আহ। পোয়ারো মুখে অমন একটা শব্দ করলে যেন সে মিসেস নিকোলেটিসের মনের ঠিকানা পেয়ে গেছে।
ব্ল্যান্ডির খালি বোতলগুলো সত্যি যেন অনেক কিছু ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে। বললো মিসেস হার্বার্ড। সত্যি এ দিকটার কথা আমি চিন্তাই করিনি। কিছুদিন আমি সিঙ্গাপুরে চলে যাই। এরই মধ্যে এতগুলো ব্র্যান্ডির বোতল খালি করা হয়েছিল কিন্তু তা যাহোক–
এগুলো আপনার কৌতূহল উদ্রেক করে না, সবকিছুই আমাকে আগ্রহ জাগায়, বললো পোয়ারো।
চেয়ারে বসে সে আবার সেই তালিকার উপর দৃষ্টি ফেললো। কিছুক্ষণ পরেই সে আবার বলে উঠলো, আহ্, দেখছি ঝোলানো ব্যাগটাই তালিকার প্রথমেই হয়েছে।
হ্যাঁ, ওটা খুব একটা উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু এখন আমি মনে করতে পারছি, গহনাগুলো আর কিছু দামী জিনিস উধাও হওয়ার আগে, যেন সেটা আগে সরানো হয়েছিল। সেই কালো চামড়ার ছেলেটির জন্য আমাদের খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়, মনে হয় এগুলোর সঙ্গে সেই ঘটনাটা হয়তো মিশে গিয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় একদিন কি দুদিন আগে এখান থেকে চলে যায় সে। তাই মনে হয় এখান থেকে চলে যাওয়ার আগে এই রকম একটা হিংসাপূর্ণ কাজ করে যায় সে, যাতে করে আমাদের অসুবিধায় পড়তে হয়।
আহ্! সেরকম কিছু একটা বলতে চাইছিল গেরোনিমো। এখানে পুলিস এসেছিল, খবরটা ঠিক?
হা। মনে হয় শেফিল্ড কিংবা বার্মিংহ্যাম থেকে তারা তদন্ত করার হুকুম পেয়ে থাকবে। এ সবই স্ক্যান্ডাল। অসৎ উপায়ে উপার্জন এইরকম আর কি।
আর তারপরেই ছেঁড়া ঝোলা ব্যাগের সন্ধান পাও তোমরা?
হ্যাঁ আমার তাই মনে হয়-মনে রাখা খুবই কঠিন। লেন বেটসন তার সেই ঝোলা ব্যাগ হারানোর ব্যাপার নিয়ে খুব ঝামেলা করেছিল। তখন খোঁজ খোঁজ। সব শেষে গেরোনিমো বয়লারের পিছন থেকে টুকরো টুকরো অবস্থায় সেটা আবিষ্কার করে। এমন একটা অদ্ভুত ঘটনা–এতো কৌতূহল, কিন্তু মিঃ পোয়ারো, এর কোনো মানে হয় না, তাই না?
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে কি যেন ভাবলো সে।
সেই বাল্বগুলো আর ঝোলানো ব্যাগ, তেমনি চিন্তিতভাবে আস্তে করে বললো পোয়ারো।
কিন্তু এখনো আমি মনে করি, বললো মিসেস হার্বার্ড, সেই জিনিসগুলো হারানোর সঙ্গে সিলিয়ার দোষত্রুটির কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার মনে আছে, ঝোলানো ব্যাগ যে সে ছোঁয়নি, তা সে তীব্রভাবে অস্বীকার করেছিল।
হ্যাঁ সেটা সত্যি, এর কতদিন পরে চুরিগুলো ঘটতে শুরু করে বলো তো?
