কিন্তু আপনি আমার কাছে এসেছেন বুঝতে পারছি না– মিসেস অলিভার জিজ্ঞাসা করল। সেই উইলের ব্যাপারে।
আমি ওটা নিয়ে যাইনি, কোর্টে আর পুলিস মহলে আপনার চেনা জানা লোক আছে, দেখবেন আমি যেন ঝামেলায় পড়ে না যাই। এখন আমাকে বলুন এ ব্যাপারে আমার তরফ থেকে কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজন আছে কিনা।
আপনার আর জিমের পুরো নামটা কি?
আমার নাম হ্যারিয়েট লীম্যান। আর জিমের পুরো নাম হলো জেমস জেনকিন্স।
আমার মতে আপনার উচিত হবে মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের উকিলকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলা, মিসেস অলিভার বলল, একজন ভালো উকিল নিশ্চয়ই মোটিভ আর অনুভূতি বুঝতে পারবে।
আমার হয়ে আপনি যদি ওদের বুঝিয়ে বলেন তাহলে বড় ভালো হয়।
আপনি যা করেছেন তার মধ্যে কোনো গলদ নেই। আপনার দেওয়া কৈফিয়তে যথেষ্ট যুক্তি আছে। মিসেস অলিভার বললো, আমার দিক থেকে যা করবার করব।
মিসেস লীম্যান বিদায় নিয়ে চলে গেল।
কিছুক্ষণের মধ্যে এরকুল পোয়ারো এসে প্রবেশ করল।
মিসেস অলিভার বললো, বসো, বল কি বলতে এসেছো, তারপর আমি এমন কিছু শোনাবো যা শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে যাবে।
.
১৮.
পোয়ারো চেয়ারে বসে পা দুটোকে টান টান করে দিল। মিসেস অলিভার বললে, জুতো খুলে ফেলো পা দুটোকে বিশ্রাম দাও।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পোয়ারো বললো, ঠিক চারদিন আগে জয়েসা খুন হয়েছে। শুধু মনে হচ্ছে মেয়েটাকে কে খুন করলো। বোধহয় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা কোনো মানুষের কাজ হবে। কাউকে এভাবে মারা তার কাছে এক ধরনের খেলা। তাকেই খুঁজে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
আমার মনে হচ্ছে তোমার জানার ফলাফল তোমাকে পিছিয়ে এনেছে। সামনে এগোতে সাহায্য করেনি।
কোনো সিদ্ধান্তেই পৌঁছতে পারছি না। উইল জালের ব্যাপারটাই ধরনা কেন? তোমায় যদি জানাই যে উইল জালিয়াতের ব্যাপারটা মোটেই জালিয়াত ছিল না, তাহলে?
কি বলতে চাইছো?
আসলে দুজন লোক মিসেস স্মিথ কি যেন তার নাম, তারা উইলে সাক্ষী হিসাবে সই করেছিল। পরস্পরের সামনেই তারা সই করে।
.
১৯.
মিসেস লীম্যান পোয়ারো নামটা লিখে নিল। অন্য জনের নাম জেমস জেনকিন্স, শেষ শোনা গেছে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছে আর মিসেস ওলগা সেমিনোস চলে গেছে চেকোশ্লোভেকিয়ায়।
মিসেস লীম্যান কতটা বিশ্বস্ত বলে তোমার মনে হল?
তুমি যদি মনে করে থাক উইল জালের ব্যাপারে জড়িত তাহলে ভুল করবে। আমার অনুমান ও উইলের সই করেছিল কিছু না জেনেই।
ধরলাম ওটা আসল উইল– পোয়ারো বলল, তাহলে একটা জাল উইলও ছিল।
কে বলেছে?
আইনজ্ঞরা।
সম্ভবত উইলটা মোটেই জাল করা হয়নি এসব ব্যাপারে উকিলরা কিন্তু খুবই খুঁতখুঁতে। তারা সাক্ষী জোগাড় করে আদালত পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত।
তাহলে যা ঘটেছে খুঁটিয়ে দেখা সোজা হবে।
কি ঘটেছে?
