সে তো অনেকদিন আগে।
একজন ইউরোপীয় মোন্টাও জোনসকে পুলিস খুঁজছিল। কেমব্রিজে মিসেস এ্যালিস কমবকে হত্যা করার অপরাধে। অরিখ ২৪শে ফেব্রুয়ারি–তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা হবে। আবার ৬ই মার্চ সকাল এগারোটার সময় পুলিস সেখানে যায় ওয়েস্ট আফ্রিকার বাসিন্দা উইলিয়াম রবিনসনের খোঁজে। শেফিল্ড পুলিস তাকে খুঁজছিল।
আহ্! ধন্যবাদ।
তবে আপনি কি মনে করেন, সেই কেসগুলো এই কেসের সঙ্গে সম্পর্ক
পোয়ারো তার কথায় বাধা দিয়ে বললো, না, সেগুলোর সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্তের তারিখ আর সময় সম্পর্কে আমার আগ্রহ ছিলো।
আপনার কিরকম মনে হচ্ছে পোয়ারো।
শুনুন বন্ধু ঝোলা ব্যাগগুলো আমি কেটে টুকরো করে ফেলেছি। এটা খুবই মজার ব্যাপার, তারপর শান্ত ভাবে রিসিভার নামিয়ে রাখে সে, তারপর সে তার পকেটবুক থেকে গত পরশু মিসেস হার্বার্ডের দেওয়া পরিবর্তিত তালিকাটি হাতে নিয়ে তার উপর চোখ বোলাতে থাকলো। তালিকাটা ছিলো এইরকম :
একটা ঝোলানো ব্যাগ (লেন বেটসনের) ইলেকট্রিক বাল্বগুলো। ব্রেসলেট (জেনেভিভের) হীরের আংটি (প্যাট্রিসিয়ার) পাউডার কমপ্যাক্ট (জেনেভিভের) সান্ধ্যজুতো (সেলীর)। লিপস্টিক (এলিজাবেথ জনস্টনের) কানের দুল (ভ্যালেরির)। স্টেথোস্কোপ (লেন বেটসনের) বাথ সল্ট (?)। ছিন্নবিচ্ছিন্ন স্কার্ফ (ভ্যালেরির) ট্রাউজার (কলিনের) রান্নার বই (?)। বোরিক (চন্দ্রলালের)। কস্টিউম ব্রোচ (সেলীর) এলিজাবেথের নোটের উপর কালি ছিটানোর ঘটনা। (আমার সাধ্যমত এই তালিকা আমি তৈরি করেছি। এটা সম্পূর্ণ নির্ভুল নয়। হার্বার্ড)
এখন এই তালিকা থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাদ দিতে হবে। এ ব্যাপারে তার কোনো ধারণা ছিলো না, ভাবল পোয়ারো। কে তাকে সাহায্য করতে পারে? আজ রবিবার, সম্ভবত বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেলে আছে। ২৬নং হিরি রোডে ফোন করলো সে। ফোনে মিস ভ্যালেরি জনহাউসের খোঁজ করতেই একটু পরে তার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো দূরভাষে। ভ্যালেরি জনহাউস কথা বলছি।
এ প্রান্ত থেকে এরকুল পোয়ারো। আমাকে তোমার মনে আছে?
নিশ্চয়ই মঁসিয়ে পোয়ারো, বলুন আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?
তোমার সঙ্গে আমার কয়েকটা কথা আছে। এখুনি আমি হিকরি রোডে যাচ্ছি।
বেশ তো, আমি আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকবো, চলে আসুন।
কিছুক্ষণ পর গেরোনিমো পোয়ারোকে ভ্যালেরি জনহাউসের ঘরে নিয়ে এলো। ভ্যালেরি দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল তাকে স্বাগত জানানোর জন্য। খুব ক্লান্ত ভ্যালেরি, চোখের কোণে কালিমা পড়ে গেছে।
কথায় কথায় পোয়ারো তাকে জিজ্ঞেস করলো, মাদমোয়াজেল তুমি তো ছাত্রী নও, তাই না?
ওহো না। আমি চাকরীয়া। একটা বাসমেটিক ফার্মে?
