মিঃ অ্যাকিমবো তার কোকড়ানো চুলের মাথাটা ঘনঘন দুলিয়ে বলে উঠলো, হ্যাঁ সেটাই হবে সঠিক পন্থা। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পন্থা হলো সবার উপস্থিতিতে এ ব্যাপারে ভোট নেওয়া।
অধৈৰ্য্য হয়ে সেলী ফিঞ্চ বলে উঠল, ওহো, তুমি বড় হতাশ করে দাও। অ্যাকিমবোকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বললো সে। আজকের এই সমাবেশ একটা পার্টির মতোই, আমরা সব বন্ধুরা একত্রে মিলিত হয়েছি। আর কোনো হৈ-চৈ না করে মঁসিয়ে পোয়ারো কি উপদেশ দেন শোনা যাক।
সেলী আমি তোমার সঙ্গে আর একমত হতে পারছি না। প্রতিবাদ করে নিজেল।
মাথা নত করলো পোয়ারো।
খুব ভালো কথা বললো সে, এই প্রশ্নটা আপনারা সবাই আমাকে করেছেন। উত্তরে আমার উপদেশ খুবই সহজ সরল, মিসেস হার্বার্ড কিংবা মিসেস নিকোলেটিসের উচিত এখনি পুলিশে খবর দেওয়া, আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
.
০৫.
নিঃসন্দেহে পোয়ারোর মন্তব্য অভাবনীয়। প্রতিবাদ কিংবা পাল্টা মন্তব্য করা যায় না। কিন্তু একটা অস্বস্তিকর নীরবতার মধ্যে ডুবে রইলো সান্ধ্য বৈঠক এবং বৈঠকের সদস্যরা। সেই অস্বস্তিকর নীরবতার মধ্যে থেকে পোয়ারোকে উদ্ধার করলো মিসেস হার্বার্ড তার বসবার ঘরে নিয়ে গিয়ে। তোমাদের সবাইকে শুভরাত্রি–
তারপর নিজের বসবার ঘরে পোয়ারোর মুখোমুখি বসে মিসেস হার্বার্ড। একটু ইতস্তত করে বললো, জোর দিয়েই আমি বলবো, আপনিই ঠিক মঁসিয়ে পোয়ারো। সম্ভবত পুলিশে আমাদের খবর দেওয়াই উচিত, বিশেষ করে অমন বিশ্রী কালি ছিটানোর ঘটনার পর। কিন্তু, সেইসাথে আমি বলবো, অমন স্পষ্ট করে সবার সামনে আপনার বলা উচিত হয়নি।
আহ! পোয়ারো তার নিজস্ব ব্র্যান্ডের একটা সিগারেটের ধোঁয়া উদগীরণ করে বললো, তুমি কি মনে কর ব্যাপারটা আমার গোপন করা উচিত ছিলো–
আমার মনে হয়, চুপচাপ থাকলে ভালো ছিলো, তারপর একজন পুলিশ অফিসারকে আহ্বান করে গোপনে ঘটনাটা তার কাছে ব্যাখ্যা করলে ভালো হতো। মানে আমি বলতে চাইছি; যেই এই নোংরা কাজ করে থাকুক না কেন, এখন তাকে সতর্ক করে ছেড়ে দিলেই চলতো।
সম্ভবত হা।
তারপর মিসেস নিকোলেটিস রয়েছেন, জানি না পুলিশের কথা শুনলে তার মনোভাব কেমন হবে। তার মনে কি আছে কেউ জানে না।
সেটা জানা খুবই কৌতূহলের ব্যাপার।
তাই স্বভাবতঃই আমরা পুলিশকে এখানে আসতে দিতে পারি না। আগে তাঁকে রাজি করাতে হবে, তারপরও কে আবার এলো?
