তাহলে এখুনি একবার হিকরি রোডে যাওয়া উচিত। কথাটা ইনসপেক্টর শার্প শেষ করা মাত্র টেলিফোন বেজে উঠলো। রিসিভারটা তুলে নিলো শার্প।
মিস লেন কথা বলছি, দূরভাষে মেয়েলী কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। মিঃ চ্যাপম্যানের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
শার্প ইশারা করতেই এগিয়ে এসে রিসিভারটা তার হাত থেকে তুলে নিলো নিজেল। প্যাট? আমি নিজেল কথা বলছি।
শোনো নিজেল, আমার মনে হয়, আমি সেটা পেয়ে গেছি। মানে, আমি জানি আমার রুমালের ড্রয়ার থেকে কে সেটা নিয়েছিল। দেখো, এখানে মাত্র একজনাই–সেই মুহূর্তে মেয়েটির কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে যায়। সে আর কথা শেষ করতে পারে না তার।
হ্যালো, হ্যালো প্যাট? কে, কে সে?
এখুনি তার নাম আমি বলতে পারবো না। পরে বলবো, তুমি এখানে ফিরে এলে বলবখন। আমি আমার ঘরে অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।
রিসিভারটা নামিয়ে রাখলো নিজেল। শার্প তার সব কথাই শুনেছিল কাছ থেকে, চলুন এখুনি ২৬নং হিকরি রোডের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়া যাক। বললো শার্প।
হিকরি রোডের বাড়িতে পৌঁছেই নিজেল তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো প্যাটের ঘরে। তাকে অনুসরণ করলো ইনসপেক্টর শার্প।
হ্যালো প্যাট, আমরা এসে গেছি–নিজেলের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে গেলো ঘরে ঢোকা মাত্র।
মেঝের উপর প্যাট্রিসিয়া লেনের রক্তাক্ত দেহটা পড়েছিল, তার মাথা থেকে রক্ত তখনো ঝরে পড়ছিল ফোঁটা ফোঁটা
না? আঁতকে উঠলো নিজেল, না, না, না, এ হতে পারে না।
হ্যাঁ, মিঃ চ্যাপম্যান, মিস লেন মৃত।
না, না, প্যাট মরতে পারে না, বোকা মেয়ে প্যাট, কিন্তু কেমন করে খুন হলো
এটা দিয়ে।
সহজ, অতি সহজ, আধুনিক প্রথায় খুন, উন্নত ধরনের অস্ত্র, উলের মোজায় জড়ানো পেপারওয়েটের আঘাতে-মাথার পিছনে ওই অস্ত্রটা দিয়ে আঘাত করে ওকে হত্যা করা হয়েছে, অত্যন্ত কার্যকরী অস্ত্র, মেয়েটি জানতেও পারেনি, তার জীবনে কি ঘটতে যাচ্ছে।
নিজেল তার বিছানায় বসে পড়ে বলে উঠলো, ঐ উলের মোজাটা আমার জন্য বুনেছিল প্যাট-হঠাৎ শিশুর মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে।
শার্প তখন ঘটনাটা এইভাবে সাজাচ্ছিল : কেউ হয়তো ব্যাপারটা ভালো ভাবেই জানতো, তার নামটা প্যাট্রিসিয়া নিজেলের কাছে প্রচার করে দেওয়ার আগেই সে তাকে সরিয়ে দিয়ে থাকবে। যেই এমন নিষ্ঠুর কাজ করে থাকুক না কেন, আমি তার সন্ধান পেলে খুন করে ফেলবো তাকে। শুয়োরের বাচ্চা, খুনী।
শান্ত হোন মিঃ চ্যাপম্যান। শার্প তাকে বোঝায়, হা হা আমি আপনার মনের অবস্থা বুঝি, এ এক ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। তাকে শান্ত করে শার্প এবার নিচু হয়ে মৃত প্যাট্রিসিয়ার হাতের দু আঙুলের ফাঁক থেকে কি যেন সংগ্রহ করে রাখলো।
.
