.
সেটা, বললো পোয়ারো, কারণটা আমাদের খুঁজে বার করতে হবে।
আপনাকে অনেকদিন দেখিনি, বৃদ্ধ উকিল মিঃ এন্ডিকট বললো এরকুল পোয়ারোকে। তা এসেছেন ভালোই করেছেন। সেঁতো হাসি হাসল সে। আমি তো ভেবেছিলাম, আপনি বুঝি অবসর নিয়েছেন।
আজ আমি এখানে এসেছিলাম একজন অত্যন্ত পুরানো মক্কেলের সাথে দেখা করার জন্য, এখনো আমি দু-একজন পুরানো বন্ধুর কেস নিয়ে থাকি। স্যার আর্থার স্ট্যানলি আমাদের একজন পুরানো বন্ধু এবং মক্কেল, তাই না?
হ্যাঁ, আমার পর আইন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ শেষ করেছিলাম, সে ছিলো অত্যন্ত বুদ্ধিমান তার স্নায়ুকোষগুলো সবার থেকে আলাদা ছিলো। আমার বিশ্বাস, তার মৃত্যুর খবরটা গতকাল ছটার সময় ঘোষিত হয়েছিল।
হ্যাঁ, শুক্রবার তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হবে। কিছুদিন ধরে কঠিন অসুখে ভুগছিল সে। লেডী স্ট্যানলি তো বছর আড়াই আগে মারা যায়। তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল বলতে পারেন?
সঙ্গে সঙ্গে উকিল ভদ্রলোক উত্তর দেয়, অতিরিক্ত ঘুমের পিল খেয়ে। পুলিসী তদন্ত হয়েছিল। তাদের রিপোর্টেও সেই একই কথা লেখা হয়েছিল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু।
তার মৃত্যু সত্যি সত্যি কি সেইভাবে হয়েছিল?
এক মিনিট নীরব থেকে বললো মিঃ এন্ডিকট, আমি আপনাকে অপমান করব না। আপনার এরকম প্রশ্ন করার ভালোরকম যুক্তিই যে আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এন্ডিকট বলে চলে কিন্তু তার স্বামী তার সাক্ষ্যে বলে। তার স্ত্রী অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়তো। এমনিতে অতিমাত্রায় ঘুমের পিল খেতো, সে বিনিদ্র রজনীর অবসান করার জন্য। তার উপর খেয়েছে কিনা বুঝতে না পেরে দ্বিতীয় দফায় ঘুমের পিল খেয়ে নিতো। মনে হয় ঘটনার দিন সে এই ভাবে দু-তিনবার ঘুমের পিল খেয়ে থাকবে। আর তাতেই তার মৃত্যু ঘটে থাকবে। পুলিসের কাছে এইরকম একটা জবানবন্দী গিয়েছিল স্যার আর্থার স্ট্যানলি।
মিথ্যে বলেনি তো সে?
সত্যি পোয়ারো। অবান্তর প্রশ্ন। আপনি একথা ভাবতে পারলেন কি করে?
হাসলো পোয়ারো। ভাববার কারণ আছে বলেই তো বলছি, পোয়ারো বলে, এমনো তো হতে পারে, অন্য কোনো নারীকে বিয়ে করার জন্য সে তার স্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছিল?
না, তার জীবনে অন্য আর কোনো নারী ছিল না। সে তার স্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত ছিলো।
হ্যাঁ তা বটে আমিও তাই মনে করি, বললো পোয়ারো, এখন যে কারণে আসা সেটা বলি–আপনি একজন সলিসিটর, আর্থার স্ট্যানলির উইল তো আপনি তৈরি করেছিলেন? আর সম্ভবত আপনিই তার একজিকিউটর?
হ্যাঁ ঠিক তাই।
আর্থার স্ট্যানলির একটি ছেলে ছিলো, শুনেছি সেই ছেলেটি তার মার মৃত্যুর পর বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে। এতোই সে তার বাবার উপর রেগে যায় যে, সে তার নাম অব্দি বদলে ফেলে!
