বিদায় নিয়ে পোয়ারো হাঁটতে শুরু করল।
.
১৫.
পোয়ারো ছেলে দুটিকে খুটিয়ে দেখল। অস্বস্তিতে ভরা দুজোড়া চোখ পোয়ারোকে দেখল। ছেলে দুটির কথাবার্তা আর আচার আচরণ বয়স্কদের মতো। নিকোলাসের বয়স হবে আঠারো আর ডেসমণ্ডের সোল।
যারা সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি –
আচ্ছা এখানে ডাইনী বলে কাউকে চেন?
আপনি মাদাম গুডবডির কথা বলছেন? উনি পার্টিতে ডাইনীর ভূমিকায় ছিলেন।
তোমারা সেখানে কি ধরনের কাজ করেছো?
একটা খেলায় লাইটের কাজ।
মইয়ে উঠতে হয়েছিল?
হ্যাঁ। কিছু ছবি ছাদের তলা থেকে ঝোলাতে হয়েছিল।
ডেসমণ্ড পকেট থেকে একটা খাম বের করে ভেতর থেকে অনেকগুলো ছবি বের করে বলল, মেয়েদের ভাবী স্বামীর ফটো।
পোয়ারো কার্ডগুলি খুঁটিয়ে দেখলো।
এসবের জন্য মডেল আছে না? সবাই আমাদের লোক। মেকআপ করে ফটো তোলা হয়েছে। নিক আমার কয়েকটা ছবি তুলেছে। আর আমি নিকের ছবি তুলেছি। এগুলো আলোর আড়ালে ঝোলানো হয়েছিল যাতে ভৌতিক ব্যাপার মনে হয়, ডেসমণ্ড বললো।
নিকোলাস বললো, এগুলো দেখে মিসেস ড্রেক খুব খুশী হয়েছিলেন।
পার্টিতে বিকেলে কারা ছিল? মিসেস ড্রেক আর মিসেস বাটলার। তাছাড়া ছিলেন –একটার পর একটা পার্টিতে উপস্থিত মহিলাদের নাম বলে গেল ডেসম।
কোনো পুরুষ ছিল না?
যদি পল্লী যাজককে ধরেন তো একজন পুরুষ ছিল বৈকি।
আচ্ছা ওই মেয়েটাকে বলতে শুনেছ –জয়েসা রেনল্ডের কথা বলছি– একটা খুন হতে নাকি নিজের চোখে দেখেছে।
না, আমরা কেউ শুনিনি।
আচ্ছা পার্টিতে হয়ত এমন কিছু ঘটেছে যা অন্য কারো চোখে পড়েনি, কিন্তু তোমাদের চোখে পড়েছে।
নিকোলাস আর ডেসম স্মরণ করবার চেষ্টা করল, কিন্তু তেমন কোনো ঘটনা দেখেছে বলে মনে করতে পারল না।
তবে সকালের দিকে অধিকাংশ সময় উইটেকার ড্রইংরুমে ছিলেন, পোয়ারো বললো, উনি নিশ্চয়ই জয়েসাকে কথাগুলো বলতে শুনছিলেন, নিশ্চয়ই ওর মনে আছে কি বলেন?
নিকোলাস বললো, সম্ভবত উনি বিশ্বস্ত থাকবার আর মিস উইটেকারের দোষ ঢাকবার চেষ্টা করবেন।
আমার মনে হয় উনি সেরকম কিছু করবেন না। যদি এলিজাবেথ উইটেকার মাথা খারাপ করবার চেষ্টা করেন তাহলে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের প্রচুর ক্ষতি হবে।
সেই ধর্মযাজকের খবর কি?– ডেসমণ্ড বলল, লোকটার নিশ্চয়ই মাথার গণ্ডগোল আছে। একটু যেন অস্থির প্রকৃতির, এখানে বেশিদিন আসেনি।
ওর সম্পর্কে কেউ বিশেষ কিছু জানে না। হয়তো স্ন্যাপড্রাগন উৎসবের আগুন দেখে অস্থির হয়ে পড়েছিল। সেই সময় জয়েসার হাত চেপে ধরে বলেছিল আমার সঙ্গে এস, তোমাকে একটা জিনিস দেখাব। তারপর তাকে লাইব্রেরীতে নিয়ে গিয়ে বলেছে হাঁটু ভেঙে গামলার সামনে বস। একে বলে ধর্মান্তকরণ। তার পরেই গামলার জলে মাথা চেপে ধরে বলেছে, দেখছ?
