টেবিলের ওপর থেকে খাবার সরিয়ে ফেলে সবুজ মোটা কাপড় পেতে দেওয়া হয়েছে। একটা বড়ো ডিসের ওপর রাখা হয়েছে স্তূপীকৃত আঙ্গুর, মনাক্কা, কিসমিস, বাদাম, পেস্তা ইত্যাদি। প্রত্যেকে সেইদিক ছুটে গিয়ে প্লেটে রাখা ফলগুলি ধরে টানাটানি করতে লাগলো, অবশ্য আগুন বাঁচিয়ে।
সবাই চীৎকার করছে : ওঃ পুড়ে গেলো। কি সুন্দর তাই না? ধীরে ধীরে স্ন্যাপড্রাগন ফুল পুড়তে পুড়তে একেবারে নেতিয়ে পড়লো। সব আলোগুলো একসাথে জ্বলে উঠলো। উৎসবের সমাপ্তি হলো– হ্যালুইন পার্টি শেষ।
প্রত্যেকেই বললো, পার্টি খুবই সফল হয়েছে, চমৎকার হয়েছে।
.
০৩.
লণ্ডনের একটা ফ্ল্যাটবাড়িতে টেলিফোন বেজে উঠলো। চেয়ারে বসে আছে এরকুল পোয়ারো। সে নড়ে চড়ে বসলো, সে হতাশায় ভুগতে লাগলো। সে ভালো করেই জানে কে ফোন করেছে, নিশ্চয়ই আজ সন্ধ্যায় যার সঙ্গে ক্যানিং রোডের মিউনিসিপ্যাল বাথরুমে খুন হওয়া লোকটির প্রকৃত আততায়ী কে সে ব্যাপারে আলোচনা করার কথা ছিলো এখন ফোনে সে সেইগুলি জানাবে, সে এখানে আসতে পারবে না।
হতাশ হলো পোয়ারো কারণ খুনের সপক্ষে কিছু প্রমাণ সে সংগ্রহ করে রেখেছে। ভদ্রলোকের না আসতে পারবার সপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে, কারণ আজ রাস্তায় দেখা হতে লক্ষ্য করা গেছে বেশ অসুস্থ।
পোয়ারোর চাকর জর্জ ঘরে ঢুকে জানালো যে, মিঃ লোগলির ফোন ছিল উনি জানিয়েছেন যে আজ সন্ধ্যায় তার পক্ষে আসা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ তিনি ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে বিছানা নিয়েছেন।
টেলিফোনটা আবার বেজে উঠলো। পোয়ারো হাত বাড়িয়ে ক্রেডল থেকে রিসিভার তুলে নিয়ে বলললো, এরকুল পোয়ারো বলছি।
আমার সৌভাগ্য বলতে হবে–
একটা ঝাঁঝালো মেয়েলি কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, ভেবেছিলাম বেরিয়ে গেছ। শোন, এই মুহূর্তে তোমাকে আমার খুব দরকার। এক্ষুনি তোমার সঙ্গে একবার দেখা করতে পারি?
মেয়েটি হলো পোয়ারোর বান্ধবী– আরিয়াদে।
উত্তর দেওয়ার আগে পোয়ারো কিছু সময় চুপ করে রইলো। বোধহয় তার বান্ধবীকে দুঃখ, হতাশা বা এই ধরনের কিছু বিচলিত করে তুলেছে। কোনো কারণে উতলা হয়ে পড়েছ নাকি?
– পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল।
হা। ভেবে পাচ্ছি না এখন কি করব। একমাত্র তুমিই আমাকে সঠিক পথ বলতে পারবে। তাহলে কি আমি যাব? — অলিভার জিজ্ঞাসা করল।
নিশ্চয়ই! এলে খুশী হব। অপর প্রান্তে রিসিভার নামিয়ে রাখার শব্দ হলো।
জর্জকে ডেকে পোয়ারো বললো, মিনিট দশেকের মধ্যে মিসেস অলিভার এসে পড়বেন।
জর্জ চলে গেলো।
একটা ঘন্টা বাজলো ফ্ল্যাটের বাইরের দরজায়। জর্জের দরজা খোলার শব্দ ভেসে এলো। কোনো সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হওয়ার আগেই বসবার ঘরের দরজা খুলে গেলো। আরিয়াদে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করলো তার ঠিক পিছনেই জর্জ। তার মাথায় জেলেদের টুপি আর গায়ে পিচ্ছিল চামড়ার তৈরি জামা।
এসব কি পরেছ?–পোয়ারো বললো, জর্জের হাতে ওগুলো খুলে দাও। বেশ ভিজে বলেই মনে হচ্ছে।
হা বেশ ভিজে–মিসেস অলিভার অসহিষ্ণু কণ্ঠে বললো, জলে ডুবিয়ে ভেজানো হয়েছে। জান, জল নিয়ে আগে কখনও এতো মাথা ঘামাইনি, সাংঘাতিক জিনিস।
পোয়ারো বললো, আচ্ছা সব শুনছি আগে বসো।
অলিভার বসে বলতে শুরু করলো, একটা হ্যালুইন পার্টিতে গিয়েছিলাম। এটা ছিল ছোটদের পার্টি। বুক ভরে হাওয়া গ্রহণ করে মিসেস অলিভার বললো, শুরু হয় আপেল দিয়ে। আপেল দিয়ে বোকা বানানোর খেলা। যে কোনো হ্যালুইন পার্টিতে এই খেলাটা হয়ে থাকে।
আরো নানারকম খেলার শেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয় স্ন্যাপড্রাগন খেলা দিয়ে। আমার ধারণা সেই সময় ঘটনাটা ঘটে। স্ন্যাপড্রাগন খেলার পর নিমন্ত্রিতরা একে একে বাড়ি চলে যায়। ওর খোঁজ কেউ করেনি।
কার খোঁজ করেনি?
একটা মেয়ের নাম জয়েসা। প্রত্যেকে তার নাম ধরে ডাকাডাকি করেছে, এদিক ওদিক খোঁজ করেছে এবং জিজ্ঞাসা করেছে কারো সঙ্গে বাড়ি চলে গেছে কি না। ওর মা বিরক্ত হয়ে ভেবেছিল জয়েসা ক্লান্ত বা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বলে একাই বাড়ি চলে গেছে। যাই হোক অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একা একাই বাড়ি ফিরে গিয়েছিল?
না বাড়ি ফেরেনি– মিসেস অলিভারের কণ্ঠস্বর কেঁপে গেল। শেষ পর্যন্ত ওকে পাওয়া গেলো লাইব্রেরীতে। ওখানে কেউ ওকে খুন করে রেখে গেছে। আপেলের খেলায় খেলার ভঙ্গিমায় ওকে পাওয়া যায়। মাথাটা গামলার জলের মধ্যে ডোবানো।
পোয়ারোর কণ্ঠস্বর তীক্ষ্ণশোনালো, ঠিক কি ঘটেছিল?
মেয়েটাকে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করা হলো। কেউ যেন তার মাথাটা গামলার জলের মধ্যে চেপে ধরেছিল। মেরে ফেলার উদ্দেশেই কাজটা করা হয়। জয়েসা হাঁটু ভেঙে বসে আছে তার মাথাটা জলের ভেতর ডোবান।… আমি আপেলকে ঘৃণা করি, আপেলকে সহ্য করতে পারছি না, কোনোদিন পারবও না…
পোয়ারো চুপচাপ তাকিয়ে রইল উত্তেজিত মিসেস অলিভারের দিকে। হাত বাড়িয়ে কোনিয়াক মদ ঢাললো গ্লাসে তারপর মৃদুকণ্ঠে বললো, এইটুকু খেয়ে নাও অলিভার, খারাপ লাগবে না।
.
০৪.
মিসেস অলিভার গ্লাস নামিয়ে রেখে বললো, এখন বেশ ভালোই লাগছে, কেমন যেন হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম।
পোয়ারো বললো, বুঝতে পারছি তুমি অত্যন্ত মানসিক আঘাত পেয়েছ। ঘটনাটা কবে ঘটেছে।
গত রাতেই ঘটেছে ঘটনাটা।