুল হচ্ছে কেন? লিডার আমাকে প্রথম জন ছিল। আমাকে সে যত না ভয় করত টনটন ম্যাকিউটকে সে বেশী ভয় করত। ভুদু চার্চে যে মারাত্মক কাণ্ড ঘটেছিল সেটা বেশ বিশ্বাসজনক ছিল।
আমি লাখ লাখ ডলারের বোট এবং অস্ত্রের ওপর বসে আছি। তখনকার মতোই আমি তার পছন্দসই মানুষ, সেই জন্যই আমি তাকে বিশ্বাস করি।
পানীয় নিয়ে ফিরে এলে লিডাকে জিজ্ঞেস করলাম বোটটার মালিক কে?
লিডা সিগারেট জ্বালালো। স্টানফোর্ডের বাসিন্দা কি এক্সচেঞ্জের কর্মী ডোনাল্ড ক্যাম্পবেলের কাছে আমাদের নৌকা বাঁধা আছে। অবশ্য তিনি এখন আর নেই। কোন কাগজ? স্টেটরুমের ড্রয়ারে যা আছে? মাথা নাড়লাম, আজ রাতে দরকার নেই। মেয়েটা একটা সিগারেট আমার মুখে দিল এবং আঙুলগুলো আমার চিবুকে দিল, বলল, আমি যা করতে চাই তাই কর। সে আমার গালে চাপ দিল। খুব তাড়াতাড়ি করতে লাগল। তখন সে আর ধৈর্য ধরতে পারল না।
এরপর শুধু সে আর আমি এবং মুঠো মুঠো অন্ধকার।
.
০৪.
ভাসমান একটা ডকের পাশে সী-উইচটাকে রাখলাম। কালো রঙের, রোগা একটা ছোট ছেলে, মাথায় ছোট চুল, এসে অভিবাদন করে দাঁড়াল, বললাম, আমাদের অপেক্ষা করে আছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রাত। লিডা ভ্রুকুটি করে বলে ইয়েস, ক্যাপ্টেন ডার্লিং। ছেলেটাকে কাঁধে নিয়ে ডক-বোর্ডিং এবং থামের দিকে গিয়ে প্রশ্ন করলাম টম মিটলেন কোথায়? ছেলেটি বলল তিনি অফিসে আছেন।
টম মিটলেন যখন হংকং-এর কনসিউলেটর-এর জাহাজের পরিচালক ছিল তখন আমি তাকে জানতুম, সে তখন একজন বুড়ো গোলন্দাজ বিদ্যার সারজেন্ট ছিল। আমাকে চিঠিতে জানিয়েছিল সে তার জীবনটা জাহাজে কাটাতে চায়। ইটের একটা ছোট বাড়িকে উদ্দেশ্য করে জানলাম ওটাই অফিস। বললাম, টমকে আমি চিনি, তোমাকে আমার এখন আর দরকার নেই বলে পাঁচ ডলার দিয়ে বিদায় করলাম।
দরজাটা অর্ধেক ভোলা ছিল। টম দরজার দিকে পিঠ করে বসেছিল। মাথায় টাক, ঘাড়টা সামান্য উঁচু। দরজা ঠেলে দাঁড়াতে টম চেয়ার ঘুরিয়ে তাকাল আমার দিকে। প্রভু যীশুকে স্মরণ করে বললাম, নোপ তুমি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছ। নিকোলাস হান্টিং কার্টার বেঁচে থেকে খুব সামান্যই খরচ করেছিল। সে একটু সাহায্য চেয়েছিল। চেয়ারে বসা অবস্থায় টম আমার হাতদুটোকে মুঠো করে ধরল। মুখটা আলোর মতো জ্বলজ্বল করছিল। একটা ড্রয়ার খুলে একটা ওল্ড পাইপ ড্রাইভার নিল। আর দুটো গ্লাস নিয়ে এল। গ্লাসটা হাতে নিয়ে এল। গ্লাসটা হাতে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললাম, টম তোমাকে দেখে আমি খুব আনন্দ পেলাম। কিন্তু এখন আমাদের মদ খেয়ে মাতলামি করবার সময় নয়। আমার এখন সাহায্য প্রয়োজন যা একটু রহস্যপূর্ণ। টম জানত না যে আমি এ. এক্সই, সে শুধু জানত যে, আমি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ করি। আমার মনে হলো যে, সে বোধহয় আমাকে সি. আই. এ বলে ভাবছে। তার দিকে দাঁত খিঁচিয়ে বললাম–বেশ। ভালো লাগছে। তোমার ব্যাপারটা খুলে বলতো। সব কিছু কেমন রহস্যময় মনে হচ্ছে। কোয় যেন গোলমাল আছে। বললাম সব লোককেই আমি চিনি। কেউই নিজেকে বিরক্ত করবে না। টম খালের দিকে চেয়ে বলল, তোমার কোন সাহায্য দরকার আছে কি? মাথা নেড়ে না বলে আবার বললাম যে, সে যেন সৈন্য দলের সঙ্গেই থাকে যদি তার গায়ের জোরের দরকার হয়। টম জানাল বার্ধক্য তার সারা অঙ্গে এসে হাজির হয়েছে। এরপর ডেক্স থেকে ফোনটা তুলে টমকে বললাম, আমি তার কাছে থেকে শুধু আমার স্বেচ্ছাধীনতার সাহায্য চাই। বললাম আমি যেখানে ছিলাম এবং যেখানে আছি সেখান থেকে প্রায় ৫৭ ফুট দূরে প্রত্যেকটা লোককে যেন রাখে।
টম পয়েন্ট ৪৫ অটোমেটিক নিয়ে বেরিয়ে এল, যেটা ১৯১১ সালের মডেল। বলল–টমি আমাকে ছেড়ে যেতে চাও? আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। অপারেটরকে ডায়াল করলাম। টমকে আমি খুব বিশ্বাস করেছিলাম। এবং তার কাছে একটা এস পি তালিকা ছিল যাতে শুধু রহস্যগুলোর রহস্যই থাকবে। বললাম সে থাকতে চায় তাই যেন কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখে।
অপারেটার ওয়াশিংটনে এ. এক্সকে ডাকার জন্য বলল, রাত ডিউটি অফিসারকে পেশায়। শুনলাম হক নিউইয়র্কে আমাদের দেখার জন্য ছুটে আসছেন। ভাবলাম তার প্রথম এজেন্টকে দেখার জন্য ওয়াশিংটনে এসেছিল বুড়ো লোকটা? নরকের দুঃস্বপ্নের রাত শুরু হতে চলেছে। আমায় বেয়ারা চালাঘর থেকে ফোন করতে আশ্বস্ত হলাম যে হক তাহলে পৌঁছে গেছেন। বললাম, ভদ্রলোককে থাকতে বল। আচ্ছা উনি কি এখানে আছেন? দুরাভাষে ভেসে এল হকের হুঙ্কার, নিক, আশা করি তোমার কর্তব্য থেকে তুমি এতটুকু বিচ্যুত হওনি। আমি ঠিক বলছি তো, এস, বি.-র, উপরে অনেক খুঁটিনাটি কথা আছে। এর অনেক ঘটনাই আমাদের জানা নেই কিন্তু এটাই হলো সমস্ত সমস্যার উৎস। স্টেভ বেনেটের যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল তার মধ্যে নরকের সৃষ্টি হয়ে গেছিল এবং এক্স এই কাজের মধ্যে যুক্ত ছিল না। কিন্তু মেয়েটা কোথায়? আমি বললাম, আমি একটা খেলনা রাজহাঁস পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু লাপার ছেলেরা লাপাকে খুব গর্বিত করেছিল। হঠাৎ উন্মাদনা ভেসে আসে, আমি দুটোকেই জীবন্ত অবস্থায় মেরে ফেলেছি। বলালম, আমি গানবোটও পেয়েছি। হক বললেন, পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে যদিও এখন নিরাপদ। জিজ্ঞেস করলেন হেডকোয়ার্টার থেকে তার নামে কোন নির্দেশ এসেছে কিনা। আমি তখন তাকে অর্ডার করলাম। ১৫ মিনিটের জন্য আমি জিনিসগুলো নিলাম। বেশ কিছু তার কমপিউটারের কাছে গুম গুম শব্দ করে উঠল, তখনই আমি হকের সঙ্গে শেষ কথা বলেছি। হককে বললাম যে, সমস্ত অভাবটাই আমার জন্যে। হক বললেন, মুখগুলোই এখন বাজে বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বললেন, আমি একা ঐগুলো নিয়ে হাইতিতে শিয়ার কাছে যাব। আমি জানতাম যে ঐ এক্স-এর কোন লোক নেই যে আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবে, বললাম, এটা খুবই জটিল ব্যাপার। বললাম, এখন আমাকে আপনার কাছে থেকে পৃথক হতে হবে এবং শুনতে হবে, বিশেষ করে ভি.এর উপর। হক বললেন ড. রোগেরা ভ্যালডেজ-এর সমস্ত রহস্য মানতে হবে, দরকার হলে তাকে হত্যা করতে হবে। হক বললেন, যদি আমার কিছু করার থাকে তবে প্রথমে আমি সি. জি. পরে কে, ডর তারপর নতুন ব্যাপারগুলো দেখব। আমি বললাম হক যেন সমুদ্রের গার্ডের সঙ্গে থাকেন এবং জানতে চাইলাম ওয়েস্ট-এ নতুন ব্যবস্থার জন্য হাত বাড়াব কিনা। বললাম, আমার এখানে যে ভাউচার আছে তার সম্মান আমি রাখব। হককে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রাখলাম। মনে মনে বললাম যে ভগবানের জোরেই এত খেলা চলেছে। হাইতিতে ভ্যালডেজকে হত্যা করতে হবে কিন্তু লিডার ওপর নজর দিতে হবে। তাকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে কারণ অভিযানে সফল হলে সিয়া আর নিষ্ঠার হক লিডার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইবে। দরজায় টোকা দিতে টম বেরিয়ে আসতেই বললাম যে সমস্ত কাজ শেষ। বললাম একটা কাগজ দাও, আমি তোমার জন্য একটা ভাউচার করে দেব। টম বলল, ওসব কিছুরই দরকার হবে না। আমি বললাম ওটা করের টাকা! আমি তোমাকে তোমার নিজের টাকা দিয়ে দেব। টম বড়সড় করে তালিকা বলল ঐ ভাবেই সে কাজটা করবে।
বিলিং ফর্মটা এমনভাবে হিজিবিজি করে লিখলাম যাতে করে সবাই মনে করে ওটা ঠিক আছে। লেখা আছে কাজের জন্য দুহাজার ডলার। টমকে বলালম সার রাত এখানে থেকো। জাহাজের কাছে কেউ এলে দুটো গুলির আওয়াজ করবে, কিন্তু কেউ যেন না মরে। টম বলল, সে দিকে হাঁটবে কারণ লোকটা সেখানে গান গাইছে। বললাম, তুমি বিয়ে করছ অথচ আমায় সে খবর দাওনি। টম বলল, তার ওজন এখন তিনশো পাউণ্ড। নাম মারটিন। বললাম, মানি না তার সঙ্গে দেখা হবে কিনা তবে তাকে ধন্যবাদ এবং আজকের রাত্রির জন্য আমি তার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করব। অভিবাদন জানিয়ে টম সম্মতি জানাল। সী-উইচ-এর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে মনে হলো সে যেন বুঝতে পেরেছে যে সে কি করছে আমি জানতে পেরেছি। কিন্তু বোলেরা-এর ড্যান্স ল্যাসলিভ চলছে! ডেকথাউলের দিকে এগিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়ালাম। সে সাদা মোজা এবং সাদা বেল্টওয়ালা জামা পরেছিল। ডিনারের উপর সোজা হয়ে নিজেকে এলিয়ে দিয়েছে। বললাম, আজ রাতে আমাদের কেউ বিরক্ত করবে না। জামা-কাপড় ছেড়ে তার কাছে লিডা আসতে বলল। বললাম সাদা গার্ডার বেল্ট এবং মোজা সাদা চামড়ার ওপর মানায় বেশ।
প্রায় ঘণ্টা দুই-পরে খাটের পাশে মেঝে থেকে উঠে পড়লাম। একটা আলো দেখতে পেয়ে সেটা দেখতে চলে গেলাম। তারপর নৌকাটার দিকে এগোলাম। এরপর বাথরুমে গেলাম। দেখলাম সী-উইচ ৭৯ স্ট্রীটের বেসিনে দাঁড়িয়ে। লোহার জিনিসগুলো তুলে নিলাম। এবার শেষপর্ব শুরু হতে চলেছে।
.
০৫.