দ্রুত টোকা পড়তে থাকে দরজায়। মিসেস হার্বার্ড বলতে যাচ্ছিল ভেতরে এসে, কিন্তু তার বলবার আগেই দরজা খুলে গেলো এবং কলিন ম্যাকনার ঘরে এসে ঢুকলো, উদ্ভ্রান্ত চেহারা, ঝাপসা চোখ। আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন, কলিন বলে। কিন্তু না এসেও পারলাম না। আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন, মঁসিয়ে পোয়ারোর সঙ্গে একটা কথা বলতে চাই।
আমার সঙ্গে? তার দিকে ফিরে তাকাল পোয়ারো অবাক চোখে।
হ্যাঁ, গম্ভীর স্বরে বললো কলিন, আপনার সঙ্গেই।
কাঁপা কাঁপা হাতে চেয়ার টেনে পোয়ারোর সামনে বসলো। আজ রাতে আপনি আমাদের সঙ্গে কথা বলে যথেষ্ট আনন্দ দিয়েছেন। আমি স্বীকার করছি আপনার অভিজ্ঞতা প্রচুর আর বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা সব, কিন্তু আপনার কাজের পদ্ধতি আর ধারণা দুটো সেকেলে ধরনের। আমার এই কথা বলার ধৃষ্টতার জন্য ক্ষমা করবেন।
কলিন, সত্যিই তুমি ভীষণ অভদ্র, মুখ কালো করে বলে উঠলো মিসেস হার্বার্ড।
আমি ওঁকে অপমান করার জন্য একথা বলিনি, তবে ব্যাপারটা পরিষ্কার করার জন্যই বলেছি। মঁসিয়ে পোয়ারো অপরাধ এবং শাস্তি–যতদূর সম্ভব আপনার দিগন্ত বিস্তৃত, যার কিনারা পাওয়া যায় না।
ওগুলো আমার কাছে স্বাভাবিক পরিণতি বলেই মনে হয়, বললো পোয়ারো।
আইনটাকে আপনি সংকীর্ণ ভাবে ব্যাখ্যা করছেন। তাছাড়া আমার ধারাগুলো অত্যন্ত পুরানো, সেকেলে, অথচ আজকাল আইন অনেক বেশি উদার–অনেক নতুন বিবেচনা প্রস্তুত অপরাধতত্ত্বের নতুন নতুন ব্যাখ্যা আছে। অপরাধীকে শাস্তি দিতে গেলে নতুন নতুন অনেক আইন ঘাঁটতে হয়। এই হলো আমার বলার কারণ এবং সেটা আমি জরুরী বলে মনে করি মঁসিয়ে পোয়ারো।
কিন্তু আপনার ঐ নতুন ফ্যাসানের আইনের কচকচি শুনতে আমি চাই না। আমি আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না।
তাহলে এই বাড়িতে যা যা ঘটে যাচ্ছে, তার কারণগুলো আপনাকে অবশ্যই বিচার করে দেখতে হবে। আপনাকে খুঁজে বার করতে হবে–কেন, কেন এসব ঘটছে।
হ্যাঁ, এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে অবশ্যই একমত, আর এটা খুব জরুরীও বটে। কারণ সব ব্যাপারেই একটা না একটা কারণ থাকবেই। আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে ভালোরকম কারণই থাকতে পারে।
প্রস্তাবটা মনমতো হলো না মিসেস হার্বার্ডের। তাই সে চুপ করে থাকতে পারলো না। অধৈৰ্য্য হয়ে বলেই ফেললো, যতো সব রাবিশ।
এই এখানেই আপনি ভুল করছেন : তার দিকে ঈষৎ ঘুরে বসে কলিন বললো, মনস্তাত্ত্বিক পশ্চাৎপটটা আপনাকে বিবেচনা করে দেখতেই হবে।
মনস্তাত্ত্বিক প্রলাপ? ব্যঙ্গ করে বললো মিসেস হার্বার্ড। এ ধরনের আজেবাজে কথা শোনার মতো ধৈৰ্য্য আমার নেই।
কারণ আপনি এসবের কিছুই জানেন না। তিরস্কারের মতো করে বলে কলিন এবার পোয়ারোর দিকে ফিরলো।
জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো আমি কিন্তু এ বিষয়ে খুবই আগ্রহী, আমি এখন সাইকোলজির পোস্টগ্র্যাজুয়েটের ছাত্র। মঁসিয়ে পোয়ারো, আমার এতো সব কথা বলার কারণ হলো, আইন অনুযায়ী অপরাধীকে আপনি সালাম দিতে পারেন না। গণ্ডগোলের আসল উৎস আপনাকে বুঝতে হবে। আজকের তরুণদের বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য এটা খুবই জরুরী। আপনাদের সময় এ ধরনের ধারণা কেউ জানতো না শুধু নয়, আমার একটুও সন্দেহ নেই, সেগুলো মেনে নিতে আপনারা খুব কষ্ট পেতেন।