দেখুন মঁসিয়ে পোয়ারো, হোস্টেলে এমন যা সব ঘটনা ঘটছে, যা একেবারেই পছন্দ নয় ওর।
কেন ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে থাকে নাকি সেখানে? জানতে চাইলো পোয়ারো।
ওহো, তা নয় মঁসিয়ে পোয়ারো, আমি সেরকম কিছু বলতে চাইনি, আসলে ব্যাপারটা হলো হোটেল থেকে জিনিসপত্র উধাও হয়ে যাচ্ছে।
উধাও হয়ে যাচ্ছে?
হ্যাঁ, উধাও হওয়া জিনিসগুলো অত্যন্ত মামুলি–আর সবই অস্বাভাবিক ভাবে।
তুমি বলছো, জিনিসগুলো উধাও হয়ে যাচ্ছে, তার মানে চুরি হয়ে যাচ্ছে বলো?
হা, ঠিক তাই।
তা, পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে।
না, এখনো দেওয়া হয়নি। আমার বোনের আশা তার আর দরকার হবে না। কিছু তরুণ ছাত্র ওর খুব প্রিয়–মনে হয় সেই জন্যেই, পুলিশ তাদের জ্বালাতন করবে; তা ও চায় না, তাছাড়া ব্যাপারটা ও নিজেই সমাধান করতে চায়।
হা, চিন্তিত ভাবে বললো পোয়ারো। আমি সেটা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি যদি বলি, তোমার নিজের উদ্বেগ যা তোমার বোনের উদ্বেগের প্রতিফলন বলে আমি মনে করতে পারি, কিন্তু সেটা তো বোঝাচ্ছে না।
আমি ঠিক এই পরিস্থিতি পছন্দ করি না। আদৌ আমি এসব পছন্দ করি না। আমি চিন্তাই করতে পারি না কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে যা আমি বুঝতে পারছি না।
চিন্তিতভাবে মাথা নেড়ে তার কথায় সায় দিলো পোয়ারো, সাধারণ চুরি নয়? ক্রেমাটোম্যানিয়াল? মানে চুরি করার জন্য উদ্দাম সেরকম কিছু?
না, আমি তা মনে করি না, এ বিষয়ে আমি লেখাপড়া করেছি, মিস্ লেমন যথেষ্ট সচেতন, এনসাইক্লোপেডিয়া আর মেডিক্যাল জার্নাল আমার বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়নি, কিংবা বলতে পারো আমার মনে বিশ্বাস জন্মাতে পারেনি।
প্রায় মিনিট খানেকের উপর নীরবে কি যেন ভাবলো পোয়ারো, বহুভাষিক হোস্টেলকে কেন্দ্র করে মিস্ লেমনের বোনের এই ঝামেলায় সেকি জড়িয়ে পড়বে? কিন্তু মিস্ লেমনের ভুল চিঠি টাইপ করাটা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং অসুবিধাজনক। এই ঝামেলায় তাকে যদি জড়িয়ে পড়তে হয়, নিজের মনে বললো সে, সেটা একটা কারণ হতে পারে।
সৌজন্য প্রকাশের জন্য পোয়ারো তার মাথা নত করে বললো, আচ্ছা মিস লেমন বিকেলে চায়ের বৈঠকে তোমার বোনকে আমন্ত্রণ জানালে কি রকম হয়? হয়তো আমি তাকে একটুআধটু সাহায্য করতে পারি।
সে ত তোমার অসীম দয়া মঁসিয়ে পোয়ারো। সত্যি তোমার অসীম দয়া। বিকেলে সব সময়েই আমার বোনের অখণ্ড অবসর।
তাহলে আগামীকালই হোক, তা তুমি এর ব্যবস্থা করতে পারবে?
মাথা নেড়ে সায় দিলো মিস লেমন, আর সেই সময়ে বিশ্বস্ত জর্জকে খাবার ও দামি সুগন্ধি চায়ের ব্যবস্থা করতে বলা হলো।
.
০২.
মিস লেমনের বোন মিসেস হার্বার্ডের সঙ্গে তার বোন-এর অবশ্যই মিল আছে। গায়ের রং হলুদ, গোলগাল মুখ, পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল, তবে বোনের মতো অতো চটপটে নয়। কিন্তু বোনের মতো তার চোখের চাহনিও তীক্ষ্ণ।
মঁসিয়ে পোয়ারো আপনার মতো অমন ব্যস্ত মানুষ আমার জন্য কষ্ট করছেন, এ আপনার বদান্যতারই পরিচয়, বললো সে। আর এমন চমৎকার উৎকৃষ্ট চা ঠিক আপনার স্বভাবের মতোই সুন্দর। জানেন, ফেলিসিটির বর্ণনা মতো মনে মনে আমি আপনার যে ছবি এঁকেছিলাম, আপনি ঠিক সেইরকম।
ফেলিসিটি, সেটা যে মিস্ লেমনের খ্রিস্টান নাম, সেটা মনে পড়তেই পোয়ারোর অবাক হওয়া ভাবটা তার মুখ থেকে মিলিয়ে গেলো। পোয়ারো তাকে বলে তার আশা, মিস্ লেমনের থেকেও তার দক্ষতা যেন কোনো অংশে কম না হয়।
নিশ্চয়ই, অন্যমনস্ক ভাবে মিসেস হার্বার্ড বলে উঠলো, মানুষজনের ব্যাপারে ফেলিসিটি কখনো তেমন যত্ন নেয়নি, কিন্তু আমি নিয়ে থাকি, আর সেই কারণে আমি চিন্তিত।
তা তোমার চিন্তার কারণটা ঠিক কি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলতে পারবে?
