-হ্যাঁ, এবারে ভালো হয়ে যাও। আমি তো ওপরে গিয়ে এঘর ওঘরে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট খুঁজে বেড়াব, ধরা পড়ে গেলে ওই কথাই বলব,-সেই সময় ওপরে কোনো ভদ্রলোকের উপস্থিতি সন্দেহজনক মনে হতে পারে।
-তোমার বুদ্ধির তুলনা হয় না। উচ্ছ্বসিত স্বরে বলে উঠল টমি।
.
যথাসময়ে টমি মিঃ গ্রান্টকে দিনিম সম্পর্কে তার নিশ্চিত ধারণার কথা জানিয়ে দিল। মিঃ অ্যালবার্টের নামেও একটা চিঠি ডাকে ছেড়ে দিল।
ফেরার পথে কমাণ্ডার হেডকের সঙ্গে দেখা হল। নিজের টুসিটার নিয়ে বেরিয়েছিলেন হেডক। টমিকে সাগ্রহে গাড়িতে তুলে নিলেন। তারপর দুজনে একসঙ্গে ফিরে এলেন স্মাগলার্স রেস্ট-এ।
দুপুর দুটো নাগাদ সান্স সৌচিতে পৌঁছল টুপেনস। বাগান পার হয়ে হলঘরে ঢুকল। শব্দ শুনে বুঝতে পারল, ডাইনিং রুমে সকলে ভোজনে ব্যস্ত।
জুতো খুলে হাতে নিল টুপেনস। তারপর নিঃশব্দে অথচ দ্রুত ওপরে উঠে এল। সরাসরি এসে ঢুকল নিজের ঘরে। জুতো রেখে নরম স্লিপার পায়ে গলালো।
ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দা ধরে হাঁটতে লাগল…ওর মধ্যেই একসময় অদৃশ্য হয়ে গেল মিসেস পেরিনার ঘরে।
.
বুকে হাত চেপে ধরল টুপেনস। ঘরে ঢুকে ধুকপুকুনি বেড়ে গেছে। মিসেস পেরিনা তো সাধারণ একজন মহিলা মাত্র নন…সেকারণেই এই শঙ্কা আর ভয়।
নিঃশব্দে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল টুপেনস।
ড্রয়ার টেনে পলকে সবকিছু দেখে নিল।
লেখার টেবিলে একটা ড্রয়ার টেনে খোলা গেল না। চাবি লাগানো।
আশান্বিত হয়ে উঠল টুপেনস। তাহলে এর মধ্যেই নিশ্চয় রয়েছে সব কিছু।
তালা বা বন্ধ ড্রয়ার খুলবার প্রয়োজনীয় কয়েকটা যন্ত্র সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছিল টুপেনস। সেগুলো এবারে কাজে লাগল।
সামান্য চেষ্টাতেই ড্রয়ারটা খুলে গেল।
ভেতরে পাওয়া গেল একটা ক্যাস বাক্স, কুড়ি ডলারের মতো খুচরো টাকা রয়েছে তাতে। সাগ্রহে একটা কাগজের বাণ্ডিল তুলে নিল হাতে। দ্রুত কাগজগুলোর ওপর চোখ বোলাতে লাগল। কিন্তু হতাশই হল।
কয়েকটা চিঠি, সান্স সৌচির মর্টগেজ ফর্ম, ইত্যাদি।
এর মধ্যে রহস্য কিছু পাওয়া গেল না। চিঠিগুলোও নির্দোষ।
সহসা ষষ্ট ইন্দ্রিয় সজাগ করে তুলল টুপেনসকে, এক ঝটকায় ড্রয়ারটা ঠেলে বন্ধ করে দিল।
ঠিক সেই মুহূর্তে দরজার সামনে মিসেস পেরিনা আবির্ভূত হলেন।
পলকের মধ্যে বেসিনের কাছে সরে গেল টুপেনস। তাকের শিশি-বোতল নাড়াচাড়া করতে লাগল।
ঘাড় ঘুরিয়ে মিসেস পেরিনাকে দেখে ক্লিষ্ট হেসে বলল, মিসেস পেরিনা, মাফ করবেন, একটা অ্যাসপিরিনের খোঁজে আপনার ঘরেই ঢুকে পড়েছি। অসহ্য যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যাচ্ছি। আশাকরি কিছু মনে করবেন না। অ্যাসপিরিন তো সবসময়ই আপনার ঘরে থাকে জানি…
মিসেস পেরিনা ব্যস্তভাবে ঘরের মধ্যে চলে গেলেন। স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠলেন, মিসেস ব্লেনকিনসপ, আপনি কষ্ট পাচ্ছেন আগে আমায় বলেননি কেন?
