পোয়ারো বললেন তাই হবে। এত প্রবল রবিনের আত্মবিশ্বাস যে, সে গ্রাহ্যই করেনি আমার উপস্থিতি।
মিসেস অলিভার শিউরে উঠলেন।
-মানে আপনি বলছেন যে, আমায় গাড়িতে বসিয়ে রেখে গিয়ে রবিন খুনটা করে এল আর আমি তা ধরতেও পারলাম না।
হাসলেন পোয়ারো।–মাদাম, আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টা সেই সময় তেমন কাজ করেনি।
.
২৭.
মড উইলিয়মস বলল, আমি আর ব্রিদার অ্যাণ্ড স্কাটল এ ফিরে যাচ্ছি না। বাজে জায়গা।
পোয়ারো বললেন, যাকগে কাজ তো আপনার হয়ে গেছে।
–আপনি কি বলতে চান। মঁসিয়ে পোয়ারো?
–এখানে এসেছিলেন কেন আপনি?
–সবজান্তা তো আপনি। কিছুই কি বুঝতে পারছেন না?
–বোধহয় কিছুটা পারছি।
–কি বলুন তো?
-যদি আমার খুব ভুল না হয়, তাহলে এড়া সেদিন রাতে মিসেস আপওয়ার্ডের বাড়ির সামনে যাকে দেখে সে আপনি। যদিও মিসেস কার্পেন্টার ভেবেছে সবাই।
–কেন, আমি কেন?
–আমার একটা কথার জবাব দিন তো দেখি। আপনার এত কৌতূহল কেন ব্রডহিনির ব্যাপারে? সেদিন কেনই বা রবিনের অটোগ্রাফ চেয়েছিলেন? অটোগ্রাফ শিকারী বলে তো মনে হয় না আপনাকে দেখে। আপনি আপওয়ার্ডের সম্বন্ধে কতটুকু জানেন? কি করেই বা জানলেন যে ইভা কেন ইংল্যাণ্ড ছাড়ার সময় কি নাম নিয়েছিল আর সে অষ্ট্রেলিয়ায় মারা যায়।
-বাঃ চমৎকার কল্পনা শক্তি আপনার। যাকগে আর কিছু লুকাবো না আমি।
মড হাত ব্যাগ খুলে একটা ছোট্ট বিবর্ণ কাগজের কাটিং বের করল। পোয়ারোর খুব চেনা কাগজটা। ইভা কেনের ছবি। আড়াআড়িভাবে ছবির ওপর লেখা আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য এই মহিলাটিই দায়ী…
-মডের হাতে কাগজটা প্রত্যর্পন করলেন পোয়ারো।
মিস উইলিয়মস, আমিও ভেবেছিলাম তাই, আসল পদবী আপনার ক্রেগ, তাই না?
–হ্যাঁ। আমাদের একজন সহৃদয় আত্মীয় আমায় মানুষ করেন। কিন্তু আমি তখন নিতান্ত ছেলে মানুষ ছিলাম না। কিন্তু সব কিছুই বুঝতাম। মহিলাটি, ঐ ইভা কেন, এক জঘন্য চরিত্রের নারী। আর নেহাতই দুর্বল চরিত্রের মানুষ ছিলেন আমার বাবা। আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য আসলে ইভা কেনই দায়ী। আমার দুর্বল, ভালোমানুষ বাবা পা দেন ওর ফাঁদে। কতদিন ধরে যে ওই ইভাকে আমি খুঁজে বেড়িয়েছি, এমন কি বড় হয়ে গোয়েন্দা পর্যন্ত লাগিয়েছি, তাদের কাছেই জানতে পারি যে অষ্ট্রেলিয়ায় যায় ইভা, সেখানে ছেলে হয় তার, যার নাম ইভলিন হোপ। অষ্ট্রেলিয়াতেই মারা যায় ইভা। এরপর আমার বন্ধুত্ব হয় মাইকেলের সাথে। তার কাছে জানতে পারি অষ্ট্রেলিয়া থেকে জনৈক ইভলিন হোপ এসেছে এখানে এবং এখন তার নতুন নাম রবিন আপওয়ার্ড, যে নাকি বর্তমানে একজন উদিয়মান নাট্যকার। কিন্তু দমে যায় আমার কৌতূহল যখন শুনি যে সে তার মায়ের সঙ্গে আছে। শুনে অবশ্য মনে হয়েছিল আমার যে তাহলে ইভা মারা যায়নি, উপরন্তু রানীর হালে দিন কাটাচ্ছে। আমি এই অঞ্চলে তখন চাকরি নিই। তারপর আপনার সাথে আলাপ হতে আপনি বলেন বেন্টলীর কথা, আমার তখুনি মনে হয় মিসেস আপওয়ার্ড, ওরফে ইভা কেন, একটা খুন করেছে আবার। বাড়িতে সেই রাতে আর কেউ থাকবে না জেনেই ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমি মোকাবিলা করতে যাই। ছোট্ট একটা পিস্তল ছিল আমার সঙ্গে। নিছকই ভয় দেখাবার উদ্দেশ্য….অথবা…যাক গে, দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখি দরজা খোলা। তারপর আবিষ্কার করি যে ভদ্রমহিলা মৃতা। বড় নাটকীয় দৃশ্য সবটাই। লোক জানাজানির ভয়ে পুরো ব্যাপারটা চেপে যাই। কেউ যে আমায় দেখেছে তা আমি ভাবতেই পারিনি। এবার বলুন, আপনি এখন কি করবেন?
