বেশ জটিল ব্যাপার, তাই না?
জটিল হতে বাধ্য, চোরই চালান করে অর্থ উপার্জন তেমন কষ্টকর ব্যাপার নয়। কিন্তু সেইসব অবৈধ উপার্জনের টাকার হিসেব রাখাটাই ঝামেলার ব্যাপার। আমি বাজি ধরে বলতে পারি এই কারণেই ঐ মহিলা মেফেয়ারে এই গ্যাম্বলিং ক্লাব খুলে বসেছে। জুয়ায় উপার্জিত অর্থের উপর ইনকামট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের কিছু করার নেই। আর আমার মনে হয় এ ধরনের একটা নকল পাসপোর্ট বেচারী সিলিয়া হয়তো হিকরি রোডে দেখে থাকবে। সেই কারণেই তাকে অসময়ে চলে যেতে হলো এই পৃথিবী থেকে।
মিস জনহাউসের এটা একটা চতুর পরিকল্পনা, বললো ইনসপেক্টর শার্প। তাস খেলার মতো পাসপোর্টগুলো সাফল করলো সে। হ্যাঁ অবশ্যই এটা তার চতুর পরিকল্পনা। এটা আবিষ্কারের মূলে মঁসিয়ে পোয়ারো। ধন্যবাদ তাকে। তিনি এখানে আমাদের মধ্যেই রয়েছেন। এখন সেই মহিলার সম্বন্ধে তার অভিমত শোনা যাক।
.
হাসছিল পোয়ারো। প্রশংসার চোখে তার দিকে তাকালো মিসেস হার্বার্ড। আলোচনা হচ্ছিল তার বসবারঘরে।
মিস ভ্যালেরি জনহাউস দারুণ লোভাতুর হয়ে উঠেছিল প্যাট্রিসিয়ার সেই হীরের আংটিটা দেখে। লোভ সামলাতে পারেনি। তার সেই আংটি থেকে আসল হীরে সরিয়ে সাদা গোমেদ পাথর বসিয়ে দেয়। অথচ চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয় সিলিয়া। মিস জনহাউসের সেই কাজ দেখে তখনি আমার মনে হয়েছিল, কি সাংঘাতিক চতুর এই মহিলাটি।
কিন্তু খুন, বললো মিসেস হার্বার্ড।
ঠান্ডা মাথায় খুন, সত্যি আমি এখনই বিশ্বাসই করতে পারছি না।
বিমর্ষ দেখায় ইনসপেক্টর শার্পকে।
এখনো পর্যন্ত সিলিয়া অস্টিনকে খুন করার মতো নির্দিষ্ট প্রমাণ আমরা পাইনি তার বিরুদ্ধে, বললো শার্প। অবশ্য সে যে স্মাগলিং-এর কারবারে যুক্ত তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। হয়তো সে নিজেলের বাজিধরা আর তার কাছে মরফিয়া থাকার কথা সে জানতো। কিন্তু এ ব্যাপারে সত্যিকারের কোনো প্রমাণ নেই। তাছাড়া আরো দুটি মৃত্যু ঘটে গেছে। এখানে, মিসেস নিকোলেটিকে সে বিষ খাইয়েছিল মেনে নিলাম–কিন্তু অপর পক্ষে প্যাট্রিসিয়া লেনকে সে নিশ্চয়ই খুন করেনি। আসলে একমাত্র সেই–এ সব ব্যাপারে একেবারে সন্দেহ মুক্ত, গেরোনিমো বলেছিল মিস জনহাউস ঠিক ছটার সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। জানি না ঐ মেয়েটি তাকে ঘুষ দিয়েছিল কিনা–
না, মাথা দুলিয়ে পোয়ারো বলে, সে তাকে ঘুষ দেয়নি।
হিকরি রোডের একেবারে শেষ প্রান্তের একটা কেমিস্টের দোকান থেকে মিস জনহাউস ফেস পাউডার আর এ্যাসপিরিন কিনে তাদের ফোন ব্যবহার করেছিল, এর প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। ছটা পনেরোয় কেমিস্টের দোকান ছেড়ে চলে আসে সে।
