- বইয়ের নামঃ দি মিস্ট্রি অফ ব্ল্যাক ডেথ
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ চন্দ্রছাপ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর
দি মিস্ট্রি অফ ব্ল্যাক ডেথ
১. সাবওয়ে ট্রেন
দি মিস্ট্রি অফ ব্ল্যাক ডেথ (অন্যান্য)
০১.
সাবওয়ে ট্রেন থেকে বেশ কিছুটা দূরে কাঁপুনি ধরেছিল, সেই শব্দটা আমার মনকে নিউইয়র্কে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল। আমার নাড়ীভুড়ি যেন কালো বৃষ্টির মতো হয়ে গেল। ভুদু চার্চের মতো, ম্যানহাস্ট্রানের আপার ওয়েস্ট সাইডের মতো সব ঘটনা তার পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে।
কাল অন্ধকার ঘরে মৃদুলয়ে বাজনা বাজতে লাগল। চারদিকের হাওয়া একটু গরম। লিডা বোনাভেনচার, রাজহাঁসের মতো সুন্দর মেয়েটা আমার হতে তার ঠাণ্ডা আঙুল রাখল, আমি তখন খুব ঘামছিলাম।
পাপাডক একটা হাত তুলে দাঁড়িয়েছিলেন, আমি একদৃষ্টিতে তাকে এবং মেঝের ওপর বসা মেয়েটাকে আর দিয়ে লোকটাকে দেখতে লাগলাম। পাপাডক দাঁড়িয়ে প্রথমে হাতটা তুললেন, তারপর চুপ করে রইলেন, আমি তার সম্পর্কে জেনে গেলাম। কিন্তু যখন ওয়াশিংটন থেকে আমন্ত্রণ এল, আমাকে তখন শিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হল।
লিডা আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে আমার কানে তার ঠোঁটের মৃদু পরশ দিল। বলল–তুমি কোনদিনও এইরকম জিনিস দেখনি, ওরা সারা রাত ঘরে কী যে করেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে সমস্ত আলো নিভে গেল, মেয়েটা আমার হাতটা তার ঠাণ্ডা আঙুল দিয়ে চেপে ধরল। বেনেট চুপিচুপি বলল–ওরা আমাদের কী এক নোংরা পৃথিবীতে ফেলে দিয়ে গেল। নিক, এখাননা শান্ত হও। আমরা বিপদের গর্তে পা রাখতে চলেছি।
আমি আস্তে করে ব্রেককে চুপ করতে বললাম। বললাম-একেবারে মুখের দিকে তাকিয়ে থেকো না। আনন্দ কর। জীবনটাকে উপভোগ কর।
আলো এসে পড়াতে দেখা গেল ম্যামার্লোই যিনি সবার কাছে ম্যামাল ডেনিস নামে খ্যাত তিনি একটি বেদির ওপরে পা দুটি জড়ো করে বসে আছেন। তার মুখটা কাল হয়ে গেছে এবং মুখ দিয়ে হিস হিস শব্দ হচ্ছে। পকেট থেকে দুটো শিশি বার করলেন ম্যামার্লোই। শিশি দুটোর একটা থেকে তেল আর একটা থেকে মদ মিশিয়ে চকচকে জিনিস তৈরী করলেন। তারপর আস্তে আস্তে হাতে দুটো তুলে ধরলেন, নিঃশব্দে একটা কাঁসার আওয়াজ বেজে উঠলো। ম্যামার্লোই তার ঈশ্বর দয়ালু জ্যামাবোলাকে বার বার ভাবতে লাগলেন। আর হঠাৎ আলোর উৎস নিভে গেল। মেয়েটি আমার হাতে টোকা মারল আর শিরা মানুষটি গাঁজা গাজ করতে লাগল।
