.
খুব সকালে উঠেই প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছিল টমি। ভিলার বাইরে পথ ধরে অনেকটা চলে গিয়েছিল। ফেরার পথে দেখা হয়েগেল মিসেস ব্লেনকিনসপের সঙ্গে।
এরকম একটি সুযোগের জন্যই মনে মনে তৈরি হয়েছিল হয়তো টমি। চকিতে দেখে নিল আশপাশে কেউ নেই। মাথা থেকে টুপিটা খুলে নিয়ে কৌতুকভরা স্বরে বলে উঠল, সুপ্রভাত মাদাম…তুমিই তো!
-আমি এখন মিসেস ব্লেনকিনসপ মশাই। রসিকতা করল টুপেনস।
–কিন্তু এই চিড়িয়াখানায় এসে জুটলে কী করে?
-স্রেফ বুদ্ধির জোরে। তোমাকে আর তোমার সেই নাকউঁচু মিঃ গ্রান্টকে শিক্ষা দেবার জন্য।
–শিক্ষা বলতে শিক্ষা একেবারে আক্কেলগুড়ুম। কিন্তু রহস্যটা খোলসা কর।
–হিসেবটা এমন কিছু জটিল নয়। মিঃ গ্রান্টের মুখে মিঃ কার্টারের কথা শুনেই বুঝে নিয়েছিলাম কোনো গুরুতর কাজেই তোমার ডাক পড়বে। মিঃ গ্রান্ট উসখুস করছেন দেখে শেরীর বোতল আনবার অছিলায় বেরিয়ে গিয়ে বান্ধবী মরিনকে ফোন করলাম। বলে দিলাম, কিছুক্ষণ পরেই যেন আমাকে ফোন করে।
তার ফোন পেয়েই অসুস্থ বান্ধবীকে দেখতে যাবার নাম করে বেরিয়ে শোবার ঘরে গিয়ে আড়ি পেতে ছিলাম।
তোমাদের সলাপরামর্শ সবই কানে গেল। তখনই ঠিক করলাম উন্নাসিক গ্রান্টকে শিক্ষা দিতে হবে। কেন না মিঃ কার্টার আমাদের দুজনকে আলাদা করে ভাবেননি কখনও।
-ঠিকই বলেছ, গম্ভীর স্বরে বলল টমি, তবে আশ্চর্য হচ্ছি, আমরা দুজনেই আবার অদ্ভুতভাবে সক্রিয় হয়ে উঠলাম।
অতীতের সেই উজ্জ্বল দিনগুলি বুঝি আবার ফিরে আসবে। কিন্তু তুমি হঠাৎ ব্লেনকিনসপ এই বিচ্ছিরি নামটা নিতে গেলে কেন?
–আমার কাপড় সামলে চলার সুবিধা হবে বলে ওই নামটাই খুঁজে নিতে হয়েছে।
–কাপড় সামলে মানে?
–তোমার মাথা মোটা হয়ে গেছে। আমার গায়ের নিকারের গলায় B অক্ষরটা এমব্রয়ডারি করা আছে। B অক্ষর দিয়ে বেরেসফোর্ড হতে পারে আবার ব্লেনকিনসপও হতে পারে। তাই আমার নাম হয়ে গেল প্যাট্রিসিয়া ব্লেনকিনসপ। কিন্তু তোমার মিয়াদো পদবীটাও হতকুচ্ছি।
-তোমার মত B অক্ষরের সমস্যা তো আমার ছিল না,তবে মিয়াদো অতি সজ্জন ব্যক্তি, অতীবও সম্মানের।
–তাহলে তুমি কি বিবাহিত না বিপত্নীক?
–বিপত্নীক, মাথা ঝুঁকিয়ে সম্ভ্রমের সঙ্গে বলল টমি, দশ বছর আগে আমার স্ত্রী সিঙ্গাপুরে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
-আবার সিঙ্গাপুর কেন?
–কোনো কারণ নেই, মনে হল
–মন্দ নয়। তবে আমি বিধবা।
–তোমার স্বামী কোথায় মারা যান?
–তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। লিভারে পচন ধরেছিল, কোনো এক নার্সিংহোমে ছিল–
–আহা বেচারা! আর ডগলাস–তোমার ছেলে?
