যে কেউ যা খুশী সন্দেহ করতে পারে।–পোয়ারো বললো, প্রয়োজনে আরও কিছু খোঁজার চেষ্টা করতে পারি। আপনি শুনেছেন বোধ হয়। মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে জয়েসা জোর দিয়ে বলেছে যে সে একটা খুন হতে স্বচক্ষে দেখেছে এবং এই কথা অনেকে শুনেছে।
এধরনের জায়গায় নানা ধরনের কানাঘুষা শোনা যায়। এই ধরনের কোনো কথা যদি কেউ রঙ চড়িয়ে বলে
আচ্ছা আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই একটি বিদেশী মেয়ের অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা, ওর নাম ছিল খুব সম্ভব ওলগা কিম্বা সোনিয়া। মিসেস লেওয়েলিনের সঙ্গদান কিম্বা নার্সের কাজ করত।
হা আগেও কটা মেয়ে ওঁর কাছে কাজ করেছে, তাদের মধ্যে দুজন ছিল বিদেশী। একজন বিদেশী মেয়ের সঙ্গে চাকরীতে ঢোকার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একদিন তুমুল ঝগড়া হয়, অপর মেয়েটা ছিল একটু বোকা ধরনের। মিসেস স্মিথ তার জীবন এমন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন যে চাকরী করতে পারেনি। তবে ওলগার সঙ্গে ওর বনিবনা ভালই হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ছে মেয়েটা দেখতে তেমন ভালো ছিল না। প্রতিবেশীরা তাকে সুনজরে দেখতো না।
কিন্তু মিসেস লেওয়েলিন ওকে বেশ পছন্দ করতেন–পোয়ারো বলল, ভদ্রমহিলা তার উইলে অনেক অর্থ মেয়েটিকে দিয়ে যান।
হ্যাঁ, এটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। একদিন জানা গেল, উইলটা জাল, সইয়ের সঙ্গে মিসেস লেওয়েলিনের সইয়ের মিল নেই। জানা গিয়েছিল ওলগা মাঝে মাঝে মালিকানার হাতের লেখা নকল করে মিসেস লেওয়েলিনের চিঠির জবাব দিত। ভদ্রমহিলার মৃত্যুর পর ওলগা ভেবেছিল সবাই জাল উইলটা মেনে নেবে, কিন্তু হাতের লেখা বিশেষজ্ঞরা শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়নি।
আইনের সাহায্য নেওয়া হলে ও প্রথম শুনানীর তারিখ পড়বার আগেই মেয়েটা ভয়ে আত্মগোপন করে।
.
১৩.
এরকুল পোয়ারো বিদায় নেওয়ার পর জেরেমি ফুলার্টন ডেস্কের পিছনে বসে দূরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। মনটা অতীতের ঘটনায় ফিরে যাচ্ছে। ঠিক দুবছর আগেকার ঘটনা।
তার চোখের সামনে ফুটে উঠলো একটা দৃশ্য। একটা মেয়ে সামনের চেয়ারে বসে আছে। বেঁটে আর মোটাসোটা চেহারা। শ্যামবর্ণা। চাহনিতে জড়ান দারিদ্রের ছাপ। মেয়েটা ছিল সেই ধরনের যার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সংগ্রাম করে আর প্রতিবাদ করে যায় সত্য রক্ষার্থে। কে জানে এখন মেয়েটা কোথায় আছে? ভাবল ফুলার্টন।
ওলগা হয়তো মধ্য ইউরোপে ফিরে গেছে। সেখান থেকেই এসেছিল। নিজের নিরাপত্তার জন্য ফিরে যাওয়া ছাড়া তার সামনে অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।
