মিসেস হার্বার্ডের স্নেহভরা কথা শুনে অমন বড় মাপের তরুণ লিওনার্ডের মাথাটা শ্রদ্ধায় নেমে পড়লো, জানো মা, আমাদের নিজেকে আমি পর ভাবি না। সেই সময়, একটি মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিল, চিৎকার করে বলে উঠলো সে, ওহো মিসেস হার্বার্ড আপনি এসে গেছেন। মিসেস নিকোলেটিস তার ঘরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাড়াতাড়ি যান।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিসেস হার্বার্ড, তারপরেই উপরতলায় সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলো সে।
উপরে কি হয়েছে ভ্যালেরি? যথা সময়ে হার্বার্ড মার কাছে আমাদের স্বভাবের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বুঝি পাঠিয়ে দেওয়া হবে?
মেয়েটি তার সুন্দর কাঁধ ঝাঁকিয়ে হলের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে গিয়ে বলে উঠলো, দিনকে দিন এই বাড়িটা পাগলাগারদের মতো হয়ে উঠছে, তারপর সে আর মুহূর্তের জন্যও দাঁড়ালো না সেখানে।
ছাব্বিশ নং হিকরি রোড আসলে দুটো বাড়ির সমন্বয়, ২৪ এবং ২৫ নং পাশাপাশি। একেবারে নিচের তলাটা একই বাড়ির মতোন। সেখানে দুটো বাড়ির বসবার ঘর, ডাইনিংরুম এবং দুটো ক্লোকরুম, বাড়ির পিছন দিকে একটা ছোট্ট অফিস ঘর। তবে দুটি আলাদা সিঁড়ি বাড়ির ওপর তলায় যাওয়ার পথ। বাড়ির ডানদিকের ঘরগুলো মেয়েদের অধিকারে এবং অন্যদিকে ২৪ নং বাড়িতে ছেলেরা থাকে। মিসেস নিকোলেটিসের ঘরের দরজায় মৃদু টোকা মেরে ঢুকলো মিসেস হার্বার্ড।
মিসেস নিকোলেটিসের বসবার ঘরটা বড় গরম। বড় বৈদ্যুতিক চুল্লিটা সবসময়ই জ্বালা থাকে, জানালাটা সবসময়ই আঁট করে বন্ধ; ময়লা সিল্ক এবং ভেলভেটের কুশানে মোড়া সোফার উপর বসে ধূমপান করছিলেন মিসেস নিকোলেটিস। কালো বড়মাপের চেহারা তার; তা সত্ত্বেও এখনো তাকে দেখতে পেশ ভালোই লাগে। অবশ্য মুখ দেখলে বদমেজাজী বলেই মনে হয়। চোখ দুটো বাদামী রং-এর।
আচ্ছা, তাহলে তুমি এসে গেছ। মিসেস নিকোলেটিসের কণ্ঠস্বরে একটা প্রচ্ছন্ন অভিযোগের সুর যেন শোনা গেল।
সত্যিকারের লেমন রক্তের মানুষ মিসেস হার্বার্ড অবিচলিত। হ্যাঁ, তীক্ষ্ণস্বরে বললো সে, আমি এসে গেছি। শুনলাম, আপনি নাকি আমাকে বিশেষভাবে ডেকে পাঠিয়েছেন?
হ্যাঁ অবশ্যই, এটা বিস্ময়কর, অস্বাভাবিকের থেকে কিছু কম নয়।
বিস্ময়কর কিসের?
এই বিলগুলো। তোমার হিসেব, সফল যাদুকরের মতো কুশনের নিচ থেকে কতকগুলো কাগজ বার করে তার সামনে মেলে ধরে তিনি বললেন, এই সব হতভাগ্য ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে আমরা কি খেতে দিচ্ছি? দিনকে দিন নিস্তেজ হয়ে পড়ত তারা। এই সব ছাত্রছাত্রীরা কে, তাদের কথা কে চিন্তা করবে?
