চিন্তিতভাবে মাথা নাড়লো মিসেস হার্বার্ড। এ প্রসঙ্গে মিসেস নিকোলেটিসের কথা বিশ্বাস করতে অপারগ সে।
আমাকে তো সেলী কোনো কথা বলেনি? বললো সে, কিন্তু তার সঙ্গে তোমাকে কথা তো বলতেই হবে?
হ্যাঁ অবশ্যই।
আর যদি এইসব কালো চামড়ার ছাত্রছাত্রীরা–এইসব ভারতীয়রা, এইসব নিগ্রোরা তার চলে যাওয়ার কারণ হয়, তাহলে তারা বরং সবাই এখান থেকে চলে যেতে পারে বুঝলে? এই বর্ণবৈষম্যের ঝামেলায় আমি আমেরিকানদের পক্ষে। এক অদ্ভুত নাটকীয় ভঙ্গিমা করলেন তিনি।
আমি যতদিন দায়িত্বে আছি তা হতে দেবো না, শান্তস্বরে বললো মিসেস হার্বার্ড। সে যাই হোক, আপনার পথ ভুল। এখানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সেরকম মনোভাব নেই। আর আমার বিশ্বাস, সব ব্যর্থ, সেলীও সেরকম ধরনের মেয়ে নয়। সে আর মিঃ অ্যাকিমবোকে প্রায়ই একই সাথে মধ্যাহ্নভোজ সেরে থাকে, আর তার থেকে বেশি অন্য কেউ কালো চামড়ার পুরুষ হতে পারে না।
তারপর কমিউনিস্টদের প্রসঙ্গও আছে–তুমি তো জানো কমিউনিস্টদের সম্পর্কে আমেরিকানদের কিরকম ধারণা, নিজেল চ্যাপম্যান এখন একজন কমিউনিস্ট।
এতে আমার সন্দেহ আছে।
হা, হা, সেদিন সন্ধ্যায় কি বলেছিল তোমার শোনা উচিত ছিলো। লোকেদের বিরক্ত করার জন্য নিজেল যা খুশি বলতে পারে। সেদিক থেকে খুবই ক্লান্ত সে।
তুমি ওদের বেশ ভালো করেই জানো, প্রিয় মিসেস হার্বার্ড। সত্যিই তুমি বড় চমৎকার মেয়ে। আমি বার বার নিজেকে বলে থাকি-মিসেস হার্বার্ড ছাড়া আমি কি করবো? আমি ভয়ঙ্করভাবে তোমাকে বিশ্বাস করি।
তার মানে পাউডার দেওয়ার পর জ্যাম, ব্যঙ্গ করে বললো মিসেস হার্বার্ড।
সে আবার কি?
কিছু নয়। চিন্তা করবেন না, আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো। এরপরেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো মিসেস হার্বার্ড। উৎসাহের সঙ্গে তার ধন্যবাদ জ্ঞাপনের নকল ভাবাবেগটা এড়ানোই কারণ হতে পারে, নিজের মনে বললো সে : মিথ্যে আমার সময় নষ্ট করা–কি রকম পাগল করা মহিলা উনি। দ্রুত পায়ে হেঁটে সে তার বসবার ঘরে এসে ঢুকলো।
কিন্তু মিসেস হার্বার্ডের জন্য শান্তি এখনো বিলম্বিত। ঘরে সে প্রবেশ করা মাত্র দীর্ঘদেহী একজন নারী উঠে দাঁড়াল। আমি আপনার সাথে কয়েক মিনিট কথা বলতে চাই। দয়া করে আপনি যদি
নিশ্চয়ই, হ্যাঁ নিশ্চয়ই, আমি তোমার কথা শুনবো এলিজাবেথ, দারুণ বিস্মিত মিসেস হার্বার্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়ে এই এলিজাবেথ জনস্টন আইনের ছাত্রী, উচ্চাভিলাষী এবং কঠোর পরিশ্রমী সে। চৌখস এবং যোগ্য মেয়ে সে, হোস্টেলে সফল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একজন সে, এইজন্যই মিসেস হার্বার্ড সবসময় তাকে শ্রদ্ধা জানায়।
এখন সে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু তার কথার মধ্যে একটা তোতলানো ভাব লক্ষ্য করলো মিসেস হার্বার্ড! তবে তার কালো চেহারাটা যেন অনুভূতিহীন। কোনো ব্যাপার-ট্যাপার আছে নাকি?