-বলব ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখলাম আপনারা সকলে খাবার টেবিলে বসে আছেন, তাই আর…
ক্ষিপ্র হাতে শিশি থেকে কতগুলি অ্যাসপিরিন বড়ি বার করে টুপেনসকে দিলেন মিসেস পেরিনা।
–যে কটা দরকার নিন।
টুপেনস তিনটা বড়ি তুলে নিল। তার আঙুল কাঁপছিল। মাথাযন্ত্রণার তীব্র কষ্টে এটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু নয়।
টুপেনসকে তার ঘরে পৌঁছে দিলেন মিসেস পেরিনা। চকিতে ঘরের চারদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে বললেন, আপনার ঘরেই তো অ্যাসপিরিনের শিশি ছিল। আমি জানি।
-হ্যাঁ, আমার কাছে আছে, এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগল টুপেনস, কিন্তু কোথায় যে রেখেছি, কিছুতেই মনে করতে পারলাম না।
–ঠিক আছে, এখন বিশ্রাম নিন। দরজা টেনে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন মিসেস পেরিনা। এতক্ষণে যেন বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ পেল টুপেনস। টান টান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
ভদ্রমহিলার ব্যবহারে তার মনোভাব কিছুই বোঝা গেল না। কিছু কি সন্দেহ করতে পেরেছেন? কিন্তু যখন দেখবেন লেখার টেবিলের ড্রয়ার খোলা, তখন তো তার মনে সন্দেহ উঁকি দেবে?
নাকি ভাববেন, নিজেই ড্রয়ার বন্ধ করতে ভুলে গেছেন। এমন ভুল তো সকলের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
টুপেনস মনে করার চেষ্টা করল, বাণ্ডিলের কাগজগুলো আগের মতো ঠিক ঠিক সাজিয়ে রাখতে পেরেছে কিনা।
টুপেনস তার শোবার ঘরে চুপি চুপি উপস্থিত হয়েছে দেখে আর কি সন্দেহ করতে পারেন মিসেস পেরিনা? হয়তো ভাববেন মিসে ব্লেনকিনসপ বড় বেশি কৌতূহলী?
কিন্তু মিসেস পেরিনা যদি সত্যি সত্যি জার্মান গুপ্তচর হন? তাহলে এই ব্যাপারটাকে কখনওই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবেন না। সন্দিগ্ধ হয়ে উঠবেন।
কিন্তু তেমন হলে তো তার কথায় বা ব্যবহারে প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ত। তাকে দেখে যথেষ্টই স্বাভাবিক মনে হয়েছে।…
হঠাৎ বিদ্যুৎ ঝলকের মতো একটা কথা মাথায় খেলে গেল টুপেনসের। উত্তেজনায় বিছানায় উঠে বসল সে। তার নিজের অ্যাসপিরিনের শিশি এই ঘরে টেবিলের পেছনে রাখা হয়েছে। আইডিন, সোডার বোতল এসবও রয়েছে সেখানে।
মিসেস পেরিনা ওসবের হদিশ জানলেন কী করে? অ্যাসপিরিন সম্পর্কে তার শেষ তীক্ষ্ণ মন্তব্যটা তো নিরর্থক নয়। তাহলে…তাহলে…যে কাজটা এখন টুপেনস করতে চেয়েছে, অনেক আগেই তা সেরে নিয়েছেন ভদ্রমহিলা।
চুপি চুপি টুপেনসের ঘরে ঢুকে সবই হাতিয়ে দেখে নিয়েছেন।
.
বেটিকে দেখাশোনার দায়িত্ব টুপেনসের কাঁধে চাপিয়ে পরদিন সকালেই লন্ডন গেলেন মিসেস স্প্রট। তাই সারা সকালটা তাকে নিয়েই কাটল।