আসলে সব দোষ আমারই–মিসেস অলিভার বললো পার্টিতে যাওয়া আমার উচিত হয়নি। না, ভাই না আমি সেই অর্থে বলিনি। মিসেস অলিভারের সঙ্গে বাড়ির বাইরে এসে পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর হাঁটতে হাঁটতে বলল, খুন হওয়ার পক্ষে জয়েসা মোটেই উপযুক্ত নয়। কেউ মিসেস ড্রেককে খুন করে যেতে পারে এমন পরিবেশ এখানে নেই।
যে ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, জয়েসার মায়ের কথা বলছি উনি মানুষ হিসাবে কেমন?
চমৎকার মহিলা, তবে একটু বোকা ধরনের ওর জন্য দুঃখ হয়। সবচেয়ে দুঃখের কথা হলো ওর মেয়ের খুন হওয়াকে সবাই মনে করছে যৌন অপরাধ।
ধর্ষণের কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলেও স্থানীয় লোকজন তাই ভাবছে। মিসেস অলিভার বললো, আচ্ছা আমার বান্ধবী জুডিথ বাটলার যদি তোমায় মিসেস রেনল্ড এর কাছে নিয়ে যায় কেমন হবে? মিসেস রেনল্ড এক ও খুব ভালো করে জানে আমি তো নতুন এসেছি।
পরিকল্পনা মতো কাজ করবো আমরা।
.
০৭.
মিসেস ড্রেকের ঠিক বিপরীত হলো মিসেস রেনল্ড এর চরিত্র। দেখে মনে হয় না মনে কোনো ছল চাতুরী আছে। পরনে কালো পোশাক। চোখে জল।
মিসেস রেনল্ডস মিসেস অলিভারকে বললো, আপনার অসীম করুণা আমাদের সাহায্য করার জন্য আপনার বন্ধুকে ডেকে এনেছেন, উনি যদি সাহায্য করতে পারেন তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। কি করে যে এই বয়সের একটা মেয়েকে খুন করতে পারলো। যদি মেয়েটা চীৎকার করতে পারতো–কিন্তু তাকে তো জলের মধ্যে চেপে ধরা হয়েছিল।
পোয়ারো বললো, আপনাকে কষ্ট দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি কেবল আপনার কাছে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর জানতে এসেছি। যাতে আপনার মেয়ের খুনীকে ধরতে অসুবিধা না হয়। আচ্ছা কে খুন করতে পারে বলে আপনার সন্দেহ হয়?
কি করে বলব বলুন? ভাবতেই পারছি না, এ ধরনের নোক এখানে বাস করে। এই জায়গাটা খুব ভালো, আরও ভালো এখানকার লোকজন। আমার ধারণা উত্তেজক ওষুধ খেয়ে কোনো লোক জানালা দিয়ে ভিতরে ঢুকেছিল।
আপনার কি স্থির বিশ্বাস যে খুনী একজন পুরুষ?
কোনো মেয়েলোকের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব?
মেয়েলোকেরও গায়ে যথেষ্ট শক্তি থাকতে পারে।
আপনি কি বলতে চাইছেন বুঝেছি কিন্তু একজন মেয়েলোকের পক্ষে এধরনের কাজ… জয়েসা যে একেবারেই শিশু–মাত্র তের বছরের মেয়ে ছিল মঁসিয়ে পোয়ারো।
আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো, আপনার মেয়ে পার্টিতে একটা মন্তব্য করেছিলো, ও একটা খুন হতে দেখেছে। আমার ধারণা আপনি তখন ওখানে উপস্থিত ছিলেন না।
আমার তিন ছেলেমেয়েকে গাড়ী করে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরে যাই, তারপর তাদের নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম। একথা কেউ বিশ্বাস করেছে বলে আমার মনে হয়নি। মিসেস রেনল্ড বললো, মিথ্যে কথা বলা জয়েসার স্বভাব।
পোয়ারো বললো মনে করবার চেষ্টা করুন, তিন সপ্তাহ আগে কিম্বা তিনবছর আগে হয়ত বলেছিল, জয়েসা বলেছিলো, সেই সময় সে বেশ বড়। উত্তেজনামূলক কোনো ঘটনা কি ঘটেছিলো এখানে।
না মনে পড়ছে না।
আচ্ছা আপনার আর দুজন ছেলেমেয়ে তো পার্টিতে উপস্থিত ছিল ওদের সঙ্গে কথা বলতে পারি?
