হা একসময় সে তার বই আনতে উপরে উঠে গিয়েছিল, তবে ঠিক কোনো সময়ে কেউ খেয়াল করতে পারে না।
সে যাই হোক, মিসেস হার্বার্ড বলে, ওদের দুজনের মধ্যে কেউ একজনই সন্দেহভাজন ব্যক্তি বলে মনে হয়।
ওদের জবানবন্দী মতো বলবো-হা, কিন্তু আমরা যে একটা বাড়তি প্রমাণ হাতে পেয়েছি-শার্প তার পকেট থেকে একটা খাম বার করলো।
ওটা কি?
হাসলো শার্প, কয়েকগাছা চুল, মৃত প্যাট্রিসিয়া লেনের আঙুলের ফাঁক থেকে এগুলো আমি সংগ্রহ করেছি।
তার মানে আপনি বলতে চান–
এই সময় দরজায় নক করার শব্দ হলো, ভেতরে আসুন, সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো ইনসপেক্টর।
দরজা ঠেলে হাস্যরত অবস্থায় মিঃ অ্যাকিমবোকে ঘরে ঢুকতে দেখা গেলো, কি ব্যাপার কিমিস্টার?
আমার মনে হলো আপনাকে কিছু বলা দরকার। এই বেদনাদায়ক নিষ্ঠুর রহস্যজনক ঘটনার ব্যাপারে হয়তো আমি কিছু আলোকপাত করতে পারি।
.
১৪.
হ্যাঁ, বলুন মিঃ অ্যাকিমবো, আপনি কি বলতে চান?
দেখুন মিঃ শার্প আমি প্রায়ই পেটের অসুখে ভুগে থাকি, হঠাৎ একদিন রাতে পেটের যন্ত্রণায় কমনরুমে ছুটে যাই, কেবল এলিজাবেথই সেখানে ছিলো, আমি ওকে বলি তোমার কাছে বাইকারবোনেট কিংবা স্টমাক পাউডার আছে? আমারটা ফুরিয়ে গেছে, উত্তরে সে বলে, আমার কাছে তো নেই, তবে রুমাল ফেরত দিতে গিয়ে সেই ওষুধ প্যাটের ড্রয়ারে দেখেছিলাম। ঠিক আছে। আমি তোমার জন্য একটু বাইকারবোনেট এনে দিচ্ছি। ও তখন উপরতলায় গিয়ে বাইকারবোনেটের বোতল এনে আমার হাতে তুলে দিল। আমি তখন পুরো এক চামচ বাইকারবোনেট পাউডার খেয়ে নিই, কিন্তু তারপর থেকে পেটের যন্ত্রণার উপশম হওয়া দূরে থাক, আমার তখন নতুন এক শারীরিক যন্ত্রণা দেখা দিলো। তখন আমি সেই বাইকারবোনেটের বোতলটা একজন কেমিস্টকে পরীক্ষা করতে বলি। সেটা পরীক্ষা করে সে আমাকে জানিয়ে দেয়, বোতলের পাউডার বাইকারবোনেট ছিলো না, তার বদলে সেটার মধ্যে বোরিক পাউডার রাখা হয়েছিল।
বোরিক? হতভম্বের মতো স্থির চোখে তাকালো ইনসপেক্টর শার্প। কিন্তু সেই বোতলে বোরিক পাউডার স্থান পেলো কি করে? আর মরফিয়া পাউডারই বা গেলো কোথায়? চিৎকার করে উঠলো সে। এ সবই বিক্ষিপ্ত ঘটনা। আমি তাই মিস সিলিয়ার কথা ভাবছি, কি করে তার জবানীতে লেখা সেই চিরকুটটা রেখে গিয়ে থাকবে–যাতে করে মনে হতে পারে আত্মহত্যা করেছে সে।
তার কথায় সায় দিলো ইনসপেক্টর শার্প।
কিন্তু কে, কে এমন নিষ্ঠুর কাজ করতে পারে? নিশ্চয়ই এ কাজ কোনো মেয়ের? কারণ মেয়েদের ব্লকে কোনো ছাত্র কিংবা পুরুষ তো ঢুকতে পারে না, অ্যাকিমবো বলে, তবে সিলিয়ার ঘরের পাশে একটা ভোলা ব্যালকনি আছে। সুতরাং কোনো পুরুষ আর সে যদি ভালো এ্যাথলিট হয়, অনায়াসে সেই ব্যালকনি টপকে সিলিয়ার ঘরে প্রবেশ করতে পারে। সিলিয়ার ঘরের ঠিক সামনে অন্য কারুর ঘর, মিসেস হার্বার্ড একটু চিন্তা করে বললো, নিজেলের আর-আর
