বাইরে বেরিয়ে এসে আমার মুখোমুখি পড়ে যায়। তারপর হল ঘর নির্জন না হওয়া পর্যন্ত ভেতরেই অপেক্ষা করে।
তবুও আপনি মুখ খোলেননি?
না। আমি –ওঃ, আমি পারিনি।
পোয়ারোর মনে হল, কথাগুলো এই দুঃখভরা পৃথিবীতে যত দুঃখ আছে এগুলো তাদের অন্যতম।
রোয়েনা বলল, আমি ভালো চেয়েছিলাম, হয়তো ছেলেটার ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার কারণ সে খুনীকে চেনা যাবে। কোনো কারণে খুনীর মনে হয়েছিল সে গাড্ডায় পড়ে গেছে, তাই ছেলেটাকে কবে নির্জনে পাবে এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। তারপর একা পাওয়ার পরই –মিসেস ড্রেক ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।
শুনেছিলাম লিওপোল্ড টাকা পয়সা যথেষ্ট খরচ করতো, কোথায় পেত? নিশ্চয়ই কেউ তার মুখ বন্ধ করবার জন্য টাকা পয়সা দিত।
কিন্তু কে, কে সেই লোক?
খুঁজে বের করতে হবে –পোয়ারো জানালো আর বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না।
.
২২.
এরকুল পোয়ারো তার নিজের মতামতের ওপরই বেশি আস্থা রাখে। পোয়ারো আর স্পেনস কিছু সময় কথাবার্তা বলবার পর, গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় এমন এক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করল। তারপর বন্ধুর সঙ্গে তার ইনসপেক্টর র্যাগলানের সঙ্গে সামান্য সময় আলোচনা করার পর গাড়ি চালিয়ে চলে গেল। কথা বলে ঠিক করে নেওয়া হয়েছে যে এ পথে যাওয়ার সময় এক জায়গায় কিছু সময়ের জন্য নামবে তারপর তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আবার ফিরে আসতে হবে লণ্ডনে। গাড়ি করে এল এলমস এ। ড্রাইভারকে জানাল ঘন্টাখানেকের মত দেরী হতে পারে তারপর দেখা করল মিস এমলি এর সঙ্গে।
পোয়ারো বললো, আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। যা বলতে চাই খুলেই বলি, আপনার সঙ্গে একটা পরামর্শ করতে চাই।
জয়েসা রেনল্ড-এর আততায়ী কে আমি জেনেছি– পোয়ারো বললো, আমার বিশ্বাস আপনিও জানেন। আপনার কোনো মতামত থাকলে জানান।
স্বীকার করছি আমার মতামত আছে তার অর্থ এই নয় যে আমাকে পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
পোয়ারো বললো, শুনুন একটা ছেলে জলে ডুবে মারা গেছে।
শুনেছেন?
হ্যাঁ একজন ফোন করে জানিয়েছে। জয়েসার ভাই। কি করে ছেলেটা এর মধ্যে এল?
পোয়ারো বললো– অর্থ দাবী করে ছিল। ওকে নিয়মিত পয়সা দিতে হতো। খুনী সুযোগের সন্ধানে ছিল, সুযোগ পেয়েই জলে ডুবিয়ে মেরেছে। আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে এ ধরনের কেসে আমি প্রথমে কি করি?
এমলিন বললো –প্রথমে বিচার চাইবেন। করুণার প্রশ্ন আসবে পরে।
ঠিক বলেছেন। শুনুন আমি লণ্ডনে যাচ্ছি। পথে কয়েকজন লোকের সঙ্গে দেখা করে কেসটা নিয়ে আলোচনা করব। তাদেরকে আমার নিজের মতামত বোঝাতে চাই।
যাওয়ার আগে কয়েকটা বিষয়ে আপনার মতামত জেনে নিতে চাই। নিকোলাস র্যানসাম আর ডেসমণ্ড হল্যাণ্ড সম্পর্কে আপনার মত কি? ওদের উপর আস্থা রাখতে পারি?
