মিঃ চন্দ্রলাল! তীক্ষ্ণ স্বরে প্রতিবাদ করল মিসেস হার্বার্ড। এ ধরনের কথা তুমি বলতে পার না। কেউ জানে না, এ কাজ কে করেছে। আর কেনই বা করা হয়েছে।
কিন্তু মিসেস হার্বার্ড, আমি ভেবেছিলাম, সিলিয়া নিজে এসে আপনার কাছে সব স্বীকার করেছে, বললো জিন টমনিকসন। এটা তার চমৎকার মনোভাবের পরিচয়। তার প্রতি আমাদের সবার দয়া হওয়া উচিত।
জিন মনে হচ্ছে তুমি যেন জেহাদ ঘোষণা করছো। রাগত ভাবে ভ্যালেরি জনহাউস বললো।
আমার মনে হয়, কথাটা নির্দয়ের মতো হয়ে গেল।
এমন একটা চরম বিদ্রোহের শর্ত! কঁপা গলায় বললো নিজেল! এতো সব বলার কারণ আমি বুঝতে পারছি না। অক্সফোর্ড গ্রুপ এটা ব্যবহার করে আর
ওহো, ঈশ্বরের দোহাই, আমরা অক্সফোর্ড গ্রুপ কি এখন প্রাতঃরাশ সারতে পারি?
মা, এসব কি শুনছি? আপনি কি বলেন, সত্যি কি সিলিয়া এসব জিনিষ চুরি করতে পারে? এজন্যই কি সে প্রাতঃরাশে যোগ দেয়নি?
মাঝখান থেকে মিঃ অ্যাকিমবো বলে উঠলো, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে কেউ তাকে কিছু জানাল না। সবাই নিজেদের কথায় চিন্তিত।
সত্যি কথা বলতে কি জানো, আমি একেবারেই অবাক হইনি, ধীরে ধীরে বললো সেলী। সব সময়ে আমার এরকমই একটা ধারণা ছিল…
তার মানে তুমি বলতে চাইছ যে, আমার নোটে সিলিয়াই কালি ছিটিয়ে দিয়েছিল? অবিশ্বাস ভরে তার দিকে তাকাল এলিজাবেথ জনস্টন।
না, সিলিয়া কালি ছেটায়নি, বললেন মিসেস হার্বার্ড। আর আমার ইচ্ছে তোমরা এ আলোচনা বন্ধ করো। পরে আমি তোমাদের সব কিছু বলব, কিন্তু…।
কিন্তু গতকাল জিন আপনার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে সব শুনেছে। ভ্যালেরি বললো।
আসলে আমি ঠিক শুনবো বলে শুনিনি, ঘটনাচক্রে আমি সেখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন।
এখন এসো বেশ, খোলাখুলি ভাবেই তাহলে বলি, নিজেল বললো, আমি আমার সবুজ কালির বোতল থেকে কালি ছিটিয়েছি।
না না ও কালি ছিটায়নি। ও কেবল ভান করেছে, ওঃ নিজেল, তুমি কি করে এত বোকা হলে?
আমি মহৎ হয়ে তোমাকে আড়াল করতে চাইছি প্যাট গতকাল সকালে কে আমার কালি ধার নিয়েছিল? তুমিই নিয়েছিলে?
