আমি ঠিক এটা চাই না, তবে এটাই পরামর্শ দেওয়ার মতন।
এই সময় হঠাৎ দরজা খুলে যেতে দেখা যায় এবং মিসেস হার্বার্ড ঘরে এসে ঢুকলো। তার মুখ দেখে মনে হলো শ্বাস নিতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তার ওরকম অবস্থা দেখে মৃদু চিৎকার করে উঠলো ভ্যালেরি : কি ব্যাপার মা? কি হয়েছে?
একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে ভয়ার্ত গলায় বললো মিসেস হার্বার্ড, ওঃ প্রিয় ভ্যালেরি জানো মিসেস নিকোলেটিস আর আমাদের মধ্যে নেই। তিনি মারা গেছেন। গতরাত্রে তাকে রাস্তা থেকে পুলিস স্টেশনে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের ধারণা তিনি, তিনি–আমার মনে হয় মত্ত অবস্থায় ছিলেন
হা তিনি মদ খাচ্ছিলেন। যাই হোক, তিনি মৃত—
বেচারী বৃদ্ধা মিসেস নিক, কঁপা কাঁপা গলায় বললো ভ্যালেরি।
মাদমোয়াজেল, তুমি ওঁর খুব প্রিয় ছিলে, তাই না? নম্র গলায় বললো পোয়ারো।
হা, ওর সঙ্গে সবারই ভালোলাগার কথা। তিন বছর হলো আমি এখানে আছি। শুরুতে তিনি অতো বদমেজাজী ছিলেন না। মিসেস হার্বার্ড বলে উঠলো, গত একবছর থেকে তিনি যেন কোনো কিছুর আতঙ্কে ভুগছিলেন।
আতঙ্ক? পোয়ারো এবং ভ্যালেরি দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলো! হতাশ সুরে বললো মিসেস হার্বার্ড, হ্যাঁ তিনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি এখানে নিরাপদ বোধ করছেন না। আমি তার কাছে তার ভয়ের কারণটা কি, জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে পাত্তা দেননি, বলতে অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু এখন আমি অবাক হচ্ছি
পুলিস ওঁর মৃত্যুর কারণ কি বলেছে? জিজ্ঞেস করলো পোয়ারো বিমর্ষ গলায়।
মিসেস হার্বার্ড বললো, না, তারা কিছু বলেনি। মঙ্গলবার তদন্ত হবে
.
১২.
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের শান্ত একটা ঘর, একটা টেবিলের চারপাশে বসেছিল তারা চারজন, নারকোটিকস্ স্কোয়াডের সুপারিনটেন্ডেন্ট উইন্ডিং, কনফারেন্সের সভাপতি। তার পাশে বসে ছিল গ্ৰেহাউন্ডের সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে তরুণ ও আশাবাদী সার্জেন্ট বেল। ইনসপেক্টর শার্প হেলান দিয়ে বসেছিল। চতুর্থ ব্যক্তি হলো এরকুল পোয়ারো। টেবিলের উপর রাখা ছিলো একটা ঝোলানো ব্যাগ।
প্রথমে সুপারিনটেন্ডেন্ট উইন্ডিং মুখ খুললেন, সব সময়ই চোরাচালানের কারবার চলে আসছে, বিশেষ করে গত দেড় বছর ধরে তো বটেই। চোরাই জিনিসের মধ্যে হেরোইন সব থেকে বেশি উল্লেখযোগ্য। কন্টিনেন্টের সর্বত্র এর ঘাঁটি রয়েছে, ফরাসী পুলিস তো বোকা বনে গেছে কি করে এসব জিনিস ফ্রান্সে আসছে। আবার কি ভাবেই বা সেগুলো ফ্রান্সের বাইরে চলে যাচ্ছে।
আমার বলাটা বোধহয় ঠিক হবে না। পোয়ারো তার কথার জের টেনে বললো, যদি বলি আপনার সমস্যাটাকে মোটামুটি ভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম সমস্যা সাদা দ্রব্যগুলো কিভাবে এদেশে বিতরণ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় সমস্যা হলো কিভাবে সেগুলো এদেশে চোরাচালান হয়ে আসছে আর তৃতীয় ও শেষ সমস্যা হলো কে এই ব্যবসা চালাচ্ছে আর আসল মুনাফাঁকে লুঠছে তা খুঁজে বার করা। আমি বলবো মোটামুটি ভাবে ঠিক এইরকমই, আমরা জানি এইসব মাদক দ্রব্য ছোট ছোট বিতরণকারীদের দ্বারা বিভিন্ন উপায়ে নাইটকারপাল ড্রাগ স্টোর্স এবং অন্য ডাক্তারদের কাছে বিতরণ করা হয় কিংবা ফ্যাশনপ্রিয় মহিলা, পোশাক প্রস্তুতকারক এবং হেয়ার ড্রেসারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