অবশ্যই আস্থা রাখা যায়। পোয়ারো বিদায় নিয়ে গাড়ীতে গিয়ে উঠলো।
.
২৩.
কোয়ারী উডে কি ঘটেছে শুনেছ?–
মিসেস বাটরাইট বাজারের ব্যাগে জিনিস ভরতে ভরতে বললো।
এলস্পেথ বললো, কোয়ারী উডে? কই আমি তো কিছু শুনিনি। দুজন মহিলা নতুন তৈরি সুপার মার্কেটে সকালের বাজার করতে বেরিয়েছে।
লোকে বলাবলি করছে ওখানকার গাছগুলো পাহাড়ের গায়ে খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। কয়েকজন পুলিশ এসেছে ওরা কাউকে ধারে কাছে যেতে দিচ্ছে না।
এলস্পেথ বিস্ময় প্রকাশ করে বলল –ওমা তাই বুঝি?
অরিয়াদে অলিভার একটা টেলিগ্রাম পেল। তাতে লেখা আছে: দয়া করে মিসেস বাটলার আর মিরান্দাকে তোমার ফ্ল্যাটে নিয়ে এস। একটুও বিলম্ব করবে না।
ডাক্তারের সঙ্গে অপারেশনের জন্য দেখা কর।
মিসেস অলিভার রান্নাঘরে এল, জুডিথ বাটলার কুইন্স ফল দিয়ে জেলি তৈরি করতে ব্যস্ত। জুডিথ –মিসেস অলিভার বললো, যাও প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও গে। আমি লণ্ডনে ফিরে যাচ্ছি, তুমি আর মিরান্দা আমার সঙ্গে যাবে। আজই যেতে হবে নাকি?
হাঁ, আমাকে তাই বলা হয়েছে।
কে বলেছে তোমার বাড়িওয়ালা?
না অন্য একজন যার কথা আমি ফেলতে পারি না। যে টেলিগ্রামটা পেয়েছি তাতে লিখিত নির্দেশ মতো কাজ করছি।
তুমি কি পাগল হয়ে গেছ অরিয়াঁদে?
খুব সম্ভব একেবারে বন্ধ পাগল। যাও প্রস্তুত হয়ে নাও। জুডিথ আর মিসেস অলিভার সুটকেস গুছিয়ে গাড়িতে তুলল। মিরান্দাও এসে গেল।
এরকুল পোয়ারো লন্ডনে চারজন লোকের সঙ্গে বসে আছে। একজন ইনসপেক্টর টিমোথি র্যাগলান, দ্বিতীয়জন সুপিরিন্টেন্টে স্পেনস, তৃতীয়জন চীফ কনস্টেবল আলফ্রেড রিচমণ্ড আর চতুর্থজন পাবলিক প্রসিকিউটার অফিসের একজন প্রতিনিধি। তারা সবাই পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখে মুখে বিভিন্ন ধরনের অভিব্যক্তি।
আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি একেবারে নিশ্চিন্ত মঁসিয়ে পোয়ারো।
পোয়ারো বললো, আমি সত্যি নিশ্চিন্ত।
আমার মতে উদ্দেশ্য খুবই জটিল। না, প্রকৃতপক্ষে জটিল মোটেই নয়। এতো সরল যে সহজে ধরা যায় না।
পাবলিক প্রসিকিউটার অফিস থেকে আসা লোকটি অবিশ্বাস ভরা চোখে তার দিকে তাকাল। আমরা প্রমাণ শীঘ্র পাব।
ইনসপেক্টর র্যাগলান বলল, অবশ্য যদি এ ব্যাপারে ভুল না হয়ে থাকে….
এর স্বপক্ষে প্রমাণ আছে। কোনো মেয়ে যখন অদৃশ্য হয় তার পেছনে বেশি কারণ থাকে না। প্রথম কারণ, কোনো পুরুষের সঙ্গে পালান। দ্বিতীয় কারণ মারা যাওয়া। এছাড়া অন্য কারণ থাকতে দেখা যায় না।