পোয়ারো ঘাড় নাড়লেন।–ঠিক, সমর্থন করি আপনার মতামত। ভাগ্যিস টাকা পয়সা আছে মেয়েটির। ওর জেমস বেন্টলীর সংগে বিয়েটা নির্বিঘ্নেই হয়ে যাবে।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্পেন্স আশ্চর্য হয়ে গেলেন।
কি বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো জেমস বেন্টলীর সংগে বিয়ে? ডীডার হেণ্ডারসন? কে বলল?
-আমি বলছি। আমিই ঘটকালিটা করলাম বলতে পারেন। আমি বিয়েটাও দেব ওরা দুজন অবশ্য এখনো জানেই না। কিন্তু দুজন দুজনকে পছন্দ করে। অথচ দায়িত্ব ওদের ওপর ছেড়ে দিলে কিছু হবে না। তাই উদ্যোগী হতে হবে আমাকেই। দেখবেন, কি করি শেষ পর্যন্ত।
-ওঃ আপনার আর অভ্যেস গেল না পরের ব্যাপারে নাক গলানোর।
–কি করব বলুন? ওটা যে আবার আপনার দ্বারা হয় না একেবারেই।
–আমায় খোঁচাচ্ছেন আবার। বেন্টলী যেন কেমন ছেলেটা।
–তা যা বলেছেন। এখন হয়ত ও দুঃখে মরে যাচ্ছে ফাঁসিটা হল না বলে।
আপনার কাছে ওর উচিত নতজানু হয়ে কৃতজ্ঞতা জানানো।
–নিজে কিন্তু বেন্টলী তা মনে করেন না।
–হ্যাঁ, যা ছেলে।
-ওর সম্বন্ধে দুটি মহিলা উৎসাহী। আমি তো ভাবছিলাম আপনি ওর বিয়েটা মডের সঙ্গেই লাগিয়ে দেবেন।
বেন্টলীকে পছন্দ করতে দেওয়া হলে ও পছন্দ করবে মিস হেণ্ডারসনকেই বড় ছটফটে মড, বড় বেশি উৎসাহী। ওকে বিয়ে করলে বেন্টলী নিজেকে আরও গুটিয়ে রাখবে।
আমার মাথায় এটা কিছুতেই ঢুকছে না যে কেউ বেন্টলীকে বিয়ে করতে চাইবেই বা কেন?
-সেটাই তো রহস্য মিঃ স্পেন্স।
–যাগগে, যা ভালো বোঝেন করুন। দেখবেন, আপনাকে মিসেস ওয়েদারবি শেষ করে দেবেন।
-ভালো কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই।
-শুনুন মঁসিয়ে পোয়ারো, আমি আপনাকে একটা কথা জানাতে চাই, মনে আছে ডঃ রেগুলের কথা?
নিশ্চয়ই।
–ওঁর সম্পর্কে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারলাম যে, ওঁর প্রথমা স্ত্রী লীডসে মারা যান তখন ওখানেই প্র্যাকটিস করতেন ডঃ রেগুল। পুলিশ কিন্তু উড়ো চিঠি পায়। তাতে বলা ছিল যে, নিজের স্ত্রীকে ডঃ রেগুলই বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছেন। একই কথা বলতেন প্রতিবেশীরাও। বাইরের যে ডাক্তার পরীক্ষা করেন ভদ্রমহিলাকে তিনিও সন্দিহান ছিলেন মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে। মোটা জীবনবীমা ছিল ভদ্রমহিলার। নমিনি ছিলেন স্বামী ডঃ রেগুল, কাজেই বুঝতে পারছেন….।
মিসেস রেগুলের ভয় চকিত দৃষ্টির কথা মনে পড়ে গেল পোয়ারোর। নিজের হাতের উড়ো চিঠির দিকে ভদ্রমহিলা তাকিয়ে বলেছিলেন, আমি এসব বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করি না…
পোয়ারো বললেন, শুধু উড়ো চিঠি পুলিশই পায়নি। স্পেন্স বললেন, তার মানে ভদ্রমহিলাও পেয়েছেন?
জবাব দিলেন পোয়ারো, তাই মনে হয় আমার। ব্রডহিনিতে আমাকে আসতে দেখে মিসেস রেগুল ভেবেছিলেন আমি ওর স্বামীর পিছু নিয়েছি। তাই ভেবেছিলেন ভদ্রলোকও। আমায় ডঃ রেগুলই সেদিন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পেছন থেকে রেললাইনের ওপর ধাক্কা দিয়ে ফেলতে চান।
-বুঝতে পারছি, এই স্ত্রীকেও হয়ত উনি একইভাবে মারবেন।
–হ্যাঁ। বিশেষত যদি জীবনবীমা থাকে মোটা টাকার। কিন্তু যদি উনি বুঝতে পারেন যে, ওঁর ওপর পুলিশ নজর রাখছে, তাহলে আর কোনো ঝুঁকি নেবেন না উনি।
-দেখি, কতদূর কি করতে পারি। ওঁকে আমরা বুঝিয়ে দেব যে, আমাদের নজর আছে ওঁর ওপর।
–আসুন, মিসেস অলিভারের সুস্বাস্থ্য কামনা করে গ্রহণ করা যাক পানীয়টা।
–কেন মিসেস অলিভার?
–ওঁর বরাবরই ডঃ রেগুলের ওপর একটা অদ্ভুত সন্দেহ ছিল।
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকার পর ধীরে ধীরে স্পেন্স বললেন, আগামী সপ্তাহে রবিনের মামলার শুনানী শুরু। মঁসিয়ে পোয়ারো, এখনো অল্প অল্প সন্দেহ হচ্ছে যে আমার….
শশব্যস্তে তাকে পোয়ারো থামিয়ে দিলেন।
–মিঃ স্পেন্স, আপনার এখনো সন্দেহ গেল না? রবিন সত্যিই দোষী। আবার তদন্ত শুরু করার দাবী জানাবেন না দয়া করে।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্পেন্স এক গাল হাসলেন।
-না না, মঁসিয়ে পোয়ারো সত্যিই রবিন খুনী। আর কোনো সন্দেহই আমার নেই, সব রকম অপকর্মই করা সম্ভব ওর দ্বারা।