মঁসিয়ে পোয়ারো, তুমিই যে বিজয়ী, আমি নিশ্চিত, অনুগত কর্মিণীর বিশ্বাস নিয়ে বললো মিস লেমন।
পোয়ারোর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠলো।
হ্যাঁ, এটাই ঘটনা, বললো সে, এমনকি ভীষণভাবে এলোমেলো জিনিসগুলোও ঠিক ঠিক ভাবে সাজানো যেতে পারে–তবে উদ্ভাবনী দক্ষতা ও পরিণতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। যেমন একজন নিজেই নিজেকে বলে, টেবিলের উপর রাখা একটা বিরাট মার্বেল পাথরের সাদা হাতির ময়লা আমি একখণ্ড সাবান দিয়ে পরিষ্কার করি–এইরকম আর কি?
প্রথার সাথে মিসেস হার্বার্ড বলে উঠলো, তাহলে সম্ভবত যে তালিকাটি আমি আপনাকে দিয়েছি সেটা দিয়ে একই জিনিস আপনি করতে পারেন।
নিঃসন্দেহে আমি করতে পারি। একজন মহিলা তার ডানপায়ে জুতো পরে, বাঁ হাতে ব্রেসলেট পরলেন, তারপর তিনি মুখে পাউডার ও ঠোঁটে লিপিস্টিক লাগিয়ে নিচে নৈশভোজের জন্য নেমে আসেন এবং তার আংটিটা স্যুপের মধ্যে ফেলে দেন-এই রকম আরকি। সুতরাং আপনার তালিকা থেকে এইভাবে আমি মনে করতে পারি কিন্তু তাই বলে এই নয় যে, এটাই আমাদের কার্য। কথা হচ্ছে এলোমেলোভাবে জিনিসগুলো কেন চুরি করা হলো? এর পিছনে কোনো রীতি বা নিয়ম আছে? কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা কিংবা সেরকম কিছু এখানে প্রাথমিক বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রথম কাজ হবে জিনিসগুলোর তালিকা সতর্কতার সঙ্গে অনুধাবন করা।
একটা নীরবতা নেমে আসে। পোয়ারো নিজেই অনুধাবন করতে থাকে, বাচ্ছা ছেলে মেয়েকে দেখার মতো পোয়ারোকে নিবিষ্ট মনে নিরীক্ষণ করতে থাকে মিসেস হার্বার্ড, সবশেযে পোয়ারো মুখ খুলতেই লাফিয়ে উঠলো মিসেস হার্বার্ড।
প্রথম যে জিনিসটা আমার মনে দাগ কেটেছে সেটা হলো, বললো পোয়ারো, উধাও হয়ে যাওয়া জিনিসগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই কম দামের, ব্যতিক্রম শুধু দুটি ক্ষেত্রে স্টেথোস্কোপ আর হীরের আংটি। একমুহূর্তের জন্য স্টেথোস্কোপটা আলাদা করে সরিয়ে রেখে আংটিটার উপর আমি মনোনিবেশ করতে চাই, আপনি বলেছেন এটা দামি জিনিস–তা এর দাম কতো হতে পারে?
ঠিক কতো যে আমি তা বলতে পারবো না আঁসিয়ে পোয়ারো। সেটা ছিল একটা কাটা হীরে, ওটা মিস্ লেমনের মায়ের বাগদানের চিহ্ন স্বরূপ আংটি, ওটা পাওয়া যাচ্ছে না শুনে তিনি মুষড়ে পড়েন। সেই দিনই সন্ধ্যায় মিস্ জনহাউসের স্যুপের প্লেটের ভেতর থেকে সেটা পাওয়া যেতেই আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম
সুতরাং এরকমই কিছু একটা ঘটে থাকবে, কিন্তু আমি মনে করি, জিনিসগুলো চুরি যাওয়া আর ফিরে পাওয়া অর্থপূর্ণ, ধরুন যদি লিপস্টিক, পাউডার কিংবা বই হারাতো সেক্ষেত্রে আপনাদের পুলিশকে খবর না দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত বলে আমি মনে করি। কিন্তু দামি হীরের আংটিটা স্বতন্ত্র। পুলিশ যে আসবে সে সম্ভাবনা সব সময়েই থাকতে পারে। তাই আংটিটা ফিরিয়ে বেতন্ত্র পুলিশ যে আসদেওয়াটা যুক্তিযুক্ত পাউডার কিংবা বই
কিন্তু যেই নিক না কেন, ফেরত যে দিতে হবে তা জেনেও কেনই বা সেই আংটিটা নিতে গেলো?