স্টেটরুমে গেলাম জামাকাপড় পরার জন্য। লিডা তখন ঘুমোচ্ছিল। আমার সমস্ত পোষাকই নষ্ট হয়ে গেছিল। আমার ঠাণ্ডার উপযোগী কিছু পোশাকের দরকার হল। বাথরুমের কাছে বিরাট ওয়াড্রোব দেখলাম। তার মধ্যে লিডার জামাকাপড়ই ঝুলছিল। জাহাজের সাজসজ্জার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বারো জোড়া জুতো দেখলাম। এসবের পিছনে হঠাৎ চোখ পড়ল একজোড়া কালো টুপির বাক্স আর সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় যেন দুম্ দুম্ করে কি একটা বেজে উঠল। টুপিগুলো কার? আলোয় নিয়ে গিয়ে খুলে ফেলাম বাক্সগুলো। লিডার সম্পর্কে খুব খারাপ মনোভাব তৈরী হল। নৌকার দিকে একটু এগিয়ে যেতে একটা ত্রিকোণাকৃতি দাড়ি এবং সিন্দুক দেখলাম। ছটি বোড়া রয়েছে। জিনিসগুলো সিন্দুকের বাইরে রাখলাম, এবং টুপির বাক্সটা ভেতরে রাখলাম। আমার ভালো জামাকাপড়গুলো খুলে বোড়াতে রাখলাম। জামাকাপড় পড়লাম ম্যাকোটির স্লীভ বেশ কভ, জামায় পিস্তল রাখার খাপ রয়েছে কিন্তু কোন তালাচাবির ব্যবস্থা করিনি। অন্য একটা বোড়ার কাছে গিয়ে যুদ্ধের অস্ত্রগুলির ওপর চোখ রাখলাম। কমোড়া স্লিপ দেখতে পেয়ে পকেটে রাখলাম। একটা বোট নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। স্টেটরুমে পৌঁছে দেখি লিডা তখনও ঘুমোচ্ছ। স্টোভ জ্বালিয়ে কফি তৈরি করে লিডাকে দিলাম, লিডা আস্তে আস্তে উঠে পড়ল। লিডা একটা বাঁকা চাহনিতে বলল, ক্যাপটেন তোমাকে ধন্যবাদ, তুমি খুব সুন্দর, তোমাকেই আমার দরকার। বললাম–তোমার মতো মেয়েই সব কিছু পারবে। আমার দিকে তাকিয়ে লিডা ওর বেল্ট পিস্তলটা নিল। বলল, আমাকে সে বিশ্বাস করে। আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, লিডা তুমিই ঠিক। যদি আমি তোমাকে কাস্টমস এবং কোষ্টগার্ডের দিকে এগোতে হবে। তার জন্য তোমার প্রায় পাঁচ বছর লাগবে। পাপাডক-এর লোকেরা তোমার জন্য অপেক্ষা করবে যখন তুমি বেরিয়ে আসবে। তারা তোমাকে ভুলবে না। লিডা চিৎকার করে বলল, তুমি সব জানতে? বললাম, হ্যাঁ, তোমার এ বিষয়ে কি মতামত? লিডা বলল, আমি কোনরকম সিদ্ধান্ত নিই নি। যখন সমুদ্রে থাকব তখন জাহাজের সমস্ত অস্ত্রগুলো তুলে নিতে পারব। বলল, নিক, সমস্তই টাকা। আমরা অনেক কষ্ট করে অনেক ত্যাগ করে আমরা সব কিছু পাই। বললাম, লিডা তুমি আমাকে বাড়তে দিও না। তখন ড. রোমেরা ভ্যালডেজকে রক্ষা করার জন্য এইচ. আই. ইউ. এস. ওপরে টাকা তুলে ধরল। এক অর্থে তুমি টাকাটা ভাঙ্গিয়ে নিতে পার। আমি মনে করতে লাগলাম যে যখন সে খুব উত্তেজিত হয় উঠেছিল তখন তারা কিভাবে এসেছিল। সে বলল যে, সে ব্ল্যাক সোয়ান। আমি যেন খুব কঠিন ভাবে কিছু না করি। আমার কোন লোক আমার নামে নালিশ করবে না। যে কোন প্রকারেই হোক ডুভেলিয়র ড, ভ্যালডেজকে বাঁচাতে যাবে না। সে প্রায় দুবছর ধরে আমাদের শুধু তিরস্কার করে যাচ্ছে। আমি এইসব অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করে যাচ্ছি। এই বোটের জন্যে টাকাগুলো খরচ করার সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি। তাই তুমি পাপাকে মেরে ফেলল এবং গভর্নমেন্টের হাতে দিয়ে দাও। আমি র্যাঙ্ক এবং এইচ আই ইউ এস-এর ফাইলটা দেখে নিলাম। তারা সবাই বেশ কিছু টাকা পয়সা দান করেছিল। বললাম, হাইতি থেকে যাবার পথে অনেক কথা আছে। সে আমার কাছে বসে চুমু দিল এবং হেসে উঠল। বলল, তুমি সত্যি কিছু করতে যাচ্ছ, বললাম, আমার ড. নেভেজের কাছে যাচ্ছি। তাকে আমরা বার করে আনতে চেষ্টা করব। লিডা স্নানঘরের দিকে চলে গেল। আমি ডেকহাউসের কাছে গেলাম। টম ডকের একবারের শেষে একটা সিগারেট মুখে নিয়ে তাকিয়ে আছে। বললাম, টম তুমি ভাউচারটা একটু খতিয়ে দেখ। টম বলল, আমি ভাউচার দেখব। বললাম, টম এটা কেউ পারবে না আর তুমি বুড়ো হয়ে গেছ, আমি তোমাকে আবার একবার দেখাব। সে বলল, যে কোন সময় বলে হাত তুলে ডাকের পিছন দিকে এগোতে লাগল। মিনিট খানেক পর একটা মোটরগাড়ির আওয়াজ শুনতে পেলাম। ষ্টেচুরসের দিকে এগোলাম লিড ততক্ষণে জল খাবারের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। বললাম, তুমি একেবারে নায়িকা হয়ে গেছ। তোমাকে পাপাডকের ছেলেরা খুব সহজেই গুলি করবে।
বলল, তারা আমাকে সহজেই গুলি করতে পারত। কিন্তু যখন তারা তীরের কাছে গেল তাদের কেউ রক্ষা করতে পারল না। লিডাকে বললাম সে যদি সাধারণ পথেই খেলতে আরম্ভ করে তবে তার প্রতি আমার কোন যত্ন থাকবে না। কিন্তু এখন তাদের অনেক কাজ।
বগিম্যান সী উইচটিক তখনও লক্ষ্য করেনি। বলল, আমি জানি আমি খুব তাড়াতাড়ি মরে যাবে। তাকে খুব তাড়াতাড়ি নদীর ধারে নিয়ে যাওয়া উচিত মনে করে আমরা পোতের কাছে গেলাম। তখন তাদের খুব বিপদ মেনেও আমি কোনরকম আভাস তাকে দিলাম না। ডেকহাউসে গিয়ে রেডিওটা খুলে ট্রানসলিভারের চাবিটা খুললাম। লিডাকে জিজ্ঞেস করলাম তার কাছে কোন চাবি আছে কিনা। বললাম, শুধু আবহাওয়া খবরটা জানতে চাই আমি। একটা সবুজ আলো দেখে আমি চাবিটা টিপতেই সেই থেকে একটা জোরে শব্দ হল। চাবিটা খুলে দিয়ে ডায়াল করলাম। দুটো তার একসঙ্গে কাজ করছে শুনতে পেলাম। আমি খুব দূরে সাউথ ক্যারোলিনা সমুদ্রের ধারে এক্স স্টেশনে সি কিউ পাঠালাম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আভাস পেলাম সঙ্কেত আসছে আরো এগিয়ে যাও, এনগ্রি এগিয়ে যাও, ওকে
আমি চাবি ঘোরালাম-কে-টেসটিং, কে-টেসটিং এ-আর…। উত্তর এল। তারপর সব চুপচাপ আমি ইঞ্জিনটা চালাতে গেলাম। সমুদ্রের জলের ওপর সূর্যাস্তের সোনালী রূপালী রঙের আভা পড়ল। জাহাজে আহত ব্যক্তিদের থাকার স্থান থেকে লিডাকে টেনে আনলাম। অবাক হলাম যে কিভাবে টাকাগুলো হারালো লিড়া। এখন যে কোন প্রকারেই হোক আমাকে সমুদ্রে যেতে হবে। আমার খুব অবাক লাগল যে কিভাবে লিডা আমাকে মিথ্যে কথাগুলি বলছে। যদিও আমিও তাকে মিথ্যে বলেছি তবু বেশী নয়। লিডা ডেক হাউসে ছিল। আমি বোটের কাছে ছুটে গেলাম। পাঁচ মিনিট পর আমি ডেক হাউস থেকে একটা জোরে শব্দ আসতে শুনলাম। সরু হ্রদের তলা দিয়ে জাহাজটা চলতে লাগল। লিডাকে বেশ কালো লাগছিল। সে বলল, সে অসুস্থ। বলালম, ওষুধ খেয়ে না কমলে অন্য ব্যবস্থা করা হবে। মেয়েটা তার হাতটা তার মুখে রেখে বলল–বাস্টার্ড! বেজম্মা! একজন কোষ্ট গার্ড এ্যামব্রোস লাইটের তলায় আমাকে তুলে ধরল। তার নাম এক্সক্যালিবার। দেখলম যে একজন অফিসার কাঁচের মধ্যে দিয়ে লক্ষ্য করছে। তারপর এক্সক্যালিবার আমাকে ছেড়ে পূর্বদিকে ছুটতে লাগল। তারপর দক্ষিণে তখন হক ঘটনার জালে আবদ্ধ।
.
০৬.
সমুদ্রের সম্ভাবনাগুলো আর একবার মিলে গেল, আমি ভার্জিনিয়া বীচের দিকে চলেছি। আমার লক্ষ্য পশ্চিম প্রান্ত। জাহাজের সঙ্গে দেখানো সি. ডবলিউ ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সাধারণ সংকেত কথা চলছে। আমার সঙ্গী আমাকে কিউবার পশ্চিমপ্রান্তে নিয়ে যাবে। সেখানেই বিদায় নেবে সে। কিউবা থেকে গুয়ানটাগোমা পার হয়ে আমি হাইতির উত্তর উপকূলে একা পৌঁছব। গত দুদিন ধরে লিডার মধ্যে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আমি তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। এমনকি তাকে কাজে রেখে আমি নিশ্চিন্ত বারো ঘণ্টা ঘুমতে পারি। ওয়েবলি বন্দুকটা অপটু হাতে ঝাঁকানি দিলে আমার মৃত্যু হতে পারে। বললাম, কুসিয়ারটা যেন একলা চালাবার চেষ্টা করো না। উপকূলের রক্ষীদের চোখে পড়ে যাবে। রিভলবারটা নামিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে লিডা বলল, পৃথিবীতে আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো টাকা রোজগার করা। তার হাত থেকে ৩০০ পাউণ্ড ওজনের ওয়েবলিটা পড়ে গেল। তবু তাকে ভয় দেখানোর জন্য বললাম-তুমি কি ছোট মেয়ের মতো বন্দুক নিয়ে খেলা করতে চাও। আমাদের অভিযানে এরাই আসল বন্ধু। এরা না থাকলে আমরা অসহায়। লিডা প্রশ্ন করে, এতবড় বন্দুক দিয়ে কি সত্যিই মানুষ মারা যায়? তারপর সে হঠাৎ দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল। আমি জানি লিডা কোন সহানুভূতি চায় না। বললাম, আমাদের দুজনের স্বার্থে যত পার কেঁদে নাও। ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে বা দিকে বিন্দু বিন্দু আলো দেখতে পেলাম। হক আমাকে আরও পশ্চিমে যেতে বলেছেন। ক্যারিবিয়ান পার হয়ে ফ্লোরিডাকে বিদায় জানিয়ে আমরা নির্দিষ্ট বিন্দুতে পৌঁছব। জায়গাটা এখান থেকে কত দূর ঠিক বুঝতে পারছি না। হয়তো নির্দিষ্ট বিন্দুর কাছাকছি এসে গেছি। অথবা এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। ওয়াশিংটন থেকে পাওয়া নির্দেশমতো কাজ করতে হচ্ছে। হেডকোয়ার্টার তো জানে না যে, ওই কাজের মধ্যে কত বিপদ মিশে আছে।
গালফ যেন শান্ত এক দিঘী। পরিবেশ এপ্রিলের পক্ষে আশ্চর্য মনোরম। আমি লুগার আর স্টিলেটো পরীক্ষা করলাম। লিডা আজ স্ফূর্তিতে রয়েছে। গুন গুন করে গান গাইছে। আমরা অকারণে ডেক হাউসের কাঠের পাটতনের উপর গড়াগড়ি দিচ্ছিলাম। লিডা আমার শরীরের এখানে ওখানে দংশনের মৃদু আঘাত দিল। উত্তেজনার অবসানে লিডা আবার শান্ত ও ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তার আবেগ আপাতত নিরুদ্দেশ, সে এখন কাজের মধ্যে ফিরে এসেছে। ডুলি স্ট্রীটের কাছাকাছি পৌঁছল সী-উইচ। এই মুহূর্তে লিডার মুখে বিচিত্র হাসির ছটা, পরিচ্ছন্ন অথচ তিক্ত। আমরা পরস্পরকে এখন বিশ্বাস করতে পারি। বললাম–তোমার ওপর আমার অগাধ আস্থা। আমি ডিঙি নৌকাটা কোথায় জানি। ভক্তি সহকারে বললাম, আড়ালে থাকতে চেষ্টা কর। কে জানে তারা শশব্দ কিনা। আমি চাই না যে, ওরা তোমায় দেখুক। হাত নেড়ে লিড়া ডেক হাউসের দিকে ছুটতে লাগল। মনের মধ্যে মৃদু আশা যে, তীরে পৌঁছেই এক্স এজেন্টের দেখা পাব।
ভাবতে পারিনি যে হকের দেখা পাব। ঘামে ভেজা কলার আর বিরাট টাই দেখে তাকে ঠিক চেনা যাচ্ছে। তার সাদা চুলে পানামার ছাপ সহজেই চোখে পড়ে। মুখে সস্তা দামের চুরুট। তার দীর্ঘ বাহু প্রসারিত করে এগিয়ে এলেন আমার দিকে–বললেন, নিক, তোমাকে ঠিক একজন দস্যুর মতো দেখাচ্ছে। আমার পাশাপশি হাঁটতে হাঁটতে বলতে থাকেন-হাতে বেশী সময় নেই, ওয়াশিংটন থেকে অনেক নির্দেশ এসেছে। জরুরী কথা আছে। মনে হচ্ছে কিউবাতে অস্ত্রের সংকট দেখা দিয়েছে। আমি মৃদু শিস দিই খুবই উদ্বেগজনক। পাপাডকের হাতের থাবা থেকে কি ভ্যালডেজকে ছিনিয়ে আনা যাবে?
আনতেই হবে? তাছাড়া আরও কিছু কাজ আছে। চাবির গোছাটা হাতে দিয়ে বললেন, তুমি পালাও, মনে হচ্ছে শত্রুরা তোমার হদিশ হারিয়ে ফেলেছে। কোনদিকে যাব?
তুমি গাড়ি চালিয়ে যাও। আমি সব বলব। গাড়ির আয়নার মধ্যে দেখলাম একটি কোর্ড আমাদের অনুসরণ করছে। নিজেকে খুব নিরাপদ মনে হল। হক বললেন, অতটা আশ্বস্ত হয়ো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু একটা ঘটবে। হকের কথা মতো কোর্ডটাকে পিছনে ফেলে আরনেষ্ট হেমিংওয়ে মিউজিয়াম পার হয়ে ট্ৰপ্যান অ্যাভিনিউ দিয়ে গ্যারিসন বাইটের দিকে চলেছি। পথটা গ্রীন স্ট্রীটে গিয়ে শেষ হয়ে গেল। লাল ফোর্ড গাড়িটা আমাদের পেছনে আর সামনে এম জি মোটরকার। হক কণ্ঠে বিরক্তি ফুটিয়ে বললেন, এতটা যে হবে তিনি ভাবতেও পারেননি। আমাকে নির্দেশ দিলেন চলে আসতে। হঠাৎ আমার মনে হল, হাইতি থেকে সাতশো মাইল দূরে আছি। কখন ভাবেই পারলো উত্তর কোরিয়ানদের সম্পর্কে চিন্তা করতেন। এরপর হক তার পকেট থেকে এক টুকরো পাতলা কাগজ বের করে আমাকে দিয়ে বললে, হাইতি যাবার পথে অবসর সময়ে পড়ে দেখতে, তারপর নষ্ট করে ফেলতে। দেখলাম, টাইপ করা কুড়ি পাতা মতো কাগজ। তিনি ভুডু চার্চের সেই বয়স্কের রাতের পর থেকে ঘটে যাওয়া সমস্ত কাহিনী সংক্ষেপে বলে গেলেন ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগার চেপে। বললেন, মেয়েটার দিকে নজর রেখো। হাইতির লোকেরা ড, ভ্যালডেজকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে চায়। তারা পাপাডককে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে। কেননা দেশের অভিজাত শ্রেণী তাদের আখ কফির মতো ফেরত পাবার জন্য ভ্যালডেজকে সমর্থন করতে চাইছে। ব্যক্তিগত জীবনে ভ্যালডেজ একজন চিকিৎসক। জানি না, পাঁচ বছরে তিনি চিকিৎসা বিদ্যা ভুলে গেছেন কিনা। তিনি এবার সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। সম্প্রতি বন থেকে তিনটে সাইন উইণ্ডার রকেট চুরি গেছে। ঐগুলিই মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু ওরা মস্কোতে পৌঁছতে পারেনি। ওগুলো আবার চুরি করা হয়। এখন তা হাইতিতে পৌঁছে গেছে। পাপাডকের হাতে সাইনউইণ্ডারের মডেলে তৈরী মিশাইল আছে। তিনি নাকি আণবিক বোমা তৈরি করতে চান। ক্যাসট্রো খবরটা জানেন।
পাপাডকের হাতে মিশাইল থাকলে তিনি ক্যারিবিয়ান দেশকে পায়ের তলায় রাখতে পারবেন। ঘোট ঘোট দেশগুলো নির্বিবাদে তার প্রভুত্ব মেনে নেবে। কলম্বিয়ায় পড়বার সময় ভ্যালডেজ ছিল কমিউনিস্ট। তাই এফ. বি. আই. ও. সি. আই. এ তার ওপর গোপন ফাইল রেখেছে। আমরা তাকে আমেরিকায় ফেরাতে চাইছি না।
প্রশ্ন করলাম, লিডা কি সব জানে?