তাতো হলো, কিন্তু কি ভাবে সেগুলো এদেশে চোরাচালান হয়ে আসছে সেটা জানতেই আমার আগ্রহ বেশি।
আহ! আমরা তো একটা দ্বীপে বাস করি। তাই এখানে সেই পুরানো পদ্ধতি অর্থাৎ সমুদ্রপথে হেরোইন পাচার হয়ে আসছে। কিন্তু অন্য জিনিসগুলোে? যেমন, ধরা যাক হীরে-জহরত।
এবার মুখ খুললো সার্জেন্ট বেল। স্যার এখানে এর রমরমা ব্যবসা চলছে। এই সব অবৈধ হীরে আর দামী পাথরগুলো চোরাপথে বেশির ভাগ আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়া থেকে এবং কিছু দূরপ্রাচ্য থেকে। সুপারিনটেন্ডেন্ট উইন্ডিং পোয়ারোর দিকে ফিরে বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো, এইসব মাদকদ্রব্য আর হীরে-জহরত চোরাচালানের ব্যাপারে আপনার কি অভিমত?
দেখুন, বললো পোয়ারো, স্মাগলারদের দুর্বলতা চিরন্তনী, আজ না হয় কাল আপনার সব সন্দেহ অবশ্যই গিয়ে পড়বে এয়ারলাইন স্টুয়ার্ড, ছোট ছোট কেবিন সমেত উৎসাহী নৌ-বাইকের চালক, ফ্রান্সে যেসব মহিলারা নিয়মিত ভাবে ফ্রান্সে যাতায়াত করছে, যে সব আমদানীকারক আশাতিরিক্ত মুনাফা করে থাকে, যে সব লোক মূল আয়ের থেকে ব্যয় বেশি করে–এদের উপর। কিন্তু এই সব চোরাই জিনিস যদি একজন নিরীহ নির্দোষ লোককে দিয়ে আনানো হয়, সেক্ষেত্রে এদের চিহ্নিত করা খুবই কষ্টের ব্যাপার। ঝোলানো ব্যাগের দিকে উইন্ডিং হাত বাড়িয়ে বললেন, এটাই কি আপনার অভিমত?
হ্যাঁ। এখন আপনার শেষ সমস্যার প্রসঙ্গে আসা যাক। আজকের দিনে সেই সন্দেহজনক ব্যক্তিটি কে হতে পারে? ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কেউ একজন তো হতে পারে খুবই খাঁটি সত্য। বললেন উইন্ডিং। বেল ঝোলানো ব্যাগটা পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে নিরীক্ষণ করে তিনি আবার বললেন, এর মধ্যে সবার দৃষ্টি এড়িয়ে অনায়াসে পাঁচহাজার পাউন্ড আনতে পারেন বলে?
হ্যাঁ, ঠিক তাই, বললো এরকুল পোয়ারো। এই ঝোলানো ব্যাগগুলো বাজারে বিক্রি হয় সম্ভবত একের অধিক দোকানে, দোকানের মালিক সম্ভবত এই র্যাকেটের সঙ্গে যুক্ত কিংবা নাও হতে পারে। হয়তো সস্তায় এইসব ব্যাগ বিক্রি করে শুধুই লাভ করে থাকে। অন্য বড় দোকানের থেকে এই দোকানের ব্যাগগুলো অনেক সস্তা আর মজবুতও বটে। এর পিছনে একটা বিরাট চক্র যে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লন্ডন ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল ছাত্রদের কিংবা ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছে যারা তাদের একটা তালিকার উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। এই সব ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের বাইরে যায়, ফিরে আসে আসল ঝোলানো ব্যাগের পরিবর্তে ডুপ্লিকেট ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে। ছাত্রছাত্রীরা ইংল্যান্ডে ফিরে এলে তাদের ঝোলানো ব্যাগ হয় কাপবোর্ডে কিংবা ঘরের এক কোণায় ফেলে রাখে। এখানেও আবার এই ব্যাগগুলো হাত বদল হয়ে যায়।