মিস এমলিন ঘর থেকে চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পরে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো একজন চল্লিশ বছরের মহিলা। মাথার চুলের রঙ পিঙ্গল, ছোট করে ছাঁটা।
আপনি মঁসিয়ে পোয়ারো –মিস উইটেকার জিজ্ঞাসা করল। আপনি নাকি আমার সাহায্য চান? মিস এমলিন এই ধরনের কথাই বললেন।
মিস এমলিন যখন বলেছেন আপনি নিশ্চয়ই সাহায্য করতে পারবেন। বসুন, মিস ইউটেকার।
এলিজাবেথের বুক তোলপাড় করা একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। সে বলল, আমার অনুমান আপনি জয়েসা রেনল্ড এর ব্যাপারে এসেছেন।
পোয়ারো বলল, ঠিক ধরেছেন।
বলুন কি জানতে চান?
দেখুন, সেদিন সন্ধ্যায় পার্টিতে যা ঘটেছিল আমার জানা দরকার। আপনি পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন।
ছিলাম। চমৎকার পার্টি হয়েছিল। নানা বয়সের প্রায় ত্রিশজন উপস্থিত ছিল। আপনি বোধ হয় জানতে চান আমার চোখে বিশেষ কিছু পড়েছে কিনা বা কোনো ঘটনার উপর গুরুত্ব দিয়েছি কিনা?
হ্যাঁ, পোয়ারো বললো, যা বলবার নিঃসংকোচে বলুন।
যেমন আশা করা গিয়েছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠান ভালোভাবেই শেষ হয়। শেষ অনুষ্ঠান ছিল স্ন্যাপড্রাগন ফুল পোড়ান। ছেলেমেয়েরা চিৎকার করছিল আর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছিল সারা ডাইনিং হলে। ঘরের মধ্যে তখন ভীষণ গরম। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে হলঘরে এলাম। হল ঘরে এসেই আমার নজরে পড়ল দোতলায় যে সিঁড়ি উঠে গেছে তার ল্যাণ্ডিংয়ে এসে দাঁড়ালেন মিসেস ড্রেক। হাতে ফুল আর পাতা ভর্তি একটা বড় ফুলদানী। ঘুরে যাওয়া সিঁড়ির কোণে দাঁড়ালেন কি যেন চিন্তা করলেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর লাইব্রেরীর ঘরের দিকে তাকালেন।
তারপর–পোয়ারো নড়ে চড়ে বসল।
নেমে আসার আগে নিশ্চল অবস্থায় লাইব্রেরীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। হাতে ধরা ফুলদানী হাত থেকে মেঝেয় পড়ে গুঁড়িয়ে গেলো।
আপনি নিশ্চিত যে মিসেস ড্রেক কিছু দেখে চমকে উঠেছিলেন।
হ্যাঁ। সম্ভবত আশা করেননি এমন কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেখে চমকে উঠেছিলেন। হাত থেকে ফুলদানী পড়ে যায়।
মিসেস ড্রেক তারপর কি করলেন?
বিচলিত হয়ে কিছু যেন বলতে চাইলেন।
আপনি নিশ্চিত যে উনি চমকে উঠেছিলেন?–পোয়ারো জানতে চাইলো।
আমার তো তাই মনে হয়েছে, মঁসিয়ে পোয়ারো।
তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, একটু আগে ওই লাইব্রেরী ঘর থেকে বেরিয়ে মানুষের উপস্থিতি বুঝতে পেরে আবার ভিতরে ঢুকে যে দরজা বন্ধ করে দিল, সে কে? তারপর ধরা যাক অতিথিরা যখন খুব ব্যস্ত, সে তখন ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে অবশ্য মৃতদেহ আবিষ্কারের আগেই। আপনাকে আর একটা প্রশ্ন করতে চাই। নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন পার্টিতে কোনো খেলার পর কোনো খেলা হয়?
