কলিনের দিকে তাকাল সিলিয়া। তার চোখে আগুন ঝরে পড়ছিলো।
আমি জানতাম না, তুমি এখানে, এক নিঃশ্বাসে সে বললো, আমি এসেছিলাম–আমি এসেছিলাম এখানে–
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে হার্বার্ডের কাছে ছুটে গেল।
দয়া করে পুলিশে খবর দেবেন না। আমি, হ্যাঁ আমিই জিনিষগুলো নিয়েছি। জানি না কেন। চিন্তাও করতে পারি না কেন নিয়েছি। এমন কি আমি চাইওনি। সেগুলো, আপনা থেকেই আমার কাছে চলে এসেছে। তারপর কলিনের দিকে ফিরে মেয়েটি বললো, তাহলে তুমি এখন জেনে গেছ, আমি কি ধরনের মেয়ে আমার ধারণা, তুমি আমার সঙ্গে আর কখনো কথা বলবে না। আমি জানি, আমি ভয়ঙ্কর
ওহো! তুমি নিজে যা ভাবছ তা একেবারেই নয়। বন্ধুভাবে কলিন বললো, তোমার অসুস্থতার জন্য তুমি একাজ করেছ, ভালো করে দেখলে কি জিনিষগুলো! তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস কর তাহলে আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে আমি সুস্থ করে তুলব।
ওঃ কলিন, সত্যি বলছ তুমি?
তার দিকে তাকাল সিলিয়া, তার প্রতি শ্রদ্ধা ও আবেগ গোপন করতে পারলো না সিলিয়া।
তোমার ব্যাপারে আমি বেশ চিন্তিত ছিলাম। গুরুজনদের মতো স্নেহভরে সিলিয়ার হাত নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়ে কলিন উঠে দাঁড়িয়ে মিসেস হার্বার্ডের দিকে ফিরে বললো, আশা করি এখন পুলিশে খবর দেবার মতো বোকামো করার দরকার নেই। তেমন মূল্যবান কোনো জিনিষ চুরি যায়নি। তাছাড়া যে জিনিষগুলো সিলিয়া নিয়েছে ও ফেরত দেবে।
ব্রেসলেট ও পাউডার আমি ফেরত দিতে পারব না, উদ্বিগ্ন হয়ে বললো সিলিয়া। ওগুলো আমি ফেলে দিয়েছি। তবে নতুন কিনে দেব।
আর স্টেথিস্কোপটা? জিজ্ঞাসা করলো পোয়ারো, সেটা আপনি কোথায় রেখেছেন?
সিলিয়ার চোখ ঝলসে উঠল।
আমি কখনো কোনো স্টেথিস্কোপ নেইনি। পুরানো একটা স্টেথিস্কোপ আমার কি কাজে লাগবে? তার দৃষ্টি গম্ভীর হল। আর এলিজাবেথের নোটের ওপর আমি কালি ছিটাইনি। এরকম কাজ আমি করি না।
মাদমোয়াজেল, মিস জনহাউসের স্কার্ফ টুকরো টুকরো করার ব্যাপারটা আপনি অস্বীকার করতে পারেন না।
আমি মনে করি ওটা একটা অন্য ব্যাপার। অস্বস্তি ও কতকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে বললো, আমার মনে হয় ভ্যালেরি কিছু মনে করবে না।
আর পিঠে ঝোলানো ব্যাগটা।
ওহো, ও কাজ আমি করিনি। ওটা কোনো বদমেজাজী লোকের কাজ।
মিস হার্বার্ডের নোটবুক থেকে টাইপ করা হারানো জিনিসের তালিকাটা বার করে সিলিয়ার উদ্দেশ্যে পোয়ারো বললো, এখন সত্যি করে বলুন তো, এসব ঘটনাগুলোর মধ্যে কোনো কোনো ঘটনার সঙ্গে আপনি জড়িত, আর কোনোটার সঙ্গেই বা না।
তালিকাটা দেখামাত্র সিলিয়ার উত্তর পাওয়া গেল।
ঝোলা ব্যাগ, ইলেকট্রিক বাল্ব কিংবা বোরিক পাউডার কিংবা বাথ সল্ট, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। তবে আংটিটা ভুল করে নিয়েছিলাম, সেটা বোঝা মাত্র ফিরিয়ে দিয়েছি। আর একটাই কারণ, আমি অসৎ হতে চাইনি। সেটা কেবল
কেবল কি সেটা?
সিলিয়ার চোখে অনিশ্চিত অস্থিরতা থিক থিক করছিল, জানি না, আমি সত্যিই জানি না, সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
কলিন কোনো যুক্তিতর্ক মানতে চায় না, এমনি ভাব দেখিয়ে বলল, আপনি যদি ওকে প্রশ্নবাণে আর জর্জরিত না করেন তবে আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ হব। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ভবিষ্যতে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না, এখন থেকে আমি ওর সব কাজের জন্য দায়ী থাকব।
ওঃ কলিন, তুমি আমার কত যে ভালো।
সিলিয়া এখন তোমার সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবে? যেমন তোমার আগের পারিবারিক জীবনের কথা–তোমার বাবা মা একসাথে ভালোভাবে মিলেমিশে থেকে ছিলেন তো?
ওহো না। বাড়িতে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ
ওদের কথার মাঝে বাধা দিলেন মিসেস হার্বার্ড।
ওসব কথা থাক, তুমি এসে তোমার দোষ স্বীকার করার জন্য আমি খুবই খুশী। এত সব দুশ্চিন্তার কারণ, তোমার লজ্জা হওয়া উচিত। তবে একথাও বলবো, তুমি যে ইচ্ছা করে এলিজাবেথের নোটের ওপর কালি ছেটাওনি, তোমার কথা আমি মেনে নিচ্ছি। এখন তুমি ও কলিন যেতে পারো।
তারা চলে যাওয়ার পর মিসেস হার্বার্ড একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন।
ভালো কথা, পোয়ারোর উদ্দেশে বললো সে, এ ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন?
পোয়ারোর চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল, আমার মনে হয় একটা প্রেমের দৃশ্যে আমরা সাহায্য করছি-একেবারে আধুনিক স্টাইলে প্রেম যাকে বলে।
আমাদের সময়কার প্রেমের ধারা এখন কতই না বদলে গেছে? মিসেস হার্বার্ড দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে আবার বললেন, সিলিয়ার যখন মাত্র চার বছর বয়স তখন ওর বাবা মারা যান। ওর ছেলেবেলা ভালোই কাটে তবে ওর নির্বোধ মা
আহ, মেয়েটি কিন্তু খুবই বুদ্ধিমতী। নিজের থেকে ও কিছু বলবে না। যতটুকু সে শুনতে চায় ঠিক ততটুকুই ও বলবে। মেয়েটি তাকে খুবই ভালোবাসে।
এসব যুক্তি আপনি বিশ্বাস করেন মঁসিয়ে পোয়ারো?
সিলিয়ার মনে যে সিনড্রেলার জটিলতা ছিল, এ আমি বিশ্বাস করি না। আর জিনিষগুলোর চুরির সময় ও বলেছে যে ও কেন একাজ করেছে ও জানত না, এ যুক্তিও আমি মানতে পারছি না। আমার মনে হয় অখ্যাত জিনিষগুলি চুরির ঝুঁকি ও নিয়ে থাকবে ওর প্রেমিক কলিনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য–এ ব্যাপারে ও সফল। ও যদি সাধারণ লাজুক মেয়ের মতো হত তাহলে কলিন ওর দিকে তাকাই না। আমার মতে, পোয়ারো বলল, মেয়েটি সব মনের মানুষকে পাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল।