সন্দেহজনক মৃত্যু হয়েছে বলে ধরা যেতে পারে–মিসেস ম্যাককে বলল কি যেন ঘটেছিল শুনেছি। তার কথার শেষে যাত্রা কথাটা উচ্চারণ করতে শোনা গেলো।
যাত্রা? –পোয়ারোকে বিস্মিত দেখালো।
একরাতে পালিয়ে গেলো। এলস্পেথ বললো আর ফিরেছে বলে শুনিনি। মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের কথা বলছ? না, না। যাত্রাদলের মেয়েটার কথা বলছি। তার পক্ষে ওষুধের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেওয়ার সুযোগ যথেষ্ট ছিল। শেষ পর্যন্ত অনেক টাকার মালিক হয়েছিল, কিম্বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তারপর আর তার কথা শোনা যায়নি। যাত্রা কথাটা পোয়ারোর মাথায় ঘুরছে। কেউ মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের মৃত্যু সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল?- পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলো।
না, ভদ্রমহিলা হার্টের অসুখে ভুগছিলেন, নিয়মিত চিকিৎসাধীন ছিলেন।
কিন্তু সন্দেহজনক ভাবে যারা মারা গেছে তাদের নামের তালিকার প্রথমেই ওর নাম কেন রেখেছ বন্ধু?– স্পেনসকে পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল।
বুঝিয়ে বললো স্পেনস, ভদ্রমহিলা ছিলেন ধনী। তার মৃত্যু যে অপ্রত্যাশিত তা নয়, তবে হঠাৎ হয়েছে। চিকিৎসা করছিলেন যে ডাক্তার সেই ডাঃ ফার্গুসন খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। আমার ধারণা তিনি ভেবেছিলেন আরো কিছুদিন ভদ্রমহিলা বাঁচবেন। তবে তাকে ডাক্তার যা নিষেধ করতেন তিনি সেইগুলোই করতেন। এসব তার হার্টের পক্ষে ক্ষতিকারক ছিল। ভদ্রমহিলা ছিলেন জাহাজ কোম্পানীর মালিকের বিধ্বা স্ত্রী। প্রচুর টাকা ছিলো।
আচ্ছা এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অনুসন্ধান করার প্রশ্ন ওঠেনি?
না, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল স্বাভাবিক ভাবে।
এলস্পেথ বললো, যাত্রাদলের মেয়েটা ওর মৃত্যুর জন্য দায়ী।
কেন?
কারণ মেয়েটা উইল জাল করেছিলো।
পোয়ারো বললো, আমাকে এই উইল জালের ব্যাপারটা খুলে বলো।
আগে অনেকগুলো উইল করেন। প্রত্যেকটা প্রায় একই ধরনের। তার শেষ ইচ্ছাপত্রে সবকিছু যাত্রাদলের মেয়েটাকে দিয়ে গেছেন, এলস্পেথ বলল, তার সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে। মেয়েটা মধ্য ইউরোপের কোনো দেশ থেকে এসেছিল, এক বছরের কিছু বেশি সময় বৃদ্ধার কাছে ছিল। আইনবিদ্রা সরাসরি উইল জালের অভিযোগ আনলো।
সবাই ধরে নিলো যে যাত্রাদলের মেয়েটাই এই উইল জাল করেছে।
মিসেস লিওয়েলিনের নিজের উকিলরা এই জালিয়াতি ধরেছিল?
হ্যাঁ, ফুলার্টন হ্যারিমান আর লিডবেটার। মেনচেস্টারের একটা নামী ফার্ম। ভদ্রমহিলার আইন সংক্রান্ত কাজ তারাই করত। যাত্রা দলের মেয়েটার বিরুদ্ধে আদালতে যাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই সে গা ঢাকা দিল। সম্ভবত নিজের দেশেই পালিয়ে যায় কিম্বা নিজের পরিচয় পরিবর্তন করে নিজেকে গোপন করে আছে।
কিন্তু প্রত্যেকের ধারণা মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের মৃত্যু স্বাভাবিক।
পোয়ারো জানতে চাইলো, ভদ্রমহিলা কিরকম সময়ে মারা গেছে কোথায়?
নিজের বাড়িতেই মারা গেছেন।
কি একটা কাজে একদিন বাগানে গেলেন। তাকে ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করতে দেখা গেল, জানালেন শরীরটা খুব ক্লান্ত। বাংলোয় ফিরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। আর উঠলেন না। ডাক্তারী মতে সবই স্বাভাবিক। পকেট থেকে একটা নোটবুক বের করল পোয়ারো। একটা পাতার ওপর দিকে লেখা আছে যারা স্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে। তলায় লিখলোএক নম্বর। মিসেস লেওয়েলিন সম্পর্কে আলোচনা হলো। পরের পাতায় স্পেনসর নামগুলো একে একে লিখলো। তারপর জিজ্ঞাসা করলো, কার্লোট বেনফিল্ড?
স্পেনস সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল, ষোল বছর বয়স। একটা দোকানে সহকারীর কাজ করতো। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করা হয়েছিল। কোম্বারী উডের কাছে রাস্তার পাশে ফুটপাতের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। দুজন যুবককে সন্দেহ করা হয়। তারা মাঝে মাঝে মেয়েটার সঙ্গে ঘুরে বেড়াত। কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পিটার গার্ডনের বয়স হবে একুশ। অল্পবয়সী অপরাধীদের সঙ্গে মিশতো, কিন্তু নিজেকে কোনোদিন কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে ফেলেনি।
আর একজন যুবক টমাস হুড এর বয়স একুশ। একটু লাজুক প্রকৃতির। একটু খেপাটে। মানসিক বিকারগ্রস্ত অবস্থায় কোনো অপরাধ করে ফেলা অসম্ভব কিছু ছিল না। মেয়েটা তাকে নাচাত, হিংসার বশবর্তী হয়ে খুন করা অসম্ভব ছিল না। তবে সে ধরনের কোনো প্রমাণ পুলিস পায়নি।
পোয়ারো আর একটা নাম পড়ল, লেসলি কেরিয়ার। স্পেনস বলল, উকিলের কেরানী, বয়স আঠাশ। কে বা কারা ছুরি মেরে খুন করে। ঘটনাটা ঘটে গ্রীন সোয়ান পাবের কাছাকাছি।
এই বাড়ির মালিক হ্যারী গ্রিফিনের স্ত্রীর সঙ্গে লেসলির একটা হৃদয় ঘটিত ব্যাপার ছিল। মহিলাটির দেখবার মতো রূপ ছিল। বয়সে লেসলির চেয়ে বছর পাঁচেকের বড়ই ছিল। স্ত্রীর পক্ষেই কাজটা করা সম্ভব। চলনে বলনে সে ছিল জিপসিদের মত আর মেজাজ ছিল খুব উগ্র। তবে দোষ লেসলিরও অনেক ছিল। কুড়ি বছর বয়সে জালিয়াতি করার অপরাধে অল্পদিনের জেল খাটে। জেল থেকে বের হওয়ার পর ফুলার্টন হ্যারিসন আর নিউরেটার কোম্পানী তাকে চাকরীতে বহাল করে।
চাকরীর পর একটা বাজে দলের সঙ্গে মেলামেশা করতো। অনেকের ধারণা এই দলের কেউ তাকে খুন করেছে। তার নামে ব্যাঙ্কের এ্যাকাউন্টে মোটা অংকের টাকা ছিল। নগদে জমা দেওয়া হয়েছিল। কোথা থেকে সেই টাকা পেয়েছিল তার কোনো হদিশ মেলেনি। ব্যাপারটা সন্দেহজনক।