হ্যাঁ আমি পারি; চুরির কেস, টাকা গহনা হলেও তবু বলা যেতো নির্ভীক চোর সে। কিন্তু এ ব্যাপারে বিপরীত তবে ক্রেমাটোম্যানিয়া কিংবা অসৎ কাজ বলা যেতে পারে। উধাও হওয়া জিনিসগুলো তালিকা পরে শোনাচ্ছি। সে তার হাতব্যাগ থেকে ছোট্ট নোটবই বার করল।
সান্ধ্যজুতো (নতুন একপাটি)
ব্রেসলেট (কস্টিউম জুয়েলারি)
হীরের আংটি (সুপের প্লেটে পাওয়া গেছে)। পাউডার, লিপস্টিক, স্টেথোস্কোপ, কানের দুল, সিগারেট, লাইটার, পুরানো ফ্লানেলের ট্রাউজার, ইলেকট্রিক লাইট বাল্ব, চকোলেট বাক্স, স্লিকস্কাফ (টুকরো টুকরো করা অবস্থায় পাওয়া গেছে) ঝোলাব্যাগ (টুকরো টুকরো করা) বোরিক পাউডার, বাথ সল্ট, রান্নার বই।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো এরকুল পোয়ারো, উল্লেখযোগ্য বটে, বললো সে, আর একেবারে মনোরম, মিসেস হার্বার্ডের দিকে তাকিয়ে বললো সে, আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
কিন্তু কেন মঁসিয়ে পোয়ারো?
এমন একটা অদ্বিতীয় আর চমৎকার সমস্যা উপস্থাপন করার জন্য অভিন্দন জানাচ্ছি।
মঁসিয়ে পোয়ারো মনে হচ্ছে সমস্যাটা আপনি বুঝতে পেরেছেন!
কিন্তু না, এখনো পর্যন্ত আমি কিছুই বুঝিনি, এ প্রসঙ্গে খ্রিস্টমাসের সময় আমার কয়েকজন তরুণ বন্ধুর এক ধরনের খেলার কথা মনে করিয়ে দেয় আমাকে, তিনজন মহিলা লেডি, প্রতিটি মহিলার সুযোগ এলে তারা একটা প্রবাদ উচ্চারণ করতো। আমি প্যারিসে গিয়েছিলাম সেখানে আমি একটা জিনিস ক্রয় করি। জিনিসের নাম যে যার প্রয়োজন মতো বসিয়ে দেয় তাদের লেখার মধ্যে। পরবর্তী ব্যক্তি একইভাবে সেই প্রবাদের পুনরাবৃত্তি করে এবং আর একটা জিনিসের নাম বসিয়ে দেয়। এই খেলার উদ্দেশ্য হলো, তাদের বর্ণিত জিনিসগুলো ঠিক ঠিক মনে রাখা, এ এক ধরনের অস্বাভাবিক ও বিস্ময়কর ধরনের খেলা বলে আমি মনে করি। একখণ্ড সাবান, একটা সাদা হাতি, একটা টেবিল আর একটা রাশিয়ান পাতিহাঁস, এমন জিনিসগুলোই কেবল মনে করতে পারি। অবশ্যই মনে রাখার অসুবিধার কারণ হলো একটা জিনিসের সঙ্গে অপর জিনিসের কোনো যোগ নেই-বলা যেতে পারে পরিণতির অভাব, যেমন এইমাত্র যে তালিকাটা আমাকে দেখালেন, বারোটা জিনিস সঠিক ভাবে সাজানো অসম্ভব ব্যাপার, ব্যর্থ হলে একটা কাগজের শিঙা প্রতিযোগীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সে নারী কিংবা পুরুষই হোক তাকে পরবর্তী সময়ে আবৃত্তি চালিয়ে যেতে এই শর্তে আমি একজন শিঙাওয়ালা মহিলা প্যারিসে গিয়েছিলাম ইত্যাদি, তিনটি শিঙা সংগৃহীত হলে তার অবসর নেওয়াটা বাধ্যতামূলক, এক্ষেত্রে শেষ জন বিজয়ী হবে।