–সে নেভিতে। আমার কিন্তু আরো দুটি ছেলে আছে। এয়ারফোর্সে কাজ করছে রেমন্ড, আর শিশুপুত্র কাইলি দেশের বাড়িতে।
টমি এমনি হালকা রসিকতার ইতি টানল একসময়। সান্স সৌচি ক্রমেই এগিয়ে আসছিল। সে জানতে চাইল, আমার আগেই তো তুমি এই ভিলায় নাম লিখিয়েছ। জার্মান স্পাই বলে কাকে সন্দেহ করছ?
টুপেনসের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিল। বলল, সেভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে একটি সুদর্শন জার্মান যুবক এখানে আছে।
-হা, কার্ল ভন দিনিম। উদ্বাস্তু। পুলিশ নিশ্চয় তার কাগজপত্র খুঁটিয়েই পরীক্ষা করেছে। তোমার কি মনে হয়?
–আমি পুলিশের ওপর নির্ভর করে থাকতে পারি না। অনেক সময় ওদের চোখও এড়িয়ে যায়। আমি ভোলা মন নিয়ে লক্ষ্য করে চলেছি।
–আচ্ছা, মিসেস পেরিনা সম্পর্কে ভেবে দেখেছ?
–হ্যাঁ, তাকে আমার নজরে রাখার মত মনে হয়েছে।
–আমাদের কথা শেষ করা দরকার। আমাদের যোগাযোগের ব্যাপারটা কীরকম হবে? ঘন ঘন দেখা-সাক্ষাৎ হওয়া ঠিক হবে না।
অবশ্যই। আমি স্থির করেছি, তোমাকে বানাব বিধবার সম্ভাব্য শিকার,-নাছোড়বান্দা হয়ে পেছনে লেগে থাকব। ইতিমধ্যে আমি দু-জন স্বামীর সঙ্গে ঘর করেছি। তৃতীয়টির সন্ধানে রয়েছি–কাজেই লাউঞ্জে, কাফেতে তোমার সঙ্গে লেপ্টে থাকার চেষ্টা করব। তুমি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেও পৌরুষের খাতিরে পেরে উঠছ না। মনে হয় ব্যাপারটা সকলের কাছেই উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
পরিকল্পনাটা জুতসই সন্দেহ নেই। ঠোঁটের কোণে হেসে টমি টুপেনসের দিকে তাকায়। পরক্ষণে আচমকা তার হাত টেনে ধরে।
–সামনে তাকিয়ে দেখ।
এক জোড়া যুবকযুবতী, অদূরে গাছগাছালির ছায়ায় ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে পরস্পরের অনুরাগ বিনিময় করছে।
টুপেনস নিচুস্বরে বলল, যুবকটি কার্ল ভন দিনিম। কিন্তু মেয়েটিকে চিনতে পারছি না। তুমি সরে যাও।
টমি তৎক্ষণাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে বিপরীত মুখে চলতে শুরু করল।
কিছুটা আসার পরেই মেজরের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ। দু-জনেই সমস্বরে সুপ্রভাত বিনিময় করে।
সূর্য উঠবার আগেই বেরিয়ে পড়া আমার অভ্যাস। বললেন মেজর।
–আজ্ঞে, আমারও তাই, বহুদিনের অভ্যাস। জবাব দেয় টমি।
মেজর কথা বলার সুযোগ পেলে সাতকাহন জুড়ে দেবেন। তাই টমি প্রথমেই ভিন্নপ্রসঙ্গে চলে আসে।
–কী যেন নাম, ওই মহিলাটি, হা, মিসেস ব্লেনকিনসপ, তার সঙ্গে দেখা হল। আপনি মহিলাকে জানেন?
–মিসেস ব্লেনকিনসপ। দেখতে মন্দ নয়। খুব কথা বলে। তবে বোকা নয়। আমি তাকে ঠিক জানি না। সবে এসেছেন এখানে। তা বলল কিছু?
-না, বিশেষ কিছু না। বলল টমি। মেজর অন্তরঙ্গ স্বরে বললেন, খুব সাবধান মশায়। পড়তি বয়সি মহিলা। আপনি হয়তো জানেন না, ও কিন্তু বিধবা।