নিজেল চ্যাপম্যান আর লেন বেটসনের।
তাদের ঘরের পরে কাদের?
তারপরের ঘরগুলো মেয়েদের, প্রথম ঘরটা সিলিয়া, তারপর এলিজাবেথ জনস্টন আর প্যাট্রিসিয়া লেনের, সামনের দিকে ভ্যালেরি আর জন টমকিনসনের। মাথা নেড়ে ঘরে ফিরে এলো পোয়ারো।
ঝোলানো ব্যাগগুলো কোনো দোকান থেকে কেনা হয়েছিল?
দেখুন মঁসিয়ে পোয়ারো নামটা ঠিক এখনি মনে করতে পারছি না, তবে যতদূর মনে হয় মেবারলি কিংবা কেলসো ঐরকমই কিছু একটা হবে।
আহ! বললো পোয়ারো, অদেখা সূত্র! এই কারণেই ঠিক এ ধরনের জিনিসের প্রতি আমার খুব লোভ আছে। জানালার ওপারে আর একবার তাকালো সে, নিচে ঝুল ও ভূষায় ভরা বাগানের দিকে। তারপর মিসেস হার্বার্ডের কাছ থেকে বিদায় নিল সে।
হিকরি রোডের শেষ ভাগের দোকানে এসে দাঁড়ালো সে, তবে মিসেস হার্বার্ডের বর্ণনা মতো দোকানটার নামে মেবারলি কিংবা কেলসো কোনোটাই নয়। তবে তার নাম বিক্স, সেই দোকানে ঢুকে পোয়ারো তার ভাইপোর জন্য একটা ঝোলানো বাগ কেনার ভান করল, কলিনের ঝোলাব্যাগের মতো একটা ব্যাগ কিনে নিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দোকানীর কাছ থেকে জানতে পারল, তার দোকানের দাম অন্যসব বড় বড় দোকানের থেকে কম বলে ২৬নং হিকরি রোডের অনেক ছাত্রছাত্রীই তার দোকান থেকে জিনিস কিনে থাকে। পোয়ারো বুঝতে পারল মিসেস হাবার্ডের কথাই ঠিক।
তারপর সেখান থেকে বেরোতে যাবে হঠাৎ প্রবেশ পথে তার কাঁধের উপর একটা ভারি হাত পড়তেই পিছনের দিকে তাকালো সে।
ইনসপেক্টর শার্প, আরে আমি তো আপনার খোঁজই করছিলাম, বললো সে।
হিকরি রোডের হোস্টেলের তদন্ত শেষ?
হ্যাঁ তবে তদন্তের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছ বলে আমি মনে করি না, ইনসপেক্টর শার্প বলে, চলুন না একটা রেস্তোরাঁয় বসে আপনার প্রিয় স্যান্ডউইচ আর কফি খাওয়া যাক। আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
স্যান্ডউইচ বার প্রায় কঁকা, একেবারে একপ্রান্তে তারা দুজন গিয়ে বসলো নিরিবিলিতে, হোস্টেলের ছাত্র-ছাত্রীদের জবানবন্দী সংক্ষেপে বলতে লাগল ইনসপেক্টর। একবার তরুণ চ্যাপম্যানের বিরুদ্ধেই আমরা কিছু প্রমাণ জোগাড় করেছি, বললো শার্প। তিনধরনের বিষ সেই এনেছিল, কিন্তু সিলিয়া অস্টিনের সাথে তার কোনো শত্রুতা ছিলো বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
তার মানে আর একটা সম্ভাবনার দরজা খুলে গেছে যদিও
হা–সবকিছুর মূলেই ছিলো সেই ড্রয়ারটা। বিশ্রীরকমের লোক, তরুণ গর্দভ। এরপর সে আসে এলিজাবেথ জনস্টনের প্রসঙ্গে। আর সিলিয়া তাকে কি বলেছিল সে কথাও উঠলো। সে যা বলেছে তা যদি সত্য হয় তাহলে সেটা অর্থপূর্ণ।
অত্যন্ত অর্থপূর্ণ, তাকে সমর্থন করলো পোয়ারো।
আগামীকাল এ ব্যাপারে আরো কিছু জানতে পারবো, বললো ইনসপেক্টর।
আপনার তদন্তের আর ফলাফল কি?
