মিসেস নিকোলেটিসের কালো গভীর চোখ থেকে যেন একঝলক আগুন ঝরে পড়লো, তুমি তো তোমার নিজের কথাই বললে, কৌশলে প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেলেন তিনি। তুমি বললে এ বাড়িতে খুন হওয়ার দরুন যে কেউ অস্বস্তি বোধ করবে। পরবর্তী শিকার কে হবে? এমনকি কেউ এখনো পর্যন্ত জানে না খুনী কে? এই কারণেই পুলিশকে আমার খুব বোকা মনে হয়েছে। কাজের কাজটা তারা এখনো পর্যন্ত করতে পারেনি কিংবা এও হতে পারে, তারা ঘুষ খেয়ে বসে আছে।
ঘুষ খাওয়ার কথা বলবেন না, একথা বলা বোকামো, আর আপনি সেটা ভালোই জানেন, একটু কড়া সুরেই বললো মিসেস হার্বার্ড। বরং আপনি আমাকে বিশ্বাস করে বলুন, আপনার প্রকৃত উদ্বেগের কারণটা কি।
আহ আমার চিন্তার কোনো কারণ আছে বলে মনে করো না। আছে কি নেই সে তুমি ভালোই জানো, সব কিছুই তুমি জানো! চমৎকার মেয়ে তুমি। ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো ভালো খাবার খাওয়ানোর জন্য জলের মতো অর্থ ব্যয় করছো তুমি, তোমার লক্ষ্য ওদের প্রিয় হওয়া আর এখন তুমি আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছে, কিন্তু তা হবে না। আমার সমস্যাটা আমি নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই, কেউ তার মধ্যে নাক গলাতে পারবে না। শুনতে পাচ্ছ তুমি? না মিসেস, বন্ধু সেজে কৌশলে আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারটা জেনে নিতে দেবো না আমি তোমাকে।
দয়া করে আপনি
না, বলবো না, আমি জানতাম, তুমি একজন গুপ্তচর।
কিসের গুপ্তচর?
কিছুই নয়, বললো মিসেস নিকোলেটিস, এখানে গুপ্তচরগিরি করার কিছুই নেই। তুমি ধরে নিয়েছে এখানে গোপন কিছু আছে, আর সেই ভেবে তুমি যদি পুলিসের কাছে মিথ্যে করে কিছু বলল, আমি ধরে নেবো কে বলতে পারে, বুঝলে?
এভাবে বলছেন কেন? বললো মিসেস হার্বার্ড, এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য আপনি আমাকে সোজাসুজিই তো বলতে পারেন।
না, তোমাকে যেতে হবে না। আমি নিষেধ করছি, এখন নয় যতদিন এই পুলিসী ঝামেলা চলবে, যতদিন না খুনী ধরা পড়বে তোমাকে আমার হাতের মুঠোর মধ্যে থাকতে হবে।
আমাকে ত্যাগ করে চলে যেতে দেবো না তোমাকে।
ঠিক আছে, নিরাশ হয়ে বললো মিসেস হার্বার্ড। কিন্তু আপনি সত্যি সত্যি কি যে চান বোঝা মুশকিল। এক এক সময় আমার কি মনে হয় জানেন, আপনি আসলে কি চান, নিজেই হয়তো তা জানেন না। আপনি বরং আমার বিছানায় শুয়ে থাকুন–আর ঘুমোবার চেষ্টা করুন
.
২৬ নম্বর হিকরি রোডে এসে ট্যাক্সি থেকে নামলো এরকুল পোয়ারো। দরজা খুলে দিলো গেরোনিমো। পুরানো বন্ধুর মতো তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো সে, এখানে পুলিস এসেছিল। উঃ! সে কি ভয়ঙ্কর অবস্থা। সার্চ ওয়ারেন্ট নামে বাড়ি তছনছ করে দিয়ে গেছে। রান্নাঘর তল্লাসি করতে গেলে মারিয়া তো ক্ষেপে লাল। রাগের মাথায় বলেই ফেলে সে পুলিসকে পেটাবে। আমি তাকে বোঝাই, অমন কাজ করো না, করলে আমরা সবাই আরো বেশি ঝামেলায় পড়ে যাবো।
তোমার দেখছি ভালো বোধশক্তি আছে, পোয়ারো তার কাজের প্রশংসা করে জিজ্ঞেস করলো, মিসেস হার্বার্ড কোথায়?