সম্ভবতঃ না। কারণ সিয়ার সঙ্গে তার পরিচিত এত বেশী নয় যে, সে সমস্ত খবর পাবে। সে শুধু জানে, ভ্যালডেজ হাইতিতে বন্দী আছেন। হয়তো তার নিজস্ব গোপন সংগঠন আছে। সে কালো চামড়ার লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে।
কালোরা কি তাকে সাহায্য করেব?
করতেও পারে। কারণ পাপাডকের শাসন এত জঘন্য যে জনগণ ক্ষেপে আছে। তাদের দরকার প্রচণ্ড আন্দোলন।
লিডার পক্ষে তেমন কিছু করা কোন মতেই সম্ভব নয়। নিশ্বাস ফেলে ছাদের দিকে তাকিয়ে হক বললেন, ঠিক আছে, তোমার বক্তব্য মেনে নিলাম কিন্তু মনে রেখো ক্যারিবিয়ান নিথর বেশী সময় দেওয়া যাবে না। কেননা মধ্যপ্রাচ্য ও ভিয়েতনামের সমস্যা আরও জটিল। আরও কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে ভবিষ্যতে কিভাবে তার সঙ্গে পোর্ট অফ প্রিন্স দেখা হতে পারে তা বললেন। করমর্দন করে হক বললনে, তিনি আমার ফেরার জন্য অপেক্ষা করবেন। ডিঙি নৌকা বেয়ে সী-উইকের দিকে যেতে মনে হলো হকের প্রতীক্ষা যেন সফল হয়।
৭. কিউবান থেকে বাহামা
০৭.
কিউবান থেকে বাহামা চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে ছুটতে ছুটতে দক্ষিণ দিকের উইনওয়ার্ডে এগোনো মাত্র ম্যাথুর শহরের এক রাশি ধোঁয়ার সামনে দাঁড়ালাম।
এক্সক্যালিকুর আমার পেছনে ছুটতে লাগল অর বন্দরে পৌঁছনো মাত্র আমার সামনে এসে হাজির হল। সেখানকার লোকেরা আমায় লক্ষ্য করতে লাগল। তখন লিডা একেবারে অনাবৃতা উর্ধাঙ্গে বসে আছে। পি. পি. টমেদের চোখে লোকের ইশারা দেখলাম। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম যে, সে সী-উইচটাকে সে একটা জাহাজের যন্ত্রের মধ্যে রেখেছিল এবং ওয়াশিংটনের খবরে বার করেছিল, এবং যখন খবরটা পড়া হচ্ছিল তখন হকের মুখের কি অবস্থা হয়েছিল এটাই ভাবার ব্যাপার।
এরপর লিডা আমার পাশে এসে দাঁড়াল। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই পরস্পরে জিপে গেলাম। এক্সক্যালিবুরকে তারপর আর দেখা গেল না। বললাম, গুয়াতেমালার দিকে যাব। তারপর সেই স্টেশনে পৌঁছবে, যীশুর নামে শপথ করছি যে, আমি তার সঙ্গে দেখা করব।
পশ্চিমদিকে তখন সূর্য খুব তাড়াতাড়ি ডুবে যাচ্ছিল। এবং চারদিকের গাঢ় লাল, সোনালী রঙগুলো ভিজে যাচ্ছিল। সুমদ্রটা বেশ শান্ত। আফ্রিকা থেকে ঠাণ্ডা বাতাস খুব আস্তে আস্তে আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেল।
হক যে খবরটা দিয়েছিলেন সেটা আমি পড়লাম। সেটা মাথায় যেন একটা যন্ত্রণা এনে দিল, বিরাট একটা বিপদ এনে দিল। পল পেন্টন ট্রেভেলিন সম্পর্কে অনেক কিছু এর আগেই পড়েছিলাম। এবং একটা অনেকদিন আগেকার ছবি দেখেছিলাম। তাই আমি তাকে এখন সামনাসামনি মেরে ফেলতে পারি। পি, পি. ট্রেভোলিন হাইতিতে তার স্থায়ী বাড়ি তৈরী করেছিল। হক বলেছিলেন–যে এ, এখনই কখনো পি. পি.-র খারাপ করে না। সেই জন্যই তাদের উপর খুব বেশী নির্ভর করা যায় না। কারণ পি. পি. একজন রহস্যজনক লোক। এবং পাপা এবং পি. পি. দুজনেই একই রকম হালকা ধরনের মানুষ। পি. পি. পালডকের মাথাওয়ালা তোক এবং স্যান্স খুনী রামপ্রসাদের কাছে পি. পি. ড. রোমেরাকে ভালভাবে থাকতে দিয়েছিল। আমার সি.আই. এ এবং এ, একই ই-এর মতো ছিল যে ট্রেভোলিন পাপাডকের কথা মেনে চলবে।
লিডাও বলেছিল যে. পি. পি.-র মুঠো থেকে ভ্যালডেজকে পাওয়া খুব শক্ত ব্যপার হবে। লোকটার নিজস্ব অনেক সৈন্য, এবং পি. পি.-র মোট দুদল সৈন্য। খাবার পর লিডাকে সমস্ত তালিকার নোট তৈরী করে রাখতে বললাম, আমি ইঞ্জিন দেখে ওপর দিকে গেলাম। পূর্ব দিকে চাঁদ উঠেছে তখন, চার্ট আর নোটগুলো নিয়ে আমি পড়তে আরম্ভ করলাম। লিডাকে বললাম–আজ রাত্রেই রৈতুনার মধ্য দিয়ে ছুটে যাব এবং আলো দেখার আগেই লুকিয়ে পড়ব। এবং লিডা যেন দ্বীপের কাছে অন্য লোকের কাছে চলে যায়।লিডা মাথা নাড়ল, জীভটা ঠোঁট বোলাতে বোলাতে বলল, যে কোন একজনকে নিয়ে নেবে। আর যদি কিছুই না ঘটে তবে কোন কথাই নেই। বললেন, আমাদের কোন বিপদ ছাড়াই সে অন্য কারোর কাছে যেতে পারে। আর যদি কিছু ঘটে তবে লিডা জানতে পারবেই, কারণ সে তো ব্ল্যাক সোয়ান।
লিডাকে জিজ্ঞেস করলাম, টুরটুনারে কি প্রচুর লোক আছে? ওটা কি হাইতির উত্তর সমুদ্র পাড়ের একমাত্র দ্বীপ? লিডা বলল, খুব বেশী নয় তবে কয়েকজন জেলে আর কয়েকজন ব্ল্যাকস।
বললাম, একটা জায়গা খুঁজতে হবে যেখানে আমরা নৌকাটা লুকিয়ে রাখব। লিডা মাথা নেড়ে জানাল তার দরকার হবে না বরং এয়ার প্যাট্রলসদেরই ভয় করা উচিত।
আমি নিশ্চিত ছিলাম এয়ার প্যট্রালসরা খুব সাংঘাতিক। তবে পাপাডকের খুব বেশী সৈন্য নেই। আর আমার একদমই ছিল না।
লিডা বলল, যদি তুমি রেডিওটা ব্যবহার করতে তবে আমি অনেক লোককে সেনল্যাণ্ডে আনতে পারব এবং সেটাই খুব সহজ হবে।
বললাম, এটা সহজ হতো ঠিকই। তারপর আবার বিশেষ করে পাপিডক এবং পি. পি. . ট্রেভেলিনের পক্ষে আরও সহজ হত এবং আর ওসব ব্যাপার আলোচনা করতে হবে না।
লিডাকে বললাম, আমরা টরতুনায় থাকবো। সে যেন তার লোকদের সঙ্গে কথা বলে রাখে এবং সে যেখানে বলবে আজ রাতটা সেখানেই কাটাব।
আমি আরো বললাম, আমি চাই তোমার কোন বন্ধু বান্ধব যেন জাহাজে না আসে। আর যদি তারা তাই চেষ্টা করে তাদের আমি গুলি করে মারবো এবং সেই সময়ে পাপাডকের কাছে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে দেব। লিডা আমার কথায় সায় দিয়ে বলল, যতক্ষণ না কোন আক্রমণ আসছে ততক্ষণ যেন কেউ না জানতে পারে আমার কোথায় থাকব।
লিডা বলল, সেখানে খুব বেশী ব্রাউন লোক ছিল না। এবং লিডা যেন তাদের ওপর খুব একটা আস্থা না রাখে। লিডা বলল, তার ভয় হচ্ছে কারণ যদি কোন আক্রমণ তাদের আসে এই জন্যই। আর কোন আক্রমণ না আসলে কোন কথাই নেই। নিক যেন অন্য কোন দলের আশ্রয় নেবার চেষ্টা না করে।
লিডা পেনসিল দিয়ে এঁকে বোঝাল যে উত্তর সমুদ্র তীরে একটা নদী আছে।
সবশেষে ঠিক হলো যে আমি একটা বোটে থাকব। আমরা একটা নালার মুখের সামনে শুয়ে পড়লাম এবং তালপাতাটা আমাদের লুকিয়ে রেখে দিল। লিডাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে এখানেই ছিল কিনা। বলল, সে প্রায় মাস তিনেক আগে।
বললাম, তাহলে যে কোন আক্রমণের পরিকল্পনা করতে পারে।
লিডা সরল ও ঠাণ্ডা চোখে বলল, সে মানত যে ডুবেলিয়ার কখানো ড. ভ্যালডেজকে উদ্ধার করতে যাবে না।
ঠিক হলো আক্রমণকারীদের কোনকিছু না জানিয়েই তাদের দিয়ে কাজ করানো হবে এবং তারা যে মতলব করেছে সেই অনুযায়ী কাজ হবে। লিডা তার ঠোঁটটা জিভ দিয়ে ভিনিয়ার বলল যদিও সেটা খুবই বিপজ্জনক তবুও তাদের মিথ্যা বলতে হবে।
সে একটু অস্বীকার করলো এবং বলল যে, সে এখানে ধরতে পারে এবং সে তাদের বলে দেবে আক্রমণের আগে এটাই তাদের শেষ পরীক্ষা। কিন্তু তবুও নিকলে লিডা একটা গল্প বলবে। একটা টি শার্ট আর জ্যাকেট পরে অস্ত্রগুলো আর লুগার পরীক্ষা করে নীচের রাস্তা দিয়ে নেমে গেলাম। যাবার আগে বললাম, সে যেন ওদের যা ইচ্ছা বলে দেয়। আমি সূর্য ওঠার আগে পর্যন্ত সেই নালার মধ্যে লুকিয়ে থাকলাম। ডেকহাউসে যাবার সময় পথে আমি তার দিকে ফিরে তাকিয়ে রইলাম। বললাম, টুপি পরে নিতে এবং একটা অস্ত্র আর বন্দুক নিতে, আর যদি সে মেশিনগান না নেয় তবে আমি তাকে উচিত শিক্ষা দেব। ইঞ্জিনটা চালিয়ে আমি লঙ্গরটা টেনে নিলাম। অন্ধকার রাস্তার নিচে দিয়ে চলে গেলাম। এবং খুব জোরে কেঁপে কেঁপে উঠলাম। সূর্য ওঠার পর লিডা নদীর ধারে যাবার জন্য প্রস্তুত হল। তার লোকেদের দেখতে পেল। লিডার কাছে একটা ছুরি ছিল যদিও আমি আগে সেটা দেখতে পাইনি। নদীর তীরে যাবার আগে আমি লিডাকে বললাম যে, যদি আমি বন্দুকের আওয়াজ শুনি তাহলে আমি দশ মিনিট অপেক্ষা করব। তারপর ছুটবো। যত তাড়াতাড়ি পারে তাকে ফিরে আসতে বললাম, বললাম আসার সময় গোলামাল করতে এবং কাছে আসার আগে যেন বাঁশী বাজায়।
নালাটা এত তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাচ্ছিল যে আমি নৌকাটাকে একটানে নিয়ে আসতে পারলাম। তারপর এক মিনিট পরে লিডা যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। অস্ত্রাগার থেকে তিনটে নতুন মেশিনগান নিয়ে সেগুলোকে ডেকের কাছে রাখলাম। তারপর প্রায় একঘন্টা ধরে বৃষ্টি আরম্ভ হল। বৃষ্টি থেমে সূর্য উঠল। আমি ইঞ্জিনটা নিয়ে চারদিকে একটু ঘুরলাম। তারপর আবার বাজনা বাজতে শুরু করল। পরে একটা থামলো আবার একটা বন্ধ হয়ে গেল এইভাবে হঠাৎ সবগুলোই থেমে গেল।
পরে একটা বেশ লম্বা সাপ গায়ে সবুজ দাগ আমার দিকে এগিয়ে এল। আবার বৃষ্টি আরম্ভ হলো, চলল প্রায় তিনটে পর্যন্ত। প্রায় দশটার সময় আমি পিস্তলের গুলির আওয়াজ শুনলাম। মেশিনগানটা মট করে ভেঙে আমি ছুটলাম ডেকহাউসের দিকে, গুঁড়ি-সঁড়ি মেরে বসে বন্দুকটা বন্দরের ধারে রেখে অপেক্ষা করতে থাকলাম। মেয়েটা একটা বাঁশী বাজাল। প্রথমে দুটো আস্তে, দুটো জোরে তারপর আবার দুটো আস্তে বাজাল। আমিও বাঁশী বাজিয়ে দিলাম, লিডা একটা ছুরি নিয়ে এগিয়ে এসে বলল, সে তাকে মেরে ফেলেছে। কাকে সে মেরেছে জিজ্ঞেস করতে ঘামতে ঘামতে লিডা বলল, তারই একটি লোককে। কারণ প্রথমে সে তার আদেশ অমান্য করেছিল। লিডা বলল, যখন সে ফিরে আসতে লাগল তখন লোকটা পেছনে আসতে আসতে ফাঁদের মধ্যে এসে পড়ল, তখন লিডা তাকে গুলি করে মেরেছে। তার নাম টোমাসো। লিডা বলল, নোকটা প্রথমে খুব জোরে কেঁপে উঠেছিল তারপর ডেকের ওপর হঠাৎ বসে পড়েছিল। সে কিছুই করতে পারেনি। কারণ লোকটি জানতে পেরেছিল আমার সঙ্গে অনেক লোক আছে। সুতরাং সে নিশ্চিত যে টোমাসো মৃত। আমি বললাম, হয়তো সে পাপাডকের হয়ে কাজ করছিল। সে ঠিকই করেছে। এরপর লিডা আমার কাছ থেকে একটা সিগারেট আর একটু মদ নিল। তারপর সে পেনসিল নিয়ে ম্যাপটা একবার পড়ে নিল। আবার নদীর ধারে যাব বলে ঠিক করলাম। সেখানে কোন একজনের আমাদের জন্য অপেক্ষা করার কথা ছিল, সামনে বেশ কয়েকটা গ্রাম। পশ্চিমে লিম্বে নামে আর স্যান্স সুসীর পূর্বদিকে মিলোট নামে একটি শহর আছে। সেখানে পাপাডকের প্রচুর সৈন্য ছিল। লিডা বলল, তার লোকেরা বলেছে মিলোট শহরের আগে বড় রাস্তায় খুব পাহারা রয়েছে। সৈন্যরা আর টনটন ম্যাকিউট সেখানেই আছে। বললাম, লোকগুলো খুব বাজে ধরনের। লিডাকে তারা ভয় দেখালেও লিডা যেন তাদের ভয় না পায়। লিডা বলল, ছোটোবেলায় তাদের প্রচুর জমিজমা ছিল, তারা বেশ সুখে বাস করত। কিন্তু ম্যাকিউট একদিন রাত্রে এসে বাবাকে মারে এবং এক সপ্তাহ পর তিনি মারা যান। তারপর লিডাকে তারা ধরে নিয়ে যায়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে লিডা পালিয়ে যায় হাইতি ত্যাগ করে। তার আমেরিকান বন্ধুরা এ ব্যাপারে সাহায্য করেছিল। লিডার মা বেলেভিউতে মারা যান। লিডার সমস্ত কথা আমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হল। লিডা বলে চলল যে হাইতিতে তখন মাত্র কয়েকজন লোক ছিল তারা সব পাপাডকের কাছে যায়। বেশীরভাব লোকই ছিল গরীব। লিডা গরীব হলেও একটা বারের পরিচারিকা ছিল। একদিন রাতে ড. ভ্যালডেজ কয়েকজন বন্ধু নিয়ে বারে এল। অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলতে শুনে ড. বুঝল লিডা হাইতির মেয়ে। বেশ কয়েকদিন পর ড. ভ্যালডেজ একলা বারে এল এবং লিডা ও ড. বন্ধু হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম লিডাকে, সে কি জানে যে ভ্যালডেজ একজন কমুনিস্ট। লিডা বলল, ভ্যালডেজ একজন বোকা, সরল প্রকৃতির মানুষ ছিল। লিডাকে সে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। ভ্যালডেজ তখন তার জন্য পাগল। লিডা তিন বছর ওর সঙ্গে ছিল। ভ্যালডেজের বাবা, ভাই ও ক্যাথলিক স্ত্রীও ছিল।
