মিসেস অলিভারের অনুরোধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেলে আর মেয়েটি ছাড়াছাড়ি হলো, বিরক্তি মেশানো দৃষ্টিতে তারা মিসেস অলিভারের দিকে তাকালো। মিসেস অলিভার ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
.
০২.
কিশোর কিশোরীদের পার্টি সম্বন্ধে কোনো ধারণা আছে কি না জানতে চাইলো জুডিথ মিস অলিভারের কাছে।
মিসেস অলিভার জানালো বিশেষ কিছুই জানা নেই।
জুডিথ বললো, খুব ঝামেলা হয় বড়দের এড়িয়ে নিজেরাই সব করতে চায়। কাঁচের গ্লাস বা ওই ধরনের জিনিস ভেঙে একাকার করে। অবাঞ্ছিত মানুষজন ভেতরে ঢুকে পড়ে, কেউ হয়তো অনাহূত কাউকে সঙ্গে করে নিয়ে এলো। সেই সঙ্গে আনে অদ্ভুত সব ওষুধপত্র–এল এস-ডি না কি যেন নাম, দেখতে ঠিক টাকার মতো কিন্তু আসলে টাকা নয়, তাই নাকি?
দামী হলেও ওগুলো খুব বাজে। খুব বাজেও-জুডিথ বললো, তবে এই পার্টি নির্বিঘ্নে শেষ হবে। রোয়েনা ড্রেকের ওপর আস্থা রাখতে পার। ব্যবস্থাপনার কাজে খুব দক্ষ। হাতে নাতে পারে। জান, মিরান্দা পার্টিতে আসতে পারলো না বলে খুব খারাপ লাগছে।
মিসেস অলিভার বললো, জ্বর যখন নেই তখন তো আনতে পারতে।
ভরসা হল না…ভাগ্য খারাপ আর কি।
রাত সাড়ে সাতটার সময় পার্টি শুরু হলো। প্রত্যেকেই যথাসময়ে এসে হাজির হলো। ঘড়ি ধরে সব কিছু চলতে লাগলোলা। সিঁড়িতে লাল নীল আলো দেওয়া হয়েছে, আর প্রচুর সংখ্যক হলুদ কুমড়ো ঝুলিয়ে চারিদিক সাজানো হয়েছে। রোয়েনা ড্রেক রাতের কর্মসূচী ঘোষণা করলো, প্রথমে হাতল ওয়ালা ঝাড়ুর প্রতিযোগিতা হবে। পুরস্কার আছে তিনটে–প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয়। তারপর কাটা হবে ময়দার কেক। অনুষ্ঠানটা হবে ছোট আকারের। তারপর হবে আপেলের বোকা বানানোর খেলা। দেওয়ালে সহযোগী প্রতিযোগীদের নাম টাঙ্গিয়ে দেওয়া হবে। তারপর হবে না। একবার করে আলো নিভে যাবে আর তোমরা সঙ্গী বদল করবে। এরপর স্টাডিরুমে মেয়েদের আয়না দেওয়া হবে–আয়নার খেলা। এই অনুষ্ঠানের পরে হবে ভোজ, ভোজের পর হবে স্ন্যাপড্রাগনের খেলা। আর অবশেষে পুরস্কার বিতরনী।
আরিয়াদে অলিভার জিজ্ঞাসা করলো-আচ্ছা ময়দার খেলাটা কি রকম?
