–ঠিক, তবে সেটা স্মাগলিং-এর নয়। এরকুল একটা আড়মোড়া ভাঙে।
অ্যান্ড্রুজের দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে বলে-একটা সিগারেট ছাড়ো তো।
অ্যাণ্ড্রুজ প্যাকেটটা ছুঁড়ে দেয় ওর দিকে।
এরকুল সিগারেট ধরায়। গলগল করে একরাশ ধোঁয়া ছাড়ে নাক-মুখ দিয়ে।
টেলিফোনটা বেজে ওঠে ঐসময়। অ্যাণ্ড্রুজ বলে–ঐ শোন। ডাক এলো বোধ হয়।
-তোমার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক।
এরকুল বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে যায় দূরাভাষ যন্ত্রের দিকে। ক্রেডেল থেকে রিসিভার তোলে।
তারপর মিনিট তিনেক ধরে ওদের সংলাপ চলে।
অ্যাণ্ড্রুজ বুঝতে পারে যে সত্যিসত্যিই একটা কেস এসেছে এবার।
কে এই লীনা?
ওপারের কণ্ঠস্বর আর শোনা যায় না।
–আচ্ছা, তাই নাকি।
–ভারী আশ্চর্য লতা।
-না না, কোন ভয় নেই। আমি আসছি এখুনি। হ্যাঁ, মুহূর্তে রওনা দিচ্ছি। চিন্তা করো না। তুমি।
অ্যাণ্ড্রুজ যেন অবাক হয়ে গাত্রোখান করে বলে–এই লীনা নামের মহিলাটি কি?
-সেকি।
এবার অবাক হওয়ার পালা এরকুলের। গত দশ বছর ধরে যার সাথে তুমি বহন করে চলেছো বন্ধুত্বের সম্পর্ক, যে তোমাকে গিফট পাঠায়, তার কথা ভুলে গেলে?
-ও তোমার সেই পাতানো বোন।
সবকিছু মনে পড়ে গেল অ্যাণ্ড্রুজের।
–পাতানো হলেও বোন বোনই। তার আর পরিচয়ের দরকার নেই। তাছাড়া মনে রেখো, সে কিন্তু তোমারও বোন হয়ে গেছে।
হঠাৎ যেন গম্ভীর হয়ে যায় এরকুল।
–এক্সকিউজ মি।
বেশ লজ্জিত মনে হয় অ্যাণ্ড্রুজকে।
-চলো আমি তৈরী।
–হ্যাঁ, চলো। ক্যাজুয়াল ড্রেস পরে এরকুল। দরজার তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ে দুজনে।
.
০৫.
লীনার মুখে সব কথা শুনে এরকুল বলে–তাহলে এই তোমার কাহিনী?
-সংক্ষেপ। এরকুল, যা যা ঘটেছে তা আগাগোড়া বলে গেলাম আপনাকে।
–হুঁ।
এরকুল সিগারেটে টান দেয়–যাইহোক। একটা নীট লাভ তো হয়েছে তোমার। তোমার হারানো স্বামীকে তো ফিরে পেয়েছে।
–পেয়েছি। কিন্তু ভয় হয়। পেয়েও না হারাই।
লীনার চোখে জল।
এরকুল অভয় দেয়–ভয় নেই। আমি তো এসে গেছি। তবে আগে একবার ঐ হেলেনার সঙ্গে কথা বলতে হবে।
–এখনই?
–হ্যাঁ। দেরী করে কি লাভ?
.
-আপনি তাহলে কাউকে দেখেননি।
–না। বললাম তো। কিছুতেই না। কাউকে না।
–আচ্ছা, আপনি হঠাৎ ঐ নীচে নেমে আসছিলেন কেন?
–একলা ঘরে ভালো লাগছিল না। তাই ভাবলাম, লীনার সঙ্গে গল্প করে আসি।
তারপর সিঁড়ির বাঁকের মুখে এসে থমকে দাঁড়ালাম। দেখলাম লীনার ঘরের দরজাটা খোলা। পর্দার ফাঁক দিয়ে আলো আসছে।
–এই দেখে আপনি আর এগোলেন না, তাই তো?
–ভাবলাম, ঘরে হয়তো তোক আছে তাই।
–কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন ঐভাবে?
–মিনিট তিন-চার হবে।
–তারপর?