রোমেরা লিডার জন্য একটা ঘর তৈরী করেছিল। লিডা প্যারিস ও সুইজারল্যাণ্ডের স্কুলে যেত, টনটন ম্যাকিউট লিডাকে বলেছিল ভ্যালডেজ খুব শিক্ষিত। লিডা মদের বোতল হাতে নিয়ে বলল, তার একটা মাত্র ছাগলছানা ছিল। কিন্তু সেটা ছিল খুব রহস্যজনক এবং তার হাতভর্তি বই ছিল। সে তখন আগের দিন রাত্রে কি করেছিল সেই গল্পের অছিলায় হাসিতে মত্ত হল। সে রাত্রিটা তার স্নাতক বিভাগে পাশ করার ঠিক আগের সপ্তাহের ঘটনা।
লিডা বলল, সে এক সপ্তাহের মতো সে রোমেরাকে দেখেনি। অফিসে বা ঘরে যখন সে রোমেরাকে দেখল না তখন সে খুব কষ্ট পেয়েছিল। একদিন বিকেলে, রোমেরাকে দেখতে পেয়ে লিডা রোমেরাকে ডাকে কিন্তু রোমেরা তাকে দেখেও না থেমে খুব জোরে জোরে হাঁটতে থাকে। লিডার সেদিনই মনে হয়েছিল পৃথিবী বোধহয় আজই শেষ হয়ে যাবে। কারণ রোমেরাকেই সে একমাত্র ভালোবাসত। লিডা তারপর দুদিন কিছু খায়নি। তৃতীয় দিনে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রোমেরার অফিসে গিয়ে তাকে ভয় দেখায় যে, সে তাদের সম্পর্কের কথা ক্যামগানকে বলে দেবে। এই কথা শুনে সন্ধ্যেবেলা রোমের কাছে এসে বলল যে, সে ভাইরাস আক্রান্ত। রোমেরা কথা দিয়েছিল রাতে এসে লিডাকে সমস্ত বলবে। রোমেরা জানায় লিডা ছাড়াও যে যেন অন্য একজনের মুখ দেখতে পাচ্ছে। রোমেরা তারপর আর ফিরে আসেনি। কারণ সেই রাত্রেই তাকে তারা নিয়ে পালিয়ে গেল। লিডা তখন বুঝতে পারল রোমেরা কি কারণে ভয়ে পেয়েছিল। রোমেরা পাপাডকের বিরুদ্ধে অনেক ঘটনা লিখেছিল। কিন্তু সে লিডারের বিরুদ্ধে কিছু খারাপ করতে চায়নি। আশঙ্কা ছিল যে টনটন ম্যাকিউট তাকে নিয়ে পালাবে। তাকে মেরে ফেলতেও পারে কিন্তু তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে না রেখে তাকে হাইতিতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। লিডা বলল যে, সে অপেক্ষা করছিল কিন্তু আসেনি। কিন্তু রোমেরা কিছুই করেনি। সে খুব সহজ মানুষ সে জানতো না কেমন করে নিজেকে রক্ষা করা যায়। শেষটা আমি জেনেছিলাম এক্সই এবং সি-আই-এর থেকে। এরপর আমি দুটো মেশিনগান ঠিক করে দুদল সৈন্য, দুটো ক্যাম্প, দুটো পিস্তল রাখার বেল্ট নিয়ে একটা মোরায় রাখলাম।
রোমেরা কাগজে যে-সমস্ত ঘটনা লিখত তাতে একটা বাজে ধরনের ব্যবহার লক্ষ করলাম। পাপিডক কিন্তু সমস্ত ঘটনাকেই অস্বীকার করে যাচ্ছিল। দুতিন সপ্তাহ পর গল্পটা সবার কাছে প্রকাশ পেলেও কেউই ভালো করে জানালো না। তারপর এফ-বি-আই-এর কাজ করতে চলে গেল।
ভ্যালডেজ কোনদিনই আমেরিকার নাগরিক হয়নি। এবং সি-আই-এর লোকেরাই বার করেছিল যে ভ্যালডেজ এখানো বেঁচে আছে। আবার এ.এক্স.ই ফাইলের মতে পি. পি. ট্রাভেলিন য়্যানস ইসীর কাছে কোন একটা জায়গায় তাকে রেখে দিয়েছে। আমি একটা ব্যাগ নিয়ে ডেকহাউসের দিকে গেলাম। সঙ্গে আমার কতগুলো অ্যাসো ছিল। লিডাকে জাগিয়ে অন্ধকারে ছুটতে লাগলাম। টরটুনা এবং মেনল্যাণ্ডের মধ্যে গিয়ে হাজির হলাম। লিডা আবার সেই চার্টটা পড়ল এবং তখন পাপাডকের পাহারদাররা আমাদের লক্ষ্য করে গেল।
টরটুনার পূর্বদিকে যাচ্ছি সেইসময় লিডা চারদিক ভালোভাবে দেখে নিয়ে বলল, তারা পশ্চিমদিকে আরও দশ মাইল ছুটে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছবে। রাত্রিটা খুব ঠাণ্ডা ছিল, লিডা আমার কাছে সিগারেট চাইল আমি ওকে সাবধান করে দিলাম যে, পাপাক নিশ্চয় কোন পাহারা রেখেছে, কারণ সে খুব-একটা বোকা নয়।
আমরা সমুদ্রের ধারে যেখানে ইউ এন ফ্রন্ট কোম্পানী একটা বন্দরের ব্যবস্থা করেছিল সেখানে আমরা রইলাম। লিডা বলল যে, জায়গাটা সম্পর্কে এত অপবাদ আছে যে, পাপিডক এবং টনটন ম্যাকিউট এটাকে সব সময় কড়া চোখে রাখে। এবং এমন কোন লোক নেই যারা এ জায়গায় যেতে সাহস করে। আমরা সমুদ্রের দিকে ছুটলাম। আমি ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বললাম যে লাইটটা নিয়ে তাড়াতড়ি এগিয়ে যেতে। লিডা বলল আমাকে যে, আমি খুব চালাক কিন্তু সে খুব অসন্তুষ্ট। লিডা বলল এখন তার নতুন নাম স্যাম ক্লেনার। কারণ স্যাম ক্লেনার রায়াফ্রান্সকার হয়ে আমেরিকায় যুদ্ধ করেছিলেন। এবং সেখানে যে এজন্য স্যাম কিছু মনে করবে না।
লিডা তখন আমাকে সেই ডুপি সম্পর্কে একটুখানি বলল। এবং আমরা তা সঙ্গে দেখা করার জন্য গেলাম। হাইতির লোকেরা বলে যে ডুপি মানে হচ্ছে আত্মা বা প্রেত! সাধারণ একটা মানুষ মরে গেলে তার আত্মা কখনো কখনো আমাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করে। লিডা বলেছিল যে ব্ল্যাকরা তাকে ডুপি বলতো। কারণ সে বনে জঙ্গলে ভূত প্রেতদের মতো তাদের সামনে দেখতে পেত। ডুপি ব্ল্যাকদের মধ্যে সবচেয়ে নাম করা ব্ল্যাক। তারপর আমি কলের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমরা যখন বসলাম তখন কি একটা শব্দ ভেসে এল। সমুদ্রের তীর থেকে একটা সাদা আলো দেখা গেল। রাতে সাদা আলোটা জিজ্ঞাস্য হয়ে দাঁড়ায়। যখন সে জিজ্ঞাসা করছে-কে তুমি? লিডা নৌকো থেকে খুব জোরে ছুটতে ছুটতে খুব উত্তেজনার সঙ্গে আমার কাছে এল। বলল নিক, তুমি ঠিকই বলেছ যে ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বললাম লিডা যেন খুব তাড়াতাড়ি চাটটা পড়ে নেয় যতক্ষণ না আমি ব্রীজের ওপর উঠছি। লিডা আমাকে ডকের বেশ একটা সুন্দর বর্ণনা দিয়েছিল। বলেছিল কোন কারণবশতঃ ব্রীজের দ্বারা ঢাকা পড়ে গেছে। লিডা বলল, আমরা সেই ব্রীজের তলায় ছুটে যাব এবং কিছুক্ষণের জন্য লুকিয়ে থাকব। আমি ঠিক রাজী হইনি। ব্রীজের ওপর দিকে আস্তে আস্তে বললাম লিডাকে। কিন্তু আমরা পাপাডকের পাহারাদারদের দেখতে পেলাম না। এরপর আমি পিস্তল রাখার বেল্টটায় লুগারটা নিলাম। মেশিনগানটা কোলের উপর রাখলাম এবং গাইড লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। তারপর আমি ডকের শেষের দিকটার দুদিকে সী-উইচকাটে লম্বায়চওড়ায় সোজা করে রাখলাম। সমুদ্র স্রোত খুব জোরে বইছিল। সী-উইচটা বোর্ডের ওপরে ছিল। বন্দরে ফিরে যাবার জন্য ইঞ্জিনটা একটু মেরামত করলাম। তার ধনুকটাকে আলোর মাঝখানে ঠেলে দিল। আমি এক সেকেণ্ডের জন্য তাকে ঠেলে দিলাম। ঠিক আমার মাথার ওপরে ডকের একটা দরজা খুলে গেল। আমার সামনে একটা সাদা আলো ঝলসে উঠল। তারপর একটা শব্দ এল–বন যৌ ব্ল্যাঙ্ক।
কেহে, সাদা চামড়ার মানুষ? আমি মেশিনগানের ট্রিগার থেকে হাত সরিয়ে ওটাকে তার নজরের মধ্যে এনে বললাম-কে তুমি? এরপর খুব হাসির রোল উঠল, সে গর্তটার কাছে তার মাথাটা রাখল। এবং আলোটা ঢেকে গেল। লাইটটা তার মুখের উপর পড়ল।
আমি বললাম, তাহলে আমি ডুপি। এবার সোয়ানদের কথা বলতো। তুমি তো ক্লেচার। আমি নেড়ে বললাম–আমি-ই-ক্লেচার। আমি জানলাম যে এ এক্সই ফাইলে ডুপির ছবি আছে। ছবিতে ডুপিকে একজন যুবকের মতো দেখচ্ছিল। ছবিটার নাম ডিয়াজ ওরটেগা, জাতে কিউবান, এবং ওরটগার মরে যাবার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু সে ছুটে পালিয়ে রেহাই পেয়েছিল। কাস্ত্রো তাকে খুঁজে বার করেছি। কালো লোকটা তার একটা পেশীবহুল হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ব্ল্যাক, তুমি এদিকে এস, আমাদের এখন সময় নষ্ট করলে চলবে না।
আমি বললাম, আমাকে প্রথমে সী-উইচ চালাতে হবে। আমার অনেক সময়ের দরকার। আমি চাই না যে কোন লোক আমাদের সঙ্গে এসে থাকুক। লিডা বলল, ওকে কজা করতে দাও আমাকে। আমি তাকে ডকের-দরজার সামনেই সাহায্য করলাম। তারা যেন ফিসফিস করে কি বলছিল। জুপি কুকুরের মতো আওয়াজ করল।
আমি সী-উইচটাকে সাবধানে থাকবার জন্য হাত নাড়লাম। মনে হলো যে ওরটেগা ব্ল্যাঙ্ক সোয়ানের আক্রমণের জন্য কি করেছে, তা বার করতে হবে।
আমাকে এরপর রোমেরা ভ্যালডেজকে মারার জন্য বেশ তৈরী হতে হচ্ছিল। লিডা দেখলাম এই আক্রমণের জন্য কিছু করছে না। আমি চিন্তা করলাম যে ডকের দরজা দিয়ে চুপি চুপি হামাগুড়ি দিয়ে যাব। আমি ট্র্যাপ দরজার দিকে গিয়ারটা ঠেলে দিলাম। সামনে অনেকগুলো ছায়া দেখলাম কিন্তু লিডা আর ডুপির নিশানা পেলাম না। সেই ছায়াগুলোর মধ্যে থেকে কে যেন আমায় বলল যে সোয়ান এবং ডুপি সমুদ্রের ধারে গেছে।হঠাৎ বৃষ্টি আরম্ভ হতে বাজনার আওয়াজ পেলাম। পাশ থেকে একজনকে বলতে শুনলাম যে ফাঁকা গর্তটার দিকে লক্ষ্য কর। হক খুব বুড়ো। আমি সেই সময়ে ওরটেগার চিন্তা-ভাবনাগুলোকে ঢাকা দেবার চেষ্টা করলাম। আমার পাশের লোকটা আস্তে আস্তে বলল যে, ব্ল্যাক সোয়ান আর আক্রমণের কথা বলছে না। কিন্তু আমরা আক্রমণ করার জন্য তৈরী হয়ে আছি। আমি বললাম, আমি সোয়ানের জন্য কাজ করেছিলাম, সেই রকমই আমি সাহায্য করতেও পারি তবে সোয়ান যদি বলে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলল, আমার মনে হচ্ছে তারা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করবে। টনটন ম্যাকিউট তাদের চারদিকে ঘুরবে। তারা অনেক লোককে মারবে এবং অনেক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলবে। ব্ল্যাক, তুমি কি জান কেন তারা ঐরকম করছে?