প্লিজ, তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না, বললো অ্যাকিমবো।
তুমি বুঝতে চাও না, সেলী তাকে কটাক্ষ করল। আমি তোমার অবস্থায় পড়লে নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। চোরের মায়ের বড় গলা করে চিৎকার করতাম না।
উঠে দাঁড়াল চন্দ্রলাল। তুমি জিজ্ঞাসা করেছ, মাও কি? তুমি আরো জিজ্ঞাসা করেছ সুয়েজ চ্যানেলের ব্যাপারে ইজিপ্ট কেন ক্রুদ্ধ।
ওহো ওসব বাজে কথা ছাড়, দারুণ উত্তেজিত হয়ে উঠল নিজেল।
প্রথম অক্সফোর্ড গ্রুপ, আর এখন রাজনীতির আলোচনা চলছে। তাও প্রাতঃরাশের সময়। আমি চললাম।
বাইরে ঠান্ডা হাওয়া বইছে, তোমার কোটটা সঙ্গে নিও। তার দিকে প্যাট্রিসিয়া ছুটে গেল।
অনেকক্ষণ কিছু বলার চেষ্টা করছিল কলিন ম্যাকনার। এবার সে রেগে বলে উঠলো–তোমরা সবাই একটু কথা কম বল, আমার কথা শোনো। মনঃস্তত্বের সঙ্গে আমাদের কি কারোর পরিচয় নেই? আমি বলছি এই মেয়েটাকে দোষ দেওয়া যায় না। অত্যন্ত মানসিক অশান্তিতে ভুগছে সে। আন্তরিক সহানুভূতি, যত্নের সঙ্গে চিকিৎসার প্রয়োজন তার। না হলে তার জীবনে অস্থিরতা থেকেই যাবে। আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি–তার এখনি সর্বতোভাবে যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
কিন্তু হাজার হোক, স্পষ্ট ভাষায় জিন বলে, তার প্রতি সদয় হওয়ার পক্ষে আমিও আছি–এ ধরনের ঘটনার জন্য আমাদের অবশ্যই ক্ষমা করে দিতে হবে! মানে চুরির জন্য আর কি!
চুরি? বিরক্ত হল কলিন, ওঃ কতবার তোমাদের বলব, এসব আদৌ চুরি নয়। তুমি আমাকে মানে তোমরা সবাই আমাকে অসুস্থ করে তুলছ। কারো জিনিষ সে চুরি করেনি।
ওহো, এসো জিন। লেন বেটসন বললো, ওসব বাজে কথায় আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। তোমারও।
তারা একসঙ্গে বেরিয়ে গেল। সিলিয়াকে বলো সে যেন এসব ভুলে যায়। বেটসন বলল যাওয়ার সময়।
আনুষ্ঠানিক ভাবে আমি প্রতিবাদ করতে চাই, কুঁসে উঠল মিঃ চন্দ্রলাল। আমার চোখের জন্য বোরিক পাউডারের খুব প্রয়োজন। সেটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে, নেই।
তুমি খুব দেরি করে ফেলেছো মিঃ চন্দ্রলাল, মিসে হার্বার্ড বললো।
জেনেভিভ ফরাসী ভাষায় কি বললো বোঝা গেল না।
জেনেভিভ, তোমাকে অবশ্যই ইংরেজিতে কথা বলতে হবে–তুমি যখনি উত্তেজিত হবে, ইংরেজিতে তোমার উত্তেজনা প্রকাশ করতে না পারলে কখনো ইংরেজি শিখতে পারবে না। এই সপ্তাহে রোববার তুমি নৈশভোজ খেয়েছিল আমার সঙ্গে। কিন্তু আজও তুমি দামটা মিটিয়ে দাওনি।
আহ! আমার পার্সটা সঙ্গে নেই। আজ রাতে মিটিয়ে দেবো।
প্লিজ, অ্যাকিমবো বলে উঠলো, আমি বুঝতে পারছি না।
আমার সঙ্গে এসো অ্যাকিমবো, সেলী বলল, ইনস্টিটিউট যাওয়ার পথে আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে দেব।
ওহে প্রিয়, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো মিসেস হার্বার্ড। কেন যে এ চাকরিটা আমি নিতে গেলাম।
একমাত্র ভ্যালেরিই এখন ডাইনিংরুমে হাজির ছিল। বন্ধুসুলভ ভঙ্গিমায় দাঁত বার করে হাসলো সে। বললো, চিন্তা করবেন না মা, ভালো জিনিষ সব সময়েই বেরিয়ে আসে। এখন সবাই লম্ফ ঝম্ফ করার দিকে।
আমাকে বলতে হচ্ছে, আমি খুব অবাক।
হা। তুমি নও কি?
অন্যমনস্ক ভাবে ভ্যালেরি বললো, সত্যি আমার ভাবা উচিত ছিল।
তুমি কি প্রথম থেকেই ভেবেছিলে?