মনে হচ্ছে পারব–এলিজাবেথ সামান্য সময় চিন্তা করে বলল, প্রথমে হয় বঁটার প্রতিযোগিতা, তারপর হয় বেলুনের খেলা, এরপর হয় আয়নার খেলা। সব খেলার শেষে হয় স্ন্যাপড্রাগনের খেলা। জয়েসাকে শেষ দেখা যায় ময়দার খেলায়।
আচ্ছা আপনি তো স্কুলে পড়ান। বছর দুই আগে এই স্কুলে জেনেট হোয়াইট নামে একটি মেয়ে পড়তো তাকে আপনি চেনেন?
এলিজাবেথ সহসা আড়ষ্ট হয়ে পড়লো। একটু বিব্রত বোধ করে বললো, এই সব ঘটনার সঙ্গে জেনেটের সম্পর্ক কোথায়?
পোয়ারো বললো, থাকতেও তো পারে। আচ্ছা জয়েসা জোর দিয়ে বলছে যে কয়েক বছর আগে সে একটা খুন হতে দেখেছো, এটা কি জেনেটের খুন হওয়ার ব্যাপার বলে আপনার মনে হয়? জেনেট হোয়াইট কিভাবে মারা যায়?
তাকে শ্বাসরোধ করে মারা হয়। একরাতে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল– সম্ভবত একা নয়।
আচ্ছা, জয়েসা কিভাবে এই ঘটনা দেখতে পারে বা জানতে পারে?
কোয়ারী উডের কাছে একটা সরু গলিতে ঘটনাটা ঘটেছে। তখন তার বয়স নিশ্চয়ই দশ এগারো হবে।
পুলিস এই কেসটার কোনো কিনারা করতে পারেনি?
এলিজাবেথ মাথা নাড়ল। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাতে বাঁধা ঘড়িতে সময় দেখল। তারপর সে বলল, এখন আমায় যেতে হবে।
পোয়ারো বললো, কষ্ট করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
২. কোয়ারী হাউসের দিকে
১১.
এরকুল পোয়ারো কোয়ারী হাউসের দিকে মুখ তুলে তাকালো। রানী ভিক্টোরিয়া যুগের বাড়ি, প্রত্যেকটি ঘর মূল্যবান আসবাবপত্রে সাজানো।
সদর দরজার কলিং বেল বাজাতেই এক বৃদ্ধা মহিলা দরজা খুলে দিয়ে জানালো যে কর্নেল আর মিসেস ওয়েস্টন লণ্ডনে গেছেন, ফিরতে পরের সপ্তাহ হবে। কোয়ারী উড সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই সে জানালো বাগানটা জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। রাস্তা ধরে পাঁচ মিনিট হাঁটলে প্রবেশ পথ পড়বে। লোহার গেট-এর গায়ে একটা নোটিশ বোর্ড আছে।
পোয়ারো সহজেই রাস্তার সন্ধান পেয়ে গেল। রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে গাছ আর ঝোঁপের মধ্যে দিয়ে সে নিচের দিকে নেমে এল।
এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। মনটা আনমনা হয়ে গেল। তার মনে পড়তে লাগলো একটা জাল উইল আর একটা মেয়ের কথা। সেই মেয়েটার নামে উইলটা জাল করা হয়েছিল। তারপর মেয়েটা বলা নেই কওয়া হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। একজন পেশাদার শিল্পী এখানে এসেছিল অবিন্যস্ত পাথরের কোয়ারীতে একটা মনোমুগ্ধকর বাগানের রূপ দিতে। সেই শিল্পীর নাম মাইকেল গারফিল্ড।
কোয়ারী হাউসের লোকগুলোর কথা মনে পড়ল পোয়ারোর, নামগুলো জেনে নিয়েছে। বৃদ্ধ কর্নেল আর তার স্ত্রী থাকেন। এই বাড়িতে বর্তমানে যেই বাস করুন না কেন মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের মতো ভালোবাসতে কেউ পারবে না। রাস্তায় হাঁটতে লাগলো পোয়ারো। কিছুদূর গিয়ে দেখা হলো স্থপতি-শিল্পী মাইকেল গারফিল্ড-এর সঙ্গে। বিচিত্র হাসি হেসে মাইকেল বললো, আপনাকে আমি চিনি। একজন কৃতি মানুষের অনুরোধে আপনি এখানে এসেছেন। রক্তের দাগ অনুসরণ করে আপনি এগোচ্ছেন।