হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছো। পোয়ারো মাইকেলকে জয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে তেমন কিছু খবর সংগ্রহ করতে পারলে না।
পোয়ারো সতর্ক পদে এগিয়ে চললো। কিছুদূর এসে দেখলো পথ তিনভাগে ভাগ হয়ে গেছে। সে মাঝের পথটা ধরে কিছুদূর এগিয়ে দেখলো একটা গাছের ডালের ওপরে তার অপেক্ষায় বসে আছে একটা মেয়ে।
মেয়েটা বললো, তুমি এরকুল পোয়ারো, তাই না?
হ্যাঁ, ওটাই আমার নাম।
মেয়েটার নাম মিরান্দা। মেয়েটি বললো, এখানে মানুষ খুব একটা আসে না, বোধ হয় ভয় পায়।
কেন ভয় পাবে কেন?
অনেকদিন আগে এখানে একজন মহিলা খুন হয়েছিলেন, তখন অবশ্য বাগান তৈরি হয়নি। পথেরের কোয়ারী ছিল, মৃত অবস্থায় তাকে সেখানে পাওয়া যায়। সেই পুরোন প্রবাদ বাক্য তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই–তুমি জন্মেছ ফাঁসিতে ঝোলার জন্য অথবা জলে ডোবার জন্য।
জয়েসাও জলে ডুবে মরেছে, মা আমাকে বলতে চায়নি, তবে ব্যাপারটা একেবারে বাজে। তোমারও কি তাই মনে হয় না।
জয়েসা তোমার বান্ধবী ছিল? জয়েসার খুন হওয়ার কথা তুমি কার কাছে শুনলে?
মিসেস পেরিংএর কাছে আমাদের রান্নার লোক। ঘর পরিষ্কার করতে আসে মিসেস মিনে, সে বলেছিল কে যেন জয়েসার মাথা এক গামলা জলের মধ্যে চেপে ধরেছিল।
কে ধরেছিল আন্দাজ করতে পার?
অত ভেবে দেখিনি, আমি তো পার্টিতে যাইনি। আমার জ্বর হয়েছিল বলে মা আমায় নিয়ে যায়নি। তবে চেষ্টা করলে জানতে পারি।
মিরান্দাকে অনুসরণ করে পোয়ারো একটা বাগানে ঢুকলো। একটা গোলাপ বাগান। পেছনের একটা দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। মেয়ের সঙ্গে মায়ের চেহারার যথেষ্ট মিল আছে। জুডিথ বাটলারের বয়স হবে পঁচিশের মতো। মেয়ের চেয়েও সুন্দরী।
জুডিথ হাসিমুখে বললো-মঁসিয়ে পোয়ারো, আরিয়াদের কথামতো এখানে এসেছেন। বলে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মিসেস অলিভার কিছু করতে বললে অস্বীকার করতে পারি না-পোয়ারো বললো।
কি বাজে কথা বলছ!–মিসেস অলিভার প্রতিবাদের সুরে বলল।
ওঁর ধারণা যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে আপনি তার সমাধান করতে পারবেন।
জয়েসা যে খুন হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না।-পোয়ারো বলল।
মিসেস অলিভার বলল, তুমি ইতিমধ্যেই হয়তো অনেক কিছু জেনেছে।
জুডিথ চা তৈরি করতে বসলো, মিরান্দা প্রত্যেকের প্লেটে কেক আর স্যাণ্ডউইচ পরিবেশন করলো।
চা পান করতে করতে নানাধরনের গল্প এবং আলোচনা চললো। কথায় কথায় জুডিথ বললো, আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে মঁসিয়ে পোয়ারো কেন জয়েসার নৃশংস পরিণতি ঘটলো। যতক্ষণ না জানতে পারা যাচ্ছে আমার বাচ্চার কথা ভেবে এক মুহূর্তের জন্য শান্তি পাব না।
বিদায় দেবার আগে পোয়ারো জানালো মেয়েকে সাবধানে রাখতে আর ও জানালো আগামী কাল মেলচেস্টারের মেসার্স ফুলার্টন হ্যারিসন আর লিডবেটার কোম্পানীর সঙ্গে সাক্ষাতের দিন ধার্য করা হয়েছে উইল জাল আর কয়েকটা বিষয়ে কথা বলার জন্য।
.