হা, দয়া করে আপনি আমার ঘরে আসবেন? প্লিজ যদি একটু দয়া করেন। এক মিনিট। মিসেস হার্বার্ড তার গা থেকে কোট এবং হাতের দস্তানা খুলে ফেলল। তারপর ঘরের বাইরে এসে অনুসরণ করলো মেয়েটিকে। একেবারে টপ ফ্লোরে মেয়েটির ঘর।
এই হলো আমার কাজের নোট, ঘরে ঢুকে মেয়েটি বললো, এতো : নোট লিখতে মাসের পর মাস লেগে গেছে। এ এক কঠিন অধ্যবসায়, আর দেখুন আমার সেই পরিশ্রমের কি হাল করা হয়েছে।
মিসেস হার্বার্ডের চোখ কপালে উঠলো, হা করে শ্বাস নিলো।
লেখার টেবিলের উপর কালি ছড়িয়ে রয়েছে। মোর্টের উপর সব কাগজগুলোর উপরেই কালি ছড়িয়ে পড়েছে। কালিসিক্ত কাগজগুলোর উপর হাত বোলালো, তখনো ভিজে ছিলো।
জেনেশুনে বোকার মতো প্রশ্ন করলো সে, তুমি নিজে কালি ছিটিয়ে দাওনি তো?
না, আমি নিজে কাগজে কালি ছিটাতে যাব কেন? আমার অসাক্ষাতে এই জঘন্য কাজটা করা হয়েছে।
তুমি কি মিসেস বিগসকে–
সাফাইয়ে কাজ করে মিসেস বিগস। একেবারে উপরতলার শয়নকক্ষের তদারকি করার ভার তার উপর।
না, মিসেস বিগস নয়। এমনকি আমার নিজের কালিও নয়, আমার কালি বিছানার উপর সেলফে রয়েছে–স্পর্শও করা হয়নি সেটা। বাইরের কেউ কালি নিয়ে এসে ইচ্ছা করে এ কাজ করেছে।
মিসেস হার্বার্ড মর্মাহত। খুবই জঘন্য কাজ এবং কাজটা অতি নিষ্ঠুরও বলা যেতে পারে। এখানে একটু থেমে সে আবার বললো, বলার মতো ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না এলিজাবেথ। আমি মর্মাহত, ভীষণভাবে মর্মাহত, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, এই শয়তানকে আমি ঠিক খুঁজে বার করবো, তবে এ ব্যাপারে তোমার কি ধারণা বলো।
সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো মেয়েটি। আপনি তো দেখেছেন, কালিটা সবুজ। সচরাচর সবুজ কালি কেউ ব্যবহার করে না। তবে একজনকে আমি এই কালি ব্যবহার করতে দেখেছি–তার নাম নিজেল চ্যাপম্যান।
নিজেল? একাজ ও করেছে বলে তুমি মনে করো? যাহোক অনেক প্রশ্ন আমাকে করতে হবে। এ বাড়িতে এমন একটা ঘটনা ঘটার জন্যে আমি দুঃখিত এলিজাবেথ। তবে আমি তোমাকে বলতে পারি, এর গোড়া উপড়ে দেওয়ার চেষ্টা আমি করবো।
ধন্যবাদ মিসেস হার্বার্ড।
ঘর থেকে বেরিয়ে এলো মিসেস হার্বার্ড। কিন্তু নিচে আসার জন্য সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। কি ভেবে চলতে চলতে করিডোরের একেবারে শেষপ্রান্তে গিয়ে হাজির হলো সে।
চমৎকার ঘর। আরো চমৎকার ঘরের অধিকারিণী সেলী ফিঞ্চ নিজে। সেলী তখন লিখছিল। তার ঘরে ঢুকে বললো মিসেস হার্বার্ড, এলিজাবেথ জনসনের কি হয়েছে শুনেছো?