পোয়ারো বললেন, কিছু না। আপনার শুভকামনা করি আমি, ব্যস।
.
পরিশিষ্ট
এরকুল পোয়ারো আর সুপারিন্টেডেন্ট স্পেন্স ভিলি গ্র্যাণ্ডমেয়ার রেস্তোরাঁয় বসে কফি পান করছিলেন।
স্পেন্স বললেন, যাক, তাহলে সব ভালোয় ভালোয় মিটে গেল।
–মিঃ স্পেন্স মনে আছে আপনার, আমি প্রথম দিন এখানেই খাওয়া সেরেছিলাম, আপনি যেদিন প্রথম এসেছিলেন আমার কাছে এই কেসটা নিয়ে?
-হা, মঁসিয়ে পোয়ারো। সব কিছু আপনি কেমন ছবির মত আমাদের বুঝিয়ে দিলেন। শেষ মুহূর্তে রবিন তার স্বীকারোক্তি না দিলে অবশ্য খুব মুশকিল হত আমাদের। যথার্থ প্রমাণ বলতে তো হাতে বিশেষ কিছু ছিল না। অনুমান নির্ভর ব্যাপার সবটাই।
হু হু, ওকে আমি একটু খেলাচ্ছিলাম। ধরেই নিয়েছিল রবিন যে, আমি মরিনকে সন্দেহ করছি। আসলে ও একটা মূর্খ, ভীতু। আমার হাতে মুষলটা দেখায় ভীষণ ভয় ওকে গ্রাস করে ফেলেছিল, আর এই স্বীকারোক্তি তারই দরুন।
-কিন্তু মেজর সামারহেস খুব চটে গিয়েছিলেন, উনি আশাকরি ক্ষমা করে দিয়েছেন আপনাকে।
-হা হা, পরস্পর এখন আমরা ঘনিষ্ট বন্ধু। একটা প্রাকপ্রণালী কিনে মরিনকে উপহার দিয়েছি। আবার ওমলেট ভাজতেও শিখিয়েছি। ওঃ, যা আমার খাওয়ার কষ্ট গেছে।
-কদিন খুব গণ্ডগোল হল। অমন কেন মিসেস কার্পেন্টার চেঁচাচ্ছিল জানেন? একটু গোলমেলে ওঁর অতীতটা। উনি প্রথম জীবনে সস্তাদরের নর্তকী ছিলেন। একগাদা পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে অবাধ মেলামেশা ছিল। এখানে বিয়ের পর সুখী উনি এখন কিন্তু ওঁর খুব ভয় ছিল কেউ যদি বিগত জীবন সম্বন্ধে কিছু জেনে ফেলে।
তারপর ধরুন গিয়ে ওয়েদারবিদের কথা। কি অদ্ভুত মেয়েটি, ওর এক পিসীমা প্রচুর টাকাকড়ি দিয়ে গেছেন। সেগুলো হাত ছাড়া হবার ভয়ে ওর মা আর সৎপিতা ওকে বিয়েও করতে দিতে চান না। কাজকর্মে তো ভদ্রলোকটি একেবারে অপদার্থ। ওই মেয়েটিই সব খরচ করে। স্বামী স্ত্রী কেউই তেমন সুবিধের নন।