মিঃ বেটসন-দারুণ বন্ধুসুলভ তরুণ সে।
মেডিক্যাল ছাত্র?
হ্যাঁ।
সে কি খুবই ক্রুদ্ধ?
জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো, ছেলেটি একেবারে নীরস, রগচটা–মুহূর্তে যা খুশি বলে দেবে, তবে অচিরেই তার রাগ পড়ে যায়। কোনো জিনিস চুরি গেলে নির্বিকার চিত্তে সে মেনে নেবে সেরকম প্রকৃতির মানুষ সে নয়।
তা সেরকম প্রকৃতির মানুষ এখানে আছে নাকি?
হা আছে–মিঃ গোপালরাম, আমাদের ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে একজন। সব ব্যাপারেই তার মুখে হাসি লেগেই থাকে, হাত নেড়ে সে বলে থাকে, কে কোনো জিনিসের মালিক, ওটা কোনো ব্যাপরই নয়।
তার কোনো জিনিস চুরি গেছে?
না।
আহ! আচ্ছা ফ্লানেলের ট্রাউজারটা কার?
মিঃ ম্যাকনারের, বহু পুরানো ট্রাউজার। অন্য কেউ হলে বলতো, পুরানো জিনিস চুরি গেছে তো কি হয়েছে। কিন্তু মিঃ ম্যাকনারের আবার পুরানো জিনিসের উপর ভীষণ টান, কোনো কিছুই ফেলে না সে।
তাহলে এখন আমরা মনে করতে পারি–চুরি যাওয়া জিনিসগুলো যেন মূল্যবান ছিলো না–পুরানো ফ্লানেলের ট্রাউজার, ইলেকট্রিক লাইটবাক্স, বোরিক বাউডার, বাথ সল্ট, রান্নার বই। ভুলবশতঃ বোরিক পাউডার সরানো হয়েছে; কেউ হয়তো নতুন বাল্ব বদলানোর জন্য বাতিল অকেজো বাল্বটা সরিয়ে থাকবে, কিন্তু পরে ভুলে গেছে রান্নার বইটা কেউ হয়তো ধার করে নিয়ে গেছে, কিন্তু আর ফেরৎ দেয়নি। আর ট্রাউজারটা কোনো ঠিকা ঝি নিয়ে গিয়ে থাকবে।
সাফাই-এর কাজের জন্য দুটি মেয়েকে রেখেছি। তাদের সম্পর্কে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, না জানিয়ে তারা এ কাজ করবে না।
তোমার ধারণাই হয়তো ঠিক। যাই হোক এরপর সান্ধ্য জুতোর কথায় আসা যাক। নতুন জুতাজোড়ার এক পাটি। কার সেটা?
সেলী ফিঞ্চের, আমেরিকান মেয়ে এখানে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করছে সে।
সেটা যে কোথাও স্রেফ ভুল করে রেখে দেওয়া হয়েছে, অথচ জায়গাটার কথা কেউ মনে করতে পারছে না, এ ব্যাপারে তুমি কি নিশ্চিত? কারণ একপাটি জুতো কারোর কাজে লাগতে পারে না বলেই এ কথা বলছি।
না মঁসিয়ে পোয়ারো, ভুল করে কোথাও রাখা হয়নি সেটা, আমরা সবাই তন্নতন্ন করে খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও পাইনি। মিস ফিঞ্চের একটা পার্টিতে যাওয়ার কথা ছিলো। সান্ধ্যপার্টি আমরা যাকে বলি ফর্মাল ড্রেস–পোশাকের সঙ্গে জুতোও মানিয়ে পড়তে হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন সান্ধ্য জুতোটা তার কাছে কতোই না জরুরী ছিলো।
তাহলে তার নিশ্চয়ই খুব অসুবিধা হয়েছিল–সেই সঙ্গে বিরক্তও হয়ে থাকবে সে।
-হা-হা। আমার আশঙ্কা, সম্ভবত এক্ষেত্রে জুতোেচুরির ব্যাপারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক জড়িয়ে থাকলেও থাকতে পারে–একটু সময়ের জন্য নীরব থাকে সে, এরপর আরো দুটো জিনিস বাকি থাকে-টুকরো টুকরো করে কাটা একটা ঝোলা, আর একই ভাবে কেটে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা একটা সিল্কের স্কার্ফ, এ দুটি অস্বাভাবিক কাজের ব্যাপারে আমরা বলতে পারি, এর পিছনে কোনো অসার দম্ভ কিংবা লোভের সম্পর্ক নেই। বরং বলা যেতে পারে ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রতিহিংসা নেওয়ার একটা প্রবণতা থেকে যায়। ঝোলাটা কার?