জেরেমি ফুলার্টন আইনের পূজারী, বিচারকের দুর্বল রায় তার কাছে ঘৃণ্য। তবে তার মনে যে সমবেদনা বা দুঃখবোধ নেই তা নয়। ওলগা সেমিলোফের জন্য ও সে দুঃখ করেছে। ওলগা বলেছিল–আমি বিদেশী মেয়ে, কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারবো না যে উইলটা জাল নয়। আমাকে জেলে পোরা হবে। আতঙ্কিত স্বরে ওলগা বলেছিল, আর কখনও বেরিয়ে আসতে দেবে না।
অনেকে বলছে আমি নাকি উইল জাল করেছি, হাতের লেখা নাকি আমার নিজের। উইলে ঝিয়ের সই আছে, সই আছে মলির।
অবিশ্বাস করছি না। তবে তোমার হয়ে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তাহলে দেখছি লুকিয়ে থাকাই ঠিক হবে–ওলগা বলেছিল, আমাকে খুঁজে না পেলে আমার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। ইংল্যাণ্ড থেকে পালিয়ে যাবো। একজন চেনা লোক আছে যে পাশপোর্ট আর ভিসা জাল করতে পারে।
শোন!–ফুলার্টন বলেছিল, তোমার জন্যে দুঃখবোধ হচ্ছে। একজন উকিলের কাছে তোমায় পাঠাচ্ছি সে সাহায্য করতে পারে। পালাবার কথা ভেবো না।
ওলগা বলেছিল, কেউ নিশ্চয়ই আমায় সাহায্য করবে। তার সাহায্যে আমি আত্মগোপন করব, কেউ খুঁজে পাবে না আমায়।
সত্যিই তাই, কেউ ওলগার দেখা পায়নি সেই থেকে, মেয়েটা যেন হাওয়ায় উবে গেলো।
.
১৪.
এ্যাপল ট্রীজ পৌঁছে এরকুল পোয়ারো মিসেস ড্রেকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। সে খবর দিয়েছে আসতে বেশি দেরী হবে না। বেশ কয়েকজন মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। ড্রয়িং রুমের ওপাশ থেকে।
শেষ পর্যন্ত দরজা খুলে প্রবেশ করলো মিসেস ড্রেক। সে সবিনয়ে বললো, বসিয়ে রাখার জন্য দুঃখিত মঁসিয়ে পোয়ারো। বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি? মিসেস অলিভার কি এখন জুডিথ বাটলারের কাছে আছেন?
হ্যাঁ, আছেন পোয়ারো জানালো, তবে দুএকদিনের মধ্যেই লণ্ডনে ফিরে যাবে।
বেশ আমুদে। আচ্ছা এই নৃশংস ঘটনা সম্পর্কে উনি কি ধারণা পোষণ করেছেন?
কিছুই না- পোয়ারো বলল, আপনি কি ধারণা পোষণ করেছেন তাই বলুন। ধরুন, এমন কিছু দেখেছেন তখন কোনো গুরুত্ব দেননি কিন্তু পরে সেই ঘটনা নিয়ে চিন্তা করেছেন আর অর্থও খুঁজে পেয়েছেন। এলিজাবেথ উইটেকারের ধারণা আপনি কিছু দেখে ছিলেন পার্টিতে।
রোয়েনা সবিস্ময়ে মাথা কঁকালো। সে অস্ফুট কণ্ঠে বললো, কই তেমন কিছু তো মনে পড়ছে না। পোয়ারো বললো–একটা ফুলদানী নিয়ে ঘটনা।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, হ্যাঁ, মনে পড়েছে। সিঁড়ির কোণে ফুল দিয়ে সাজানো একটা কাঁচের বড় ফুলদানী রাখা ছিল। সন্দেহ হওয়ায় ভেতরে আঙুল ডুবিয়ে দেখি এক ফোঁটাও জল নেই। তাই বাথরুমে ঢুকে জল ভরে নিয়ে আসি।
পোয়ারো বললো, ইউটেকারের ধারণা, কোনো কিছু দেখে আপনি চমকে উঠেছিলেন। কাউকে লাইব্রেরী ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে দেখেছিলেন?