সিলিয়া অস্টিন। পড়াশোনা করি না। আমি একজন ওষুধ প্রস্তুতকারক। সেন্ট ক্যাথেরিন হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত।
আহ সে তো খুব আকর্ষণীয় কাজ? পোয়ারো এবার অন্যদের প্রসঙ্গ তুললো, আর এঁরা সব? এঁদের সম্পর্কে আপনি আমাকে কিছু বলতে পারেন? আমি জেনেছি, এখানে বহু বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী থাকে কিন্তু দেখেশুনে মনে হচ্ছে তো বেশির ভাগই ইংরেজ। ব্যাপার হলো বেশ কিছু বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী এখন বাড়ির বাইরে। যেমন মিঃ চন্দ্রলাল আর মিঃ গোপালরাম–ওরা ভারতীয় আর মিস রেনজীর ডাচ মহিলা আর একজন হলো মিঃ আহমেদ আলি–ইজিপসিয়ান। ভয়ঙ্কর ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে যে।
আর যারা এখানে আছেন, তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
বেশ তাহলে শুনুন, মিসেস হার্বার্ডের বাঁ-পাশে বসে আছে নিজেল চ্যাপম্যান, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগীয় ইতালীয় ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করছে সে। তারপরে তার ঠিক পাশের মেয়েটি প্যাট্রিসিয়া লেন, গামা কোসে–প্রত্নতত্ত্ববিদ্যায় ডিপ্লোমা নিতে যাচ্ছে। বড়মাপের লাল চুলওয়ালা ছেলেটি লিও বেটসন, মেডিক্যাল ছাত্র। আর ওই কালো চেহারার মেয়েটি ভ্যালেরি জনহাউস-একটন বিউটি পপের সঙ্গে যুক্ত। তার ঠিক পাশের মেয়েটি, কলিন ম্যাকনার–মানসিক রোগের চিকিৎসায় পোস্টগ্র্যাজুয়েটের ছাত্রী।
কলিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তার কণ্ঠস্বরে সামান্য একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো। নিবিষ্ট মনে তাকে লক্ষ্য করলো পোয়ারো এবং দেখলো তার মুখে ফিকে রঙ লেগেছে। নিজের মনে বললো সে, সুতরাং মেয়েটি তার প্রেমে পড়েছে এবং সহজে সেটা সে লুকাতে পারলো না, আর একটা জিনিষ লক্ষ্য করলো সে-তরুণ ম্যাকনার মেয়েটির দিকে একটুও তাকাল না বরং সে তার পাশে উপবিষ্ট লালচুলের মেয়েটির সঙ্গে বেশ হেসে হেসে কথা বলছিল। আর সেই মেয়েটি হলো সেলী ফিঞ্চ। আমেরিকান-এখানে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে এসেছে। তাদের পাশের মেয়েটি জেনেভিভ মারিকত-ইংরেজিতে অধ্যয়ন করছে; তার মতো বেনি হ্যাঁলিত তার পাশেই বসেছিল, সে সুন্দরী মেয়ে জিন টমকিনসন সেন্ট ক্যাথেরিনের সঙ্গে যুক্ত। সে একজন সাইকোথেরাপিস্ট। কালো চামড়ার মানুষ অ্যাকিমবোকে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে এসেছে ভয়ঙ্কর কালো লোক সে। তারপর এলিজাবেথ জনস্টন, জামাইকার মেয়ে আইন পড়ছে, আমার ডানদিকের ওরা দুজন তুর্কী ছাত্র, সপ্তাহখানেক আগে এসেছে এখানে, তারা সামান্যই ইংরেজি জানে।
ধন্যবাদ, আপনারা সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকেন, নাকি আপনাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে।
পোয়াবোর হাল্কা কথার সুরে একটা গাম্ভীর্যের ভাব লুকিয়ে ছিল। উত্তরে সিলিয়া বললো, ওহো আমরা সবাই ঝগড়া করতে ব্যস্ত থাকি। যদিও–
যদিও কি মিস অস্টিন।
বলছি–ঐ যে নিজেল, মিসেস হার্বাডের পাশেই যে বসে আছে দেখছেন, লোককে ক্ষেপাতে ওস্তাদ সে। আর লেন বেটসন একটুকুতেই রেগে যায়। এক এক সময় তার বন্য রাগ দেখার মতন। তবে সত্যিই খুব মিষ্টি স্বভাবের ছেলে সে।
আর কলিন ম্যাকনার–সেকি খুব বিরক্তবোধ করে থাকে?
