পোয়ারো বললো, সম্ভবতঃ চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আপনাদের সামনে এমন কিছু উপস্থিত করতে পারব যা ঘটনাগুলো অনেকখানি পরিষ্কার করে দিতে পারবে।
সেটা কি?
স্বচক্ষে দেখা একজন সাক্ষী। আইনের লোকটি প্রচণ্ড অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে পোয়ারোর দিকে তাকাল। সেই স্বচক্ষ দেখা সাক্ষী এখন কোথায়?
আমার বিশ্বাস লণ্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
আপনার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আপনার মন বিক্ষিপ্ত।
কথাটা সত্যি যতটা সম্ভব, সাবধানতা অবলম্বন করেছি, তবু স্বীকার করতেই হবে আমি ভীত হয়ে পড়েছি।
এরকুল পোয়ারো উঠে দাঁড়াল। সে বলল, এখন আমায় যেতে হবে। যা জানতাম সব বলেছি এখন যা ভালো বুঝবেন করবেন। আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলব।– সকলের সঙ্গে করমর্দন করে সে চলে গেল।
চীফ কনস্টেবল বলল, স্পেনস তোমাকে অনেক বছর ধরে জানি, তুমি মঁসিয়ে পোয়ারোর বন্ধু। তোমার কি মনে হয় ওর ভীমরতি হয়েছে?
আমার তা মনে হয় না। স্পেনস বলল, তোমার মতামত কি র্যাগলান?
ওর সঙ্গে আমার পরিচয় খুব বেশি দিনের নয় স্যার। প্রথম দিকে আমার মনে হয়েছিল ওর কথাবার্তা আইডিয়া সব অদ্ভুত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে মত পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমার ধারণা উনি অবশ্যই প্রমাণ করবেন।
.
২৪.
মিসেস অলিভার দি ব্ল্যাক বয় হোটেলের ডাইনিং হলের খোলা জানালার ধারে পাতা টেবিলের সামনে চেয়ারে বসল। জুডিথ এসে বসলো, তারপর মেনু খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।
মিরান্দার কোনো খাবার পছন্দ? –মিসেস অলিভার জানতে চাইল ওর পছন্দমতো খাবার দিতে বলব। মিনিট খানেকের মধ্যে এসে পড়বে।
চিকেন রোস্ট ওর খুব পছন্দ, তাহলে তো ঝামেলাই থাকলো না।
তোমার কি পছন্দ?
আমার তো তাই।
তিনটে চিকেন রোস্ট –মিসেস অলিভার অর্ডার দিল। তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে জুডিথের দিকে তাকিয়ে রইল।
তুমি ওভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?
ভাবছি –মিসেস অলিভার বলল।
কি ভাবছো?
ভাবছি তোমার সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানি না।
প্রত্যেকের সম্বন্ধে প্রায় একথা বলা যায়।
তার মানে বলতে চাইছো কারো সম্পর্কে জানা যায় না?
এরকম ভাবা উচিত নয়।
দুজনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। একজন পরিচারিকা ট্রের উপর খাবার সাজিয়ে নিয়ে এসে পরিবেশন করে গেল।
মিরান্দার আসতে দেরী হচ্ছে বলে জুডিথ অধৈর্য হয়ে পড়ল। একটু পরে উঠে গেলো। তারপর কিছুক্ষণ পরে ফিরে এলো গম্ভীর মুখে। ওকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। লেডিস টয়লেটেও নেই।
হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল, আমি সার্জেন্ট গুডবডি কথা বলছি। একটা পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো। আপনার দাদা আছেন?
না, আজ লণ্ডনে আছেন। ওখানে ফোন করেছিলাম, শুনলাম ওখানে থেকে রওনা হয়েছে। উনি ফিরলে বলে দেবেন আমরা পজিটিভ রেজাল্ট পেয়েছি।
তার মানে কুয়োর মধ্যে মৃতদেহ পেয়েছেন? পাঁচকান করবেন না। ইতিমধ্যে খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
মৃতদেহ কি সেই কাজের মেয়ে ওলগা সেলিলোফের?
হ্যাঁ তাই মনে হচ্ছে।
ব্যাপারটা মনে হচ্ছে খুন, ওকে ছুরি মারা হয়েছিল।
মেয়েদের টয়লেট থেকে মা চলে যাওয়ার পর মিরান্দা মিনিট খানেক কি মিনিট দুই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সে পিছনের দরজা খুলে সাবধানে বাইরে উঁকি দিল। বাইরে বাগান। সে দরজা পেরিয়ে বাইরে এসে দৌড়াতে লাগল। একটা গ্যারেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল।
পাশের রাস্তা ধরে যেতে গিয়ে দেখলো রাস্তার উপর একটা মোটর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একটা লোক চালকের আসনে বসে খবরের কাগজ পড়েছে। মিরান্দা দরজা খুলে চালকের আসনের পাশে বসে হাসতে লাগলো। গাড়ী ধীরে ধীরে এগোতে লাগলো। পাশের দাড়িওয়ালা লোকটা বলল, এখন আমরা ঠিক সময়ে ঠিক জায়ায় এসে পড়ছি। হঠাৎ পাশ ঘেঁষে একটা গাড়ি সামনের দিকে এমনভাবে বেরিয়ে গেল যে তাদের গাড়ি প্রায় ঝোঁপের মধ্যে এসে পড়ল। বেরিয়ে যাওয়া গাড়ির মধ্যে দুটি যুবক বসে। একজনের চুল কাধ পর্যন্ত লম্বা। তার চোখে প্যাঁচার চোখের মতো দেখতে চশমা। অন্য যুবকটি দেখতে স্পেনদেশীয় আর মুখের একটা পাশে বিশ্রী পোড়া দাগ।
মিরান্দা জিজ্ঞাসা করল– তোমার কি মনে হয়, মা আমার জন্য খুব চিন্তা করবে?
তোমার মায়ের চিন্তা করার সময় কোথায়? যখন চিন্তা করবে তার আগেই তুমি যথাস্থানে পৌঁছে যাবে।
লণ্ডনে এরকুল পোয়ারো ফোন কানের পাশে তুলে ধরতেই মিসেস অলিভারের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
মিরান্দা হারিয়ে গেছে। বলছ কি! কি ভাবে হারাল? আমরা দি ব্ল্যাক বয় হোটেলের লাঞ্চ খাচ্ছিলাম। মিরান্দা মেয়েদের টয়লেটে ঢুকেছিল, কিন্তু আর ফেরেনি। কেউ কেউ বলছে একজন বয়স্ক লোকের সঙ্গে গাড়ীতে চেপে কোথায় যেন গেছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, অন্য মেয়েও হতে পারে।
তোমাদের উচিত হয়নি চোখের আড়াল করা। আমি তো আগেই তোমাকে বিপদের আভাস দিয়েছিলাম। মিসেস বাটলারের কি অবস্থা? তিনি কি ভেঙে পড়েছেন?
হ্যাঁ তিনি খুবই ভেঙে পড়েছেন কান্নাকাটি করছেন। তিনি চাইছেন পুলিসে খবর দিতে। তিনি আর দেরী করতে চাইছেন না। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।
পোয়ারো বললো, আর দেরী না করে পুলিসে খবর দেওয়াটাই উচিত হবে।
আমিও ওদের সঙ্গে ফোনে যোগযোগ করছি। দেখছি কি করা যায়।
কিন্তু মিরান্দা কেন বিপদে পড়ল? তুমি জান না? তুমি জান না? জানা উচিত ছিল। — পোয়ারো বলল, মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এইমাত্র খবর পাওয়া গেল।