তৃতীয়বার সে তার মায়ের সই জাল করে আমার ব্যাঙ্ক থেকে চেক ভাঙ্গায়। নিজেকে এর জন্য চার্জ করে। আমি তাকে নীরব থাকার জন্য অনুরোধ করি। সে আমার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে নিজেলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে যায়। প্রতি সন্ধ্যায় আমার স্ত্রীকে ঘুমের পিল খাওয়ানোর দায়িত্ব ছিলো নিজেলের। ঘুমের পিলের প্রতিক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে আমার স্ত্রী আমার কাছে এসে সব খুলে বলে পরদিন সে নিজেলের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। কিন্তু পরদিন সকালে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, আমি বেশ ভালো করেই জানি, তার মৃত্যুর জন্য কে দায়ী।
নিজেলকে তার মায়ের হঠাৎ মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত করে আমি বলি, পুলিসের কাছে তার নামে আমি অভিযোগ করবো। সে তখন বেপরোয়া ভাবে আমাকে অনুরোধ করে পুলিসকে না জানানোর জন্য। এন্ডিকট, আমার মতো অবস্থায় পড়লে তুমি কি করতে? আমার অপরাধী ছেলের জন্য আমার কোনো মোহ নেই। তাকে বাঁচানোর কোনো কারণও দেখতে পাচ্ছি না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কেউ একবার খুন হলে বার বার খুনী হতে বাধ্য সে। ভবিষ্যতে আরো অনেকে তার শিকার হতে পারে। আমি আমার ছেলের সঙ্গে দরদস্তুর করলাম, জানি না ঠিক করলাম, নাকি ভুল করলাম। তাকে তার দোষ স্বীকার করতেই হবে। আর তার সেই স্বীকারোক্তি আমি রেখে যাবো। তখনকার মতো তাকে ক্ষমা করার শর্ত ছিলো, তাকে আমার বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে, আর কোনোদিনও সে ফিরে আসতে পারবে না। তবে যেখানেই সে থাক না কেন, নতুন করে জীবন শুরু যেন সে করে। আমি তাকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেবো। স্বাভাবিকভাবেই সে তার মার টাকা পাবে, তার ভালো শিক্ষাদীক্ষা আছে, ভালো হওয়ার সবরকম সুযোগ তার আছে। কিন্তু সে যদি কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়। যে স্বীকারোক্তি সে আমাকে দিয়ে গেছে, সেটা পুলিসের কাছে যাওয়া উচিত। আমি মনে করি, আমার মৃত্যু দিয়ে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তুমি আমার সব থেকে পুরানো বন্ধু। আমি তোমার কাঁধে একটা বোঝা চাপিয়ে যাচ্ছি। তবে আমার স্ত্রীর নাম নিয়ে তোমাকে এই অনুরোধ করছি আর সেও তো তোমার বন্ধু ছিলো। নিজেলের খোঁজ কোরো। তার রেকর্ড যদি পরিষ্কার হয়, এই চিঠিটা আর নিজেলের স্বীকারোক্তি নষ্ট করে ফেলো। আর যদি না হয় তাহলে তার বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত।
তোমার স্নেহের বন্ধু
আর্থার স্ট্যানলি
আহ! বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো পোয়ারো, তারপর নিজেলের স্বীকারোক্তির উপর চোখ রাখলো সে।
আমি এখানে স্বীকার করছি ১৫ই-১৮ই নভেম্বর অতিরিক্ত ঘুমের পিল খাইয়ে আমি আমার মাকে হত্যা করেছি–
নিজেল স্ট্যানলি।
মিস লেমনের রেখে যাওয়া চিঠিটা সই করলো এরকুল পোয়ারো, একটাও ভুল হয়নি, গম্ভীর ভাবে বলল সে।
আশা করি আমি প্রায়ই ভুল করি না। বললো মিস লেমন। প্রায়শই নয় তবে এটা ঘটেছিল। ভালো কথা তোমার বোন কেমন আছে?
জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো জাহাজে চড়ে এখন ঘোরবার কথা ভাবছে। দক্ষিণের রাজধানীগুলোতে।
আহ অস্ফুটে বললো পোয়ারো, তার বিস্ময় জাগে যদি–সম্ভবত–জাহাজে চড়ে ঘুরতে? তাই বলে এই নয় যে, সে নিজে সমুদ্রযাত্রার ব্যবস্থা করবে–এমনকি কাউকে কোনো পরামর্শ দিতে যাওয়ার জন্যও নয়।
তার পিছনের ঘড়িতে একবার শব্দ হলো।
ঘড়িটা একটা বাজার সময় ঘোষণা করলো।
নেংটি ইঁদুরটা নিচে নেমে এলো।
হিকরি ডিকরি ডক্।
ঘোষণা করলো এরকুল পোয়ারো।
মাফ করবেন মঁসিয়ে পোয়ারো?
কিছুই নয়, বললো এরকুল পোয়ারো।