আবার ড্রাম বাজতে শুরু করল। মোহিনী মায়ার জালে আলো পাক খাচ্ছে। একবার অন্ধকার, আবার আলো, আবার অন্ধকার আবার আলো জ্বলে উঠল, একটা আলো ক্রমশঃ সবুজ হতে থাকলো। আলোতে দেখা গেল লোকটার চকচকে মুখ, আর ভেতরের কোণে কাল জন্তুটাকে। বাজনার আওয়াজ ক্রমশঃ বাড়তে লাগল। মেয়েটা ছাগলটাকে ঘিরে নাচার ভঙ্গিতে ঘুরতে লাগল। মেয়েটা একটা সাদা পোষাক পরেছে। পা দুটো অনাবৃত, চোখ দুটো অনাবৃত, চোখ দুটো বড় বড় গোল গোল কোমল। মৃদু তপ্ত আলোয়, জন্তুটার চোখ দুটোকে অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছিল। একদৃষ্টে জন্তুটা মেয়েটাকে দেখছে।
মেয়েটা অন্ধকারে নাচতে নাচতে আলোয় ফিরে হাঁটুগেড়ে বসে ছাগলটার দিকে এগিয়ে গেল। ছাগলটা মানুষের মতো শব্দ করে কাঁদতে শুরু করল। আমি লুগারকে এক জায়গায় আর স্টিলেটোকে অন্য জায়গায় রাখলাম। ঠিক সময় মনে হল কি যেন স্পর্শ করেছে আমাকে। আমার মেরুদণ্ডের মধ্যে দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে চলেছে। আর স্টিভ বেনেট গজগজ করেছ। মেয়েটা ছাগলটার মতো খুব খণ্ডে আস্তে ঢ্যাঁ ঢ্যাঁ লাগল। মেয়েটার ছাগলটার সামনে না যাওয়া পর্যন্ত চারজনের সামনে হামাগুড়ি দিতে লাগল। মেয়েটার চোখগুলো বেশ কাল হয়ে গেল আর ছাগলটার চোখ জ্বলজ্বল করতে লাগল। ছাগলটা মেয়েটার মুখ থেকে একসময় গাছের পাতাগুলো নিয়ে নিল।
আমি অন্ধকারের মধ্যে ম্যামার্লোই এবং স্যাপালোই-এর শরীরে গঠন দেখতে চেষ্টা করলাম। কে যেন অন্ধকারে এক বিচিত্র শব্দ করে উঠল।
মেয়েটার সমস্ত শরীর কালো তেলতেলে হয়ে গেছে। তার দেহের উদ্ধাঙ্গ অনাবৃত, সর্বাঙ্গে স্বেদ, বাজনার সাথে সাথে মেয়েটা ঘুরতে লাগল কিন্তু সে তখন সম্পূর্ণ উলঙ্গ। তারপরে সে আস্তে করে ছাগলটার দিকে দুলতে দুলতে এল। তার সর্বাঙ্গে তখন বাসনার আমন্ত্রণ। মেয়েটা নগ্ন ঝড় তুলেছে, ছাগলটাকে এখন সে তার পুরুষ সঙ্গী ভাবতে পারে।
লিডা নিজের হাতটা আমার হাত থেকে তুলে নিল। আলোটা সাদা হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। তারপর আবার শব্দ এবং সেই আর্তনাদ!
সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে তখন যেন দামামা বাজছে।
.
০২.
মেশিনগানগুলো ওদের হাত থেকে এমনভাবে লাফিয়ে উঠছে যেন সমস্ত লোকের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটেছে। মাথা গরম করে কাজ করতে চায় ওরা। সামনে যারা আছে সবাইকে করে হত্যা এগিয়ে চল–এই যেন ওদের অঙ্গীকার।
ম্যামালোই এবং স্যাপালোই দুজনেই প্রথম গুলিতে প্রাণ হারালেন। স্যাপালোই নীচে পড়ে গিয়ে আর্তনাদ করতে লাগলেন, আর সেই আর্তনাদের আওয়াজটাকে মনে হলো বন্দুক থেকে কি এক মরাকান্নার শব্দ হচ্ছে। কারা যেন উল্লাসে চীৎকার করে ওঠে–আমরা নিউইয়র্ক দখল করেছি!
আমি লুগার বন্দুকটা তুলে নিলাম। কিন্তু লভভ্রষ্ট হতে হলো, কারণ লিডা আমার হাতটা আঁকড়ে ধরেছে। আর বেনেট রিভলবার উঁচিয়ে ধরতেই বগিম্যান মেশিনগান দিয়ে তাকে সজোরে আঘাত করল। অতর্কিত আক্রমণে বেনেট পিছিয়ে গেল।