বললাম, যদিও আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না তবুও আমি একটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আলোচনা করতে পারি। আর পাপিডক যদি চারদিকের চারাগাছগুলো পরিষ্কার করে ফেলে তাহলে ঐ জায়গাগুলোর দাম অনেক হবে। তার মসৃণ মুখে রেখার ছাপ পড়তে দেখলাম। সে বলল, এই কুকুরের বাচ্চাটা! ওকে এর জন্য খেসারত দিতে হবে, দেখ! হেলিকপ্টারটা খুব জোরে উঁচুতে উঠে গেল। লিডাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে-কুকুরের বাচ্চাটা কে? পাপাডাক না পি পি? ও বললো দুজনেই। কে আমার পেছন দিকে গিয়ে যেন জোড়ে নিশ্বাস নিল। এবং তার চোখদুটো বন্ধ করে দিল। লিডা আবার বলল–দুজনই। বন্দুকের জোরালো আওয়াজ আমাদের কানে এসে পৌঁছল। বাড়ির ধারে কজন লোককে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে রিভলবারটা খালি করতে দেখলাম। আস্তে আস্তে সে কটা গুলি পুরল এবং বার করল। তারপর তার কালো পাগুলো হাঁটা চলা বন্ধ করে দিল। আমি বললাম, টনটন ম্যাকিউট কখনো বোকামির মতো কাজ করে না। লিডা বলল, ওদের মধ্যে সকলেই খুনী, ডাকাত, ওদের সময় ঘনিয়ে আসবে। লিডা সিগারেট চাইতে বললাম, মুখটা লুকিয়ে ফেল। হেলিকপ্টারটা এদিকেই আসছে। ডুলি পেটের উপর ভর দিয়ে মুখটাকে হাতের ওপর রেখে ঘুমচ্ছে। হেলিকপ্টার আমাদের মাথার উপরে বেশ আওয়াজ করে চলছিল। কিছুক্ষণ পরে চোখের একটু ফাঁক করে দেখলাম হেলিকপ্টারটা পূর্বদিকে নেমে আসছে। লিডা বলল, আমার মনে হয় এই সময় সিগারেট খাওয়াই নিরাপদ। ডুপি নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছিল। মনে হলো তার বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। মনে হলো এই সময়ে তাকে বিরক্ত করা উচিত হবে না। ডুপিকে বললাম, আসলে কোনো সমস্যাই নয়। ভ্যালডেজকে ছাড়া আমি কোন কিছুর দায়িত্ব নিতে চাই না। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে, তারা নিশ্চয় ভ্যালডেজকে আক্রমণের সময় মেরে ফেলবে। কারণ তারা জানেন আমরা তাকে আমাদের প্রেসিডেন্ট করতে চাই বাঁদিকে বেশকিছুটা দূরে বিশপের ক্যাম্প এবং সিটাডেল ছিল দূরে পাহাড়ের ওপর আমি কতকগুলো কুঁড়েঘর দেখলাম এবং সেখানে আরো একটা সবুজ ঘাসে ঢাকা পর্বত ছিল। ঠিক সেই পর্বতের পাদদেশে বেড়া ছিল। লিডা আর ডুপি বলল যে, পাঁচহাজার একর জমি ঐ বেড়া দিয়ে ঘেরা। ঐ বেড়ার ভেতরই স্যান্স সুসীর রাজপ্রাসাদটা নষ্ট হয়ে গেছিল। সেখান পি. পি. ট্রেভেলিনের তৈরী আর-একটা বেশ আজকালকার রাজপ্রাসাদ ছিল। সেখানে দিয়ে একজন গার্ড, সঙ্গে একটা পুলিসের কুকুরকে যেতে দেখলাম। গাড়িটার কাছে একটা পিস্তল রাখার বেল্ট এবং রাইফেল ছিল। সে একটা কালো টুপি কালো জামাকাপড় আর একটা কালো বুটজুতো পরে ছিল। সন্দেহ হলো টুপিটা হয়ত চামড়া দিয়ে তৈরী। তবে তার কালো পোষাকটা আমাকে একটা কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। মিঃ পি. পি. ট্রেভেলিনের ওপরে বেশ ঘৃণা জন্মে গেল। নিজেকেও বেশ খারাপ লাগল। আমি পেশাদার, কিন্তু আমি জানি যদি আমাকে ট্রেভেলিনকে মেরে ফেলতেই হবে তবে ব্যাপারটা এমন কিছু হবে না, ডুপি আমার পাশে এসে বসল। বুঝলাম, ব্ল্যাকেরা তার নাম ঠিকই রেখেছিল। এই প্রকাণ্ড লোকটাই ডুপি যে কে.জি.বি.র–ভায়াজ ওরটেগা। আমি স্যাম ক্লেচারের সঙ্গে চরিত্র বদল করলাম। ডুপি বলল-এই যে ব্ল্যাঙ্ক। তারপর-পাহারাদার–কুকুর-জমবিজ।
জমবিজ?
হেসে সে বলল, হ্যাঁ ব্ল্যাঙ্ক, জমবিজ। আমাকে বুড়ো পি. পি. পেয়েছে না, সে তাদের সবরকমের কাজ করিয়ে নেয়। কোনো জমবিজদের বিশ্বাস করো না, ব্যাঙ্ক। এরপরে আমরা তিনজন ঐ উপত্যকায় গেলাম। এবং জঙ্গলের মধ্যে একটা হাউসকোট দেখলাম।
সে বলল, ব্ল্যাঙ্ক, তুমি সোয়ানোর সঙ্গে দেখা করছ।
তিনি তোমাকে কত দিচ্ছিলেন?
মাসে এক হাজার।
মাসে এক হাজার। অবশ্য আমি ভুলও করতে পারি, ব্ল্যাঙ্ক। বললাম, সেটা আপনার ব্যাপার। আমি টাকাপয়সার জন্য লড়তে পারি।
আমি ঝগড়া করতে চাই না ব্ল্যাঙ্ক।
পয়সা করতে গেলে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়, অনেক বিপজ্জনক কাজ করতে হয়, বুঝলে হে।
ডুপি ব্ল্যাঙ্ককে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কখনো হাইতিতে গেছ?
আগে বেশ কয়েক বছর গেছি কিন্তু আমি স্বীকার না করে বললাম, না।
ডুপি লাল চোখে বলল, ব্ল্যাঙ্ক তুমি তাহলে হাইতি সম্পর্কে কিছুই জান না। আমি কয়েকদিন ওখানে ছিলাম। সোয়ানের জন্ম এখানে। পেশাদারী যোদ্ধা তুমি, আমি আর ঐ চিন্তাবিদ সোয়ান, এ্যা? এই ভাবেই করতে হবে, ব্ল্যাঙ্ক?
তারপর সে আমাকে অনেক কারণ দেখিয়ে খুব উত্তেজিত করতে চাইল। কিন্তু আমি ভাবতে পারছিলাম না যে স্যাম ক্লেচারের গল্পটা কিনে নিয়েছিল। কিন্তু সে কি জানত না আমি কে? যদি না লিডা বলত তাকে। কিন্তু আমার সন্দেহ হচ্ছিল যে লিডা জানে ডুপি কে।
আমারও সন্দেহ হচ্ছিল যে ডুপি জানত যে, আমি তাকে চিনি নিয়েছি। যদি সে জানতো যে আমি এ.এক্স.ই-এর লোক তাহলে সে আমায় কিছু করত। ওর কাজ পরখ করে বুঝলাম যে, যদি আমি ওর বিরুদ্ধে সামানা-সামনি লড়াই করি তবে আমাকে ও একেবারে নরকে পাঠিয়ে দেবে। ডুপি বলল, আজ রাত্রেই আমরা মঙ্গলের মধ্যে ঐ উপত্যাকার দিকে যাবো আর-অন্য একটা ব্ল্যাঙ্ককে তুলে নেব। ওর নাম হ্যাঙ্ক উইলিয়ার্ড। আমার ধারণা সোয়ান তোমাকে তার সম্বন্ধে বলবে কি ভাবে হাটন সাব এবং ম্যামবো এই ফর্সা লোকটাকে দিনের পর দিন লুকিয়ে রেখেছিল। কীভাবেই বা সে আমাদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক। যে তোমাকে এসব কথা বলবে এই অন্য ব্ল্যাঙ্ক উইলিয়ার্ড ও তোমার মতো ভাড়াটে সৈনিক। আমার মনে হচ্ছিল কী করে হ্যাঙ্ক সমস্ত লোকগুলোকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল। ব্যাপারটা হচ্ছে ইলিয়ার্ড একজন নিরপেক্ষ বৈমানিক, ভাগ্যের যোদ্ধা, আংশিক মদ্যকাসক্ত আর একজন পুরোদস্তুর সৈনিক। কোরিয়ার যুদ্ধের সময় স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে সৈনিকের জীবনযাবন করতে হত ওকে। যুদ্ধের সৈন্যবাহিনী থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে সে পয়সায় জন্য তার কাছে কাজ করত। হাইতির গত আক্রমণের সময় উইলিয়ার্ড একটা পুরনো বি-২৫ চালিয়ে ছিল এবং পোর্ট-অফ-প্রিন্স এ পাপাড়কের প্রাসাদে বোমা ফেলার চেষ্টা করেছিল। তবে হ্যাঙ্ক তাতে খুব বেশী লাভবান হয়নি। পাপিডক আর টমটম ম্যাকিউট অন্যান্য আক্রমণকারীদের লোহার খাঁচায় পুরেছিল। পাপিডক হ্যাঙ্ককে প্রায় দশহাজার ডলার দিয়েছিল। তবু উইলিয়ার্ড কোন একটাও শরীর কেনেনি এবং তারা দেখিয়ে দিয়েছিল যে তারা কতখানি পাপাডক এবং পি. পি. ঘৃণা করে। যখন আমার ঘুম আসছিল ঠিক তখনই ড্রাম বাজার আওয়াজ পেলাম। হঠাৎ একটা চীৎকারে আমার ঘুম ভেঙে গেল। লিডা ও ডুপি তখন জেগেছিল। ডুপি আমাকে লক্ষ্য করল। তার বাঁ-হাতে টমি বন্দুক তৈরী ছিল। মেয়েটা হঠাৎ চমকে উঠে পড়ল। কিছুক্ষণ পরে কে যেন কর্কশ ভঙ্গীতে হেসে উঠল। লিডা তার ফ্যাকাশে চোখদুটো কি যেন জিজ্ঞাসা করছিল। বলল যে তাদের দিকে গুলি আসছে কিনা। ডুপি তার হাতে টোকা মেরে আমার দিকে তাকাল। পাপিডক এবং বুড়ো পি. পি. অনেক অস্ত্র পেয়েছিল। এক-একটা করে তারা গুলি চালাতে থাকলো। লিডা আমার দিকে তাকিয়ে ডুপির দিকে ফিরে যে ড. রোমেরা ভ্যালডেজকে দেখে হাসত সে একজন ডাক্তার। মেয়েটা বলল, কেন তারা লোকগুলোকে মারছে আর তাদের সরিয়ে পরিষ্কার করে ফেলছে জায়গাটা। ডুপি মাথাটা নাড়ল এবং বলল, মত ঘাবড়াও, আমার মন হলো পাপিডক এবং পি. পি. তখন একটু বেহুঁশ ছিল। তারা অস্ত্র দিয়ে সমস্তটা গরম করতে পারবে। লিডা চেঁচিয়ে উঠল, অস্ত্র, ডুপি তার ব্যাগটা নিয়ে বলল তাড়াতড়ি অন্ধকার করে দিতে। বলল, ব্ল্যাঙ্ক ঠিক আছে? আমি হাসার ভান করে বললাম ঠিক আছে। একটা জিনিষ আমি বুঝতে পারছিলাম না যে হ্যাঙ্ক উইলিয়ার্ড বোবাধহয় স্যাম ক্লেচারকে দেখে থাকতে পারে। উইলিয়ার্ডের পরনে ছিল অফিসারের গোলাপী পোষাক আর একটা ছেঁড়া কিন্তু পরিষ্কার ভডি শার্ট। ধূসর চোখে তাকিয়ে যেন আমায় বুঝিয়ে দিল সে স্যাম নয়। লিডা, ডুপি আর আমি পাহাড়ের ধার দিয়ে উপত্যকার মধ্যে যখন যাচ্ছিলাম তখন অন্ধকার হয়েছে যথেষ্ট। ডুপি আমাদের পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে পথ দেখাল। এরপর আমরা একটা গিরিসংকটের মধ্য দিয়ে গেলাম। শেষ গিরিসংকটে একটা কুঁড়েঘর। ছোট একটু আগুন দেখলাম পাহাড়ের বৃত্তের মধ্যে। আগুনের পাশে প্রায় ডজনখানেক কালো লোক আর হ্যাঙ্ক উইলিয়ার্ডকে দেখা ভালো। ডুপি এবং মেয়েটা সেই কালো লোকগুলোর সঙ্গে দুর্বোধ্য ভাষায় কথাবার্তা বলছিল যে ভাষা আমার পরিচিত নয়। অনুমান করলাম কালো লোকগুলো একটা উৎসবের জন্য তৈরী হচ্ছিল।
হা-হ্যাঁ। কিন্তু আর-একটা ব্যাপার আছে?
কি?
যদি আমি এর থেকে বেরিয়ে যাই তবে ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট আমাকে একটু অসুবিধায় ফেলতে পারে? তোমাদের মতো সি. আই. এ-র লোকেরা পাউডার প্যাক করে। তোমরা ভাব আমার জন্য ঠিক করে রেখেছ এটা যাতে তারা আমার পাশপোর্টটা আটকে দেয়। আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়ে দেখলাম আপনি বলতে চাইছেন তারা এখনও এটা তৈরী করেনি। সে বলল, তুমি যদি আমাকে সাহায্য না কর তবে আমি ফঁদে পড়ব। মন চাইলে তোক কিছু অদ্ভুত কাজ করতে পারে, আমি বললাম, ঠিক আছে। প্রতিশ্রুতি দিতে পারছি না তবে দেখছি কি করতে পারি। এখানেই সময়টা কেটে গেল। উইলিয়ার্ডকে ওখানে দেখলাম। হাউসগান একটা রূপোর চামচ পকেট থেকে বার করে পাথরের বৃত্তের কাছে এটা গর্ত খুঁড়ছিল। মনে হয় ও ছোটখাট কবর খুঁড়ছে। খবরটার মাথায় যীশুর মূর্তি হাউসগান ন্যাকড়া জড়ানো পুতুলটাকে নিয়ে অস্ফুটস্বরে যেন কি বলছিল। লিডা ফিসফিস করে বলল, রুচিবেল হচ্ছে একটা দানব। শয়তানের স্যাঙাৎদের মধ্যে একজন। হ্যাঙ্ক উইলিয়ার্ড বলল, আমি এখন এই ভেবে দুঃখী যে আমি বুড়ো পি.পি. নই। যদিও কুত্তির বাচ্চাটা লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক। আমি ডুপিকে দেখবার জন্য ওপর দিকে তাকালাম। ডুপির চাউনি দেখে মনে হলো যেন আমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু কেন? আমি বুঝলাম না। হাউসগান ছোট কবরটার মধ্যে পুতুলটাকে রেখে ঢেকে দিল। খুব জোরে ড্রাম বেজে উঠল আর মেয়েটা লাফিয়ে কবরটা পার হয়ে এর চারধারে নাচতে লাগল।
লিডাকে বললাম, ড্রামটা দারুণ বিপজ্জনক না।
লিডা বলল, না, পি.পি.-র, পাহারাদারটা এত রাতে এখানে আসবে না। টমটম ম্যাকিউটও আসবে না যদিও তারা হাইতি। ওরা রুচিবেলাকে ভয় পায়। আমরা নিরাপদ। আমি সূর্য ওঠার আগেই পি.পি.-র দরজার বাইরে যেতে চাইলাম। কিন্তু লিডা বলল, নাচের পর কি হয় সে দেখবে। মেয়েটা প্রায় উদোম হয়ে কবরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে নাচতে লাগল। লিডা সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে বলল, আপনাদের এখানে এক মুহূর্তে নষ্ট করা উচিত নয়। এখান থেকে সরে পড়ুন।
.
০৮.
