লোকের বিশ্বাস বছর দুয়েক আগে এর উপর বাজ পড়ে, ফলে কুয়োটা ফেটে দুভাগ হয়ে যায়।
সেই গল্পটা এখনও প্রচলিত। পোয়ারোকে চিন্তিত দেখালো, বললো–আচ্ছা, আমার কাজ আছে চলি। মাইকেল জিজ্ঞাসা করল, পুলিস বন্ধুদের কাছে যাচ্ছেন নাকি? আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
হ্যাঁ, আমি ক্লান্ত সত্যই খুব ক্লান্ত, পোয়ারো জানালো।
মাইকেলের দিকে তাকিয়ে পোয়ারো বললো, আচ্ছা মাইকেল তুমি তো এখানে আছো, লেসলি ফেরিয়ার নামে কোনো যুবককে চিনতে?
হঠাৎ মারা যায় তাই না?
হ্যাঁ, কে বা কারা ছুরি মেরে হত্যা করে। মান্দ্রা নামে একটা মেয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিল। তারপর অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে লেসলি মেলামেশা শুরু করে। এটা নিছক গল্পও হতে পারে।
এদিকে মাঝে মাঝে বিদেশী মেয়েরাও আসতো।
ওলগার মতো মেয়েরাও আসতো?
হা।
লেসলির সঙ্গে ওলগার বন্ধুত্ব ছিল?
ছিল। তবে মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতেন না। মাইকেল বললো, মেয়েটা খুব চাপা স্বভাবের ছিল। মাঝে মাঝে দু একজনের কাছে খুব গম্ভীরভাবে বলতো দেশে ফিরে কাউকে বিয়ে করে সংসার পাতবে।
পোয়ারো বললো– আমি জানতে চাই ওলগা সেমিনোস আর লেসলি ফেরিয়ার মেলামেশা করত কি মিসেস লেওয়েলিন স্মিথকে পোপন করে?
বেশি কিছু বলতে পারবো না। মাঝে মাঝে দুজনের মধ্যে দেখা হত। ওলগা কোনোদিন আমাকে বিশ্বাস করে কিছু বলেনি। আর লেসলি ফেরিয়ারকে তো তেমন চিনতামই না।
পোয়ারো বললো, শুনেছি ছোকরার অতীত ইতিহাস তেমন সুবিধার ছিল না। আমারও তাই বিশ্বাস ওর বিরুদ্ধে জালিয়তের চার্জ ছিল। মিসেস লেওয়েলিন মারা যাওয়ার পর তার উইল আসল কি না পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল সবই জাল।
মাইকেল পোয়ারো দিকে তাকিয়ে বললো আমি বুঝতে পারছি না আমার সাথে আপনি এ সমস্ত আলোচনা করছেন কেন?
আমি কিছু জানতে চাই। আমি সত্যের পূজারী– সত্যকে জানতে চাই। মাইকেল হেসে বললো আপনার পুলিস বন্ধুর বাড়ি যান। আমাকে একা থাকতে দিন।
৩. পাহাড়ের মাথায় উঠে
২১.