তরুণ ছাত্রছাত্রীদের খিদে মেটানোর জন্য, বললো মিসেস হার্বার্ড, ভালা প্রাতঃরাশ আর রাতে সুন্দর নৈশভোজের ব্যবস্থা থাকে। এ সবই মিতব্যয়িতার সাথে করা হয়। একটুও বাড়তি খরচ হয় না।
মিতব্যয়িতার সাথে? একটুও বাজে খরচা হয় না? একথা তুমি আমাকে বলতে পারলে? বিশেষ করে আমি যখন শেষ হয়ে যাচ্ছি?
কেন, এখান থেকে আপনি তো বেশ ভালো লাভই করেছেন মিসেস নিকোলেটিস। ছাত্রছাত্রীদের কাছে দরটা একটু বেশিই বলতে হয়। সে যাই হোক, তরুণ ছাত্রছাত্রীদের ঠিক মতো খাবারের যোগান দিতে হবে।
বাঃ এই বিলগুলোর মোট খরচের অঙ্কটা স্ক্যান্ডালে ভরা। এর জন্য দায়ী ওই ইতালীয় বাঁধুনী আর তার স্বামী। খাবারের ব্যাপারে তারা তোমাকে প্রতারণা করছে।
ওহো, না তারা একাজ করতেই পারে না মিসেস নিকোলেটিস। আমি আপনাকে আশ্বাস দিতে পারি, কোনো বিদেশীই আমার ঘাড়ে এ রকম দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে পারে না।
তাহলে তুমি, হ্যাঁ তুমিই আমাকে ঠকাচ্ছো।
আগের মতো তেমনি অবিচলিত রইলো মিসেস হার্বার্ড–আমি আপনাকে এ ধরনের কথা বলার অনুমতি দিতে পারি না। মিসেস হার্বার্ড এমন ভাষায় কথা বললেন, যেন সাবেকি আমলের দিদিমা তার নাতনীকে নিষ্ঠুরভাবে দোষারোপ করছে। এটা কোনো ভালো কাজ নয়, বিশেষ করে আজকের দিনে, আমি আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি, এভাবে চললে আপনাকে অসুবিধায় পড়তে হবে।
আচ্ছা, নাটকীয় ভাবে বিলগুলো শূন্যে ছুঁড়ে ফেললেন মিসেস নিকোলেটিস। মেঝের উপর যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়লো সেগুলো, নিচু হয়ে সেগুলো নীরবে কুড়োতে থাকলো মিসেস হার্বার্ড। আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছেন, উত্তেজিত করে তুলছেন, তার নিয়োগকর্তী চিৎকার করে উঠলেন।
আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, থাকতে না পেরে এবার বলে উঠলো মিসেস হার্বার্ড, কিন্তু আপনার পক্ষে এটা খারাপ, ব্লাডপ্রেসারের ক্ষেত্রে উত্তেজিত হওয়া খুবই খারাপ।
তুমি স্বীকার করছে গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহের খরচ অনেক বেশি?
অবশ্যই। এখন ল্যাম্পসন স্টোর্সের সব জিনিসের দামই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেখবেন আগামী সপ্তাহের খরচ অনেক কমে যাবে। গোমড়া মুখ করে তাকালেন মিসেস নিকোলেটিস।
আপাতদৃষ্টিতে সব কিছুই তুমি বেশ ন্যায়সঙ্গত ভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে। আপনার আর কিছু বলার আছে?
আমেরিকান মেয়ে সেলী ফিঞ্চ বলছিল এখান থেকে চলে যাবে সে, আমি তাকে যেতে দিতে চাই না। সে একজন ফালব্রাইট স্কলার। অন্য ফালব্রাইট স্কলারদের এখানে নিয়ে আসতে পারে সে। তাই দেখতে হবে সে যেন এখান থেকে চলে না যায়।
তা তার চলে যাওয়ার কারণ?
মিসেস নিকোলেটিস পাহাড় সমান কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, আমি কি করে মনে রাখবো? তাছাড়া কারণটা আসলও নয়, যেকথা আমি বলতে পারতাম।