ধর পরদিন অথবা কয়েকদিন পরে কিম্বা এক সপ্তাহ পরে হয় মিসেস স্মিথ আর তার প্রিয় চাকরানীর মধ্যে তর্কবিতর্ক হয় অথবা তার ভাইপো হুগো আর তার বৌয়ের সঙ্গে কোনো কারণে সম্পর্ক মধুর হয়ে যায়, ফলে তিনি উইল ছিঁড়ে ফেলেন বা পুড়িয়ে ফেলেন।
এই ঘটনার পর মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ মারা যান। মেয়েটি সেই সুযোগের অপচয় না করে একটা নতুন উইল লিখে ফেলে মালিকের হাতের লেখা নকল করে। তাতে দুজন সাক্ষী হিসাবে সইও করে। মেয়েটা ভেবেছিল কেউ হয়তো স্বীকার করবে উইলটা দেখার কথা কিন্তু জালিয়াতির কাজ নিখুঁত না হওয়ার ঝামেলা শুরু হয়ে যায়।
সম্ভবতঃ আসল উইলটা কোয়ারী হাউসের লাইব্রেরীতে সেই বইটার ভেতরে এখনও আছে।
নাও থাকতে পারে। যতদূর জানি মিসেস স্মিথের মৃত্যুর পর কিছু আসবাবপত্র আর অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে দেওয়া হয়।
মিসেস অলিভার অন্য প্রসঙ্গে গেল। স্কুল শিক্ষয়িত্রীর কি খবর?
কোনো স্কুল শিক্ষয়িত্রীর কথা বলছেন? যাকে গলা টিপে মারা হয়েছিল; এই মেয়েটাকে আমার একটুও ভালো লাগে না। বিরক্তিকর কিন্তু যথেষ্ট চালাক ওকে আর কাউকে খুন করতে দিতে রাজি নই।
অন্য কোনো শিক্ষয়িত্রীকে?
অসম্ভব কিছু নয়।
তোমার স্বতঃলব্ধ জ্ঞানের ওপর আমার বিশ্বাস আছে।
.
২০.
পোয়ারো মিসেস বাটলারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে মিরান্দার চিনিয়ে দেওয়া রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল।
কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সুন্দর দৃশ্য ঘেরা একটা জায়গায় সে এসে পৌঁছল। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই একটা ছোট নদীর ধারে দুজন মানুষের শরীর নজরে পড়ল। ঢালু পাহাড়ের গায়ে বসে আছে মাইকেল গারফিল্ড। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে মিরান্দা বাটলার।
সহসা মাইকেল মুখ তুলে তাকাল। পোয়ারোকে দেখে বলল, এই যে মঁসিয়ে পোয়ারো? শুভ অপরাহ্ন, স্যার।
নদীরধার থেকে মিরান্দার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো– মঁসিয়ে পোয়ারো।
পোয়ারো সামনের দিকে এগিয়ে গেল। মিরান্দার কথা শুনতে পায় এমন একটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি এখানে!
মিরান্দা বললো, হা কুয়োটা খুঁজছিলাম। এদিকের কুয়ো? জঙ্গলের ভেতরে একটা কামনা পূরণের কুয়ো ছিল।
আগে যেখানে কোয়ারী ছিল, বরাবর কোয়ারী ঘিরে জঙ্গল ছিল। বুড়ি মিসেস গুডবডি জানে-মিরান্দা বলল, ও ডাইনী।
ঠিক বলেছ।
মিসেস গুডবডি বলেছে, বছরখানেক আগে নাকি কুয়োটার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পোয়ারো বললো, কেন?
খুব বিপজ্জনক বলে–মিরান্দা বলল, বছরখানেক আগে একটা বাচ্চা ভেতরে পড়ে গিয়েছিল যে… লোকে ওখানে আর যায় না।