কার মৃতদেহের কথা বলছ?
কুয়ো থেকে একটা মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
মিসেস অলিভারের মুখে আর কোনো কথা সরল না। সে টেলিফোনের রিসিভার হাতে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইল।
.
২৫.
কিলটারবারি রিং। মিরান্দা দুচোখ মেলে তাকিয়ে বললো, বাঃ কি সুন্দর! কিলটারবারি রিং হল স্থানীয় অতীব সৌন্দর্যপূর্ণ অংশ, কিন্তু বাকি অংশ তেমন বিখ্যাত নয়। এই সৌন্দর্যপূর্ণ জায়গাটা কয়েক শ বছর আগে ধ্বংস হয়ে গেছে। ইতস্ততঃ উঁচু পাথর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। পুরাকালে নানা শাস্ত্রীয় পূজা অর্চনার কথা মনে করিয়ে দেয়।
মিরান্দা নানা ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলো।
এইসব পাথর এখানে ছড়িয়ে রেখেছ কেন?
শাস্ত্রীয় প্রয়োজনে। শাস্ত্রীয় ত্যাগ স্বীকারের জন্য।
মিরান্দা তোমাকেও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে বুঝলে?
তোমার কি মনে হয় না এ এক ধরনের শাস্তি? না অন্য কিছু?
হ্যাঁ অন্য কিছু, অন্যরা যাতে বাঁচতে পারে সেই কারণে তোমাকে মরতে হবে। তুমি মরবে যাতে সৌন্দর্য বেঁচে থাকে। নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে এই হল আসল উদ্দেশ্য।
সম্ভবতঃ বুঝতে পেরেছি– বল মিরান্দা, থামলে কেন? বুঝেছি তোমাকে মরতে হবে কারণ তোমার কৃতকর্মের জন্য একজন খুন হয়েছে।
বুঝলে কি করে?
জয়েসার কথা মনে পড়ে। যদি কিছু না বলতাম তাহলে ওকে মরতে হত না বোধ হয়।
সম্ভবতঃ নয়।
জয়েসা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। ওকে কথাটা বলা উচিত হয়নি, কি বল? ওকে বলেছিলাম দামী কিছু পাওয়ার আশায়। জয়েসা ভারত ভ্রমণের গল্প করতো, বলতো সোনায় মুড়ে হাতাঁকে কিভাবে সাজানো হয় আর তাদের ধরা হয়। হঠাৎ আমারও মনে হল ওকে কিছু শোনাতে কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ওকে বলব আগে কখনও ভাবিনি। আচ্ছা একি ধরনের আত্মত্যাগ?
মিরান্দা কিছু সময় গভীরভাবে চিন্তা করল। তারপর বলল, সূর্য এখনও ঠিক জায়গায় পৌঁছায়নি। আর মিনিট পাঁচেক পরে সূর্যকিরণ সোজাসুজি পাথরের উপর পড়বে। তখনি হবে আমাদের ত্যাগস্বীকার উপযুক্ত সময়।
মনে হচ্ছে সেই বিস্ময়কর মুহূর্ত উপস্থিত। মিরান্দার সঙ্গী আকাশের দিকে তাকাল।
তোমাকে প্রথম দেখাব পাহাড়ের গায়ে একজোড়া কুঠার। কয়েকশো বছর আগে সিসিলি ক্রীট থেকে লোক এসে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে। দেখ, মিরান্দা কেমন চমৎকার তাই না?
একটা উঁচু পাথরের মাথায় তারা উঠল। এই পাথরের পাশে আর একটা পাথর পড়ে আছে, সমান্য দূরে পাথরের ঢালে কোণাকুণি অবস্থায় পড়ে আছে আর একটা পাথর।
তুমি খুশী হয়েছ মিরান্দা? হ্যাঁ খুব খুশী হয়েছি। দেখ, চিহ্নটা ফুটে উঠেছে। মিরান্দা সাগ্রহে দেখতে লাগল। জিজ্ঞাসা করল, সত্যি কি জোড়া কুঠার?