১২.
একটা পুরো বাড়িতে ফুলার্টন হ্যারিসন আর লিডবেটার কোম্পানী অবস্থিত ছিল। হ্যারিসন আর মিঃ আইকিনসন এবং যুবক মিঃ কোল আর আছে পুরোন পার্টনার মিঃ জেরেমি ফুলার্টন।
রোগা আর বয়স্ক ব্যক্তি এই ফুলার্টনের কথাবার্তা ধূর্তামিতে ভরা একেবারে খাঁটি আইনবিদের মত।
আপনিই মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো?–মিঃ ফুলার্টন জিজ্ঞাসা করল। তার হাতে রয়েছে নোট লেখা একটুকরো কাগজ। পোয়ারো ঘাড় নাড়ল, হ্যাঁ।
মিঃ ফুলার্টনকে তার পরিচিতি দিয়ে চিঠি দিয়েছে পুলিস ইনসপেক্টর হেনরী র্যাগলান আর স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের অবসর প্রাপ্ত পুলিস সুপার স্পেনস। ধাতস্ত হতে মিঃ ফুলার্টনের মিনিট চারেক সময় লাগলো। তারপর সে বললো, বলুন আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি? দেখেশুনে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা জয়েসা রেনল্ড নামে সেই মেয়েটা সম্পর্কে। বুঝতে পারছি না আপনাকে কিভাবে সাহায্য করবো। ভালো করে কিছুই জানি না।
কিন্তু আমি শুনেছি আপনারা ড্রেক পরিবারের আইন বিষয়ক পরামর্শদাতা?
হা এবার মনে পড়েছে হতভাগ্য হুগো ড্রেক।
আপনারা তো মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের আইন বিষয়ক পরামর্শদাতা ছিলেন?
হা বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন।
তার মৃত্যু এসেছে অপ্রত্যাশিতভাবে।
ফুলাৰ্টন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পোয়ারোর দিকে তাকালো। সে বলল, ওকথা আমি বলব না। ওঁর হার্টের অবস্থা খারাপ ছিল, তাছাড়া স্নায়বিক রোগেও ভূগছিলেন–অমূলকভাবে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়তেন।
পোয়ারো বললো, অন্য বিষয়ে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। আপনার কর্মচারী ছিল লেসলি ফেরিয়ার তার সম্পর্কে কিছু খবর জানতে চাই।
মিঃ ফুলার্টনের দুচোখে বিস্ময় পুঞ্জীভূত হল। ওর সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারবো না। ওকে ছুরি মারা হয়েছিল, যতদূর মনে পড়ছে পুলিস সন্দেহ করেছিল কাজটা কার, কিন্তু প্রমাণের অভাবে কিছু করতে পারেনি। গ্রীন সোয়ানের কাছে বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়ে ফেরার পথে আততায়ীর হাতে ছুরিকাহত হয়।
কেউ ওকে ছুরি মারতে দেখেনি। যেমন ধরুন কোনো বাচ্চা ছেলে বা মেয়ে?
গভীর রাতে? অসম্ভব।
আমার কাছে কিন্তু অবাস্তব মনে হচ্ছে না। শিশুরা অনেক সময় এ ধরনের দৃশ্য দেখে ফেলে। যে দৃশ্য দেখে শিশুরা ভয় পায় সেই দৃশ্যের কথা তারা সাধারণতঃ বলে না।
মিঃ পোয়ারো, আমার কাছে আপনার আসার উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। আপনি কি জয়েসা রেনল্ড আর লেসলি ফেরিয়ারের মৃত্যুর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে বলে সন্দেহ পোষণ করেছেন?