পাহাড়ের ধারে যখন এসে পৌঁছলাম তখন ভোর হতে ঘণ্টা তিনেক দেরী। ডুপি আমাদের সাপের মতো ঘোরানো একটা সঁড়ি পথ দিয়ে নিয়ে গেল। লিডা পেছনে আসছিল। যখন আমি মাঝেমাঝেই হ্যাঙ্ক উইলিয়ার্ডকে হাত দিয়ে ঠেলছিলাম। তার কাছে বন্দুকের জন্য নয় মিলিমিটারের কার্তুজ ভর্তি একটা ব্যাগ ছিল। ব্যাগটা ম্যারিক হেরাল্ড স্কোয়ার্ড থেকে নেওয়া হয়েছে। অন্ধকারের মধ্যে ককৰ্শ গলায় বললাম-উইলিয়ার্ড তুমি মরে যাবে।
প্রসঙ্গ পাল্টে সে বলতে লাগল কিভাবে বি-২৫বিমানটি শুধু সহকর্মীদের সাহায্য না পেয়ে প্রাসাদটা হারিয়ে ফেলে আয়রন মার্কেট আর গ্যারেন ভাম্প-এ বোমা ফেলল। বোধহয় আমরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিলাম না। খ্রীষ্টই কেবলমাত্র জানেন কোথায় সেগুলো কিনেছিল। আমি চেয়েছিলাম হ্যাঙ্ক উইলিয়ার্ডকে সুখী করার আর আমার প্রতি বাধ্য করার একটা স্টেনগান ৫৫০ রাউণ্ড গুলি ছুঁড়তে পারে এক মিনিট এবং যখন প্রয়োজন হবে তখন আমি ওটা ব্যবহার করব। আমি তার দুর্ভাগ্যের উৎসাহের ভাব দেখালাম। বিমানে বোমাগুলো নিয়ে যাবার আগে পরীক্ষা করে দেখেছ?
হ্যাঙ্ক যীশুর নামে দিব্যি কেটে বলল, আমি বোমা সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ। আমি শুধু একজন যোদ্ধা সৈনিক। আমাকে যখন নিযুক্ত করল আমি তাদের বলেছিলাম যে আমি আগে বোমা নিয়ে বিমান চালিয়েছিলাম তখন ওরা আমাকে নিযুক্ত করল কারণ আমি ভেঙে পড়েছিলাম আর চাকরির খুব দরকার ছিল আমার।
আমি স্বীকার করলাম যে, আমাদের খুব ছোট একটা সৈন্যদল ছিল। উইলিয়ার্ড, লিডার মতো অভিজাত স্বপ্ন-বিদেশিনী ও প্রতিশোধলিঙ্গু আর আমার মতো অসম্ভবকে সম্ভবকারী কারণ হকই এটা আমাকে করতে বলেছিল।
ডুপির অন্য ব্যাপার। সে ভালোভবেই জানে সে কি করছে। সে বলল–সূর্য ওঠার আগে লুকিয়ে পড়া যাক অথবা আমরা মারা পড়ব। আমরা আঙুর গাছ দিয়ে ঘেরা জঙ্গলে অপেক্ষা করলাম। ডুপি বলল এসে এখন ঠিক আছি আমরা ব্ল্যাঙ্ক। আমরা পাহাড়ের মধ্যে উপত্যকায় আছি। নীচে দেখ বেড়ার মধ্যে পি. পি.-র জমিজায়গা। দেখ ঐ তার বাড়ি। সাঁতার কাটার হ্রদ, জমবি কোয়ার্টার, পুরনো গাছ। বললাম–জমবিজ-এর দিকে ফেরা যাক, কি বল? ডুপির কি ব্যাপার? আমি অপেক্ষা করলাম সতর্কতার সঙ্গে। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল–কিছু বল ব্ল্যাঙ্ক, খুব বাজে লাগছে। কিছু-একটা ঘটে যাচ্ছে আমার। আমিও একদিন তোমার মতো একজন ভুদুকে বলেছিলাম এসব কিছু নয়। বলে সে আমার একটা গল্প বলল। সে বলল, ব্ল্যাঙ্ক, তুমি খুব শক্ত লোক। আলো আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। পড়ে গিয়ে ঘাড় ভাঙার সম্ভাবনা আছে। তারপর আমি তার মৃদু নাক ডাকার শব্দ পেলাম। আমি এগিয়ে চললাম। ঘাড়ের কাছে যে শব্দ করলাম, এতে তাকে অনুসরণ করা সহজ হল। তারপর কোন শব্দ নেই। তারপর বদমাইশাটা গাছের ওপর চড়ে বসেছিল। আমি এমন একটা জায়গায় দাঁড়ালাম যেখান থেকে গাছটা সামনে দেখা যায়। আলোর ঝলকানিতে তাকে গাছ থেকে নামতে দেখলাম।
হকের কাছ থেকে প্রথম ফোন পাওয়া মাত্র আমি সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো টেপ করেছিলাম। কিছু কিছু শিক্ষিত ব্যাপার স্যাপার আর কিছু কিছু পথ পাবার উপায় সম্বন্ধে চিন্তা করছিলাম। ডুপি বেশ ভালো খেলাই চালাচ্ছিল। লিডা এ সম্বন্ধে কিছু জানে না। হ্যাঙ্কও ব্যাপারগুলো তেমন গায়ে মাখে না।
ডুপি, ভিয়াজ ওরটেগা কে. জি. বি.-র লোক, টমি পি.পি. এবং পাপাডক ফ্যাসিস্ট। শেষকালে সেই পুরনো তামাসাটাই চলে আসে কে কার জন্যে কি করছে আর কে শোধ করছে? একটা জিনিষ আমি জানলাম, ডুপি নেতৃত্ব করছিল। সেটা এখন বন্ধ। আমাকে নেতৃত্ব নিতে হয়েছিল। তাকে একটু দেখতে হবে যে সে কোন ভুল না করে। ডুপি আর লিডার কোন পাত্তা নেই। উইলিয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ওরা কোথায়, সে আমাকে গাছে উঠতে বলল। গাছে না উঠে আমি বাগানবাড়ির দিকে তাকালাম এবং প্রথমে কিছু দেখলাম না। আমি বাগানবাড়ির খোঁজে গেলাম। বাড়িটা পাম গাছে দুই-তৃতীয়াংশ ভরা। তার পিছনে আমি বিশ্রাম নিতে গেলাম। ভাবতে লাগলাম, আমাদের ধারণাটা বাস্তবে হয়তো ঘটবে না। যেকোন মুহূর্তে ফোন বেজে উঠতে পারে আর আমাকে উত্তর দিতে হবে। আমাকে পাঠানোর জন্য সত্যিই একটা উদ্দেশ্য আছে। আমি দেখলাম, স্যাম-রোমেরা ভ্যালডেজকে। ও জীপে বসে আছে আর পাহারাদাররা ওকে ঘিরে আছে। সে পূর্বদিকে আঙুল তুলে দেখাল, আমার মনে হয় তারা আমাকে সিটাডেল নিয়ে যাচ্ছে। সে অবশ্যই প্রত্যেক দিন রাত্রে সিটাডেল-এ কাজ করে আর এখানে আসে-পি.পি.-র কাছে। লিডাকে, তুমি নিশ্চয়ই জানো ও ভ্যালডেজ। লিডা বলল, আমি সত্যিই জানি না। মোটের ওপর পাঁচবছর আমি রোমেরাকে দেখিনি, কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি আমার মনের কথা জেনে ফেলেছে। আমি ওর দৃষ্টি আমার দিকে ফিরিয়ে বললাম–তুমি নিশ্চিত নও যে লোকটাকে তুমি দেখলে সে বোমেরা ভ্যালডেজ? রাজহাঁসের মতো লম্বা গলাটার ওপর মাথা হেলিয়ে বলল ডুপি যে উনিই ভ্যালডেজ। ও অনেকদিন ধরেই এখানে গুপ্তচরবৃত্তি করছে। সে যে বলেছে পাঁচ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে ওর, অসুখের জন্যও হতে পারে অথবা ওর ওপর অত্যাচার করা হয়েছে বোধহয়। মানে? আমি জানতাম যে, উনি ড. রোমেরা ভ্যালডেজ। কোন কারণের জন্যে ওরা প্রতারণা করেছে। তাকে দেখে অনেক বেশী বয়েস হয়েছে বলে মনে হল। তিনি জীপের ওপর শক্ত হয়ে বসেছিলেন। ওর মুখটা আমি ঠিক কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখেছিলাম।
হতে পারে, আবার নাও হতে পারে, আমি বললাম। দূর থেকে ডুপির কণ্ঠস্বর এল–এসো ব্ল্যাঙ্ক। আমি তোমাকে কিছু জমবি দেখাই। গাছে চড়লাম আমি, ডুপির বাইনোকুলার দিয়ে দেখলাম। ডুপি বলল, ব্ল্যাঙ্ক, দরজা দিয়ে নীচে তাকিয়ে বল কি দেখলে। দেখলাম একটা বড় ইটের বাড়ি, একটা ইস্পাতের দরজা, কালো কালো অস্ত্রধারী পাহারাদার, শেষের পাহারাদারগুলো আবার সঙ্গে কুকুর রেখেছে। গেট-হাউসের কাছে দুজন কোলো ইউনিফর্ম পরা লোক দাঁড়িয়েছিল, কথাবার্তা বলছিল আর কোন দিকে তাকাচ্ছিল না। অন্যান্যদের মধ্যে আধডজন পাহারাদার ছিল আর তিনজন আলাদা কর্মী। একটা দলে দুজন পাহারাদার। কর্মীরা, নীল ইউনিফর্ম, প্যান্ট আর জ্যাকেট পরেছিল। আর ওদের জ্যাকেটে সাদা হরফে লেখা ছিল; পি. পি. আমি মৃদু বিরক্তি প্রকাশ করলাম। ডুপি বলল, কি ব্যাপার ব্ল্যাঙ্ক? তোমার কতগুলো ধারণা কি উল্টে গেছে? আমি পি. পি. ট্ৰেভেলিনকে গালাগালি করছিলাম। ওটা একটা বাস্টার্ড। ওর বন্দীর ক্যাম্প আর ঐ সাদা হরফে লেখাটাও বাস্টার্ড। মনে হচ্ছিল লেখা আছে পি. ডব্লিউ. এস., আমি সারা পৃথিবীতে ওগুলো প্রায় হাজারখানেক দেখেছি। কিন্তু আমি কখনো চলন্ত লোকেদের ঘাড়ে পি. ডব্লিউ. এস. দেখিনি। ধীরে তবে দৃঢ়ভাবে পা টেনে টেনে হাঁটাচলা ওদের। ওরা ওদের মাথা নাড়াচ্ছিল না। যন্ত্রণাদায়ক ধীরতা নিয়ে তারা তাদের সারা শরীর নাড়াচ্ছিল আর তাদের কাধ নাড়াচ্ছিল বিচরণের মতো। জমবিস? আমি এক মিনিটের জন্য এটা কিনিনি, কিন্তু কোন বাজে ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে। জুপির গলায় স্বরে ঝাঁজ দেখে বুঝলাম ও রেগে যাচ্ছে। বলল, তুমি কি বল ব্ল্যাঙ্ক? ওগুলো জমবিস না। সে বলল আমি ওদের চোখে দেখেছি খুব কাছ থেকে, কোনো রং নেই, ঠিক মৃতের চোখের মতো সাদা ধবধবে। জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কিভাবে কাছ থেকে ওদের চোখ দেখলে?–বলল ওরা নীচে কি করছে দেখছ? দেখলাম ওরা বেড়ার মধ্যে বারবার মাইন বসাচ্ছে। দশফুট অন্তর অন্তর, ঐ বেড়াটায় কিন্তু বিদ্যুৎ লাগানো আছে। সে বলল, পি.পি. নিজেকে পাহারাদার কুকুর, মাইন আর জমবিস দিয়ে ঘিরে রেখেছে। দেখলাম, একটা কালো-চুলওলা মেয়ে…তাকে একটা লোশন লাগাচ্ছিল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আমি সন্দেহমুক্ত হলাম যে উনিই পি.পি. ট্ৰেভেলিন। ডুপিকে ডেকে বলালাম, এই যে দেখ। উনি কি সেই পি.পি.? সে গুই গুই করে বলল, ঐ নিশ্চয়ই সেই কুত্তির বাচ্চা। বোধহয় এইমাত্র ব্যাটা এসেছে। ওই ক্রাইস্ট, ভাবতে অবাক লাগছে কিভাবে মেয়েটা ওকে স্পর্শ করে। আমি বললাম, তুমি যদি এক বিলিয়নের মালিক হতে তবে এই ঘটনা ঘটত। সে আমার দিকে শীতল চাউনি দিল। আমি ভাবতে লাগলাম সিটাডেলের দশমাইল দূরের রাস্তাটা সরু, কেবলমাত্র একটা জীপ চলতে পারে। জমবিসদের অনেক দল ওটা তৈরীর কাজ করছে। রাস্তার ওপরে কালো পোষাক পরা লোকগুলোকে দেখা যাচ্ছিল না। টমটম ম্যাকিউট নামে পাহারাদাররা এখানে, তারা ট্রাকের ওপর চড়ে যাচ্ছিল আর জীপ থেকে ৫০ ক্যালিবারের মেশিগান নিয়ে তাদের চারধারে লক্ষ্য করতে করতে যাচ্ছিল। জানালাম যে জমবিস হচ্ছে অন্য একটা সতর্কতা, উৎসাহ বজায় রাখার একটা উপায় অথব ক্রুদ্ধ ব্ল্যাকগুলো অন্য জায়গায় চলে যেত। কিছু গুলি দুর্গের ওপর দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল আমি অনেকদিন ধরে এখানে গোয়েন্দাগিরি করছি কিন্তু এ ধরনের গুলি আগে দেখিনি। সোয়ান কেন দুঃখিত বুঝলাম না। আমি দশমাইল দূরের দুর্গে বাইনোকুলার ঘোরলাম। সারি সারি ধুলো পড়া কামান দেখতে পেলাম। আর একটা মিসাইল দুর্গকে ছাড়িয়ে শূন্যে চলে গেল। মাঝপথে এটা ভেঙে গেল। একরাশ কালো ধোঁয়া আর ধাতুর বৃষ্টিপাত হল। বললাম–ডুপি, তুমি আগে এরকম ঘটতে দেখেছিলে যেটা ভ্যালডেজ চেষ্টা করেনি? হয়তো তিনিও আমাদের মতো এখানে এসে কিছু আশা করেছিলাম।
না ব্ল্যাঙ্ক। আমার মনে হয় ড. ভ্যালডেজ সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন পাপিডক আর পি. পি. তো বোকা নয়। আমার মনে হয় ড. ভ্যালডেজ চেষ্টা করেছিলেন স্টল করতে কিন্তু ওরা খুব দ্রুত অত্যাচার করে তাকে মেরে ফেলেছে। অনেক সময় নিয়েছে তার ঐ মৃত্যু। গোলমালটা হচ্ছে হাইতিকে নিয়ে, পাপাডক এখন মিসাইলের জন্য তৈরী নয়। ডাক্তার হিসাবে এখানে তিনি একজনই আছেন। আর এখানে আসা মস্তিঙ্কগুলো বোধহয় কিনতে পারে না পি. পি. ডুপিকে জিজ্ঞাসা করলাম ভ্যালডেজ দুর্গে প্রতিদিন সকালে যায় আবার রাতে ফিরে আসে তাই না? সে বলল, একটা জীপ সামনে একটা জীপ পেছনে আর ড, ভ্যালডেজ মাঝখানে। পাহারাদারটা টমটম ম্যাকিউট। শালা বাস্টার্ড। যখন তারা এখানে দরজা দিয়ে ঢেকে তারা পি.পি.-র লোকদের কাছে নিয়ে আসে। ডুপি বলল, ব্ল্যাঙ্ক আর কিছু চিন্তা কোরো না, সে ভালো করে আমার মনের কথা পড়তে লাগল। বললাম, তুমি চিন্তা করনি যে, আমরা ওটা করতে পারতাম? ব্ল্যাঙ্ক ভ্যালডেজ গেট আর দুর্গের মধ্যে কোন এক জায়গায় আছে। ডুপি আগুন চোখে বলল–আমি তোমাকে বলছিলাম এটা কি ওভাবে করতে পার যায় না? আমাদের গ্রেনেড আছে, প্লাস্টিক আছে। আমাদের আছে অটোমেটিক অস্ত্র, বললাম তুমি জানো, আমরা চারজন আছি। তবে আমরা যদি যত্ন নিয়ে পরিকল্পনা করতাম তবে হয়তো ডুপি হাসল, বলল, তুমি এখানকার হত্তাকর্তা নও, সোয়ান হত্তাকর্তা। যদি সোয়ান বলে আমাকে কিছু করতে আমি করব। বললাম, আমার পরিকল্পনায় কি কোন ভুল আছে? সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়ল। কিসের শব্দ হচ্ছে। কোন কিছু বাজে ব্যাপার ঘটছে মনে হচ্ছে। এমন কি আমরা যদি ভ্যালডেজকে পাই তাহলে নৌকা করে চলে যেতে পারি। তবে এটা কখনো কোরো না, ব্ল্যাঙ্ক পাপাডকের এয়ারফোর্স আছে, তার সৈন্য সামন্তরা জঙ্গলে পাহারা দিচ্ছে। টমটম ম্যকিউট এখানে থাকতে পারে। পি.পি. টাও কালো পোষাকে আছে। কোনো সুযোগ নেই, ব্যাঙ্ক। আমি তার কথাবার্তা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করলাম। এটা একটা ভালো পরিকল্পনা।