পোয়ারো পাহাড়ের মাথায় উঠে এসে দাঁড়াল। হঠাৎ তার মনে হল পায়ে আর যন্ত্রণা নেই। একটা বিপদের আঁচ পাচ্ছে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে, সুতরাং যাতে বিপদ না আসতে পারে সে চেষ্টা করা দরকার।
এলস্পেথ দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। পোয়ারোর কাছে এসে তার হাতে একটা চিঠি দিল খামের উপর বিদেশী ডাক টিকিট মারা।
ভাঁজ খুলে চিঠিটা পড়তে লাগলো পোয়ারো।
ইংল্যাণ্ডে মিঃ গোবির উপর খবর সংগ্রহের যে দায়িত্ব পোয়ারো দিয়েছিল তার উত্তরে সে এই চিঠি লিখেছে। সে ভাবতেই পারেনি এতো অল্প সময়ে খবর পাঠাতে পারবে।
ওলগা সেমিনোস নিজের বাড়িতে ফিরে যায়নি। তার পরিবারের কেউ জীবিত নেই। ওলগার এক সুধীজন বৃদ্ধা মহিলা আছে। এর কাছে সে মাঝে মাঝে চিঠিপত্র লিখতো। চিঠির বিষয়বস্তু থাকতো ইংল্যাণ্ডের জীবনযাত্রা নিয়ে। মনিবের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল না। তবু ওলগা তার কাছে টাকা পয়সা চাইলে উনি দিতেন। একেবারে খারাপ লোক ছিলেন না।
ওলগা শেষ চিঠি লিখেছিল বছর দেড়েক আগে। সেই চিঠিতে একজন যুবকের কথা লেখা আছে।
ওলগা তাহলে মাঝে মাঝে টাকা পয়সা চাইতো মনিবের কাছে। পোয়ারো ভাবলো সে টাকা কেন চাইতো কার জন্য চাইতো? তবে কি লেসলিকে মাঝে মাঝে টাকা দিত? এই টাকা কি উইল জাল করবার পারিশ্রমিক?
পোয়ারো এলস্পেথ-এর সঙ্গে ওলগা আর লেসলির অংশীদারীর কথা নিয়ে অলোচনা করল। তারপর চিঠিটা ভাজ করে পকেটে রাখলো। পোয়ারো নিজের আস্তানায় ফিরে চললো। বাড়ি ফিরে দেখলো মিসেস ড্রেক তার জন্য অপেক্ষা করছে। পোয়ারো বললো আপনাকে খুব বিষণ্ণ দেখাচ্ছে মেসেস ড্রেক।
আপনি খবরটা শোনেননি, সেই ভয়ঙ্কর খবর?
কি খবর?
লিওপোল্ড রেনল্ড মারা গেছে, কেউ ওকে খুন করেছে। স্কুল থেকে ফিরছিল কেউ ওকে নদীতে নিয়ে গিয়ে জলের মধ্যে মাথা চেপে ধরে খুন করেছে।
জয়েসার জীবনে যা ঘটেছে ওর জীবনেও তাই ঘটল। নিশ্চয়ই কোনো পাগলের কাজ। আপনাকে আগেই বলা উচিত ছিল। আপনি প্রশ্ন করেছিলেন কিন্তু আমি বলিনি। নিজেকে ভীষণ ভাবে অপরাধী বলে মনে হচ্ছে। মঁসিয়ে পোয়ারো– কান্নায় ভেঙে পড়লো রোয়েনা।
পোয়ারো বলল, আমাকে সব খুলে বলুন মাদাম।
হাঁ, আপনাকে সব খুলে বলার জন্যই এখানে এসেছি।
এলিজাবেথ আপনাকে বলেছিল আমি কিছু দেখে চমকে উঠেছিলাম।, সত্যি দেখেছিলাম, কিন্তু অস্বীকার করেছিলাম আপনার কাছে। কি দেখেছিলেন?
লাইব্রেরী ঘরের দরজা খুলে গিয়েছিল– খুব সাবধানে ভোলা হয়েছিল, তারপরেই সে বেরিয়ে এসেছিল। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসেনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিল, তারপর ক্ষিপ্র হাতে দরজা ঠেলে খুলে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল।
লোকটা কে?
লিওপোল্ড–এ ছেলেটাই তো খুন হয়েছে।
ভাবলাম লিওপোল্ট তার দিদিকে খুন করেছে তার চোখে মুখে একটা বিচিত্র অভিব্যক্তির ছাপ। ভাবলাম ছেলেটা স্ন্যাপড্রাগন অনুষ্ঠানের ঘর থেকে না বেরিয়ে কেন লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে এল?
আপনি ভেবেছিলেন, একাজ লিওপোল্ডের?
হ্যাঁ, চেহারা দেখে তাই মনে হয়।
তবে ছেলেটা নিজে খুন হয়ে যাওয়ায় বুঝলাম আমার অনুমান একেবারে ভুল। ও লাইব্রেরীতে ঢুকে দিদিকে মৃত অবস্থায় দেখে মনে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে পড়ে।