প্রায় সব ছাত্রছাত্রীদেরই একটাই দোকান থেকে কেনা। তাই সেটা যে আসলে কার নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল, তবে মনে হয় সেটা লিওনার্ড বেটসন কিংবা কলিন ম্যাকনারের হতে পারে।
আর সিল্কের স্কার্ফটা কার?
ভ্যালেরি জনহাউসের, সেটা সে খ্রিস্টমাসের উপহার হিসাবে পেয়েছিল। পান্নার মতো সবুজ রঙ-সত্যি সেটা খুবই উৎকৃষ্ট ছিলো।
মিসেস হার্বার্ড তোমার জন্য শুভ কখন চুরি যায় বলোতোসিয়ে পোয়ারো।
মিস জনহাউসের তাই বুঝি!
চোখ বন্ধ করলো পোয়ারো, মনে মনে একটা দূরবীন উপলব্ধি করেছিল সে। সে যেন সেই দূরবীন দিয়ে লক্ষ্য করছিল, ঝোলা ও স্কার্ফের কাটা টুকরো টুকরো অংশ, রান্নার বই, লিপস্টিক, বাথ সল্ট নখ আর বুড়ো আঙুলের নখগুলো অনেক পুরানো ছাত্রীদের কথাই মনে করিয়ে দেয়? কেন কোথাও এগুলো একত্র করার সঙ্গত কারণ নেই। একটার সঙ্গে আর একটা ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। লোকেরা চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু পোয়ারো বেশ ভালোভাবেই জানে যেভাবেই হোক আর কোথাও না কোথাও এসবের একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ ঠিক আছে। সম্ভবত অনেক উদাহরণ। সম্ভবত প্রত্যেক সময়ে দুর্দিনে বিভিন্ন নিদর্শন পরিলক্ষিত হতে পারে। কিন্তু সেইসব নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটাই সঠিক–তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোথা থেকে শুরু করা যায়–
চোখ মেলে তাকাল সে।
এ ব্যাপারে আরো কিছু প্রতিফলন দরকার। ভালোরকম প্রতিফলন মানে বিশ্লেষণ।
ওহো, নিশ্চয়ই মঁসিয়ে পোয়ারো, আগ্রহ সহকারে জোর দিয়ে বললো মিসেস হার্বার্ড, আপনাকে আমি কষ্ট দিচ্ছি না তো
না, না একটুও নয়। আমাদের এখন বাস্তব দিকটার কথা ভাবতে হবে। এবার তাহলে শুরু করা যাক–সেই জুতো, সান্ধ্যজুতোহা মিস্ লেমন সেখান থেকেই আমরা শুরু করতে পারি।
হ্যাঁ, মঁসিয়ে পোয়ারো। মিস্ লেমন লেখার প্যাড আর পেন্সিল নিয়ে লিখতে বসে গেলো।
সম্ভবত মিসেস হার্বার্ড তোমার জন্য অপর জুতোর পাটিটা সংগ্রহ করবে। তারপর বেকার স্ট্রিটে হারানো সম্পত্তির বিভাগে যাবে। আচ্ছা কখন চুরি যায় বলোতো?
একটু সময় চিন্তা করে বললো মিসেস হার্বার্ড, হ্যাঁ এবার মনে পড়েছে মাঁসিয়ে পোয়ারো। সম্ভবত মাস দুই আগে হবে? ঠিক কোনো দিন এখুনি সেটা বলতে পারছি না, তবে সান্ধ্য পার্টির তারিখটা মিস্ সেলী ফিঞ্চ-এর কাছ থেকে জেনে বলতে পারি।