আমাদের ইংরাজ সরকারও হয়েছে তেমনি, আগ বাড়িয়ে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে। নাৎসীরা সব কমবয়সিই হয়-কার্ল ছোকরারও সেই বয়স। লক্ষ করে দেখবেন, তার চালচলনও সন্দেহজনক মনে হবে।
টমি মৃদু হাসল। বলল, অবস্থা যা দেখছি প্রেত-তাড়ানো ওঝা-বদ্যির দরকার এখন আমাদের দেশে।
-তারা কী করবে?
–কেন, টমি বলল, গন্ধ-শুঁকেই গুপ্তচর ধরে দেবে।
মেজর মাথা দোলালেন। বললেন, ঠিক বলেছেন গন্ধ শুঁকেই গুপ্তচর ধরা গেলে খুবই ভালো হত।
কথা বলতে বলতে দু-জনে ক্লাবের সামনে উপস্থিত হলেন। টমি এই ক্লাবের অস্থায়ী সদস্য।
ময়দানে নামার মুখে পাশ থেকে হ্যাল্লো সম্বোধন শুনে দু-জনেই ঘুরে তাকালেন। আর এক খেলোয়াড় এগিয়ে আসছেন।
মেজর উল্লাসে বলে ওঠেন, আরে এসো এসো হেডক। মিঃ বেরেসফোর্ড, ইনি হলেন আমার পুরোনো বন্ধু অ্যাডমিরাল হেডক। এখন অবশ্য স্থানীয় এ. আর. পি.দের কামাণ্ডার।
ততক্ষণে এগিয়ে এসেছেন কামাণ্ডার হেডক। বন্ধুর বন্ধু টমির সঙ্গে পরিচিত হয়ে সোল্লাসে করমর্দন করলেন।
আমার বন্ধু ব্লেচলি আপনাকে পেয়ে বেশ আনন্দেই আছে দেখছি, হেসে বললেন হেডক, তবে ওর আসল আনন্দ কিসে জানেন, কিহে ব্লেচলি, তাহলে বলি, মেয়েরা বসে গালগল্প করবে, উল বুনবে, ব্লেচলি তাদের মধ্যে উপস্থিত থেকে উপভোগ করবে।
কথা শেষ করে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে সশব্দে হেসে উঠলেন তিনি।
মিঃ ব্লেচলিও পালটা আক্রমণ করলেন, তাহলে তো মিস পেরিনার কথা আমাকে বলতেই হয়।
–শীলা। সত্যিই চমৎকার মেয়ে। রূপও আছে যাই বলো।
–ইদানীং অবশ্য তাকে নিয়ে আমাকে বিশেষভাবে ভাবতে হচ্ছে। বললেন ব্লেচলি।
সকলে ক্লাবঘরের বারান্দায় এসে বসলেন। মদ্যপানের ছোট্ট আসর বসল।
হেডক মিঃ ব্লেচলির দিকে তাকিয়ে বললেন, এবার বলো, শীলা সম্পর্কে কী বলছিলে তুমি।
ব্লেচলি ঝাঁঝের সঙ্গে বললেন, সান্স সৌচির সেই জার্মান ছোকরা–তোমার শীলার সঙ্গে খুব ভাব জমেছে
-হুম, লক্ষ্য করেছ? আজকালকার মেয়েরা কী হয়েছে বলে তো, নীতিবোধ বলে কিছু নেই। শত্রুর সঙ্গে ঘর বাঁধতেও আটকাচ্ছে না। হামেশাই এরকম ঘটনা চোখে পড়ছে।
–ওই শীলা মেয়েটাও অঘটন ঘটালো বলে।
কথাপ্রসঙ্গে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির বিষয়ও বাদ থাকল না। কামাণ্ডার হেডক একসময় বললেন, এই লিহাম্পটনের অবস্থাও মোটে ভালো নয় হে। যে কোনো দিন জার্মান ছত্রীবাহিনী নেমে পড়তে পারে। ওপরমহলের ব্যবস্থাপনা যে কীরকম বুঝতে পারি না। কাছে ধারে একটা বিমানবিধ্বংসী কামান পর্যন্ত বসানো হয়নি।
হেডকের আলোচনা বিশেষ জমল না। কেন না, মেজর ও টমি উৎসাহ বোধ করলেন না। ওদের ওঠবার তাড়া ছিল।
বিদায় জানাবার আগে হেডক তাদের দুজনকে নিজের বাড়িতে একদিন মদ্যপানের আমন্ত্রণ জানালেন।
.