হ্যাঁ সময়ের আবর্তে ক্ষয়ে গেছে কুঠারের প্রতীক। এর উপর হাত রাখ। এখন আমরা পান করব অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ আর সৌন্দর্য।
আঃ কি সুন্দর –মিরান্দা অস্ফুট কণ্ঠে বলল।
একটা সোনালী পানপাত্র মিরান্দার হাতে ঢেলে দিল লোকটি। ফ্লাস্ক থেকে সেই কাপে সোনালী তরল পদার্থ ঢেলে পূর্ণ করল।
পাঁচ ফলের স্বাদ পার। পান কর মিরান্দা। দেখবে সুখ তোমার মনকে ভরিয়ে তুলবে। কাপ তুলে ধরে চুমুক দাও।
বাধ্য মেয়ের মতো মিরান্দা কাপটা তুলে ধরল। তার একটা হাত সেই পাথরের গায়ে রয়েছে ফলে কুঠারের চিহ্ন সামান্য মুছে গেছে। তার সঙ্গী ঠিক তার পিছনে দাঁড়িয়ে। কাৎ হয়ে থাকা পাথরটার তলা থেকে দুটি লোক বেরিয়ে এল, পাথরের উপরের লোকটি পিছন ফিরতেই তাদের দেখতে পেল না। তারা ক্ষিপ্র পদে চুপিসারে পাহাড়ের উপরে উঠে এল।
সৌন্দর্য পান কর মিরান্দা। যা বলছে মেয়েটা তাই করছে –পিছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এল।
একটা লাল কোট এসে পড়ল লোকটার মাথার উপর, তার হাতের উদ্যত ছুরিটা ছিটকে নিচে পড়ে গেল। নিকোলাস র্যানসান মিরান্দার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। বাকি লোক দুটি হাতাহাতি করতে লাগলো।
অসভ্য মেয়ে। –নিকোলাস ধমকের সুরে বলল, একটা খুনীর সঙ্গে এখানে এসেছ? কিছু করার আগে ভাবা উচিত ছিল।
মিরান্দা বলল –ঠিকই করেছি। ভাবছিলাম আত্মাহুতি দিচ্ছি। সমস্ত দোষ আমারই, আমার জন্যই জয়েসা খুন হয়েছে। সেই কারণে আমার উচিত আত্মাহুতি দেওয়া। আমার মৃত্যু হতো শাস্ত্রসম্মত।
বোকার মতো তুমি কথা বলো না মিরান্দা, মেয়েটাকে ওরা খুঁজে পেয়েছে। ব্যাপারটা তুমিও তো জানো, সেই যে কাজের মেয়েটাকে অনেক দিন যাবৎ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সবাই ভেবেছে উইল জাল করার অপরাধে ভয় পেয়ে পালিয়েছে, আসলে মেয়েটি পালিয়ে যায়নি। ও নিষ্ঠুর ভাবে খুন হয়েছিল। ওর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে কুয়োর মধ্যে।
হঠাৎ মিরান্দা আর্তনাদ করে উঠলো, মনোবাসনা পূরণের কুয়োতে নয় তো? এই কুয়োটা আমি কুঁজে বের করতে চেয়েছিলাম। কে– ওখানে কে ওকে ফেলেছে?
মিরান্দা আত্মবিস্মৃতের মতো চীৎকার করে উঠলো –আহ!
.
২৬.
চারজন তারা তাকিয়ে আছে পোয়ারোর দিকে। টিমোটি র্যাগলান সুপারিন্টেন্টে স্পেনস আর চীফ কনস্টেবল এর চোখে মুখে আনন্দের ছায়া। চতুর্থজনের চোখ এখনও সন্দেহের ছায়া দুলছে।
ইনসপেক্টর র্যাগলান ঘর ছেড়ে বাইরে গিয়ে ফিরে এল বছর ত্রিশেক বয়সের একজন ভদ্রমহিলা, একটি বাচ্চা মেয়ে আর দুজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে। সে চীফ কনস্টেবলের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিল, মিসেস বাটলার, মিস মিরান্দা বাটলার, মিঃ নিকোলাস র্যানসান আর মিঃ ডেসম হল্যাণ্ড।