টমি সম্পর্কে শেষ সংবাদ হল সে স্মাগলার্স রেস্ট-এ নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিল। তারপর রাতে সান্স সৌচিতে ফিরেও এসেছিল।
অ্যালবার্ট প্রথমে সান্স সৌচির প্রবেশ পথ, বাগান পর্যবেক্ষণ করল। কিন্তু সন্দেহ করার মতো কিছু নজরে পড়ল না।
স্মাগলার্স রেস্টের দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলল সে। মস্ত বাড়িটা যেন ঝিম মেরে আছে। বাইরে থেকে ভেতরের ব্যাপার কিছু আঁচ করার উপায় নেই।
বাড়িটার পাশ ঘেঁসেই সরু পায়ে-চলা পথ। সেই পথেই পা ফেলল অ্যালবার্ট। আর শুরু করল চড়া সুরে সেই পরিচিত গান।
স্মাগলার্স রেস্টের সাদা দরজার কাছাকাছি এসে আবার খানিকটা পিছিয়ে যায় অ্যালবার্ট।
দরজা খুলে গেল। একটা গাড়ি বেরিয়ে এসে বড়ো রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল।
গাড়িতে বসা বিশালদেহী লোকটিকে চোখে পড়তেই অ্যালবার্ট মাথা নাড়ল। মনে মনে বলল, এই তাহলে কমাণ্ডার হেডেক। লোকটা গলফ খেলার সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছে–তার মানে গলফ ময়দানে যাচ্ছে।
অ্যালবার্ট নিজের মনে গানের সুর ভাঁজছে। আড়চোখের দৃষ্টি বাড়ির দরজার দিকে।
একটা লোক বেরিয়ে এলো দরজা ঠেলে…পাহাড়ি পথ ধরে চলে গেল।
অ্যালবার্ট এবার দ্রুতপায়ে বাড়িটার চারপাশে ঘুরপাক খেতে লাগল–গলায় গানের সুর।
বাগানের একপাশে খোঁয়াড় মতো একটা ঘর। অ্যালবার্ট ঘুরতে ঘুরতে সেই ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল।
সহসা গান থেমে গেল..সবিক্রমে যেন কারুর নাসিকা গর্জন করছে। কিন্তু এমনভাবে গর্জনধ্বনি ওঠানামা করছে কেন–কোনো জন্তু নয়তো? নাকি কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
সতর্ক নজরে চকিতে চারপাশটা দেখে নিল অ্যালবার্ট। ব্যাঙের মতো লাফিয়ে গিয়ে দাঁড়াল খোঁয়াড় ঘরে জানালার সামনে।
না; কোনো সন্দেহ নেই…তার সঙ্কেতপূর্ণ গানেরই প্রত্যুত্তর এটা…অ্যালবার্ট হাত বাড়িয়ে একটুকরো কাগজ ভেতরে ফেলে দিল।
৪. সাধারণ একটা পোস্টকার্ড
কালো কালিতে লেখা সাধারণ একটা পোস্টকার্ড। এটাই মিসেস ব্লেনকিনসপের পাওয়া সর্বশেষ চিঠি। ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে চিঠিটা মুখের সামনে তুলে ধরল।
প্রিয় প্যাট্রিসিয়া,
কাকিমার শরীরের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। ডাক্তাররা সর্বক্ষণ নজরে রেখেছেন। তবে আশা নেই। তাকে শেষ দেখা দেখতে হলে চলে এসো। ১০টা ২০মিঃ ট্রেন ধরে এরোতে আসবে। আমার এক বন্ধু তোমাকে আনতে গাড়ি নিয়ে যাবেন। কাকিমার অসুস্থতা উপলক্ষে অনেকখানি পরে তোমার সঙ্গে দেখা হবে আশা করে ভালো লাগছে।
ইতি
তোমার পেনিলোপ প্লেনি
টুপেনস তার অন্তর্বেদনা যথাসাধ্য মুখভাবে ধরে রাখবার চেষ্টা করে। তবে মনে মনে আশান্বিত হয় এন্টনি মার্সড়নের ইঙ্গিতপূর্ণ চিঠিটি পেয়ে।
