আপনি কি ভেবেছেন, আপনার কাছে সমর্পণ করার জন্য সেখানে নকল পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হবে? আচ্ছা আপনি কি আগে কখনো পাসপোর্টের ব্যাপারে ২৬ নং হিকরি রোডে গিয়েছিলেন? ধরুন বছর ছয়েক আগে?
মাথা নাড়লো শার্প, তারপর সাবধানে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করলো এসবের কোনো মানে হয় না, সব শেষে বললো সে।
একেবারে শুরু থেকে আমরা যদি শুরু করি, তাহলেই এ সব কিছুর মানে খুঁজে পাওয়া যাবে।
শুরু থেকে বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন মঁসিয়ে পোয়ারো?
বন্ধু সেই ঝোলানো ব্যাগটা, নরমসুরে বললো পোয়ারো। একটা ঝোলানো ব্যাগ দিয়েই সব কিছু শুরু।
.
১১.
মিসেস নিকোলেটিস রাগে উত্তেজনায় চিৎকার করে বলে উঠলেন, আমি এখান থেকে চলে যাবো, যেখানেই যাই না কেন সেই জায়গাটা অন্তত এখান থেকে নিরাপদ হবে, সে আমি জোর গলায় বলতে পারি।
কিন্তু আপনার ভয় কিসের? আমি যদি জানতে পারতাম, সম্ভবতঃ আমি–
সেটা তোমার জানার কথা নয়। আমি তোমাকে কিছুই বলবো না। তুমি যেভাবে একনাগাড়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, সেটা আমি মানতে পারছি না।
আমি দুঃখিত।
এখন তুমি অপমানিত আমার রূঢ় ব্যবহারের জন্য। কিন্তু আমি কি সাধ করে এমন উত্তেজিত হয়েছি? ঐ পুলিসের লোকগুলো সার্চের নাম করে আমার বাড়ি তছনছ করে দিয়েছে। আমার বুকটা ভেঙ গেছে। এখন একটু ব্র্যান্ডি পেলে ভালো হয়–চলি, উইক এন্ডটা যেন তোমার ভালো ভাবে কাটে। শুভরাত্রি।
হিকরি রোডটা বেশ বড়, লন্ডনের বড় বড় রাস্তাগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। রাস্তার শেষ প্রান্তে ট্রাফিক লাইট এবং একটা পাবলিক হাউস, দি কুইন্স নেকলেস। পথ চলতে চলতে পিছন ফিরে তাকাচ্ছিলেন মিসেস নিকোলেটিস। না পরিচিত কাউকে চোখে পড়ল না। দি কুইন্স নেকলেসের কাছে গিয়ে আর একবার অপরাধীর মতো ভয়ে ভয়ে চারদিক দেখে নিয়ে একা মেলুন বারে ঢুকে পড়লেন তিনি।
দ্রুত কয়েক ঢোক ব্র্যান্ডি গলাধঃকরণ করার পর একটু ধাতস্থ হলেন তিনি। তাকে আর ভীতসন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে না। তবে পুলিসের উপর তার রাগ কমলো না। আজ পুলিস যেভাবে বাড়াবাড়ি করলে তাতে ছাত্রছাত্রীদের কাছে আর মুখ দেখাতে পারবেন না তিনি। মিসেস হার্বার্ডের একটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো। কেউঁকি কাউকে বিশ্বাস করতে পারে? ব্যাপারটা গেরোনিমোও জেনে গেছে। সম্ভবত সে তার বউকে বলবে, তার বৌ আবার ঝাড়ুদারনিকে বলবে, এই ভাবে পাঁচকান হতে হতে তার গোপন কথাটি সবাই জেনে যাবে শেষ পর্যন্ত। উঃ অসহ্য। তার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো, তিনি আবার