লেন বেটসনের, বললো ইনসপেক্টর। তার হাতের সেই খামের ভেতরে সযত্নে রাখা দুগাছা লাল চুলের কথা মনে পড়ে গেলো তার–লেন বেটসন তার মাথার চুলও লাল, কোঁকড়ানো।
না, না, লেন বেটসন খুব ভালো ছেলে আমার খুব প্রিয়। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে উঠলো মিসেস হার্বার্ড। হয়তো ও একটু বদমেজাজী ছেলে, কিন্তু এ কাজ ও কিছুতেই করতে পারে না, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
হ্যাঁ তা ঠিক, শার্পের চোখ দুটো ঝলসে উঠলো, আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সাধারণত সব খুনীই একটা না একটা ঠিক ভুল করবেই।
ম্যাকরিনা ফেয়ার সাইনবোর্ড টাঙ্গানো দোকানের সামনে এসে থামলো ডিটেকটিভ কনস্টেবল ম্যাকরে এবং সার্জেন্ট কব। আমরা বোধহয় ঠিক জায়গাতেই এসেছি, বললো সার্জেন্ট কব। কাউন্টারে একজন মহিলাকে দেখে সেদিকে এগিয়ে গেলো সার্জেন্ট কব। সুপ্রভাত ম্যাডাম। সম্ভাষণ জানিয়ে সার্জেন্ট কব তার পরিচয় পত্রটা এগিয়ে দিলো মেয়েটির দিকে। সেই সঙ্গে একটা সার্চ ওয়ারেন্ট।
আমি মিসেস লুকাস, এই দোকানের মালকিন। সে আরো বলে, আজ আমার পার্টনার মিস জনহাউস আসেনি।
না, ম্যাডাম, বললো সার্জেন্ট কব, তার কাছে এটা কোনো খবরই নয়।
আপনার এই সার্চ ওয়ারেন্ট মনে হচ্ছে একেবারে উঁচুতলার হুকুম, বললো মিসেস লুকাস। এটা মিস জনহাউসের প্রাইভেট অফিস। আমি আন্তরিক ভাবেই আশা করি, আমাদের খদ্দেরদের অযথা হয়রানি করবেন না।
আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই, বললো কব, আমরা যেটা খুঁজছি সেটা পাবলিক রুমে থাকার কথা নয়।
মিনিট পনেরো মিস জনহাউসের অফিসের টেবিল ড্রয়ার ঘাঁটাঘাঁটির পর সার্জেন্ট কবের চোখদুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ম্যাকরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো সে, পেয়েছি বস্।
একেবারে নিচের ড্রয়ার খুলতেই আধডজন গাঢ় নীল রং-এর বই বেরিয়ে এলো, বইগুলোর উপর সোনালী অক্ষরে লেখা।
পাসপোর্ট, বললো সার্জেন্ট কব। পাসপোর্টগুলো বার করে ফটোগুলোর দিকে দৃষ্টি ফেললো সে, ম্যাকরে ঝুঁকে পড়লো তার কাঁধের উপর দিয়ে দৃষ্টি ফেলে।
একই মহিলা বলে চলে মুশকিল, পারবে তুমি চিনতে? বললো ম্যাকরে। সেই পাসপোর্টগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামের–মিসেস দ্য সিলভিয়া, মিস আইরিস ফ্রেঞ্চ, মিসেস ভলগা কোহন, মিয়লিনা লে মেজারিয়ার, মিসেস গ্লেডিস থমাস এবং মিস ময়রা ওনীল। তাদের বয়স পঁচিশ থেকে চল্লিশ। প্রত্যেকের হেয়ার স্টাইল আলাদা ধরনের বললো কব। এখানে আরো দুটো বিদেশী পাসপোর্ট রয়েছে–ম্যাডাম মাদমৌদি, আলজিরিয়; শীলা ডোনাভান, আইরিশ, আমি বলবো, এইসব বিভিন্ন নামের ব্যাঙ্ক একাউন্ট আছে তার।