প্রথমে ময়দা ঠেসে একটা গামলায় ভরতে হবে, তারপর একটা ট্রের উপর চাপ বাঁধা ময়দা উপুড় করে ঢালতে হবে। সেই চাপ-বাঁধা ময়দার ওপর একটা ছ পেন্সের মুদ্রা রাখতে হবে। প্রতিযোগীরা ছুরি দিয়ে চাপ বাঁধা ময়দা কাটতে থাকবে এমনভাবে যেমন মুদ্রাটা উপর থেকে নিচে না পড়ে যায়। যদি কেউ নিচে ফেলে দেয় তাহলে সেই খেলায় সে আর অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এইভাবে একজন করে খেলা থেকে সরে যেতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত যে টিকে থাকতে পারবে সে পাবে ছ পেন্সের সেই মুদ্রাটা।
খেলা শুরু হয়ে গেছে। হাতলওয়ালা ঝাড়ুর খেলা দেখে সবাই খুব প্রশংসা করলো।
লাইব্রেরীর ঘর থেকে উত্তেজিত চীৎকার ভেসে আসছে। এই ঘরে আপেলের খেলা চলছে। জলে ভেজা প্রতিযোগীরা পরস্পরকে জড়াজড়ি করে বাইরে বেরিয়ে আসছে।
মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো হ্যালুইন ডাইনীর আবির্ভাব। এই ডাইনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মিসেস গুডবডি। বাসন মাজার কাজ করে। তার নাক সূচাল আর বাঁকান এবং থুতনি সরু। তার কণ্ঠস্বর শুনলে মনে হয় যেন শয়তানের কণ্ঠস্বর বেশ খনখনে।
ডাইনি খনখনে গলায় কথা বলে চলেছে: তুমি বেট্রিসা না কি যেন তোমার নাম? বেশ মজার নাম, আকর্ষণীয় নাম। তুমি জানতে চাও তোমার ভাবী স্বামী কেমন দেখতে হবে? তাহলে এখানে বসো। হ্যাঁ আলোর ঠিক নিচে। এই আয়নাতে হাত দাও, এটা হাতে নিয়ে আলোর নিচে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়নার দিকে তাকাও দেখতে পাবে ভাবী স্বামীর মুখ, ঠিক যেন তোমার পিছন থেকে উঁকি দিচ্ছে। আয়নাটা শক্ত হাতে চেপে ধর। অর্থহীন যাদুমন্ত্র পড়তে থাকো… যার সঙ্গে তোমার বিয়ে হবে, তাকেই তুমি দেখতে পাবে।
পর্দার আড়ালে রাখা একটা মই থেকে হঠাৎ এক ঝলক আলো এসে পড়লো ঘরের মধ্যে, সেই আলো প্রতিফলিত হলো উত্তেজিত বেট্রিসার হাতে ধরা আয়নার উপর ওহো। সবিস্ময়ে চীৎকার করে উঠল বেট্রিসা ওকে দেখেছি–আয়নায় দেখেছি ওকে।
নীল আলোর ঝলক নিভে গিয়ে সাধারণ আলো জ্বলে উঠলো। সারা ঘর আলোকিত হয়ে উঠলো। ছাদের নিচে ঝুলন্ত একটা কার্ডের উপর আঠা দিয়ে আটকানো একটা রঙীন ফটোগ্রাফ বাতাসে আন্দোলিত হতে দেখা গেলো। বেট্রিসা উত্তেজিতভাবে সারা ঘরে এলোমেলো ভাবে নাচতে লাগলো।
মিসেস অলিভারকে বেট্রিসা বললো, ওকে দেখতে গায়ক এডি প্রেসাওয়েটের মতো, ওকে দেখেছি আমি।
খবরের কাগজে পপ গায়ক এডি প্রেসাওয়েটের ছবি মিসেস অলিভার অনেকবার দেখেছেন কিন্তু তার একবারও মনে হলো না মুখখানা তার মতো দেখতে। সে জিজ্ঞাসা করলো এসব কিভাবে করা হয়?
এসব রোয়েনাই ব্যবস্থা করে নিকিকে বলে। নিকির বন্ধু ডেসমণ্ড ওকে সাহায্য করে।
অলিভার বললো, আমি ভাবতেই পারছি না আজকালকার মেয়েরা অসভ্য হয়ে যাচ্ছে।
যাই হোক ভোজ পর্ব বেশ ভালো ভাবেই মিটে গেলো। সবাই বেশ পেট ভরে খেল।
এবার রোয়েনা বললো, আজ রাতের খেলা স্ন্যাপড্রাগন। তার আগে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ শেষ হলো। তারপর ভেসে আসতে লাগলো বাস্তু পরীর আর্তবিলাপের সুর। ছেলেমেয়েরা ডাইনিং হলের পিছন দিকে ছুটে গেলো।