কিন্তু বুঝতে পারছি না আমার কাছে এসেছো কেন তুমি? মনে হলো একমাত্র তুমিই আমায় সাহায্য করতে পারো। একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে যে ব্যাপারটা সাধারণ নয়।
তুমি আমায় সব খুলে বলতে পারো। বুঝতে পারছি কেসটা এখন পুলিসের হাতে। ডাক্তারের মতামত কি?
অনুসন্ধান চলবে–মিসেস অলিভার বলল।
চলাটাই স্বাভাবিক। ওই মেয়েটা মানে জয়েসার বয়স কত হবে?
সঠিক বলতে পারবো না। তবে তেরো কি চোদ্দ হরে।
শোন, আমার মনে হচ্ছে সব কথা তুমি আমায় খুলে বলোনি, জয়েসা তোমার পরিচিত?
না ওকে একেবারেই চিনতাম না। আমার মনে হচ্ছে তোমাকে খুলে বলা দরকার ওখানে কেন গিয়েছিলাম।
ওখানে মানে– কোথায়?
উডলিফ কমন্সে।
উডলিফ কমন্স।–চিন্তিত মনে পোয়ারো বললো, এখন সেখানে
এখানে এক বান্ধবীর সঙ্গে আমি থাকি। জুডিথ বাটলার ওর নাম। বিধবা। একবার হেলেনিতে জাহাজে করে বেড়াতে গিয়েছিলাম, সেই জাহাজে জুডিথও ছিলো। সেখানেই আমাদের পরিচয় আর বন্ধুত্ব। ওর এক মেয়ে আছে নাম মিরান্দা। বয়স বার কি তেরো। জুডিথের আমন্ত্রণেই এই হ্যালুইন পার্টিতে গিয়েছিলাম। সত্যি বলতে কি পার্টিটা সম্পর্কে আমার মনে যথেষ্ট আগ্রহ জেগেছিল। তাই বুঝি! পোয়ারো বললো, আচ্ছা, মনে করে দেখোত উনি বলেছিলেন কিনা পার্টিতে খুন হয়েছে, এই ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে।
তাছাড়া পার্টিতে কি এমন কোনো লোক ছিল যে তোমার পরিচয় জানতো?
হ্যাঁ, ছিল। ছোটদের মধ্যে কে একজন আমার লেখা বই সম্পর্কে মন্তব্য করছিল আর বলছিল খুন জখম ওদের ভালো লাগে।
আমাকে কিন্তু এসব কথা এখনও বলোনি।
দেখ, প্রথমে ব্যাপারটা নিয়ে আমি মাথা খামাইনি, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা তো মাঝে মাঝে কত প্রশ্নই করে, সে সব নিয়ে মাথা ঘামালে চলে না।
আচ্ছা কৈশোর ছেড়ে যৌবনে পড়েছে এমন কোনো ছেলে ওখানে ছিল? দুজন। বয়স হবে ষোল থেকে আঠার।
আমার ধারণা ওদের দুজনের মধ্যে কেউ করতে পারে। পোয়ারো বলল পুলিসের ধারণা কি তাই?
কিছু প্রকাশ না করলেও ওদের কথাবার্তা আর আচরণ দেখে তাই মনে হয়েছে।
জয়েসা দেখতে কি খুব আকর্ষণীয় ছিল?
না, তেমন কিছু নয়। তবে মেয়েটাকে আমার খুব ভালো বলে মনে হয়নি। আসলে বয়সটা খারাপ বুঝলে না? শুনতে খারাপ লাগলেও কথাগুলো সত্যি।
আচ্ছা সেই সময় পার্টিতে কতো লোক উপস্থিত ছিল?
পাঁচ ছজন মহিলা, কয়েকজন মা, একজন স্কুল শিক্ষয়িত্রী, একজন ডাক্তারের স্ত্রী কিম্বা বোন ষোল থেকে আঠারো বছর বয়সী দুটি ছেলে, পনের বছরের একটা মেয়ে আর দু-তিনটে এগারো বছরের মেয়ে এই পার্টিতে উপস্থিত ছিল। সব মিলিয়ে কুড়ি পঁচিশ কিম্বা ত্রিশজন।
একে অপরকে চিনতো। কাজের লোকের জন্য কাজ ফেলে রাখা হবে না এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরাই ঘরগুলো পরিষ্কার করে ফেলেছিলাম, সেই সময়ে আমরা লাইব্রেরীর ঘরে মৃত জয়েসাকে আবিষ্কার করি। সঙ্গে তার বলা কথাগুলো আমার মনে পড়ে যায়।
কি কথা– কি কথা বলেছিলো?
