চমকে ওঠার মতো কিছুই দেখিনি, কাউকে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতেও দেখিনি কাউকে না….
অবাক হল পোয়ারো। এমন ভাবে রোয়েনা বলছে যেন সব সত্যি বলছে। হয়তো সেই লাইব্রেরী ঘরের দরজা সামান্য ফাঁক হতে দেখেছিল, কারো আবছা শরীর নজরে পড়েছিল।
এতো জোর দিয়ে বলছে কি করে? হয়তো যে লোককে দেখেছিল, কল্পনাও করতে পারেনি তার দ্বারা এমন নৃশংস অপরাধ সংগঠিত হতে পারে। নাকি কাউকে বাঁচাতে চাইছে? হয়তো এমন একজনকে বাঁচাতে চাইছে যার বয়স খুব বেশি নয়। পোয়ারোর মনে হলো মহিলাটির মন বেশ কঠিন, তবে মাৎ। কাউকে বাঁচাবার প্রবণতা তাকে পেয়ে বসেছে।
কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে এরকুল পোয়ারো কোনো সমঝোতা করে না। সে চিরকাল আইনকে সম্মান দিয়ে এসেছে। যার উপর একবার সন্দেহ পুঞ্জীভূত হয়, সেই সন্দেহ শেষ পর্যন্ত দানা বেঁধে থাকে। তার মনে দয়া থাকলেও অপরাধীকে দয়া দেখালে তাকে আরো অপরাধী করে তোলা হয়।
মাদাম আপনার কি মনে হয় এ অপরাধ কোনো বাচ্চা কিংবা কিশোর কিশোরী কিংবা কোনো যুবক যুবতী করেছে?
করতে পারে। আজকাল উঠতি ছেলেমেয়েদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। বয়সের দোষ বলতে পারেন।
পুলিসের উচিত হবে এই কেসের সমাধান করা। কিন্তু প্রমাণ সংগ্রহ করা খুব সোজা হবে, মাদাম।
না, হবে না। আমার স্বামী যখন মারা গেলেন–উনি খোঁড়া ছিলেন, রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা গাড়ি ওঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। যে গাড়ি ধাক্কা মেরেছিল পুলিস তার হদিশ। করতে পারেনি।
চাপা দিয়ে পালান গাড়িটা পুলিস হদিশ করতে পারল না? পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল।।
না রোয়েনা বলল, সুস্থ মনে কেউ অপরাধ করে না।
তাহলে জয়েসার পরিণতি এমন হল কেন?– পোয়ারো বললো, কারো শক্ত দুটি হাতে ইচ্ছা করে মেয়েটার মাথা জলের মধ্যে চেপে ধরে রেখেছিল যাতে তার জীবন-দীপ নিভে যায়।
আমি জানি, আমি জানি– রোয়েনা চীৎকার করে উঠলো, আমাকে আর মনে করিয়ে দেবেন না। –উঠে দাঁড়িয়ে অস্থিরভাবে পায়চারি করতে লাগলো।
পোয়ারো কঠিন কণ্ঠে বললো, আমাদের এখন জানতে হবে খুনীর কি ধরনের মোটিভ এখানে কাজ করেছে।
এধরনের অপরাধে কোনো মোটিভ থাকে না।
তবে কি ধরনের মানসিক রোগী এই খুন করে আনন্দ পেতে চেয়েছে?
আসল কারণ খুঁজে বের করা সহজ হবে না। এমন কি কোনো মনোবিজ্ঞানীও বলতে পারবে না।
জয়েসা সেইদিনই কয়ে ঘন্টা আগে জোর দিয়ে বলেছিল একটা খুন হতে দেখেছে।
প্রত্যেকে একই কথা বলছে।— উঠে দাঁড়িয়ে পোয়ারো বললো, যে কথা প্রত্যেকে বলছে সেটাই সঠিক বলে আমি মনে করি। তবে মিস উইটেকার আমায় বলেছেন –তাহলে ওর কাছে সব জানতে চাইছেন না কেন? উনি একজন মনস্তাত্বিক।
পোয়ারো রোয়েনার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার মাসীমা মিসেস লিওয়েলিন স্মিথকে দেখাশোনা করবার জন্য মাইনে করা একটি বিদেশী মেয়ে ছিল?