মধ্যাহ্নভোজের কিছু পরেই টমি সান্স সৌচি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। আপন মনে ঘুরতে ঘুরতে লিহাম্পটনের এক প্রান্তে চলে এলো। দুটো পত্রিকা নিয়ে পুরোনো জেটির ধার ধরে হাঁটতে লাগল।
একটা মাছ শিকারের মঞ্চে ছিপ হাতে বসেছিলেন একজন বয়স্ক লোক। ফাতনার দিকে নিবদ্ধদৃষ্টি।
এই বৃদ্ধ আমাদের পরিচিত। ইনি হলেন ছদ্মবেশী মিঃ গ্রান্ট।
টমি এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, কিছু মিলল?
মাছ-শিকারি ফাতনা থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই মাথা ঝাঁকান। মৃদুস্বরে জবাব দেন, ঠোকরাচ্ছে। কম।…মিঃ মিয়াদো, এগুলেন কদ্দূর?
–সবে হামাগুড়ি দিচ্ছি। বলল টমি।
–এগিয়ে চলুন। আসুন, আপনার অগ্রগতির রিপোর্টটা শোনা যাক।
টমি মিঃ গ্রান্টের পাশে আসন নেয়। মধ্যাহ্নের খাড়া রোদ মাথায় ঝরছে। ধীরে ধীরে বলতে থাকে, সান্স সৌচির বাসিন্দাদের একটা তালিকা তো আমি আগেই পেশ করেছি।
–হ্যাঁ, পেয়েছি। মিঃ গ্রান্ট মাথা ঝাঁকালেন।
-এখনও পর্যন্ত বলার মতো অগ্রগতি কিছু হয়নি। আপাতত মেজর ব্লেচলির সঙ্গে বন্ধুত্ব জমে উঠেছে। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার। তবে নিতান্ত সাধারণ বলেই মনে হচ্ছে। নিজেই স্বীকার করেছেন। একসময় কোথায় না গেছেন।
সূত্রটা গুরুত্বপূর্ণ।
সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেন মিঃ গ্রান্ট।
–জার্মান ছোকরা কার্ল ভন দিনিমের ওপরও নজর রাখছি।
–ছোকরা সম্পর্কে আমিও আগ্রহী। বললেন মিঃ গ্রান্ট।
–ভন দিনিম এন (N) বলে আপনার মনে হয়? জানতে চায় টমি।
–তা মনে হয় না। সান্স সৌচির বাসিন্দাদের মধ্যে সম্ভবত এম বা এন কেউই নেই। তাদের হয়ে হয়তো কাজ করে চলেছে ভন দিনিম। জার্মান উদ্বাস্তু পরিচয়টা খোলস হওয়া অসম্ভব নয়। লোকটির ওপর নজর রাখবেন।
–পুলিশি রেকর্ডে তার পূর্ব ইতিহাস তো রয়েছে
মাথা ঝাঁকালেন মিঃ গ্রান্ট। বললেন, সান্স সৌচিতে সে নিজের সম্পর্কে যা বলছে, পুলিশের নথিতে তার সমর্থন রয়েছে। নাৎসীদের সমালোচনা করায় তার বাবাকে প্রাণ দিতে হয়েছে, কথাটা ঠিক। তার বড়ো ভাই এখনও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় দিন গুনছে।
মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে মা মারা গেছে। যুদ্ধ শুরু হবার একমাস আগে কোনোক্রমে প্রাণ নিয়ে এদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় ভন দিনিম। শপথ করেছে, ইংলন্ডকে যথাসাধ্য সাহায্য করবে।
রসায়ন নিয়ে গবেষণা করে ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছে। গ্যাস আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে তার আবিষ্কার যথেষ্ট কার্যকর।