সম্ভবত সেই প্রথমবার মেয়েটার কাছে নিজেকে ব্যক্ত করে নিকোলাস বলল, এই সব ঘটনার আড়ালে যৌন আকর্ষণ কাজ করেছে।
আনন্দে উজ্জ্বল হওয়া দুটি চোখ সাগ্রহে পোয়ারোর দিকে তাকাল।
পোয়ারো বললো, আমি খুশী হয়েছি তোমাদের কথায়। এছাড়াও তোমাদের কাছ থেকে ভেবে দেখার মতো অনেক কিছু জানতে পারলাম।
.
১৬.
এরকুল পোয়ারো আগ্রহভরা চোখে মিসেস গুডবডির দিকে তাকাল। ডাইনী সাজবার মতোই চেহারা বটে। খুশীভরা গলায় কথা বলতে লাগল।
হ্যাঁ, আমি ওখানে ঠিক সময়েই পৌঁছেছিলাম। এসব ব্যাপারে ডাক এলেই আমি ডাইনীর ভূমিকায় নামি।
কারো ভবিষ্যৎ আপনি বলে দিতে পারেন? আপনার যাদু গোলকের দিকে তাকিয়ে বলতে পারবেন কে জয়েসাকে খুন করেছে?
বলা হয়তো যাবে, কিন্তু কে করেছে বললে আপনি মেনে দিতে পারবেন না– গুডবডি বলল, বলবেন প্রকৃতি বিরুদ্ধ কথা, কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়ম না মেনে তো কত কি ঘটে যাচ্ছে।
পার্টিতে নিশ্চয়ই কিছু আপনার চোখে পড়েছে?
দেখুন শয়তানের অস্তিত্ব সব জায়গাতেই মেলে। তাদের আমরা জন্ম দিই এবং বেড়ে উঠতেও সাহায্য করি।
আপনি ডাইনী বিদ্যার কথা বলছেন?
না, আমাদের সমাজেই অনেক শয়তান আছে। এদের চেনা যায় না। তাদের সংস্পর্শে যে যায় সেও শয়তানে পরিণত হয়।
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে পোয়ারো বললো, আচ্ছা জয়েসা কি সত্যিই খুন হতে দেখেছিল?
কে বলেছে ও দেখেছে? বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। মেয়েটা খুব মিথ্যা কথা বলতো। তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকাল গুডবডি, আমার ধারণা আপনি বিশ্বাস করেননি?
বিশ্বাস করেছি। পোয়ারো বলল, যদিও আমাকে অনেকে বিশ্বাস করতে নিষেধ করেছে।
জয়েসা মেয়েটা দিদির মতো বা ভাইয়ের মতো চালাক ছিল না, কিন্তু চালাক হতে চাইতো এমন ভাব দেখাত যেন সব জানে। অপরের চোখে পড়বার জন্য যে কোনো কথা অতিরঞ্জিত করে বলত। ফলে দেখা যেত সে যা বলছে একটা কথাও সত্যি নয়।
পোয়ারো জানতে চাইলো –তার ছেলেটা কেমন? লিওপোল্ড? –গুডবডি বলতে লাগল মাত্র নয় কি দশ বছর বয়স। তবে ভীষণ চালাক। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী হবার আশা। ছেলেটা প্রত্যেকের সাথে চালাকি করে। কোনো বাছ-বিচার নেই, তাদের গোপনীয় খবর শুনে তাদের কাছে থেকে হাত খরচা আদায় করে সেই গোপনীয় কথা কাউকে না বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
মিসেস গুডবডি একসঙ্গে অনেকগুলো কথা বলে চুপ করল, তারপর সে বলল, দেখুন এ ব্যাপারে আমি কোনো সাহায্য করতে পারব না। আমার ভয় করছে।