কিন্তু কার্লের মুখ থেকেই একদিন শুনতে পেলাম, ইংলন্ডে পালিয়ে আসার ব্যাপারে নাৎসীরা কোনোরকম বাধার সৃষ্টিই করেনি। প্রয়োজনীয় সবরকম নথিপত্রই সে অনায়াসে হাতের কাছে পেয়ে গেছে।
সরলভাবেই এসব কথা আমার কাছে স্বীকার করেছিল কার্ল। তখনই আমার সন্দেহ হয়, নাৎসীদের এত সদয় হবার একটাই উদ্দেশ্য, তারা তাকে ইংলন্ডের মাটিতে ব্যবহার করতে চায়।
কালের প্রিয় বিষয় রসায়ন–সেই নিয়েই গবেষণায় ডুবে ছিল সে। ওই বিষয়ে আমারও যৎসামান্য দখল থাকায় বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়েছিল।
ওই সময়ে আমরা দুজনে একই বাড়িতে থাকতাম। সেখানেই একদিন ভোরে দেখতে পেলাম, নিজের বিছানায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছে কাল। হাতে ধরা রিভলবার। অনুমান করলাম প্রচণ্ড মানসিক চাপ সইতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছে সে।
কার্লের লেখা একটা চিরকুট পড়েছিল পাশে। সেটা আমি গায়েব করলাম।
আমার তখন খুবই সঙ্কটাপন্ন অবস্থা। প্রাণ বাঁচাতে হলে আসু জার্মানি থেকে পালানো দরকার। ওই পরিস্থিতিতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকেই সাজতে হবে কার্ল ভন দিনিম। এভাবে আত্মগোপন করার আর একটা উদ্দেশ্য আমার ছিল। কার্লকে ইংলন্ডে পাঠানো হচ্ছিল কেন, তা জানার সুযোগ পাব আমি।
কার্লের মৃতদেহে আমার নিজের পোশাক পরিয়ে দিয়ে আমি কার্ল সাজলাম। মাথার খুলি উড়ে যাওয়ায় কার্লের রক্তাপ্লুত মুখ সনাক্ত করার উপায় ছিল না। তাছাড়া বাড়ির মালকিনীও চোখে ভালো দেখতে পেত না। তাই নিশ্চিন্ত ছিলাম।
কার্লের নথিপত্র যা ছিল সঙ্গে করে পাড়ি দিলাম ইংলন্ডে। কার্লকে যেতে বলা হয়েছিল লিহাম্পটনের সান্স সৌচিতে। তাই আমিও উপস্থিত হলাম সেখানে।
নির্ভেজাল কার্ল ভান দিনিম আমি। কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে আমার কাজের বন্দোবস্ত করা ছিল। যোগ দিলাম সেখানে।
ওখানে নিযুক্ত হবার পরে সন্দেহ হল, আমাকে নাৎসীদের জন্য নিশ্চয় কিছু করতে হবে। সতর্ক থাকলাম। পরে পরিষ্কার হয়ে গেল, আমার কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করা তাদের উদ্দেশ্য।
হলও তাই। সন্দেহবশত গ্রেপ্তার করা হল আমাকে। আমি অবশ্য নিজের আসল পরিচয় গোপনই রাখলাম।
ঠিক করেছিলাম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মুখ খুলব না–দেখি ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়। কিন্তু মাত্র দিন কয়েক আগে আমাদের বিভাগের একজন আমাকে চিনতে পারলেন।
শীলা অনুযোগের স্বরে বলল, আমাকে তো বলতে পারতে।
–আমি দুঃখিত শীলা।
ইতিমধ্যে নাচের আসরে যোগ দিয়েছিল ডেরক ও ড্রেক। গভীর অনুরাগে শীলার হাত জড়িয়ে ধরে কার্ল বলল, চলো শীলা, আমরাও নাচি
.
টমি ধীরে ধীরে টুপেনসের দিকে এগিয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে, টুপেনস, শিশুটির কী হবে? সে কি আমাদের মধ্যে থাকবে?
টুপেনস আকুতি মাখা দৃষ্টি তুলে ধরে টমির দিকে। ধীরে ধীরে বলে, বেটি–তার কথা, তুমি মনে রেখেছ-তুমি বড়ো সহৃদয় টমি। আমি মা-বেটিরও মা
-তাই হবে টুপেনস-বেটিকে আমরা দত্তক নেব। ও আমাদেরই একজন হয়ে বড়ো হবে
-ও টমি।
গভীর আবেগে টমিকে জড়িয়ে ধরে টুপেনস।