অন্য একটা জিনিষ, ব্ল্যাঙ্ক। তুমি ভুলে যাচ্ছ। তুমি সব টাকা শোধ করে দিয়েছ। তুমি পি. পি.-র জায়গায় যেতে পার এবং ড, ভ্যালডেজকে বাইরে বার করে আনতে পার। আমরা তোমাকে পরিকল্পনা দিয়ে সাহায্য করলাম। এবং তুমিই একমাত্র এটা করতে পার। আমার কিছু অবাক করা জ্যাপের টুকরো ছিল কিন্তু বিরাট ফাঁকা। কেবলমাত্র সময় আর ঘটনাপুঞ্জ–সেই ফাঁকা স্থান ভরাট করতে খুব কম সময় পাবে। আমি প্রস্তুত হলাম। আমরা জমবিসদের জড়ো হতে দেখলাম। তারা মার্চ করছিল। আমরা এদের গুনলাম। সে সময় তিনটে জীপ দেখা গেল। লিডা আমার কাছ থেকে বাইনোকুলারটা নিয়ে নিল, তারা এখন ভ্যালডেজকে ফিরিয়ে নিয়ে আসছে।
তুমি ভুল করছে। ভ্যালডেজ ঠিক আছে, ডুপি ফুঁসে উঠল–নিশ্চয়ই, তুমি জানো না পাঁচ বছর একজন মানুষকে বন্দী করে রাখলে কি হয়।
আমি অবাক হলাম এই ভেবে যে কেন এত ভাবছে। আমি নিশ্চিত যে লোকটাকে লিডা দেখেছে সে ভ্যালডেজ। সত্যিকারের ভ্যালডেজকে দিনে দুবার গাড়ি চালাতে দেখা যাবে এ ব্যাপারটা খুবই দুর্লভ। এটা প্রলোভন, একটা ফাঁদ-গুপ্ত বন্দুকধারী ফাঁদে পা দিল।
লিডা মাঝের জীপটাকে দেখে চীৎকার করে উঠল হায় ভগবান! হায় ভগবান! ওকে মেরে ফেলা হয়েছে। ও তো ভ্যালডেজকে মেরে ফেলেছে। আমি প্ল্যাটফর্মের পিছন দিকে সরে এসে দেখলাম তিনটি জীপই দাঁড়িয়ে আছে। টমটম সারা জায়গা জুড়ে ছোটাছুটি করছে; ওরা খাড়ির ওপর কিছু যেন দেখছিল। ওদের দুজন হাঁটু মুড়ে ছিল এবং লোকটার ওপর যেন কি করছিল, টমটম ম্যাকিউটের এক অফিসার হাত নেড়ে বলছেন শুনলাম-প্রতিশোধ! ডুপি বলল, ওরা ওকে মেরে ফেলেছে সোয়ান। লিডা দারুণ আঘাত পেয়ে বলতে লাগল, কিন্তু কেন? কেন তারা ওকে খুন করতে চাইল? তখন ডুপি বলল লিডাকে-পি. পি. অথবা পাপাডক কখনো ভ্যালডেজের মতো মূল্যবান মানুষকে মারতে পারে না, কিন্তু আমি জানি কে মারতে চেয়েছিল। সি. আই. এ ওঁকে মারতে চেয়েছিল, তাহলে ঐ আমেরিকান কুত্তার বাচ্চাগুলোই ওকে মেরেছে। তুমি বলছ।
হ্যাঙ্ক উইলিয়ামকে বললাম সব কথা। ওর মুখ দিয়ে প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে এল। কি শোচনীয় নরক, স্যাম? তুমি এমনভাবে তাকাচ্ছ যেন তুমি আমাকে মেরে ফেলবে। আমি তার দাড়ি মুচড়ে বললাম, তোমাকে আমি মেরে ফেলব তুমিই ওঁকে মেরেছ। বললাম হয় তুমি মরবে নয়তো তোমার জন্য গচ্ছিত থাকল পুরস্কার।
.
০৯.
সময় মানুষের মতোই মূল্যবান। আমি এই সময়ের মধ্যে গ্রেনেডগুলো, টেপ আর দরকারী জিনিষগুলো ঠিক করে রাখলাম। টমি বন্দুক; ৮৫ এবং লুগার পরখ করে নিলাম। অন্ধকার পথে প্রায় অর্ধেকটা এসেছি এমন সময় আলোকের ঝলকানি দেখতে পেলাম, বেড়ার আনাচে কানাচে আলোটা ঘোরাফেরা করতে লাগল। এরপর সর্তক হলাম লমান পাহারদার আর কুকুরদের থেকে এবং আমার গ্রেনেডগুলো বসিয়ে দিতে লাগলাম। আমি কপি বার করে এখানে একটা গ্রেনেড বাঁধলাম দড়িতে। দুটো পোষ্টের মাঝখানে। তারপর আর একটা গ্রেনেড বাঁধলাম দ্বিতীয় পোষ্টে। আর তিনটে গ্রেনেট বাঁধলাম একটা শক্ত দড়িতে। একটা পাহারাদার চলে গেল বেড়ার ভেতর দিয়ে। সে গ্রেনেডগুলো চিনতে পারেনি। জোয়ান সবকিছু সত্ত্বেও যুদ্ধ করে যাবে। না আমরা সোয়ানকে কোন বিপদের মধ্যে ঠেলতে চাই না। হ্যাঙ্কের কথা বলতেই ভুলি বলল, সে কোন কাজের নয়। যা করার আমাদের দুজনকে করতে হবে। এখন কাল জীপের সামনে পাঁচটা ম্যাকুট, মধ্যে ডাক্তার, আর চারটে ম্যাকুট। প্রত্যেকটা জীপেই ৫০ ক্যালিভারের জিনিস পোরা আছে। আমাদের মতো ম্যাকুটের সাব মেশিনগান আছে। পি.পি.-র গাড়িটানার কুকুর আছে। তুমি ওভাবে চেষ্ট কর, ব্ল্যাঙ্ক? বুঝলাম আমার ধারণা ভুল। ভুলি, লিডা আর হ্যাঙ্কের মধ্যে কি ঘটেছে সহজেই অনুমান করতে পারলাম। আমি দড়িটার খুব কাছে গেলাম। মতলব ছিল এই যে গ্রেনেড বাঁধা দড়িটা ছিঁড়ে ফেলা। দড়িটা আমার হাতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। আমি অপেক্ষা করতে করতে শুনতে লাগলাম। পাঁচ-ছয়-সাত-আট গ্রেনেডগুলো রাত্রের জন্য বন্ধ করে রেখেছিলাম। আমি তারপর দৌড়চ্ছিলাম। বেড়া দুটোর খুঁটি নীচে ছিল। মাঝখানের তারের অংশটা ঝুঁকে পড়েছিল। আমি এরমধ্য দিয়ে খুব সন্তর্পণে চলতে লাগলাম। প্রায় পঞ্চাশ গজ দূরে হেঁটে এলাম আর আমি জানতাম আমি মাইনের মধ্যে দিয়ে দৌড়চ্ছি। নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলাম। মাটি না ছুঁয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। যখন আমি গাছ থেকে ঠিক সময় মতো নেমে পড়লাম ঠিক তখনই প্রথম সার্চলাইট ফেলা হল। দ্রুত লুকিয়ে পড়লাম আমি। তারপর দশ সেকেণ্ড অপেক্ষা করলাম যাতে তিনজন এসে পড়ে। ওরা দরজার নীচে গুলি করতে লাগলে আর আমি শাস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। লিডা নিশ্চয়ই তার সঙ্গে আলাপ করছে। আমি স্টেনগানের মৃদু শব্দ পেলাম আর ৪৫-এর টমি বন্দুকের গম্ভীর গর্জন শুনতে পেলাম। আমি এটাই চেয়েছিলাম কালো পোষাক পরা লোকগুলো আর টমটম ম্যাকুটরা যেন ভেবে নেয় শব্দ অন্য দিকে থেকে পায়, অথচ আমি ভেতরে বসে আছি। গেস্ট হাউসে একটা কিন্তু ঘটছিল আর আলো নিভে গিয়েছিল কেউ কেউ যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছিল। গোপন সার্চলাইটগুলো চারদিকে ছোটাছুটি করছিল কিন্তু আমার গায়ে আলো লাগছিল না। যেন এই অবস্থাই অনেকক্ষণ ধরে চলে আর পি. পি. ট্রেভেলিরে আধুনিক প্রাসাদে যাবার রাস্তা তৈরী করে দেয়। লাল আলোর ঝলকানি আর শব্দে বুঝলাম যে ওরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আর দরজায়-ত্রিভুজাকৃতি হয়ে আছে। দুটো নোক আমার কাছে এখন কর্কটস্বরে ফিস ফিস করে কি যেন বলছে। আমি ভেবেছিলাম ওরা প্রায় দশফুট দূরে আছে। ওরা যে কোন একটা খাদের ধার দিয়ে চলে যাবে। নিজেকে ছোট্ট করে গুটিয়ে ফেললাম। চাইছিলাম ওরা আমাকে আক্রমণ করুক। তার ভাগ্য খারাপ এই মুহূর্তে চাঁদের ঔজ্জ্বল্যে তাকে ঠিক একটা কুত্তার বাচ্চার মতো দেখাচ্ছে। আমি একটা বিরাট গুঁড়ির ছায়ার মধ্যে এলাম। সে আমার ছয় ইঞ্চির মধ্যে ছিল আর তারপর সে নীচের দিকে তাকিয়ে ব্যাগ আর টমি বন্দুক দুটোয় একবার তাকিয়ে নিল। আমি তার গলা চেপে ধরলাম। সে শেষে নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। অপর লোকটা এগোলো না আর মৃদুভাবে ডাল ক্যারলস? কোথায় তুমি? সে ধীরে ধীরে গাছের দিকে এগোতে লাগল! বলল ক্যারলস? তুমি কি আমার সঙ্গে চালাকি করছ? বেরিয়ে এস, উত্তর দাও। সে চাঁদের আলোয় রাইফেলটা বাগিয়ে ধরল। আমি লাফিয়ে গেলাম আর তারপর রাইফেলটা ঘুষি মেরে ফেলে দিলাম। ডানহাতের ঘুষিতে কাবু করলাম। তারপর ছুরিটা তার গলায় এক পোচ চালিয়ে দিলাম আর তার গলাটা হাঁ হয়ে গেল। ওরা দরজা থেকে গুলি ছুঁড়ছিল। শিগগির ওরা একসঙ্গে জমা হল। দ্রুত সব কাজ করলাম। বন্দুকের গুলি এখনও চলছে। দরজা থেকে দূরে সরে পি. পি.-র লোকেরা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করল আর আক্রমণকারীদের চালাকি ধরে ফেলল। আমি মৃতের রক্তমাখা পোষাকটি পরে ফেললাম। তার রক্ত মেখে নিলাম মুখে এবং আমাকে একজন কুৎসিত বগিম্যানের মতো দেখাতে লাগল। আলোর ঝলকানিতে পুনরায় কতগুলো তোক কথা বলছে। পি পি আর তার সাঙ্গপাঙ্গারা একটু মুষড়ে পড়েছে। প্রায় মাঝরাতে বড় বাড়িটার আলো নিভে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সার্চ লাইটি দেখা গেল। ভাবছিলাম হয় ঐ তিনজন অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে অথবা মারা গিয়েছে। আমি আমার গীয়ার, মেশিনগান, ব্যাগ এ সমস্ত বালির ভেতর থেকে বার করে নিলাম। আমাকে দরজার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমি পাহারদারটাকে দেখলাম বেলুনট্রেড-এ সেঁটে দাঁড়িয়েছিল। পি.পি.-র কাছে আমার এখন যাওয়ার ঘটনাটা কিছুই নয়; যদি আমি পি. পি.-র কাছে নাও যাই তাহলেও কিছু ঘটবে না। আমি মরে যেতাম। আমি এল কোণটা পরীক্ষা করছিলাম যেখানে বলট্রেড-এর ছোট্ট অংশটা বাঁক নিয়েছে। যখন পাহারদারটা চলে গেল আমি এল কোণটার দিকে ছুটলাম, যতক্ষণ না সে আমার দৃষ্টির বাইরে চলে গেল আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। তারপর বলট্রেডের কাছে গিয়ে পাথরের খারের পিছনে লুকিয়ে থাকলাম। তার বুটের কঠিন শব্দ খুব কাছে আসতে লাগল। আমি আমার বাঁ-হাত দিয়ে তার গলা লোহার মতো চেপে ধরলাম। তাকে ছুরি দেখিয়ে বলট্রেডে নিয়ে এলাম। কালোটুপি রয়েছে তার মাথায়। নীল এক্সরে লেখা রয়েছে–পি.পি আর তার বাঁ হাতে দাগ ছিল। আমি নিজেকে একজন সৈনিক ভেবে নিলাম। আমি ওর গলায় আমার ছুরিটার আট ইঞ্চি ঢুকিয়ে দিলাম। ফিসফিস করে বললাম, তুমি যদি বাঁচতে চাও তাহলে আমার প্রশ্নের জবাব হ্যাঁ অথবা না তে দাও। জিজ্ঞেস করলাম– পি.পি. কি শুতে গেছেন? সে মাথা নাড়লো। বললাম-কত নম্বরে সে ঘুমোয়? সে কোন সদুত্তর দিল না। আমি তার মুখের ওপর হাত চাপা দিয়ে ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলাম তার বুকের ভেতর। ঘরটা হিসহিস শব্দ করে খুলে গেল আর একটা ঠাণ্ডা বাতাস বেরিয়ে গেল। পি.পি.-র জন্যই এ সবকিছু। আমি সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলাম। দুটো পেট্রল পাহারাদার আমাকে নিশ্চিত দেখেছে। আমি ছুঁড়ি মেরে সিঁড়ির উপর উঠলাম আর স্কাইলাইটের ওপর অপেক্ষা করতে করতে একজন সাদা মানুষকে দেখতে পেলাম। পিপির কোন চ্যালা হতে পারে। মেশিন পিস্তল সে বার করে নিয়ে এল। এখানে তুমি কি করছ জান কি? তারপর তার আঙুল ট্রিগারের দিকে যেতেই বললাম মিঃ ট্রেভলিনের জন্য খবর আছে। স্যার, খুব জরুরী। এটা ব্যাক্তিগতভাবে আনা উচিত বলেই আমাকে পাঠানো হল। আর একজন লোক বলল। আমাকে তুমি জান তুমি এখানে আসতে পার না। বললাম, জানি স্যার, কিন্তু তিনি আমায় পাঠিয়েছেন। জরুরী দরকার, তিনি বললেন, শুটিং করার সম্বন্ধে মনে হয়। আমার কোন কথা না শুনে সে সিঁড়ির দিকে পাহারাদারদের ডাকতে যেতেই আমি তার মেশিন পিস্তলটায় লাথি মারলাম, আর গলাটা আমি চেপে ধরলাম, তার চোখ লাল হয়ে এল। হাঁটু ভেঙ্গে আসছিল তার। তারপর তাকে আমার সামনে একহাত দূরত্বে তুলে ধরলাম আর ঝুল বারান্দা দিয়ে কয়েক পা ওকে নিয়ে গিয়ে তার গলা মুচড়ে ধরলাম। তাকে ধীরে নামতে দিলাম। সিঁড়ির কাছের একটা দরজা খুলে তার শরীরটা টেনে নিয়ে গিয়ে পিস্তলটা তার বুকে চেপে ধরলাম। আমি বিশ্বাস করলাম না যে পি. পি. পাহারাদার ছাড়া বেরবে। যাই হোক, কিন্তু সেই কুত্তীর বাচ্চাটা কোথায়? ঘরের ভেতর থেকে পি. পি.-র গলা ভেসে এল। গলার স্বরে একটা কর্তৃত্ব আছে, আর হাসি শুনে যেন মনে হলো আদর দিচ্ছে।
এটা সেই মেয়েটাকে আবার দাও, শিগগীর। যাও? যদি তুমি কথা বলতে পার, আরো হাজার ডলার পাবে।
.