ভয়ার্ত চোখে একের পর একটা মুখের দিকে তাকালো গেরোনিমো। আমি কিছুই দেখিনি। আমি কিছুই শুনিনি। আমি আপনাদের বলছি, আমি এসবের কিছুই জানি না। রান্নাঘরে মারিয়ার সঙ্গে ছিলাম
কেউ তোমাকে দোষী করছে না, বললো শার্প, আমরা শুধু জানতে চাই এক ঘণ্টার মধ্যে কে কে এ বাড়িতে এসেছিল, আর কারা কারা বাড়ির বাইরে গিয়েছিল? মানে সকাল ছটা থেকে ছটা পঁয়তিরিশ পর্যন্ত।
সবাই বাড়িতেই ছিলো, কেবল মিঃ নিজেল, মিসেস হার্বার্ড আর মিস জনহাউস ছাড়া, এঁরা সবাই ছটার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
এদের মধ্যে কে কখন ফিরে আসে? জিজ্ঞেস করলো শার্প।
মিসেস হার্বার্ড এখনো ফেরেননি, মিঃ চ্যাপম্যান তো আপনার সঙ্গেই ফিরে এলেন, আর মিস সেলী ফিরে আসেন ছটার একটু পরে। তখন খবর হচ্ছিল। খবরের কোনো অংশ হচ্ছিল তখন?
ঠিক মনে নেই। তবে খেলার খবরের ঠিক আগে কারণ খেলার খবর হতেই আমি টিভির সুইচ অফ করে দিই।
হাসলো শার্প, তার মানে, কেবল নিজেল চ্যাপম্যান, ভ্যালেরি জনহাউস এবং মিসেস হার্বার্ডকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। এর অর্থ হলো দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ। কে কে তখন কমনরুমে ছিলো? কে কে সেখান থেকে চলে যায়। আর কখন? কে কার হয়েই বা সাক্ষ্য দেবে, সেটাও একটা প্রশ্ন। বিশেষ করে এখানে যখন নানান দেশের ছাত্রছাত্রীরা রয়েছে, তার মধ্যে এশিয়া এবং আফ্রিকার ছাত্র-ছাত্রীরা অন্যতম।
মিসেস হার্বার্ডের ফেরার অপেক্ষা করছিল ইনসপেক্টর শার্প, একমাত্র সে-ই এখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত গতিবিধির একটা নিখুঁত চিত্র তুলে ধরতে পারে। একটু পরেই হিকরি রোডের হোস্টেলে ফিরে এসে সেই বেদনাদায়ক ঘটনার কথা জেনে ভীষণ ভেঙ্গে পড়লো সে। শার্প তাকে শান্ত হতে বলে বললো, মিসেস হার্বার্ড, এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো চলবে না, মনটা শক্ত করে আমার কয়েকটা প্রশ্নের ঠিক ঠিক উত্তর দিন।
বেশ বলুন, কি জানতে চান?
মৃত মিস প্যাট্রিসিয়ার ঘরের দুপাশের ঘর দুটোর বাসিন্দা কারা কারা?
একপাশে থাকে জেনেভিভ–কিন্তু তার আর প্যাটের ঘরের মাঝে পাকা দেওয়াল তোলা আছে। অপরদিকের ঘরটা এলিজাবেথ জনস্টনের মাঝখানে শুধুই একটা পার্টিশান ওয়াল।
তাহলে এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ওদের দুজনের মধ্যে একমাত্র এলিজাবেথই পার্টিশন ওয়ালের এপার থেকে ফোনে মিঃ চ্যাপম্যানের সঙ্গে প্যাট্রিসিয়ার আলোচনার কথা শোনার সম্ভাবনা রয়ে গেছে, অবশ্য সে যদি তার শয়নকক্ষে তখন থেকে থাকে। কিন্তু সেলী ফিঞ্চ তার চিঠি পোস্ট করতে যাবার সময় তাকে কমনরুমে দেখে গিয়েছিল বলে বলেছে সে, সবসময়েই যে কমনরুমে ছিলো সে, তা নাও হতে পারে।