হ্যাঁ আছে, সম্ভবত আরো দু-একটা অভাবনীয় ঘটনা। যেমন এলিজাবেথ কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্য। আমরা তার পার্টির কার্ড দেখেছি।
হ্যাঁ, বললো পোয়ারো, এটা একটা আগ্রহের ব্যাপার বটে। তবে আমার মনে হয় পার্টিতে তার প্রবেশ একটা মূল্যবান অ্যাসেট। আমি বলবো বয়সে তরুণী, আর অস্বাভাবিক বুদ্ধিমতী সে, সে যাই হোক, পোয়ারো জিজ্ঞেস করলো, এ ছাড়া আর কি দেখলেন?
ইনসপেক্টর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, মিস প্যাট্রিসিয়া লেনের ড্রয়ারে সবুজ কালিমাখানো রুমাল পাওয়া গেছে।
পোয়ারোর ভ্রূ উঁচু হলো।
সবুজ কালি? প্যাট্রিসিয়া লেন, মনে হয় সে কালি নিয়েছিল, আর এলিজাবেথ জনস্টনের কাগজের উপর সেই কালি ছিটিয়েছিল। তারপর সেই রুমাল দিয়ে হাত মুছেছিল সে। কিন্তু নিশ্চয়ই সে চাইবে না তার প্রিয়তম নিজেল সন্দেহভাজন হোক, তার হয়ে কথাটা শেষ করলো শার্প।
কেউ তা ভাবতে পারে না। নিশ্চয়ই অন্য কেউ সেই রুমালটা তার ড্রয়ারে রেখে থাকবে।
আর কিছু?
হা লিওনার্ড বেটসনের বাবা লংউইথ ডেল, মেন্টাল হাসপাতালে রয়েছে। আমার মনে হয় এটা তেমন আকর্ষণীয় কিছু নয়, কিন্তু
কিন্তু বেটসনের বাবা বিকৃত মাথার লোক। আপনি যেমন বললেন এর মধ্যে কোনো ইঙ্গিত থাকতে পারে না, তা ঠিক, কিন্তু এটা মনে রাখার মতো ঘটনা। আরো জানার ইচ্ছা হলো, তার সেই উন্মত্তটা কোনোদিকে বাঁক নেয়–তার ছেলের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা সেটা দেখার বিষয়।
খুব ভালো ছেলে বেটসন, বললো শার্প, তবে একটু বদমেজাজী, অসংযমী এই যা। আর আহমেদ আলির ঘর থেকে কতকগুলো পর্নোগ্রাফির বই পাওয়া গেছে, এর থেকে বোঝা যায়, সার্চ করার কথা শুনে কেনই বা সে অমন রেগে গিয়েছিল। তারপর সেই ফরাসী মেয়েটি তো হিস্টিরিয়া রোগগ্রস্ত। আর সেই ভারতীয় মিঃ চন্দ্রলাল এটা একটা আন্তর্জাতিক ইস্যু করবে বলে হুমকি দিয়েছে। তার কাছ থেকে আপত্তিকর প্যামপ্লেট পাওয়া গেছে–আর একজন আফ্রিকানের কাছে ভয়ঙ্কর ধরনের স্যুভেনির ছিলো। অনুসন্ধান করতে গিয়ে মানুষের অদ্ভুত অদ্ভুত স্বভাবের পরিচয় পাওয়া গেছে–মিসেস নিকোলেটিস ও তার ব্যক্তিগত কাপবোর্ডের খবর শুনেছেন?
হা শুনেছি বৈকি!
দাঁত বার করে হাসলো ইনসপেক্টর শার্প। আমার জীবনে অভোগুলো খালি ব্র্যান্ডির বোতলের কথা কখনো শুনিনি। আর তিনি তো আমাদের ওপর পাগলের মতো খাপ্পা হয়ে উঠেছিলেন। হাসলো সে, তারপর ভীষণ গম্ভীর হয়ে বললো, কিন্তু আমরা যা খুঁজছিলাম পেলাম না সেটা। বৈধ ছাড়া অন্য কোনো পাসপোর্টের খোঁজ পেলাম না।