তাহলে দেখা যাচ্ছে সমস্ত ব্যাপারটাই পাখির বাসা বাঁধতে চাওয়ার মতো।
সত্যি মঁসিয়ে পোয়ারো, এ ব্যাপারে অযথা সময় নষ্ট করার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যাহোক যার শেষ ভালো তার সব ভালো।
না, না, পোয়ারো মাথা নাড়লো। আমার তো মনে হয় না, এ সব ঘটনার শেষ প্রান্তে পৌঁছেছি। যাহোক হয়তো আমরা এই জটিল কেসের রাস্তা পরিষ্কার করেছি, কিন্তু এখনো কিছু ব্যাপার ঠিক পরিষ্কার হয়নি। আমার মনে হয় এখনো কিছু সংকট রয়ে গেছে–সত্যি অত্যন্ত সংকটজনক কিছু।
মিসেস হার্বার্ডের ফর্সা মুখখানি আবার কালো হয়ে গেল। ওঃ মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি সত্যিই তাই মনে করেন?
এটা আমার ধারণা, ম্যাডাম আমার আশঙ্কা, প্যাট্রিসিয়া লেনের সঙ্গে একবার কথা বলার সুযোগ পাব কিনা। আমি সেই চুরি যাওয়া হীরের আংটিটা দেখতে চাই।
কেন পাবেন না সঁসিয়ে পোয়ারো। আমি এখুনি নিচে গিয়ে ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমিও লিও বেটসনের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
একটু পরে প্যাট্রিসিয়া লেন ঘরে ঢুকলেন। মুখে হাজারো প্রশ্ন।
আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত মিস্ লেন।
ও কিছু নয়। মিসেস হার্বার্ড বললেন আপনি আমার হীরের আংটিটা দেখতে চান। আংটিটা আঙুল থেকে খুলে পোয়ারোর হাতে দিল মিস্ লেন।
সত্যি খুব বড় মাপের হীরের আংটি। তবে আমার ধারণা সেকেলে।
মিস লেন বললেন–আমার মায়ের বাগদানের আংটি।
আপনার মা কি এখনো জীবিত?
না, বাবা ও মা দুজনেই মৃত।
বড় দুঃখের কথা।
হ্যাঁ, আমার দুঃখ আমি তাদের বড় একটা ঘনিষ্ঠভাবে পাইনি। তারপর আমি প্রতুবিদ্যায় পোস্টগ্র্যাজুয়েট হচ্ছি বলে মা খুব নিরাশ হন।
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে পোয়ারো ভাবল : তার অনুমান মেয়েটির বয়স সবে তিরিশ পেরিয়েছে। ঠোঁটে সামান্য লিপস্টিক ছাড়া অন্য কোনো প্রসাধন নেই। চশমার আড়ালের ওর গভীর নীল চোখে গাম্ভীর্যের ছাপ। মেয়েটির আচরণে কোনো দম্ভ নেই, কোনো অহঙ্কার নেই, পোষাকে ফ্যাশন বলতে কিছু নেই, সাদামাটা পোশাক। তবে বুদ্ধিমতী ও শিক্ষিত মেয়ে ও, নিজের মনে পোয়ারো বললো, কিন্তু খুব শিগগীর বুড়িয়ে যাবে ও। সেই মুহূর্তে মেয়েটির কথা ভাবতে গিয়ে তার কাউন্টেস ভেরা রসকোফের কথা মনে পড়ে গেলো তার। কিরকম চমৎকার দেখতে ছিল সে, অথচ আজকের দিনে প্যাট্রিসিয়ার মতো মেয়েরা
তবে এই কারণে আমিও যেন বুড়িয়ে যাচ্ছি। আপন মনে বললো পোয়ারো, এমন কি এই চমৎকার মেয়েটিই হয়তো কোনো পুরুষের কাছে খেয়াল হিসাবে আবির্ভূত হবে। তবে তাতে সন্দেহ আছে।
প্যাট্রিসিয়া তখন বলছিল : মিস জনস্টনের যা ঘটেছে তার জন্য আমি সত্যিই মর্মাহত সবুজ কালি ব্যবহার করার ফলে হয়তো মনে হতে পারে যে, নিজেল ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটা বিদ্বেষপরায়ণ কাজ করেছে, কিন্তু মঁসিয়ে পোয়ারো আমি আপনাকে আশ্বস্ত করে বলতে পারি, এ কাজ সে কিছুতেই করতে পারে না।
আঃ মেয়েটির দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকাল পোরে।
নিজেলকে সহজে বোঝা যায় না। মেয়েটি আন্তরিকভাবে বলল-দেখুন ওর ছেলেবেলায় পারিবারিক জীবনটা খুবই কষ্টের ছিল।
আর এক প্রেম কাহিনি। নিজের মনে বলে ফেললো।
কি বললেন?