ওহো না সে কেবল তার ভ্র তুলে থাকে আর তাকে বেশ খুশি খুশি দেখায়।
তাই বুঝি। আর ঐ তরুণীটি ওর সঙ্গে আপনার কখনো ঝগড়া হয়?
ওহো না, আমরা সবাই খুব মিশুকে। এক এক সময়ে জেনেভিভের একটু যা ভাবান্তর ঘটে থাকে, আমার মনে হয় ফরাসীরা একটু স্পর্শকাতর–ওহো মানে আমি–আমি দুঃখিত–এরপর চুপ হলো মেয়েটি।
আর আমি একজন বেলজিয়ান, গদগদ হয়ে বললো পোয়ারো। সিলিয়া সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার আগেই দ্রুত জিজ্ঞেস করলো পোয়ারো, মিস্ অস্টিন একটু আগে আপনি বললেন আপনি অবাক হচ্ছেন–কিসের জন্য?
স্নায়ু দুর্বলতায় মেয়েটি তার রুটি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললো। ওহো, ওটা কিছু নয়, সত্যি কিছু নয়, স্রেফ একটা ঠাট্টা মাত্র। আমি ভেবেছিলাম মিসেস হার্বার্ড–কিন্তু সত্যি সেটা লজ্জার কথা, আমি কিছু বোঝাতে চাইনি।
পোয়ারো তাকে আর চাপ দিলো না। মিসেস হার্বার্ডের দিকে ফিরে তাকাল সে। মিসেস হার্বার্ড এবং নিজেল চ্যাপম্যান তিনজনে মিলে আলোচনায় রত হলো। অচিরেই চ্যাপম্যান একটা বিতর্কে জড়িয়ে পড়লো, তার বক্তব্য হলো অপরাধ একটা শিল্প–এবং সমাজের সব থেকে অযোগ্য হলো পুলিশ, যারা পুলিশের চাকরীতে ঢোকে তারা তাদের গোপন যৌন বিকৃতি চরিতার্থ করার জন্য। পোয়ারো তার পাশে বসা চশমা পরিহিত তরুণ-যুবতীর উদ্বেগ লক্ষ্য করে কৌতুক বোধ করছিল। মেয়েটি বেপরোয়া ভাবে নিজেলের মন্তব্য নস্যাৎ করার চেষ্টা করছিল। যাই হোক, তার দিকে একেবারেই তাকাল না, কিংবা বলা যেতে পারে ভ্রূক্ষেপই করলো না। সদয় চিত্তে কৌতুক বোধ করলো মিসেস হার্বার্ড।
তোমরা সব তরুণেরা আজকাল রাজনীতি আর মনস্তত্ব ছাড়া কিছুই বোঝে না। বললো মিসেস হার্বার্ড। ছেলেবেলায় আমি হাল্কা মেজাজে থাকতে ভালোবাসতাম। নাচতাম, গলা চড়িয়ে গান গাইতাম। এখনো কমনরুমের মেঝেটা বিরাট, নাচের উপযোগী কিন্তু তোমরা কখনো কি নাচ করেছে?
হাসলো সিলিয়া এবং গাঢ় স্বরে বলে উঠলো, নিজেল তুমি কিন্তু নাচতে। একবার আমি তোমার সাথে নাচ করেছিলাম। তবে আমার মনে হয় না তুমি মনে রেখেছে।
তুমি আমার সঙ্গে নেচেছিলে? বিশ্বাস করতে চাইল না নিজেল। কোথায়? কোথায় নেচেছিলে?