ভ্রুকুটি করলো মিস লেমন।
তবু কেন? বললো পোয়ারো, সে প্রশ্নে আমি পরে আসছি, আমি এইসব জিনিস চুরির শ্রেণিবিভাগ করতে ব্যস্ত, প্রথমে সেই হীরের আংটির কথাই ধরা যাক। কে এই মিস যেমন, যার কাছ থেকে আংটিটা চুরি যায়? যথেষ্ট আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে নিশ্চয়ই?
ওহো না, তার নিজস্ব অর্থ বলতে যৎসামান্যই, তবে সবসময়ই খুবই সতর্ক সে। যে আংটিটার কথা আমি বলছি সেটা ছিলো না। সম্প্রতি ধূমপানও বন্ধ করে দিয়েছিলো সে।
তাহলে তার পছন্দ কি? তোমার নিজের ভাষায় মেয়েটির সম্পর্কে কিছু তো।
বেশ তাহলে শুনুন। নেহাতই সাদামাটা দেখতে, নারী সুলভ চেহারা কিন্তু তার মধ্যে খুব বেশি দীপ্তভাবে কিংবা জীবনবোধ বলতে কিছু নেই। কি বলবেন তাকে–তবে হ্যাঁ তার মধ্যে আন্তরিকতার অভাব নেই।
তার আংটি আবার মিস জনহাউসের স্যুপের প্লেট থেকে ফেরৎ পাওয়া যায়। তা কে এই মিস জনহাউস?
ভ্যালেরি জনহাউস। চতুর মেয়ে সে, ময়লা রং, ব্যঙ্গে ভরা তার কথাবার্তা। একটা বিউটি পার্লারে কাজ করে সে। ম্যানরি না মোয়ার–নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই, এই দুটি মেয়ে পরস্পরের বন্ধু।
কি যেন চিন্তা করলো মিস হার্বার্ড। তারপর বললো সে, হ্যাঁ আমি বলবো সেইরকমই। পরস্পরের মধ্যে তাদের কিছু করার ছিলো না। আমি বলবো প্রত্যেকেরই সঙ্গেই প্যাট্রিসিয়ার ভাব ছিলো। কিন্তু ভ্যালেরি জনহাউসের অনেক শত্রু তার ওই ধরনের বাঁকা বাঁকা কথার জন্যই হয়তো…সেটা সে জানতোই বটে, আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।
মনে হয় জানি, বললো পোয়ারো।
সুতরাং ধরে নেওয়া যেতে পারে যে চমৎকার মেয়ে এই প্যাট্রিসিয়া, কিন্তু একটু অনুজ্জ্বল, নিষ্প্রভ যাকে বলে আর কি, তবে ভ্যালেরি জনহাউসের ব্যক্তিত্ব আছে, পোয়ারো চুরি যাওয়া তালিকার উপর আবার মনোনিবেশ করলো অতঃপর।
তা কিসের জন্য এত ষড়যন্ত্র? এখানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের জিনিস চুরি গেছে। জিনিসগুলো খুবই সামান্য প্রকৃতির। এই জিনিসগুলো কেবল জীবনে ব্যর্থ মেয়েদেরই প্রলোভিত করতে পারে। যেমন ধরা যাক সম্ভবত লিপস্টিক, কস্টিউম জুয়েলারি, পাউডার, বাথ সল্ট, চকোলেটের বাক্স। তারপর স্টেথোস্কোপের প্রসঙ্গে আসা যাক : কোথায় এটা বিক্রি করা যায় কিংবা বন্ধকী রাখা যায় চোর সে কথা বেশ ভালো ভাবেই জানে। এর মালিক কে?