পোয়ারো আবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। হ্যাঁ এই খবরটাই তো চমৎকার। বলে সে, আমরা তো এই খবরটাই চাইছিলাম। মানে বাইরে কোথা থেকে ফোন সে করেছিল কিনা। তার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো ইনসপেক্টর শার্প।
মঁসিয়ে পোয়ারো, এখন আমাদের জ্ঞাত ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা যাক। দেখা যাচ্ছে, ছটা আট মিনিটের সময় প্যাট্রিসিয়া লেন বেঁচে ছিলো, কারণ ঠিক ঐ সময় এই ঘর থেকে পুলিস স্টেশনে ফোন করেছিল সে।
এ ব্যাপারে আপনি একমত? আমার মনে হয় না, এই ঘর থেকে ফোন করেছিল সে। এমনকি হলঘর থেকে নয়।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইনসপেক্টর শার্প। আমার ধারণা ফোনটা এসেছিল পুলিস স্টেশন মারফৎ। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন না। আমি আমার সার্জেন্ট, পুলিস কনস্টেবল আর নিজেল চ্যাপম্যান সবাই অলীক অস্তিত্বের বিশ্বাসের শিকার হয়ে পড়েছিলাম?
অতি বিশ্বস্ততার সঙ্গে বলতে পারি না। ফোনটা এসেছিল কেমিস্টের দোকানের কলবক্স থেকে।
সঙ্গে সঙ্গে ইনসপেক্টর শপের চোয়াল ঝুলে পড়তে দেখা গেলো। তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, ফোনটা করেছিল ভ্যালেরি জনহাউস? অর্থাৎ প্যাট্রিসিয়া লেনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিল সে, আর প্যাট্রিসিয়া লেন আগেই মারা গিয়েছিল?
হ্যাঁ আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছি?
এক মুহূর্ত নীরব থেকে টেবিল চাপড়ে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো ইনসপেক্টর, এ আমি বিশ্বাস করি না। আমি নিজের কানে মেয়েটির কণ্ঠস্বর শুনেছিলাম।
হ্যাঁ আপনি একটা মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনেছিলেন, এক নিঃশ্বাসে বলা উত্তেজিত কণ্ঠস্বর। কিন্তু প্যাট্রিসিয়া লেনের কণ্ঠস্বর আপনার ভালো করে অবশ্যই জানা নেই।
সম্ভবত আমার জানা নেই। কিন্তু নিজেল চ্যাপম্যান? সেও তো ফোনটা ধরেছিল, নিজেলও যে প্রতারিত হয়েছিল একথা বলতে পারেন না। সেই কণ্ঠস্বর প্যাটের না হলে তিনি ঠিক ধরে ফেলতে পারেন।
হা, বললো পোয়ারে, নিজেল চ্যাপম্যান জেনে থাকতে পারেন। নিজেল বেশ ভালোভাবেই জানতেন যে সেই কণ্ঠস্বর প্যাট্রিসিয়ার ছিলো না। তার থেকে ভালো আর কেই বা জানতে পারে বলুন। কারণ নিজের হাতে পিছন থেকে পেপারওয়েটটা দিয়ে প্যাট্রিসিয়ার মাথায় আঘাত করে এসেছিল সে, পুলিস স্টেশনে যাওয়ার খানিক আগে।
চুপ হলেন শার্প। সম্বিৎ ফিরে পেতে তার বেশ কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো। নিজেল চ্যাপম্যান? প্যাট্রিসিয়া লেনের খুনী নিজেল চ্যাপম্যান? কিন্তু মঁসিয়ে পোয়ারো, কেন, কেনই বা সে তাকে হত্যা করতে গেলো? হয়তো সিলিয়া অস্টিন খুন করতে পারে প্যাট্রিসিয়া লেনকে, কিন্তু কেন?