অবশ্য খুব বেশি পরিচয় নেই তার এন্টনির সঙ্গে। তাই পুরোপুরি ভরসাও করতে পারছে না। ভাবল, দেখাই যাক না কী হয়–মিঃ গ্রান্ট তো রয়েইছেন পেছনে।
টেবিলে উপস্থিত অনেকেই সহানুভূতি জানালেন মিসেস ব্লেনকিনসপকে। এরোর উদ্দেশ্যে রওনা হবে বলে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উঠে দাঁড়াল টুপেনস। তারপর এলো মিসেস পেরিনার ঘরে।
সেখানে শীলা আর দিনিমের ব্যাপার নিয়ে মিসেস পেরিনার সঙ্গে দু-চারটে কথা বলল টুপেনস।
মিসেস পেরিনার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে আসতে গিয়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখল টুপেনস।
ছোট্ট বেটি টুকটুক করে ক্লে দম্পতির ফাঁকা ঘরে ঢুকছে। তার হাতে একখানা ছড়ার বই।
টুপেনস এগিয়ে এসে মজা করে দরজার আড়ালে দাঁড়াল। দেখল বেটি বইখানা এই ঘরের বিছানার তলায় লুকিয়ে রাখছে আর আপন মনে বলছে–লুকিয়ে রাখি…লুকিয়ে রাখি।
ঘাড় ঘোরাতেই দরজায় দাঁড়ানো টুপেনসকে দেখতে পেল বেটি। অমনি খিল খিল হেসে উঠে ছুটে এলো তার কাছে।
টুপেনস ওকে হাত ধরে বাইরে আনল। জিজ্ঞেস করল ছড়া কেটে–ওরে বোকা চললে কোথা—
দুষ্টুমিভরা মুখে হেসে ওঠে বেটি, বলে লুকিয়ে রাখি–লুকিয়ে রাখি–ওই-
-ঠিক এই সময় মিসেস স্প্রট ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এলেন, ছোঁ মেরে তুলে বেটিকে কোলে নিলেন।
বেটি তখনও বলছে–খোঁজ-খোঁজ-লুকিয়ে রাখি–
-না, এখন লুকোচুরি খেলতে হবে না–ঘরে চল।
.
বেটিকে নিয়ে মিসেস স্প্রট ঘরে ঢুকে গেলেন।
টুপেনস নিজের ঘরে ঢুকে থমকে দাঁড়ায়। টুপিটা আগের জায়গায় নেই। কেউ ঢুকেছিল তার ঘরে। কে ঢুকল আবার?
কার্ল ভন দিনিম তো এখন হাজতে। মিসেস পেরিনা তার ঘরে। মিসেস ওরুরকিও সেখানে গল্পগুজব করছেন বসে। তাহলে এ কাজ করল কে?
আপন মনে হাসল টুপেনস। চলুক, চলতে থাকুক। মন্দ কী…
টুপেনস ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল দশটা। এখনও যথেষ্ট সময় আছে।
পেনিলোপ প্লেনির চিঠিটা ড্রেসিং টেবিলের ওপরে চোখে পড়ার মতো করে ফেলে রাখল। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ছোট্ট রেল স্টেশন এরো। স্টেশন থেকে বেরিয়েই দেখল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। মার্সর্ডন তার জন্য নিকটবর্তী গ্রামে অপেক্ষা করে আছে। সরাসরি হেঁটে এসে গাড়িতে উঠে বসল সে।
সুদর্শন এক যুবক বসেছিল চালকের সিটে। মাথা দুলিয়ে টুপেনসকে অভিবাদন জানাল।
গাড়ি স্টার্ট নিল।
.
ঘন গাছপালায় ঢাকা একটা জায়গায় গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। এন্টনি মার্সডনকে এগিয়ে আসতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল টুপেনস।
–গতকালই আমরা মিঃ বেরেসফোর্ডের সন্ধান পেয়েছি, জানাল মাসর্ডন, তিনি ভালো আছেন। তবে শত্রু শিবিরে আরও ঘণ্টা বারো তাকে বন্দি অবস্থায় থাকতে হবে। একটা নির্দিষ্ট স্থানে গেস্টাপোদের একটা বোট আসবে, মিঃ বেরেসফোর্ডকে খুন করে নাকি ওই বোটেই পাচার করা হবে।