না কিছু না। হ্যাঁ আপনি কি বলছিলেন যেন
নিজেলের ব্যাপারে। তাকে বোঝা কষ্টকর। ভালো বা মন্দ যা হোক সবসময়েই সবকিছুর বিরোধিতা করার প্রবণতা আছে তার মধ্যে। তবে সে সত্যি চালাক ও মেধাবী। তবে স্বীকার করতে হবে মাঝে মাঝে তার ব্যবহার দুর্ভাগ্যজনক হয়ে ওঠে। তখন সে নিজের প্রতিরোধের কথা ভুলে যায়, ভুলে যায় কোনো কিছুর সঠিক ব্যাখ্যা করতে। সবাই যখন সবুজ কালির প্রতিবাদ করতে ব্যস্ত, তখন সে ঠিকভাবে প্রতিবাদ করতে পারেনি। তার বক্তব্য ছিল একটাই–তারা যদি তাই মনে করতে চায়, তাদের তাই ভাবতে দিন। তার এই মনোভাব মূর্খতারই পরিচয়।
এতে অবশ্যই ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলো; আপনি তো ওকে অনেক বছর ধরে জানেন।
না, মাত্র একবছরের আলাপ আমাদের। গত বছর বেড়াতে যাওয়ার সময় ওর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। সেখানে ওর প্রথমে ফ্লু হয়। তারপর নিউমোনিয়া। তখন আমি ওর শুশ্রূষা করি। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে একদমই যত্ন নেয় না। শিশুর মতো ওর যত্ন নেওয়া উচিত। সত্যি ওকে দেখাশুনা করার জন্য কাউকে ওর প্রয়োজন।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো পোয়ারো। হঠাৎ তার মনে হল প্রেমের ক্ষেত্রে খুবই ক্লান্ত সে–প্রথমে সিলিয়া, ওর চোখে ভয়ঙ্কর প্রেমের আকুতি। আর এখন প্যাট্রিসিয়া ম্যাডোনার মতো আন্তরিক ভাবে তাকিয়ে আছে। স্বীকার করতেই হবে একজোড়া যুবক-যুবতী পরস্পরের কাছে এলে তাদের মধ্যে অবশ্যই ভালোবাসার জন্ম হতে পারে। তাদের করুণার চোখে দেখলো পোয়ারো। তারপর উঠে দাঁড়াল সে।
মাদমোয়াজেল, যদি অনুমতি করেন তো এই আংটিটা আপাতত আমার কাছে রেখে দিচ্ছি। আগামীকাল অবশ্যই ফেরত পাঠাব।
নিশ্চয়ই, একটু অবাক হয়ে পাট্রিসিয়া বললো–আপনার ইচ্ছে হলে নিশ্চয়ই নেবেন।
আপনি অত্যন্ত দয়ালু। তাই বলছি মাদমোয়াজেল এইরকম নরম মন নিয়ে একটু সাবধানে থাকবেন।
সাবধানে? কিরকম সাবধানে বলুন তো?
আমার ইচ্ছা আমি জানি, বললো এরকুল পোয়ারো। তখন সে চিন্তিত।
২. এলিজাবেথের নোটের কাগজে
০৬.
এলিজাবেথের নোটের কাগজে কালি ছিটিয়ে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের কথা শুনে মিঃ চন্দ্রলাল উত্তেজিত হয়ে উঠলো। অত্যাচার নিপীড়ন। ইচ্ছাকৃতভাবে নেটিভদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। কালো চামড়ার মানুষের প্রতি এক অন্যায় নিপীড়ন। এর থেকে বড় উদাহরণ আজ হতে পারে না।