ব্র্যান্ডির ফরমাস করলেন। আজ তিনি আকণ্ঠ ব্র্যান্ডি পান করলেন। চোখ বুজে আসছিল তার আর চোখ বন্ধ করলেই তিনি যেন তার ভবিষ্যৎ দেখতে পান, অন্ধকারাচ্ছন্ন। তার গোপন পরিচয়টা পেয়ে সবাই যেন ঘৃণার চোখে দেখবে। অবশ্য এখানেই শেষ নয়, তারপর যখন তারা জানতে পারবে–তিনি আর চিন্তা করতে পারছেন না। দম বন্ধ হয়ে আসছিল মেলুন বারের বদ্ধ আবহাওয়ায়। তা তিনি এবার কোননারকমে উঠে দাঁড়ালেন, পা দুটো টলছিল। তবু সেই অবস্থায় তিনি বেরিয়ে এলেন, দি কুইন্স নেকলেস থেকে, তারপর খুব সাবধানে পা ফেলে ফেলে রাস্তায় নামলেন, দেওয়াল ঘেঁষে চলতে থাকলেন, একটু সময়ের জন্য যদি তিনি চোখ বন্ধ করেন
এই সময় সেইপথ দিয়ে পুলিস কনস্টেবল বটকে হেঁটে যেতে দেখা গেলো। একটু এগোতেই তাকে থামতে হলো একটা জটলা দেখে। অফিসার এখানে একজন মহিলা অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন–মনে হয় তিনি অসুস্থ কিংবা–ভীড়ের মধ্যে কে যেন বললো।
পুলিস কনস্টেবল বট ঝুঁকে পড়ে বৃদ্ধাকে পরীক্ষা করতে গিয়ে তার নাকে তীব্র ব্র্যান্ডির গন্ধ এসে লাগলো, আর তখনি সে বুঝলো, তার সন্দেহ ঠিকই।
বললো সে, মাতাল, চিন্তার কিছু নেই, আমরা দেখছি
.
এরকুল পোয়ারো রবিবারের প্রাতঃরাশ সেরে তার বসার ঘরে এসে বসল। টেবিলের উপর পরিষ্কার করে সাজানো চারটি ঝোলা ব্যাগ। মিঃ হিক-এর দোকান থেকে কেনা ঝোলানো ব্যাগের সঙ্গে জর্জের কিনে আনা বাকি ব্যাগগুলো থেকে কোনো অংশেই খারাপ নয়। কিন্তু তার কিনে আনা ব্যাগটা অনেক সস্তা।
মজার ব্যাপার তো, বলল পোয়ারো। স্থির চোখে তাকিয়ে রইল সে ঐ ব্যাগগুলোর দিকে। তারপর সেই ব্যাগগুলো পরীক্ষা করে দেখতে থাকলো। বাথরুম থেকে একটা ধানকাটার ছুরি নিয়ে এসে মিঃ হিক-এর দোকানে ঝোলানো ব্যাগটা কাটবার চেষ্টা করলো। ভালো করে পরীক্ষা করে সে দেখলল ব্যাগের ভেতরে লাইনিং-এর তলায় করোগেটেড কাগজের একটা আস্তরণ। ব্যাগের টুকরো টুকরো অংশগুলো আগ্রহ সহকারে দেখতে থাকলো পোয়ারো। এরপর সে অন্য ব্যাগগুলোর উপর ছুরি চালিয়ে অপারেশনের কাজ শেষ করে তার কাজ পর্যালোচনা করে দেখতে থাকল। তারপর রিসিভারটা তুলে ডায়াল করলো, সামান্য একটু দেরি হওয়ার পর দূরভাষে ইনসপেক্টর শার্পের কণ্ঠস্বর ভেসে এল, পোয়ারো তখন তাকে বললো, দুটো জিনিস আমি জানতে চাই।
হোহো করে হেসে উঠল ইনসপেক্টর শার্প।
গতকাল আপনি বলেছিলেন গত তিনমাসে পুলিসি তদন্তের কাজে আপনি হিকরি রোডে গিয়েছিলেন। আপনি তারিখ আর সময়গুলো বলতে পারেন?
হাঁ, সে তো খুবই সোজা, ফাইল দেখে এখনি বলছি। কিছুক্ষণ পরে উত্তরভাষে তার কণ্ঠস্বর আবার আসে, গত ১৮ই ডিসেম্বর বেলা সাড়ে তিনটের সময় একজন ভারতীয় ছাত্রের আপত্তিকর কিছু প্রচার করার জন্য পুলিস সেখানে তদন্ত করতে যায়।