–তারপর যখন কারো সাড়াশব্দ পেলাম না। তখন কেমন সন্দেহ হলো। তবে কি লীনা ঘরে নেই।
–লীনা ফিরলো কখন?
-একটু বাদেই। তখনই বকাবকি করি তাকে। এভাবে দরজা খুলে যাওয়া উচিত হয়নি। এরকুল বুঝলো, এর কাছে থেকে আর কোন কাজের কথা পাওয়া যাবে না। সে বলল- আজ আসি মিসেস হেলেনা। অনেক ধন্যবাদ। দরকার হলে আবার আসবো।
নিশ্চয়ই। একশোবার। লীনার একটা পুতুল নাকি খোয়া গেছে। দেখুন তো কি কাণ্ড।
–হ্যাঁ, জিনিসটা লীনার যথেষ্ট সখের। চিন্তিতভাবে বলে এরকুল। তারপর নেমে আসে নিচে, লীনার ঘরে।
লীনা বলল–কি করবো, এরকুল?
–কি আবার করবে? হাসলো এরকুল। কাল রাত ঠিক আটাটায় হোটেল প্যারাডাইসে মিঃ স্টুয়ার্টের সঙ্গে দেখা করো।
-খালি হাতে?
–বোকা মেয়ে। ঐ পুতুলের অভাব আছে কোন। কিনে দেবো একটা।
–কিনে দেবে?
নিশ্চয়ই। তারপর সেটা মিঃ স্টুয়ার্টের হাতে দিয়ে বলবে, এ গিফট ফ্রম পিটার। যেমনটি পিটার বলে দিয়েছিল।
–আমার কেমন যেন ভয় করছে এরকুল। কোন রকম বিপদ হবে না তো?
গম্ভীর স্বরে এরকুল বলে–লীনা, তোমার এই দাদাটি থাকতে তোমার কোন ভয় নেই।
-দাদাটি কেন? দাদারা বলো। বাধা দেয় অ্যাণ্ড্রুজ–কিংবা দুটি দাদা।
ঘর কাঁপিয়ে হেসে ওঠে এরকুল-বদলা নিলে বুঝি। বেশ, বেশ।
ভারী গুমোট আবহাওয়া লঘু হয়ে গেল নিমেষে।
এরকুল সস্নেহে লীনার মাথায় হাত রাখে–আজ তাহলে উঠি, বোন।
দরজা আগলে দাঁড়ালো লীনা।কফি না খাইয়ে আজ ছাড়বোই না।
এরকুল বলে কিন্তু দুধ চলবে না, ব্ল্যাক কফি।
জবাব দেয় অ্যাণ্ড্রুজ–সেই ভালো। তোমার ব্ল্যাক কফির সঙ্গে কড়া সিগারেট। জমবে ভালো। প্যাকেটটা আনতে ভোলোনি তো?
–পাগল হয়েছে। নিজেকে ভুলতে পারি। কিন্তু সিগারেটের প্যাকেট ভুলবার জোটি নেই। অতএব আরো কিছুক্ষণ সেখানে কাটলো।
অ্যাণ্ড্রুজ জিজ্ঞাসা করে–কিরকম মনে হলো?
এরকুল চিন্তিতভাবে মাথা নাড়লো–লীনার স্টেটমেন্টে ভুল নেই কোন। মিথ্যে বলেনি ও, তবে একটা ব্যাপারে আমার খটকা লাগছে। লীনার স্বামী দশ বছর আগে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে বলেই জানি। যে ফার্স্টক্লাস কামরায় ভদ্রলোক ছিলেন সে কামরায় কেউই প্রাণে বাঁচেনি।
–তবে এই ভদ্রলোকটি কে? মানে, লীনার কাছে যিনি স্বামী সেজে এসেছেন?
–সেটাই তো প্রশ্ন, কে ঐ লোকটি? কি ওর উদ্দেশ্য?
–মিসেস হেলেনাকে কেমন দেখলে?
–গভীর জলের মাছ একটি। ঠোঁটের কোণে চোরা হাসি হেসে বলে এরকুল।
–জানো অ্যাণ্ড্রুজ, পুতুলটার মডেলটি যে মিসেস হেলেনার কাছেই আছে এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।
-জেনেও কিছু বললে না কেন?
-ধীরে, বন্ধু ধীরে। এরকুল বলে। তাছাড়া হয়তো তেমন প্রমাণ নেই আমাদের হাতে। কেউ কি তাকে জিনিসটা নিতে দেখেছে।