হ্যাঁ, ছিল। উনি মারা যাওয়ার পর কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেন চলে গেছে।
নিজের ভালোর জন্যই হয়তো চলে গেছে।
তা জানি না। তবে মেয়েটা মাসীমার উইল জাল করেছিল কিম্বা কেউ তাকে জাল করতে সাহায্য করেছিল।
একজন যুবকের সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব ছিল। সে মেলচেস্টারে একটা সলিসিটার অফিসে চাকরী করত। অতীতে কিছু জাল করবার অপরাধে তার জেল হয়েছিল।
পোয়ারো বললো, মেয়েটা নাকি একটা ভাঙা সংসার থেকে এসেছিল?
রোয়েনা ড্রেক মুখ তুলে মিটমিট হাসা পোয়ারোর দিকে তাকাল। কোনো কথা বললো না।
আমাকে যেসব কথা বললেন তার জন্য ধন্যবাদ, মাদাম।
পোয়ারো বিদায় নিয়ে রাস্তায় নামল। লেসলি সিমেন্ট্রি যাওয়ার রাস্তা ধরে এগিয়ে গেল কিছুদূর। কবরস্থানে পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না। বছর দশেক আগে তৈরি হয়েছে। উডলিফ কমন্সে মানুষজন বাড়ার সঙ্গে এই কবরস্থানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। চারদিক কাটা তার দিয়ে ঘেরা।
কবরস্থানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পোয়ারো একটা কবরের সামনে এসে দাঁড়াল। কবরের উপর দাঁড় করানো একটা পাথরে লেখা আছে রোয়েনা আর বেলা ড্রেকের প্রিয়তম স্বামী হুগো এডমণ্ড ড্রেকের স্মৃতির উদ্দেশ্য। ইনি আমাদের ছেড়ে গেছেন ৩০শে মার্চ, ১এ–
বিচিত্র চরিত্রের রোয়েনা ড্রেকের কথা থেকে পোয়ারোর মনে হয়েছে মিঃ ড্রেকের জীবনে মৃত্যু নেমে এসেছে আশীর্বাদের মতো।
পোয়ারো, এই কবরস্থান পরিচ্ছন্ন রাখে যে মালী তার কাছ থেকে জানতে পারল যে মিঃ ড্রেক চমৎকার মানুষ ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন খোঁড়া।
দুর্ঘটনার মারা গেছেন, তাই না?
হ্যাঁ, গোধূলি বেলায় রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন একটা মোটর গাড়ী ধাক্কা মেরে পালায়। মিঃ আর মিসেস ড্রেক আদর্শ দম্পতি।
ভদ্রমহিলা এখানে আর বেশিদিন থাকবেন না। এখানে সামাজিক কাজও অনেক করেছেন। সবাই ওঁকে শ্রদ্ধা ভক্তি করে।
এখন উনি এমন কোনো জায়গায় বাকি জীবন কাটাতে চান যেখানকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারবেন।
কোথায় যেতে পারেন? ঠিক জানি না। তবে স্পেন, পতুর্গাল কিম্বা গ্রীসের কোনো দ্বীপে যেতে পারেন।
পোয়ারো হাসল। সে বলল, এখন চলি…আচ্ছা, বলতে পারবে নিকোলাস র্যানসাম আর ডেসমণ্ড হল্যাণ্ড কোথায় থাকে?
চার্চ পেরিয়ে গিয়ে বাঁহাতের তৃতীয় বাড়িটায়। প্রত্যেকদিন মেলচেস্টারে যায় কারিগরি ব্যাপারে শিক্ষা লাভ করতে। এতক্ষণে বাড়ি ফিরে আসে।