১০.
আমি অন্ধকার ঘরটায় নিঃশব্দে উঠলাম আর আমার পেছন থেকে এটা বন্ধ হয়ে গেল। ঝুলবারান্দা দিয়ে আসার সময় ট্রেভলিগের গম্ভীর গলা শুনলাম যাও হে! তোমাকে আরও এক হাজার ডলার দেওয়া হবে যদি কাজটা সেরে ফেলতে পার। তাকে একটু ভোলাও গে যাও। একটা স্ত্রীলোকের কণ্ঠস্বর শুনলাম। পি. পি. সত্যিই প্রশংসনীয়। সে ফ্যাসিষ্ট হতে পারে কিন্তু উৎসাহ আছে। একটা ছোটখাট যুদ্ধ হচ্ছে বাইরে, সে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা না করে ক্যামেরা চালিয়ে ঐ মেয়েটার সঙ্গে…। আমি ঘরের দিকে এগোলাম টমি বন্দুকটা নিয়ে। আমি বললাম, ভয়ের কোন কারণ নেই, কোন কারণে হঠাৎ নড়াচড়া করাটা ঠিক নয়। শান্ত থাকবে তাহলেই হবে। মেয়েটার বিস্ফারিত মুখের সামনে আমি বন্ধুকটা ঘোরালাম। বললাম, একটা শব্দ হবে। ব্যস তুমি শেষ। পি.পি. আমার দিকে রাগত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে কোত্থেকে উঠে এলে বাপ? কি চাই তোমার?
হঠাৎ মুখে একটা মৃত মানুষের নাম চলে এল। বললাম, স্টেডি বেনেট। সি. আই. এ এজেন্ট আপনি তো পি.পি. গ্রেভলিন? পল পেথটন ট্রেভলিন? মেয়েটা বলল, উনি কি আগে এসেছিলেন? বোধহয় তুমি একটু বিপদে পড়ে গেছ? তাই না ছোকরা? পি.পি. আর আমি একসঙ্গে মেয়েটাকে ধমকে উঠলাম চুপ কর, পি.পি. বলল, আমার ধারণা তুমি বোধহয় ড. ভ্যালডেজের খোঁজে এসেছ?
নিজের মনে বললাম, ভ্যালডেজ তাহলে জীবিত। তোমাদের এখানে তোমাদের হয়ে কাজ করছে-তাহলে তো খুঁজে বার করতে হবে। ট্রিগারের উপর হাত রেখে বললাম।
তোমার সংবাদ ভুল। তুমি মাকড়সা আর তুমি আমার জালে এসে পড়লে। কি বলতে চাও তুমি? মিস্টার বেনেট তুমি একটা মরালোককে ভয় দেখাতে পার না। আমার গলায় ক্যান্সার হয়েছে। অপারেশন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। আমি মোটে দুমাস আর বাঁচব, ডাক্তার বলেছে। তারপর মেয়েটা বলল–তুমি যেখান থেকে এসেছে সেখানেই ফিরে যাও না কেন? আর আমার মিষ্টি বুড়ো পি. পি. তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। আমি মেয়েটার দিকে চেয়ে বিষণ্ণ হাসি হাসলাম। তুমি আমাকে নিরাশ করলে। আমি ভেবেছিলাম তোমাকে তোমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেব। তুমি আবার স্কুলে ফিরে যাবে, রবিবারগুলোতে দুধ আর খাবার স্কুলে স্কুলে পাঠাবে। সে জীবন কি তুমি চাও না? সে আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়াল। তারপর বলল–তুমি হলে গিয়ে একটা কুত্তার বাচ্চা, তুমি এখানে আমার জন্য এসে সবকিছু নষ্ট করছে। পি. পি. আমাকে ফিল্ম স্টার তৈরী করে দেবে বলেছে, বুঝেছ। আর ও যা বলে তা করে। এবার পি. পি. মেয়েটাকে বলল ও সুইটি, তোমার সি. আই.-এর সঙ্গে কথা বলার দরকার নেই। সবকিছু ছুঁড়ে দিলাম ওর বুক লক্ষ্য করে। তোয়েটার বাঁ বুকে চেপে বসেছে ছুরিটা। সে অনেক চেষ্টা করল ছুরিটা তুলে ফেলতে কিন্তু পারল না। পি. পি.-কে বললাম আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আমি বললাম, এবারে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে আমাকে কালভেজের কাছে নিয়ে চলুন। কোন কথাবার্তা না বলে চুপচাপ উঠে পড়ুন।
সে বলল, নৃশংস, এত নৃশংস আর নীচ তোমরা। আমি বললাম, একটু তফাৎ আছে। নিজের মৃত্যু আর অপরকে মারার ব্যাপারটা তো সমান নয়। ঐ ছোরাটা তুলে নাও আর ওটা ঐ পি. পি-র ওপর চালিয়ে দেবে। কালো লোকটা ছুরি হাতে পি. পি.-র দিকে এগিয়ে চলল। ঠিক আছে, সে বলল, কাজটা করতে হবে।
পি.পি. ট্রেভেলিন একটা হাত তুলে বলল–না। তার আর প্রয়োজন হবে না। কখন আমি মরব তা জানি। আমি জানি তুমি আমাকে মারবে। আর তুমি ঠিক কাজই করছো, মিঃ বেনেট। আরও দুমাস হাঁটা দরকার। আমি তোমাকে ড. ভ্যালডেজের কাছে নিয়ে যাব। কাল লোকটাকে আমি ছোরাটা ছুঁড়ে ফেলতে বললাম।
.
১১.
বললাম–আমার আসল নাম কি কার্টার। পি. পি. বলল, আমার অনুমান করা উচিত ছিল। বললাম–কতক্ষণে আমরা দুর্গে পৌঁছব? আধ ঘণ্টার মধ্যে।
ভ্যালডেজ–সব সময় সিটাভেলে থাকে? সে আসে এখানে? আমি বেশ কয়েক সপ্তাহ ওকে দেখেনি। সে ঐ জায়গা ছেড়ে আসবে না। আমি তাকে ইতিমধ্যে দশ ডলার দিয়েছি। সে ওটা সুইজারল্যাণ্ডের ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে দিয়েছে। যদি ঠিকমতো কাজ করতে পারে তাহলে আরো দশ লক্ষ দেব বলেছি।
ভ্যালডেজ আমার সঙ্গে আসবে অথবা আমাকে শেষ করতে না দিয়ে পি. পি. বলল, তুমি তাকে মেরে ফেলবে তাইত? অবশ্যই তাই।
গাড়িটা প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছল। একজন রক্ষী কালো ইউনিফর্ম পরে সামনে পেছনে যাওয়া আসা করছে, একটা রাইফেল তাঁর কাঁধে। বললাম টমাস, ব্যাগটা নিয়ে যাও। সাবধানে নিও, পড়ে গেলে ভেতরের জিনিস বিস্ফোরণ ঘটবে। পি. পি. অচেতন রক্ষীটাকে দেখে ব্যাপারটা বুঝে ফেলল–একে একেবারে মেরে ফেললেন না কেন, মিঃ কার্টার। আমি জানি কাকে মারতে আর কাকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু ঐ মেয়েটা? হতভাগ্য বেটি? সত্যিই–ঐ হতভাগ্য বেটি কে. পি. পি.। ও যা করেছিল তা ওর ওপরে আদেশ ছিল করার।
বললাম–ভ্যালডেজ কোথায়? পি. পি. বলল, এই কে বলল চুপ করে দেখে যেতে। রোমেরা ভ্যালডেজকে দেখলাম। বললাম–আমি কে আর এখানে কেন এসেছি। কিছু না বলে শুধু শুনে যাচ্ছিলেন আর তার চোখদুটো আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করছিল। ভ্যালডেজ বললেন আপনাদের সঙ্গে যাবার আমার কোনো ইচ্ছা নেই, মিস্টার কার্টার। আপনি মিস বোনাভেনচার আর আপনাদের ওপরওয়ালারা একটা মোহের বশবর্তী হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি এখানে মিস্টার ট্রেভেলিন আর ড. ভুগেলিয়ের অধীনে কাজ করে সন্তুষ্ট। আমার নুজারে এলিটা ভ্যালডেজের গলায় ঢুকে গেল। তারপর আর একটা। দেখলাম লোহার দরজার ডক থেকে দশফুট দুরে দেওয়ালে আটকানো। সেটা একটুখানি খুলে গেল ওটা ভ্যালডেজের একান্ত ব্যক্তিগত প্রবেশ পথ। প্রাণপণে দৌড়তে লাগলেন। দেখলাম এক-একটা গর্ত থেকে আলোর ঝলকানি আসছে। রেডিও ঘরে দেখলাম একটা লোকট্রান্সমিটারের সামনে বসে আছে। আমি অপারেটরের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নুজারে বাঁট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করতেই সে পড়ে গেল। আমি তার চেয়ারে বসলাম। ট্রান্সমিটারের খবরটা পাঠিয়ে দিলাম: সিটাডেল থেকে বলছি, ভ্যালডেজ আর ট্রেভালিনকে মেরে ফেলা হয়েছে–আমাদের দলের লোকেরা ঠিক আছে–পরিকল্পনা মতো আক্রমণ ঠিক সময়ে যেন হয়, এ্যাটাক! আমাদের স্বাধীনতা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে–বেনেট।
.
১২.
জুলি হেসে সুপ্রভাত জানাল আমাকে। বলল, এই সময়ে তুমি এখানে, কিন্তু তোমার যাবার পথ তো খোলা দেখছি না। বললাম, লিডা তোমাকে আমার সম্বন্ধে কিছু বলেছে? বলেছে কার্টার তোমার প্রতি একটু হতাশ। আমি দায়ী তার জন্য। হেসে বললাম, যখন তুমি ভেবেছিলে লিডা আর ভ্যালডেজের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হবে তখন তুমি খুব ভয় পেয়েছিলে, না?
আমি অস্বীকার করি। একসময় আমি চিন্তিত ছিলাম। পাপাডকের সঙ্গে তার সংযোগ ছিন্ন করার আমার প্রয়োজন আছে। আমি তোমাকে মেরে ফেলতে ঘৃণা করি। যদি তুমি ছেড়ে দাও আমরা বাইরে কোন কাজ করতে পারি। তুমি বেটিটাকে মেরে ফেলেছ?
জিজ্ঞেস করলাম, পি.পি.-র সঙ্গে কি ওর কোন যৌন সম্পর্ক ছিল? স্মিডের সঙ্গে কি তোমার প্রেম ছিল? সে কেমন?
একটা বোঝা পড়ল। বাতাসে বারুদের গন্ধ, আমি গর্তের মধ্যে লুকিয়ে পড়লাম। আমার কাঁধ থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। কামান, ওর ক্ষমতাসম্পন্ন বন্দুক ধ্বংস করছিল দুৰ্গটা। শেষ। জেট ফাইটার আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। ভাবতে লাগলাম আমি যেন অ্যাগম, বিধ্বস্ত স্বর্গের একমাত্র জীবিত মানুষ। একজন মানুষের গলা পেলাম–বেনেট! বেনেট! চলে এস–চলে এস–চলে এস! দেখলাম হ্যাঙ্ক উইলিয়ার্ড। ডিয়াজ ওরটেগা পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে একটা রাইফেল আমাদের দিকে উঁচিয়ে আছে। তার মাথা বাঁধা আর তার চওড়া কালো বুক রক্তে লাল হয়ে আছে। আমি কুপার থেকে একটার পর একটা গুলি করলাম ওর দিকে। হ্যাঙ্কের দাড়ি বেয়ে ঘাম ঝরে পড়ছিল। ওকে আমি ভাই-এর মতো দেখি। আমি তীর দেখিয়ে ওকে বললাম, হেলিকপ্টার এখানে থামাও। হ্যাঙ্ক খুব সহজেই পাহাড়, উপত্যকার ওপর দিয়ে চালিয়ে নিয়ে গেল। পাপড়কের দুটো লড়াকু বিমান আমাদের পেছনে লেগেছে। কিছুক্ষণ পরে জেটগুলো ফিরে গেল। মনে হয় জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। লিডার দিকে ঝুঁকে পড়ে বললাম, ঐ দরজাটা কোথায়? লিডাকে ধাক্কা দিয়ে একটু সামনের দিকে ঠেলে বললাম, লাইন করে চল। হ্যাঙ্ক সামনে এগিয়ে গিয়ে একটা রাইফেল নিয়ে এস। তাড়াতড়ি! আমি ইঞ্জিনটার ব্যবস্থা করি।
লিডা আমার হাতে ওর হাত রেখে হেসে বলল দুঃখিত, নিক। আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারিনি। বললাম, তোমরা খুব নাবালক। ভ্রুকুটি করে লিডা বলল–কি বোকাই না। আমি, বিশ্বাস করেছিলাম ভুলিকে–যে লোকটাকে তুমি বললে ডায়ান ওরটেগা। কে. জি. বি-র লোক সেজেছিল।
বললাম–কিন্তু পাপাডকের লোকেরা ওকেই ভ্যালডেজ ভেবে সরিয়ে দিল। লিডা ওর দুচোখ চেপে ধরল ওর হাত দিয়ে, আর রোমেরা? যে লোকটাকে আমি ভালোবাসতাম?
ঐ লোকগুলো কিন্তু কাউকেই ছাড়বে না–ওরা কিউবাতে যা করতে পারেনি তা তারা হাইতিতে করবে।