বলেছিল, আমি একটা খুন হতে দেখেছি মিসেস অলিভার সমস্ত ঘটনা খুলে বললো, কিন্তু কেউ ওর কথা বিশ্বাস না করে হেসে উড়িয়ে দিচ্ছিল বলে খুব রেগে গিয়েছিল।
মেয়েটি বিস্তারিত ভাবে কিছু বলেনি! যেমন কোনো নাম?
না। জয়েসাকে যখন বিস্তারিতভাবে বলবার জন্য সবাই পীড়াপীড়ি করতে লাগলো ও বলেছিল, অনেকদিন আগের ঘটনা তো আমার কিছু মনে নেই। তবে বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা।
একটা ব্যাপার ভাববার আছে-পোয়ারো বললো, এখন নিশ্চয় ওর বোঝার মতো বয়স হয়েছিল।
মিসেস অলিভার বললো, একজন ওকে প্রশ্ন করেছিলো, কেন তুমি পুলিসে খবর দিলে না?
উত্তরে মেয়েটা কি বলল?
বলল, তখন আমার মনেই হয়নি যে ওটা খুন।
পোয়ারো নড়েচড়ে বসলো তারপর বললো, চমৎকার উত্তর দিয়েছে তো!
মেয়েটাকে সবাই মিলে ঠাট্টা করছিল বলেই বোধহয় বিরক্ত হয়ে এ ধরনের উত্তর দিয়েছিল। কিন্তু কেউ ওর কথা বিশ্বাস করেনি। তবে মৃতদেহ আবিষ্কার করবার পর আমার মনে হলো, ও সত্যি কথা বললেও বলতে পারে। তারপর তোমার কথা মনে পড়লো।
কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা বললো না। তারপর নড়েচড়ে বসে প্রথম নিরবতা ভঙ্গ করলো পোয়ারো, তোমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করবো। ভেবে চিন্তে উত্তর দেবে। আচ্ছা মেয়েটা কি সত্যি কোনো খুন হতে দেখেছিল বলে তোমার মনে হয়?
সত্যি করে বলা কঠিন, তবে আমার মন বলছে মেয়েটা হয়তো সত্যিই খুন হতে দেখেছিলো। এর থেকে কয়েকটা সিদ্ধান্তে আসা যায়। পার্টিতে উপস্থিত নিমন্ত্রিতদের মধ্যে নিশ্চয়ই এমন একজন ছিল যে এই খুনটা করেছে আর এই খুনী জয়েসাকে আগেই বলতে শুনেছে অতীতের খুনের কথা।
জয়েসাকে যে খুন করেছে, মাথাটা জলের মধ্যে চেপে ধরে রাখার মতো শক্তি তার ছিল। খুনটা করা হয়েছে চোখের নিমেষে। খুন হতে দেখার কথা শুনে খুনী ভয় পেয়েছিল তাই সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজটা সেরে ফেলেছে।
তার মানে জয়েসা জানবার সুযোগ পায়নি যে, ওকে যে খুন করেছে সে আগের খুনটা করেছে কিনা।–মিসেস অলিভার বললো তাছাড়া ও জানতোই না যে খুনী ঘরের মধ্যেই ওৎ পেতে বসে আছে।
না জানতো না। সম্ভবতঃ জয়েসা খুন হতে দেখেছিল, কিন্তু খুনীর চেহারা দেখতে পায়নি। আমাদের আরও আগে চলে যেতে হবে।
তোমার কথা বুঝতে পারছি না। এমনও হতে পারে এমন একজন লোক পার্টিতে উপস্থিত ছিল যে জানতো খুনটা কে করেছে। হয়তো খুনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমনও কেউ হতে পারে। সে নিশ্চয়ই ভেবেছিল সে ছাড়া আর কেউ কিছু জানে না। সহসা জয়েসা মুখে খুন হতে দেখার কথা শুনে…