উপরতলায় চলুন, ওর কাছে নিয়ে যাচ্ছি।
এক মিনিট, পোয়ারো তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এখান থেকে কিছু ইলেকট্রিক বাল্ব ঠিক কবে উধাও হয়েছিল বলতে পারো?
সে তো অনেক, অনেকদিন আগে, তা প্রায় এক দুই কিংবা তিনমাস আগের ঘটনা হবে।
ঠিক কোনো বাল্ব উধাও হয়েছিল বলো তো?
একটা হলঘরের একটা কমনরুমের আর বাড়তি বাল্বগুলো উধাও হয়।
তাহলে ঠিক কোনো তারিখে সেগুলো উধাও হয়েছিল তুমি খেয়াল করতে পারছো না?
নির্দিষ্ট তারিখ বলতে না পারলেও মাসটা আমার মনে আছে–ফেব্রুয়ারী, কারণ ওই মাসেই পুলিস এসেছিল এখানে।
পুলিস? এখানে পুলিস এসেছিল কেন।
মিসেস নিকোলেটিসের সাথে দেখা করতে এসেছিল, একজন ছাত্রের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে। আফ্রিকা থেকে এসেছিল ছাত্রটি, খুবই বাজে ছেলে, কোনো কাজকর্ম করতো না, নারীসঙ্গ ছিলো তার। তার জন্য মেয়েটি অন্য পুরুষদের সঙ্গদান করত। খুবই খারাপ ব্যাপার। পুলিস সেটা পছন্দ করতে পারেনি এসব ঘটনা ম্যাঞ্চেস্টার, না আমার মনে হয় শেফিল্ডের। তাই সে সেখান থেকে পালিয়ে এখানে এসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু পুলিস ঠিক তাকে খুঁজে পেয়ে মিস, হার্বার্ডের সাথে তার ব্যাপারে আলোচনা করে, কিন্তু পাখি তখন উড়ে গেছে এখান থেকে। তবে পরে পুলিস তাকে অন্য এক জায়গা থেকে আটক করে জেলে পুরে দেয়।
আর পুলিস যেদিন এখানে আসে সেইদিনই বাল্বগুলো চুরি গেছিল এই তো?
হা, সুইচ অন করতে গিয়ে দেখি আলো জ্বলছিল না। তখন কমনরুমে গিয়ে দেখি সেখানকার বাল্বও উধাও। এখানে ড্রয়ারে বাড়তি বান্ধ রাখা ছিল সেগুলোও উধাও।
গেরোনিমোর সঙ্গে মিসেস হার্বার্ডের ঘরে যেতে গিয়ে তার কাহিনিটা হজম করতে হলো পোয়ারোকে।
পোয়ারোকে উষ্ণ সম্বর্ধনা জানিয়ে তার হাতে একটা তালিকা তুলে দিয়ে মিসেস হার্বার্ড ক্লান্ত স্বরে বললো, এই জিনিসগুলো একেকটা উধাও হওয়ার দিনক্ষণ আমি আমার সাধ্যমতো লেখার চেষ্টা করেছি মঁসিয়ে পোয়ারো। তবে এটা একশো ভাগ নির্ভুল বলে ধরে নিতে পারেন আপনি।
ম্যাডাম, আমি তোমার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ, এখন বলো মিসেস নিকোলেটিস কেমন আছেন?
আমি ওঁকে ঘুমের ট্যাবলেট দিয়েছি, মনে হয় তিনি এখন ঘুমুচ্ছেন। সার্চ ওয়ারেন্টের ব্যাপারে উনি দারুণ ঝামেলা করেছিলেন। ওর ঘরের কাপবোর্ডের চাবি দিতে অস্বীকার করেন উনি। তখন ইনসপেক্টর তালা ভেঙে কাপবোর্ডের ডালা খুলতেই অনেকগুলো ব্র্যান্ডির খালি বোতল বেরিয়ে আসে।