নিশ্চয়ই।
পোয়ারো লিওপোল্ড এর সঙ্গে কথা বলে তেমন কিছু কিনারা পেলো না।
এবারে তারা এলো উপর তলার এ্যানার কাছে। এ্যানাকে বয়সের তুলনায় একটু বড়ো দেখায়।
এ্যান এর সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো নিজেকে জাহির করা জয়েসার একটা স্বভাব ছিল। কেউ জয়েসাকে খুন করতে পারে একথা ভাবাই যায় না। সুযোগ সন্ধানী ছাড়া এ কাজ আর কেউ করেনি।
এ্যানা আরো একটি কথা জানালো যে জয়েসা ছিল ভীষণ ভাবে মিথ্যেবাদী।
ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মিসেস অলিভার বললো, আমরা কি কিছুটা এগোতে পেরেছি?
একটুও নয়–এরকুল পোয়ারো চিন্তিত মনে বললো, কেসটা খুব ইন্টারেস্টিং।
মিসেস অলিভার এমন ভাবে চোখ তুলে তাকালো যেন সে তার মতের সঙ্গে একবারেই একমত হতে পারছে না।
.
০৮.
ঘড়িতে এখন ছটা বাজে। পাইন ক্রেস্টে বসে এরকুল পোয়ারো এক টুকরো সসেজ মুখে পুরে এক ঢোক চা পান করলো। তারপর সামনে বসা মিসেস এলস্পেথ ম্যাকের দিকে তাকালো। মিসেস ম্যাকের মুখ মেদহীন এবং লম্বাটে কিন্তু চোখ তীক্ষ্ণ বদমেজাজী স্ত্রীলোক বলেই মনে হয়। রোগাটে চেহারা।
জয়েসা রেনল্ড কি প্রকৃতির মেয়ে ছিল তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে–দু চোখে প্রশ্ন নিয়ে স্পেনসার দিকে তাকালো পোয়ারো, এদিকটা আমায় বিভ্রান্ত করে তুলেছে। পোয়ারো ম্যাকের দিকে তাকালো। মহিলার চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে।
এলস্পেথ বললো, আমার মতে মেয়েটা ছিল প্রকৃত মিথ্যেবাদী, চমৎকারভাবে গুছিয়ে বানিয়ে গল্প বলতো। লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও ছিল ওস্তাদ। আমি কোনোদিন মেয়েটাকে বিশ্বাস করিনি।
আচ্ছা জয়েসা কাকে খুন হতে দেখতে পারে?– পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলো।
কাউকে না– এলস্পেথ তাড়াতাড়ি জবাব দিল।
এখানে নিশ্চয়ই গত তিনবছরে কারো মৃত্যু হয়েছে? অস্বাভাবিক আর অনভিপ্রেত মৃত্যু কারো হয়ে থাকলে তাদের একটা তালিকা পেলে সুবিধা হতো।
হা মানে–এলস্পেথ ইতস্ততঃ করলো।
স্পেনস একটা কাগজ পোয়ারোর দিকে এগিয়ে দিলো, এদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে তোমার সুবিধা হবে।
এদের সন্দেহজনক ভাবে মৃত্যু হয়েছে?
ওই রকমই বলতে পারো।
লেখা নামগুলো পোয়ারো চেঁচিয়ে পড়তে লাগলো–মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ কার্লোট বেনফিল্ড, জেনেট হোয়াইট, লেসলি ফেরিয়ার হঠাৎ থেমে গিয়ে মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের নাম পুনরাবৃত্তি করলো।