পোয়ারো বলল, আচ্ছা সেই বিদেশী মেয়েটার কি হলো বলুন তো? লোকে যে বলে পালিয়ে গেছে?
আমার মতে আর বেশি এগোনো ঠিক হবে না, মিসেস গুডবডি চাপা কণ্ঠে বললো। পোয়ারো বললো, ঠিক আছে আপনি অনেক সাহায্য করেছেন ধন্যবাদ।
.
১৭.
ক্ষমা করবেন মাদাম, ভাবছি আপনার সঙ্গে মিনিটখানেক কথা বলবো।
মিসেস অলিভার বান্ধবীর বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে পথের দিকে তাকিয়ে ছিল। একটু আগে এরকুল পোয়ারো টেলিফোনে জানিয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যে তার কাছে আসবে।
দেখা গেল ধোপদুরস্ত পোষাক পরনে একজন ভদ্রমহিলা বারান্দার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
ভদ্রমহিলা কেমন যেন ঘাবড়ে গেছে।
মিসেস অলিভার ভেবে পেল না ভদ্রমহিলা এতো ঘাবড়ে গেছে কেন?
আপনিই তো সেই লেখিকা? অপরাধ আর খুন-জখম নিয়ে যিনি গল্প লেখেন?
হ্যাঁ, মিসেস অলিভার বলল। আমার ধারণা একমাত্র আপনিই আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন– অপরিচিতা বলল।
এখানে আসুন, বসে কথা বলুন।
— মিসেস অলিভার বলল।
অপরিচিতা মহিলা বারান্দায় উঠে একটা চেয়ার অধিকার করে বসল।
মিসেস অলিভার লক্ষ্য করল আঙ্গুলে বিয়ের আংটি রয়েছে সুতরাং সে যে বিবাহিতা সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। সে বলল, কোনো কারণে আপনাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।
একটা ব্যাপারে আপনার কাছে পরামর্শ চাইতে এসেছি। অপরিচিতা মহিলা বলল, অনেকদিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু তখন আমি এত দুশ্চিন্তা করিনি।
কোনো ঘটনার কথা বলছেন? হ্যালুইন পার্টিতে যে ঘটনাটা ঘটে গেছে।
মিসেস অলিভার নড়েচড়ে বসে বললো, আচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি?
লীম্যান, মিসেস লীম্যান। পাঁচবছর আগে আমার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমি লোকের বাড়িতে ঘর পরিষ্কারের কাজ করি। কোয়ারী হাউসে থাকতেন মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ ওঁর কাছেও কাজ করেছি। তখন কর্নেল আর মিসেস ওয়েস্ট আসেননি। জানি না ভদ্রমহিলার সাথে আপনার পরিচয় ছিল কি না।
মিসেস অলিভার বললো, না, ছিল না। এই প্রথম উডলিফ কমন্সে এসেছি। তাহলে সেই সময় যা ঘটেছিল তা আপনার জানবার কথা নয়।
মিসেস অলিভার জানাল — এখানে আসার পর এ ব্যাপারে কিছু কিছু শুনেছি বটে।
উইল সম্পর্কে পুলিসের বক্তব্যে তো শুনেছেন
–শুনেছি।
সেই উইলে মিসেস স্মিথ তার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি একটা বিদেশী মেয়েকে দিয়ে যান। মেয়েটাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার নিজের নিকট আত্মীয় কাছে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কিনা একজন বিদেশীকে উইল করে সব কিছু দিয়ে গেছেন — কেউ ব্যাপারটা মেনে নিতে পারল না। খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেল মেয়েটাই উইল জাল করেছে। মিসেস ড্রেক মানে, মিসেস স্মিথের আত্মীয়া আইনের সাহায্য নিতে তৎপর হলেন।
মিসেস লীম্যান বলল, সেই সময় আমি সঠিক কিছু জানতাম না। কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা যেন বিচিত্র বলে মনে হলো, ভাবলাম এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো সত্যি লুকিয়ে আছে।
আমি যা বলবো শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে কোনো ভুল আমি করিনি।
বেশ বলুন –মিসেস অলিভার বলল, নিশ্চয় বুঝতে পারব।
লীম্যান বলতে শুরু করল, একদিন মিসেস লেওয়েলিন হঠাৎ অসুস্থ বোধ করে আমাদের কাছে ডেকে পাঠালেন। আমি আর জিম কাছে গেলাম, তিনি ডেস্কের পিছনে কাগজ আর কলম নিয়ে বসেছিলেন। বিদেশী মেয়েটার দিকে ঘুরে বসে বললেন, তুমি এর মধ্যে থাকবে না, ঘরের বাইরে যাও। মিস ওলগা তার আদেশ পালন করল। মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের সামনে যে কাগজ ছিল সেটা একটা উইল। শেষের দিকে তার নিজের সই ছিল। আমাদের দুজনকে নিচে সই করতে বললেন, আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু আমার মনটা কৌতূহলে ভরে গেল, দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ না করে ফাঁক দিয়ে ঘরের ভিতরে চোখ রাখলাম।
কি দেখলেন?
দেখলাম উইলটা খামে ভরে মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ উঠে বুক কেসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, তারপর একটা বই বের করে তার ভাঁজে উইলটা রেখে সেটা যথাস্থানে রেখে দিলেন।
যাতে সই করলাম তাতে কি লেখা আছে জানবার কৌতূহল আমাকে পেয়ে বসল।
পরদিন মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ যখন গাড়ীতে চেপে মেলচেস্টারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, আমি তার ঘরে ঢুকলাম ঘর পরিষ্কার করতে। বুক সেল থেকে বইখানা বের করে দেখলাম, মিসেস লেওয়েলিন তাঁর সমস্ত অর্থ দিয়ে যাচ্ছেন মিস ওলগাকে, নিচে তার সই, তার নিচে আমার আর জিমের সই। তারপর উইলটা যেভাবে ছিল সেইভাবেই রেখে দিলাম।
মিসেস অলিভার কিছু বলল না, আর মিসেস লীম্যানও চুপ করে রইল।
কিন্তু পরে উইলের সত্যতা নিয়ে যখন কথা উঠল, তখন আমার সব মনে পড়ে গেল। মিসেস অলিভার জিজ্ঞাসা করলো, আপনি তখন কি করলেন?
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন লীম্যান, যা করা উচিত ছিল করিনি। আইনের ভয়ে মিস ওলগা পালিয়ে গেল। এমনও তো হতে পারে মেয়েটা সত্যই উইলটা জাল করেছিল, কিম্বা বৃদ্ধাকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছিল। সম্মোহনশক্তির সাহয্যে নাকি এরকম করা যায়।
এঘটনা কত বছর আগের? মিসেস স্মিথ মারা গেছেন দুবছর হল।
এতোদিন ব্যাপারটা আপনাকে ভাবায়নি এখন অন্যরকম ভাবছেন কেন?
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড মানে আপেল ভর্তি গামলার মধ্যে মাথা গুঁজে ধরে হত্যা করা আমাকে অন্যরকম ভাবতে বাধ্য করছে। মেয়েটা নাকি একটা খুন হতে দেখার ব্যাপারে কিছু বলেছে। মনে হল মিস ওলগা হয়তো বৃদ্ধা মহিলাকে খুন করছে সম্পত্তি পাওয়ার লোভে। নিতান্ত আইনের ঝামেলা হওয়ায় পালিয়েছে। লীম্যান থামলো।