ওহে প্রিয় মঁসিয়ে পোয়ারো, এ সব কথা মনে রাখা যে কতো কষ্টকর, আপনার কোনো ধারণা নেই, দাঁড়ান, আমাকে খেয়াল করতে দিন–মার্চ না ফেব্রুয়ারি-ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। হ্যাঁ আমার মনে হয়, তার এক সপ্তাহ পরে জেনেভিভও বলেছিল তার ব্রেসলেটটা হারিয়েছে। হা কুড়ি এবং পঁচিশ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
আর তারপর থেকে মোটামুটি ভাবে চুরি হতে থাকে, তাই না।
হ্যাঁ, মিসেস হার্বার্ড বলে, ঝোলা ব্যাগটা ছিলো লেন বেটসনের। সে তো দারুণ খাপ্পা, এমনিতেই ছেলেটি একটি রগচটা ধরনের।
ব্যাগটা কি বিশেষ ধরনের?
ওহো তা নয়, নেহাতই মামুলি ধরনের।
ঐরকম একটা ব্যাগ আমাকে দেখাতে পারো?
নিশ্চয়ই। কলিনের ঐরকম একটা ব্যাগ আছে, নিজেলের এরকম একটা ব্যাগ আছে। প্রসঙ্গত বলে রাখি লেন ঠিক ঐরকম একটা ব্যাগ আবার কিনেছে এই রাস্তারই শেষ প্রান্তের একটা দোকান থেকে। যে কোনো বড় বড় দোকানের থেকে সেখানকার জিনিস খুবই সস্তা।
ম্যাডাম, আমি কি সেইরকম একটা ব্যাগ দেখতে পারি?
কলিন ম্যাকনারের ঘরে তাকে নিয়ে গেলো মিসেস হার্বার্ড, কলিন ঘরে ছিলো না, তবে তার কাপবোর্ড খুলে তার ঝোলানো ব্যাগটা বার করে পোয়ারোর হাতে তুলে দিলো। ঠিক এই রকমই একটা হারিয়ে যাওয়া ব্যাগ টুকরো টুকরো অবস্থায় পাওয়া যায়।
এমব্রয়ডারি কাঁচি দিয়ে কেউ কাটতে পারবে না, বিড়বিড়িয়ে বললো পোয়ারো।
না, আপনি যা মনে করছেন তা নয়–যদিও এর জন্য যথেষ্ট শক্তির দরকার তাও আমি বলবো, উদাহরণস্বরূপ যে মেয়ের মনে অপরের অপকার করার স্পৃহা থাকে, অনায়াসে সে এটা কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারে। এখানে একটু থেমে মিসেস হার্বার্ড বলে, ভ্যালেরির স্কার্ফের দশা এইরকমই করা হয়, ভালো কথা দেখেশুনে মনে হয়–কি বলবো-এ যেন অসামঞ্জস্যহীন।
আহ! বললো পোয়ারো, কিন্তু ম্যাডাম, আমার মনে হয় তুমি বোধহয় কোথাও ভুল করছো, এ ব্যাপারে আমার মনে হয় না এর মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্যহীন নেই। আমার আরো মনে হয় এর মধ্যে একটা উদ্দেশ্য আর প্রয়োজন আছে, যাকে আমরা বলতে পারি একটা বিশেষ ধরনের নিয়ম।
ঠিক আছে আমি সাহস করে বলতে পারি, এসব ব্যাপারে আপনি অনেককিছুই জানেন, বললো মিসেস হার্বার্ড, আমার যা বলার তা হলো, এসব আমি অপছন্দ করি। আমার বিচারে এখানকার সব ছাত্র-ছাত্রীই চমৎকার। ওদের মধ্যে কোনো ছাত্র কিংবা ছাত্রী যদি
পোয়ারো তখন ব্যালকনি পেরিয়ে আর একটা ঘরে এসে দাঁড়ালো। বাড়ির পিছন দিকের ঘরের মতো দেখাচ্ছিল। নিচে ছোট্ট একটা বাগান, পরিত্যক্ত ঝুল আর ভূষায় ভর্তি।
আমার ধারণা, বাড়ির সামনের থেকে পিছনটা অনেক বেশি শান্ত নির্জন, বললো সে।
বয়লার-হাউসটা কোথায় বলো তো?
ঐ যে দরজা দেখছেন, কোল-হাউসের ঠিক পাশেই?
এই পথের মুখে কার কার ঘর আছে জানতে পারি?