তা আমার অজানা, অন্য কি নামে সে তার পরিচয় দিয়েছিল?
সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আমার মনে হয় আর্থার স্ট্যানলি আপনার কাছে সীলমোহর করা চিঠি রেখে গেছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে কিংবা তার মৃত্যুর পর সেটা ভোলা যেতে পারে।
সত্যি পোয়ারো, বয়সের এই মধ্যগগনে আজও আপনি জ্বলজ্বল করছেন। চিঠির ব্যাপারটা আপনি জানলেন কি করে?
তাহলে আমার অনুমান ঠিক? আমার আরো মনে হয়, সেই চিঠিতে একটা বিকল্প ব্যবস্থাও ছিলো। হয় সেই চিঠিটা নষ্ট করে ফেলতে হবে কিংবা প্রয়োজনে আপনাকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
আপনি যখন সবই জানেন, বললো এন্ডিকট, আপনি যা যা জানতে চাইবেন সবই বলবো আপনাকে। আমি জানতাম যে আপনার পেশাগতভাবে তরুণ নিজেল সম্পর্কে আপনি অনেক কিছুই জেনে ফেলেছেন। তা এই শয়তানটা এখন কি করছে জানতে পারি?
আমার মনে হয় তার কাহিনি এই রকম : বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর সে তার নাম বদলে পরিচয় দেয় নিজেল চ্যাপম্যান হিসাবে তারপর সে এক স্মাগলিং র্যাকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ড্রাগ আর জুয়েলারীর চোরাচালান। অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের স্মাগলিং-এর কাজে লাগায় সে। নিজেল চ্যাপম্যান আর এক তরুণী মিস ভ্যালেরি জনহাউস এই র্যাকেটের অংশীদার। চোরাচালানের ব্যবসা তাদের বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু মাঝপথে যে হোস্টেলে তারা এই পাপব্যবসা চালাতে সেখানকার দুজন ছাত্রী আর হোস্টেলের একজন পার্টনার মিসেস নিকোলেটিসের কাছে কোনো ব্যাপারে ধরা পড়ে যায়। তখন সে পুলিসের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাদের তিনজনকে হত্যা করে। তার খুনের মোটিভও আমাদের কাছে এখন আর অজানা নয়। তবে তার বিরুদ্ধে খুনের নির্দিষ্ট চার্জ আনার জন্য তার অতীত ইতিহাস আমাদের জানা দরকার। আমার ধারণা তার বাবা আর্থার স্ট্যানলি তার সেই চিঠিতে নিশ্চয়ই নিজেল সম্পর্কে কটাক্ষ করে গেছেন। তাই আপনাকে আমার একান্ত অনুরোধ আপনি যদি সেই চিঠিটা আমাকে একবার দেখান
বেশ তো, এখনি দেখাচ্ছি। মিঃ এন্ডিকট উঠে দাঁড়ালো। ঘরের শেষ প্রান্তে একটা আলমারি থেকে একটা লম্বা খাম বার করে এনে পোয়ারোর হাতে তুলে দিলো। আর্থার স্ট্যানলি মৃত। তার আগেই সেই খামের সীলমোহর ভেঙ্গে রেখেছিল সে। খামের ভেতর থেকে দুটি চিঠি বেরিয়ে এলো। প্রথম চিঠিটার ভাষা এইরকম : প্রিয় এন্ডিকট,
আমার মৃত্যুর পর তুমি চিঠিটা খুলবে, আমার ইচ্ছে আমার পুত্র নিজেলের খোঁজ করবে তুমি। খবর নিও, সে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছে কিনা, এখানে যে ঘটনার কথা বলতে যাচ্ছি সেটা কেবল আমি একাই জানি। নিজেলের চরিত্র কোনো সময়েই সন্তোষজনক ছিলো না। দু-দুবার সে আমার সই জাল করে আমার ব্যাঙ্ক থেকে চেক ভাঙ্গায়। কিন্তু আমি তাকে সাবধান করে দিই, তৃতীয়বার এরকম অপরাধ সে যেন আর না করে।