পোয়ারো বললো, মাঝে মাঝে প্যারিসে আর কন্টিনেন্টে যাও।
ও হ্যাঁ, মাসে একবার বটেই, মাঝে মাঝে একবারের বেশিও হয়ে যায়।
মাফ করো আমাকে, হয়তো একটু বাড়তি কৌতূহল প্রকাশ করে ফেলেছি। কিছু মনে করলে না তো?
না, না, আপনি স্বচ্ছন্দে আপনার কৌতূহল প্রকাশ করতে পারেন।
ধন্যবাদ, এখানে একটু থেমে পোয়ারো জিজ্ঞেস করলো, তোমার ব্যাপারে ইনসপেক্টর জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন?
হা তাতো বটেই।
আর তুমি যা জানো সব তাকে বলেছিলে? আমার আশঙ্কা যদি সেটা সত্য হয়। পোয়ারোর দিকে তাকালো ভ্যালেরি, তার দুচোখ থেকে বিদ্রূপ ঝরে পড়ছিল। ইনসপেক্টর শার্পের প্রশ্নের উত্তরে আমি কি বলেছিলাম সেটা আপনি শোনেননি বলেই আপনার ধারণা যথাযথ নয়।
আহ, তা নয়, এ আমার একটা সামান্য অনুমান মাত্র। আমি এখানে এসেছি, বললো পোয়ারো, মিস প্যাট্রিসিয়া লেনের আংটি চুরির ব্যাপারে কয়েকটা প্রশ্ন করার জন্য।
প্যাট্রিসিয়ার বাগদানের আংটি? মানে তার মার বাগদানের আংটি? কিন্তু আপনি সেটা নিলেন কেন?
দু-এক দিনের জন্য ধার নিয়েছিলাম, এই আংটিটার প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিলো, বললো পোয়ারো। আগ্রহের কারণ–হঠাৎ সেটা উধাও হয়ে যাওয়া, আবার তেমনি হঠাৎ সেটা ফিরে আসা এবং আরো কিছু কারণ রয়েছে এর পিছনে। আংটিটা প্যাট্রিসিয়ার কাছ থেকে ধার নিয়ে আমি সোজা চলে যাই আমার এক বন্ধুর জুয়েলারির দোকানে, আমি তাকে হীরের ব্যাপারে রিপোর্ট দিতে বলি, তোমার মনে আছে মাদমোয়াজেল, আংটিটার দুপাশে দুটি পাথর ছিলো?
আমার তাই মনে হয়, তবে খুব ভালো ভাবে আমার মনে নেই।
কিন্তু সেটা তুমি নাড়াচাড়া করেছিলে। সেটা তোমার স্যুপের প্লেটে ছিলো। ঐভাবেই সেটা ফেরৎ এসেছিল।
ও হ্যাঁ এখন আমার মনে পড়েছে, আংটিটা আমি প্রায় গিলেই ফেলেছিলাম, মৃদু হাসলো ভ্যালেরি।
হ্যাঁ একটু আগে যা বলছিলাম, তা আমার সেই বন্ধু জুয়েলার কি বলেছিল জানো? তার উত্তর হলো পরের দুটো আদৌ হীরে ছিলো না। আসলে পরের দুটো ছিলো গোমেদ, সাদা গোমেদ।
তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, অনিশ্চিতভাবে বললো, ভ্যালেরি সেগুলো প্যাট্রিসিয়া। হীরে বলেই মনে করতো, কিন্তু সেগুলো শুধু গোমেদ কি?
দ্রুত মাথা নাড়লো পোয়ারো, না, আমি তা ভাবিনি। তাংটিটি ছিলো বাগদানের, প্যাট্রিসিয়ার মা ছিলেন ভালো পরিবারের। তার স্বামীও ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের। কেউ কাউকে ঠকাতে পারে না, অতএব শেষে পোয়ারো বলে ফেললো, আমার মনে হয়, আসল হীরে দুটো বদল করা হয়েছিল, আর সেই সঙ্গে গোমেদ জাতীয় পাথর সেট করে দেওয়া হয় আংটিটাতে। এখানে একটু থেমে পোয়ারো বলল, সেই আংটিটা মাদমোয়াজেল মিলিয়ে নিয়েছিল আর তখনি ইচ্ছাকৃত ভাবে হীরের বদলে গোমেদ পাথর লাগিয়ে দেওয়া হয় তাতে।